চালতা

24 Jul 2023, 12:48 PM প্রকৃতি শেয়ার:
চালতা

আমি চলে যাবে বলে, চালতা ফুল কি আর ভিজিবে না শিশিরের জলে -জীবনানন্দ দাশ

চালতা বললেই জিভে জল এসে যায়, আহ্ ! অম্ল-মিষ্টি স্বাদের পাকা চালতা কিংবা চালতার লোভনীয় আচার খেতে মন চায়। চালতা আমাদের খুবই পরিচিত একটি ফল। চালতার ফল নানাভাবে খাওয়া যায় বলে নান্দনিক হয়েও বেচারি ফুল কোনো কদরই পায় না, রয়ে যায় অগচোরে। চালতা ফুল বর্ষায় ফোটে। চালতা ফুলের সৌন্দর্য যেকোনো ফুলের সঙ্গেই তুলনীয়। চালতা ফুলের আকার ও দুধসাদা পাপড়ির উজ্জ্বলতা ঈর্ষণীয়। ফুল শাখার শীর্ষে ফোটে ; তবে, নিচের দিকে ঝুঁকে থাকে। ফুলে পাঁচটি করে স্থায়ী বৃতি থাকে এবং পাপড়িও থাকে পাঁচটি করে। পাপড়ি ঝরে যায়। ফুলের চারদিকে প্রচুর পুংকেশর বা পুষ্পরেণু দুটো সারিতে বিন্যস্ত থাকে। এর গর্ভপত্র বা গর্ভকেশর রয়েছে পনেরটি। প্রতিটি গর্ভপত্রে পাঁচটি করে বীজ হয়। ফুলের মৃদু সৌরভ এর রঙের মতোই স্নিগ্ধ। পাপড়ি ক্ষণস্থায়ী এবং প্রস্ফুটনের পরদিনই ঝরে পড়ে। চালতা ফুলের বৃতির রং সবুজ, বৃতি মাংসল ও স্থায়ী। এই বৃতিই পরে ফলে রূপান্তরিত হয়।

চালতা মাঝারি আকারের গাছ, এর কা- বড়োও নয় আবার খুব ছোটোও নয়, শাখাপ্রশাখা এলোমেলো, শীর্ষদেশ প্রায় গোলাকার, ছায়াঘন ও ছড়ানো। চালতা গাছের বাকল লালচে ও মসৃণ, পাতা বড়ো বড়ো লম্বাটে, ঘন-সবুজ শিরা-উপশিরা দৃঢ়, প্রায় খাঁজকাটা। পাতার প্রান্ত করাতের মতো ধারালো। ডালে পাতার আকৃতি ও বিন্যাস গাছটিকে অপরূপ সৌন্দর্য দিয়েছে।

শরৎ-হেমন্তে ফল পাকে। ফলের আকৃতি প্রায় গোল, রং সবুজ, গ্রন্থন দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী। চালতার শাঁস নানাখাদ্যে ব্যবহার করা হয়। চালতার আচার, জেলি, জল দিয়ে রান্না করা নির্যাস খেতে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।

চালতার কাঠ দৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী। জ¦ালানি ছাড়াও নৌকা ও বন্দুকের বাট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। চালতা গাছ বাংলাদেশ, নেপাল, আসাম ও সিংহলে প্রচুর জন্মায়। এর ইংরেজি নাম ঊষবঢ়যধহঃ অঢ়ঢ়ষব, বৈজ্ঞানিক নাম উরষষবহরধ রহফরপধ। 

লেখা : শ্যামল কায়া