সিনেমার পালে ‘বিশ্বসুন্দরী’র হাওয়া

20 Jan 2021, 12:40 PM কাভার স্টোরি শেয়ার:
সিনেমার পালে ‘বিশ্বসুন্দরী’র হাওয়া

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সেকি মোর অপরাধ ?.... সুন্দর নিয়ে এই রকম হাজার কবিতা, গান, গল্প বা উপন্যাসের শেষ নেই। পৃথিবীর শুরু থেকেই মানুষ সুন্দরের পূজারি। সুন্দরী কথাটি শুনলেই যেন মনের ভেতরে এক অন্যরকম অনুভূতির সৃষ্টি হয়। আর যদি সুন্দরী’র সঙ্গে বিশ্ব যোগ করা হয় অর্থাৎ ‘বিশ্বসুন্দরী’ বলা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। বলছি বাংলাদেশের বিশ্বসুন্দরী’র কথা। এই বিশ্বসুন্দরীর সাক্ষাৎ মিলবে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিতে বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...


হাজার রমণীর ভিড়ে

তুমি এক অনন্যা

শতক সুন্দরীর ভিড়ে

তুমি রূপসী কন্যা

-কাজী আনিসুল হক


দীর্ঘদিন ধরেই নতুন কিছু করার স্বপ্ন বুনে আসছিলেন রোমান্টিক নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। আর সেই স্বপ্নটি দেখছিলেন বড়োপর্দা কেন্দ্র করে। যখন বাংলা সিনেমা থেকে দর্শক প্রায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন ঠিক সেইসময় গুণী নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী ভাবলেন কীভাবে দর্শককে হলমুখী করা যায়। দীর্ঘদিন যাবৎ গবেষণা করলেন দর্শকের চাহিদা নিয়ে। সঙ্গে যুক্ত করলেন নিজের পরিবার ও কাহিনিকার রুম্মান রশিদ খানকে। কারণ, ইতোমধ্যে রুম্মান রশিদ একাধিক ছবি লিখে নিজের জাত চিনিয়েছেন। চয়নিকা চৌধুরী ও রুম্মান রশিদ দীর্ঘ আলোচনার পর একটি গল্প পেলেন। যার নাম ‘বিশ্বসুন্দরী’। যে-গল্প নির্মাণের আগেই নির্মাতাকে কাঁদিয়েছিলেন, তাই দেরি না করে চয়নিকা চৌধুরী বিশ্বসুন্দরীকে নির্বাচন করলেন তার প্রথম সিনেমার জন্য। ছবিটির মহরত থেকেই জানান দিচ্ছিল নতুন কিছু হতে যাচ্ছে, তাই মুক্তির আগেই সিনেমাটি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। তার প্রমাণ ছবিটি মুক্তির পর থেকেই কয়েকটি সিনেমা হলে টানা হাউজ ফুল হচ্ছে। যখন আমাদের সিনেমার জরাজীর্র্ণ অবস্থা, ঠিক সেই মুহূর্তে ‘বিশ্বসুন্দরী’ যেন প্রচÐ গরমে এক পসলা বৃষ্টি হয়ে আসে।

কয়েক বছর ধরেই সিনেমায় সাফল্য আসছে না। এর মধ্যে প্রতিবছরই কমে যাচ্ছে সিনেমা হলের সংখ্যা, সেইসঙ্গে কমছে সিনেমার সংখ্যাও। সব মিলিয়ে কঠিন একটা সময় পার করছে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি। সিনেমার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই বছর থেকে ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে যাবে বাংলা চলচ্চিত্রকে। সেইভাবে কাজও চলছিল কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা সবকিছুর মতো চলচ্চিত্রেও আঘাত হানে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এবং শোচনীয় একটি বছর হয়ে দাঁড়ায় ২০২০ সাল। যা অতীতে কখনোই এতটা করুণ অবস্থায় পড়েনি। চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সিনেমা মুক্তি পায় এ বছর। করোনায় লকডাউনের জন্য অন্যান্য সবকিছুর মতো সিনেমা হলগুলোও বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। যার ফলে সিনেমা মুক্তির সংখ্যাও কম ছিল। এবছর মোট ১৫টি সিনেমা মুক্তি পায়। এর মধ্যে দেশীয় চলচ্চিত্র ১২টি, আমদানিকৃত সিনেমা দুটি এবং যৌথ প্রযোজনার একটি ছবি।

মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর মধ্যে বছরের শেষে এসে আলোচনায় আসে চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবিটি। ১১ ডিসেম্বর ২৬টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ছবিটি। শুরু থেকেই সিনেমাটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। চয়নিকার চৌধুরীর প্রথম সিনেমা, সিয়াম-পরীমণি জুটিবেঁধে প্রথমবার অভিনয়, সব মিলিয়ে দর্শকের আগ্রহ একটু বেশিই ছিল।

সিনেমা মুক্তির আগেই গানগুলো বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে ওঠে। রুম্মান রশীদ খানের কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপে ‘বিশ্বসুন্দরী’ মুক্তির পর থেকেই হলগুলোতে দর্শকের ভিড় জমতে শুরু করে। স্টার সিনেপ্লেক্সে টিকেট সংকট দেখা দিলে বিশেষ প্রদর্শনের ব্যবস্থা করে কর্তৃপক্ষ। এখনো এই মহামারির ভেতরেও তৃতীয় সপ্তাহে এসেও হলগুলোতে ‘বিশ্বসুন্দরী’ দেখতে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়। ছবিটি দেখে সবাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। সব মিলিয়ে বলা যায় বছর শেষে চলচ্চিত্রে হতাশার বছরে আশার আলো দেখালো ‘বিশ্বসুন্দরী’। ছবিটি দেশব্যাপী পরিবেশনা করছে জাজ মাল্টিমিডিয়া।

মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমকে ঘিরে ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির গল্প। সব শ্রেণির দর্শক পরিবার নিয়ে উপভোগ করার মতো একটি চলচ্চিত্র বলে জানান নির্মাতা। সিয়াম-পরী ছাড়াও এতে আরো অভিনয় করেছেন চম্পা, আলমগীর, ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আনন্দ খালেদ, খালেদ হোসাইন সুজন প্রমুখ।

পরীমণি

[অভিনয়শিল্পী]

এই ছবির মধ্য দিয়ে পরীমণি আবারো আলোচনায় এসেছে। সিনেমায় যেমন আলোচনায় এসেছে, তেমনি ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায়, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক। পরীমণির আসল নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলায়ই মা-বাবাকে হারান পরীমণি। বড়ো হয়েছেন পিরোজপুরে নানা শামসুল হক গাজীর কাছে। এসএসসি পর্যন্ত বরিশালেই পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেই তিনি তার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করেন। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার বড়োপর্দায় অভিষেক হয়। ওই বছরই ‘রানা প্লাজা’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘মহুয়া সুন্দরী’, ‘রক্ত’, ‘অন্তরজ¦ালা’, ‘পাগলা দিওয়ানা’, ‘ভালোবাসবো তোমায়’, ‘মনজুড়ে তুই’, ‘লাভার নাম্বার ওয়ান’, ‘নগর মাস্তান’, ‘ধূমকেতু’, ‘কত স্বপ্ন কত আশা’, ‘আপন মানুষ’, ‘সোনা বন্ধু’ ‘স্বপ্নজাল’, ‘ইনোসেন্ট লাভ’ প্রভৃতি।

২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন এবং বাফায় নাচ শেখেন। পরীমণি মডেলিংয়ের মাধ্যমে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন নৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছাড়াও টিভিনাটকে অভিনয় করেন। সবচেয়ে অবাক বিষয় ছিল, মুক্তির আগেই তিনি ২৩টি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।


সিয়াম আহমেদ

[অভিনয়শিল্পী]

