বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের বড়ো একটি শারীরিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ সময় মানসিক পরিবর্তনও হতে শুরু করে। আর টিনএজ বয়সটা উচ্ছলতার। কোন পোশাকটা তাকে মানাবে, কেমন হেয়ারস্টাইলে ভালো দেখাবে, সেসব নিয়েও কৌতূহলের শেষ থাকে না। এর কারণে ত্বক, চুল, মেকআপের বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে এ সময় থেকেই। নিজের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি ঠিক উপায়ে পরিচর্যার বিষয়েও জানা থাকা প্রয়োজন। এ বয়সে ত্বকে নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, ব্রন ওঠা, ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যাওয়া। কিশোর বয়সে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য ত্বকের গ্রন্থিগুলো বেশি তেল নিঃসরণ করে। ত্বকের ছিদ্রে তেল-ময়লা ঢুকে ব্ল্যাকহেডসের উৎপাত বাড়ে। এসময় ত্বকের কোনো ক্ষতি সারাজীবনের জন্য স্থায়ী হয়ে যেতে পারে! প্রাপ্তবয়স্কদের থেকে টিনএজারদের সৌন্দর্যচর্চা একেবারেই ভিন্ন। টিনএজারদের ত্বকের ধরন বড়োদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এদের ত্বক খুবই কোমল ও সেনসেটিভ হয়। কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারলে সারাবছর ত্বকের নানা সমস্যা সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব।
টিনএজ বয়সটা উচ্ছলতার
ত্বক ও চুলের যতেœর আদর্শ সময় বয়ঃসন্ধিকাল। শৈশবে শিশুর ত্বক ও চুলের যতœ সাধারণত মা বা পরিবারের অন্য সদস্যরা নিয়ে থাকেন। কিন্তু যখন একজন মানুষ কৈশোরে পদার্পণ করে, তখন সে নিজেকে বুঝতে ও জানতে শুরু করে। এসময় থেকেই যদি ত্বক ও চুলের যতœ সঠিকভাবে নেওয়া যায় তাহলে ভবিষ্যতে সেগুলো সুস্থ, সুন্দর ও রোগমুক্ত থাকবে। সবচেয়ে বড়ো বিষয়, প্রিম্যাচিউর এজিং মানে বয়সের আগেই ত্বক ও চুল বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা, তা এড়ানো যাবে। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সকেই আমরা বয়ঃসন্ধি বলে থাকি। এ বয়সে মেকআপ না করাই ভালো। অতিরিক্ত মেকআপ ত্বক নষ্ট করে ফেলে। বয়ঃসন্ধিকালে ত্বক ও চুলের যতেœ টিনএজারেরা সাধারণত দুই ধরনের ভুল করে থাকে। একটি হলো যতেœ অনীহা ; অন্যটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত যতœ নেওয়া।
যত্নে অনীহা
টিনএজারদের অনেকে মনে করে, এ সময় ত্বক ও চুলের যত্নের প্রয়োজন নেই। ফলে যতেœর ব্যাপারে উদাসীনতা চলে আসে। সেইসঙ্গে তাদের জীবনযাপনও থাকে অনিয়ন্ত্রিত। সঠিক পুষ্টিকর খাবার না খেয়ে জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড বা ভাজাপোড়াজাতীয় খাবারে অভ্যস্ত থাকে। তার ওপর আছে ঠিকমতো না খাওয়া, পরিমিত না ঘুমানো এমন সব সমস্যা। এখন শুরু হয়েছে ডিজিটাল অ্যাডিকশন। এই সবকিছুর প্রভাব তাদের শরীরের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ও চুলেও পড়ে।
চুল
জীবনযাপনের একটা প্রভাব তো চুলে পড়েই। এ বয়সের অনেকেই আছে, যারা উদাসীন। চুল যে নিয়ম করে আঁচড়াতে হয়, পরিষ্কার করতে হয়, সুন্দর করে মুছে বাতাসে শুকাতে হয়, সেটিও তারা করে না বা জানে না। ফলে চুলপড়া থেকে শুরু করে মাথার ত্বকে সমস্যা বা উকুন ইত্যাদির সমস্যায় ভোগে। এ বয়সে চিরুনি ও তোয়ালেও অনেকে একসঙ্গে ব্যবহার করে। ফলে চুলের সমস্যাগুলো থেকেই যায়।
প্রয়োজনের অতিরিক্ত যতœ নেওয়া
বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েরা ত্বকের যতেœ একটু বেশি উৎসাহী থাকে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিত্যনতুন পণ্য, চলতি মেকআপ ট্রেন্ড সম্পর্কে জানা যায় খুব সহজে। ফলে বিভিন্ন পণ্যের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে আকৃষ্ট হয়ে কিছু না ভেবে কিনে ব্যবহার করছে কিশোর-কিশোরীরা। ব্যবহারের পর দেখা দেয় বিভিন্ন জটিলতা। এই বয়সীদের রং ফরসাকারী ক্রিম কেনা ও ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এ ধরনের ক্রিমে যেসব উপাদান থাকে, সেগুলোর বিষাক্ত ও রাসায়নিক উপাদান ত্বকের আবরণ পাতলা করে, পিএইচের ভারসাম্য নষ্ট করে, ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে দেখা দেয় ব্রন, গজায় অবাঞ্ছিত লোম, ত্বকের স্বাভাবিক রং নষ্ট হয়ে একেক জায়গায় একেক রং দেখা যায়। যাকে আমরা আন-ইভেন স্কিন টোন বলে থাকি।
কিশোর-কিশোরীরা ত্বকের ধরন না বুঝে পণ্য ব্যবহার করার মতো ভুল করে নিয়মিত। দেখা যায় উপযুক্ত বয়সের আগেই এমন কিছু পণ্য তারা ব্যবহার করেছে, ত্বকের জন্য যেগুলো ভালো নয়। অনেকের আবার এ বয়সে মেকআপের প্রতিও ঝোঁক থাকে। ফলে তারা মেকআপ বেশি করে। এতে ত্বকের ক্ষতি হয়। চিন্তার বিষয় হলো, মেকআপ করার পর তারা ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে না।
হেয়ার স্টাইলিংয়ে অনেকেই ব্লো ড্রাইসহ নানাভাবে চুল হিট করতে চায়। কিন্তু বুঝতে হবে, অতিরিক্ত ঠান্ডা ও অতিরিক্ত গরমÑ দুটোই চুলের টেক্সারের জন্য ক্ষতিকর। অনেকে চুলে রং করে ও রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে। সেটাও চুলের ক্ষতি করে।
সহজ ধাপে চুলের যত্নে
ভুলগুলো এড়িয়ে কয়েকটি সহজ ধাপে ত্বক ও চুলের যতœ নেওয়া যায়Ñ
ষ ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার, ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তবে এ বয়সে হরমোনের তারতম্যের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে থাকে। এর ফলে ৮৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীর ত্বকে ব্রন দেখা দেয়। ব্রন দেখা দিলে অবশ্যই ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ষ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সবকিছুই হবে ওয়াটারবেজড। যেমন যাদের ব্ল্যাক হেডস ও হোয়াইট হেডসের সমস্যা থাকে, তারা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে ফেসিয়াল অ্যাসেন্স ব্যবহার করতে পারে।
ষ সানস্ক্রিন খুব নিয়ম মেনে ব্যবহার করতে হবে।
লেখক : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