সিয়াম আহমেদ ছোটপর্দায় দুর্দান্ত অভিনয় করে সবার নজরে আসেন। সেই সুবাদে সুযোগ পেয়ে যান বড়োপর্দায়। পোড়ামন-২ সিনেমার মধ্যেদিয়ে বড়োপর্দায় অভিষেক হয় সিয়ামের। বড়োপর্দায় কাজের আগে তিনি একাধিক নাটকেও অভিনয় করে প্রশংসা কুড়ান। সিয়াম আহমেদ ২৯ মার্চ ১৯৯২ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সিয়াম ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। পরের বছরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীসময়ে যুক্তরাজ্যে নর্থাম্ব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আইন বিষয় নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য লেখাপড়া করেন। সিয়ামের মিডিয়ায় ক্যারিয়ার শুরু হয়ে ২০১২ সাল থেকে টেলিভিশনে নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র, উপস্থাপনার মধ্যে দিয়ে। তার প্রথম নাটক ছিল ‘ভালোবাসা ১০১’। এর পরে তিনি একাধিক টিভি নাটকে অভিনয় করেন, যার মধ্যে রয়েছে : ঝড়ের পরে, শিহরণের গান, তোমার আমার প্রেম, টু লেট ব্যাচেলর, মিস্টার বয়েড ফ্রেন্ড প্রভৃতি। ২০১৭ সালে পোড়ামন-২ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্র অভিষেক হয়। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য অন্যান্য ছবি হলো ‘দহন’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘স্বপ্নবাজী’ প্রভৃতি।


যেসব সিনেমা হলে দেখা যাচ্ছে ‘বিশ্বসুন্দরী’

স্টার সিনেপ্লেক্স [বসুন্ধরা সিটি, ঢাকা], স্টার সিনেপ্লেক্স [সীমান্ত সম্ভার, ঢাকা], স্টার সিনেপ্লেক্স [এসকেএস টাওয়ার, ঢাকা], বøকবাস্টার সিনেমাস্ [ঢাকা], শ্যামলী সিনেমা [ঢাকা], সিলভার স্ক্রিন [চট্টগ্রাম], মম ইন [বগুড়া], সিনেস্কোপ [নারায়ণগঞ্জ], স্কাই মুভি থিয়েটার [কক্সবাজার], চিত্রামহল [ঢাকা], আনন্দ [ঢাকা], বিজিবি অডিটোরিয়াম [ঢাকা], সৈনিক ক্লাব [ঢাকা], চাঁদমহল [কাঁচপুর], বর্ষা [জয়দেবপুর], সেনা অডিটোরিয়াম [নবীনগর, সাভার], চন্দ্রিমা [শ্রীপুর], মনিহার [যশোর], শাপলা [রংপুর], রূপকথা [পাবনা], সিনেমা প্যালেস [চট্টগ্রাম], সুগন্ধা [চট্টগ্রাম], লিবার্টি [খুলনা], সংগীতা [খুলনা], নন্দিতা [সিলেট] ও অভিরুচি [বরিশাল]। 


চয়নিকা চৌধুরী

[নির্মাতা]

একজন নারী যখন প্রথম মা হন, তখন তার যেমন অনুভ‚তি হয়, আমার অনুভূতি ঠিক তেমনি ছিল। ১ ডিসেম্বর আমার জন্মদিন ছিল, ওইদিনই জানতে পারলাম ১১ ডিসেম্বর মুক্তি পাবে আমার প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বসুন্দরী’, তখন থেকেই আমার বুকে ধুকধুক শুরু হয়ে যায়, বারবার একই প্রশ্ন মনে ভেসে আসে দর্শক কীভাবে নেবেন আমার প্রথম ছবিটিকে। আমি কাজ করি দর্শকের জন্য, এতদিন নাটক বানিয়েছি দর্শকের জন্য, তারা গ্রহণ করেছে। এখন সিনেমা বানিয়েছি তাদের জন্য, সিনেমাটি মুক্তির পর যেভাবে দর্শকরা সিনেমাটি গ্রহণ করেছে, এই জন্য আমি আমার দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। দর্শকের সাড়া আমাকে এই অঙ্গনে আরো দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। সিনেমাটি দেখে দর্শক প্রশংসা করেছে, গল্প ও নিমার্ণের প্রশংসা করেছে। আমি একটা কথা বিশ্বাস করি, কোনো ভালো কাজই একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। সবার সমান্বয়ে কাজটি সুন্দর রূপ পেয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ নেতিবাচক কোনো কথা বলে নি। সবাই প্রশংসা করছে। এটা ভালো লাগছে। সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড এই বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়ে ছবিটি মুক্তি দিয়ে যে সাহসিকতা দেখিয়েছে আমি প্রতিষ্ঠানের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এরমধ্যে আমি এফডিসিতে গিয়েছিলাম, সিকিউরিটি থেকে শুরু করে সবাই ‘বিশ্বসুন্দরী’র কথা বলল, শুনে ভালো লাগলে। ভেতরে গুলজার ভাই, সোহান ভাই, কিরণ ভাই, এস এ হক অলিক, শাহীন সুমন থেকে সবাই যেভাবে এপ্রিসিয়েট করলেন, সত্যিই আমার মন ভরে গেল। আমি ধন্যবাদ দেব সৃষ্টিকর্তাকে, ধন্যবাদ দেব আমার ছবির প্রযোজক অজয় কুমার কুÐ দাদাকে, সেই সঙ্গে দর্শক, আমার পরিবারকে আর অবশ্যই আমার ছবির টিমকে। এখনো পর্যন্ত সারাদেশে ২৭টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি চলছে। দেখার জন্য দর্শকের চাপ বেশি, কিন্তু হল কম। এখনো সব সিনেমা খুলছে না। খুললে হয়ত আরো বেশি আনন্দ পেতাম। যখন প্রতিটি দর্শক ছবিটি দেখবে তখনই আমি নিজেকে সার্থক বলে মনে করবো।

‘বিশ্বসুন্দরী’র বিশ্ব প্রিমিয়ার প্রসঙ্গে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, অবশ্যই বিশ্বব্যাপী প্রদর্শিত হবে। ছবির প্রযোজক অজয় কুমার কুণ্ডের সঙ্গে ওয়াশিংটন, অস্ট্রেলিয়া দুবাই, সৌদি আরব, কানাডাসহ কয়েকটি দেশে কথা হচ্ছে। আশা করি, একাধিক দেশে প্রর্দশিত হবে ‘বিশ্বসুন্দরী’।

নতুন ছবি প্রসঙ্গে বলেন দ্বিতীয় সপ্তাহে যখন সিনেমাটি হাউজফুল হলো, অনেক প্রযোজক আমাকে ফোন করে জানালেন, তারা আমার সঙ্গে কাজ করতে চান, আমি এখন কারো নাম বলতে চাই না ২০২১ সালে আমি আমার দ্বিতীয় ছবির নাম ঘোষণা করব।

বছরের শেষ ছবি, ভালো সাড়া পাচ্ছেন, কেমন লাগছে ? চয়নিকা চৌধুরী বলেন এত মানুষ ছবিটি দেখছেন, এতে কিন্তু আমি খুশি। আমার ছবির মুল হিরো কিন্তু রুম্মান রশিদ খানের গল্পটা। আমি সেজন্য রুম্মান রশিদ খানকে ধন্যবাদ দেব। সেই সঙ্গে চিত্রগ্রাহক খায়ের খন্দকার, সম্পাদক ইকবাল কবীর জুয়েল, আবহসংগীত পরিচালক ইমন সাহা, সহকারী পরিচালক অমিতাভ আহমেদ রানা, সুব্রত মিত্র এবং মইনুল ওয়াজেদ রাজীবসহ সকলকে ধন্যবাদ দেব। যারা অভিনয় করেছেন সিয়াম, পরীমণি, চম্পা, আলমগীর, ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আনন্দ খালেদ, খালেদ হোসাইন সুজনসহ সকলেই যার যার জায়গায় ভালো করেছেন। নেপথ্যে যারা যারা সাহায্য করেছেন- সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

প্রথম সিনেমার প্রাপ্তি প্রসঙ্গে বলেন আমি আর সিয়াম এক শো সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে দেখেছি। তাদের এক্সপেশন কিন্তু সবচেয়ে সৎ, সেখানে আমি বেস্ট জিনিসটি পেয়েছি, সেটা হলো তাদের ভালোবাসা। এটা যদি সবার কাছে ভালো লাগে তাহলে এটাই হবে আমাদের বড়ো প্রাপ্তি। আমার টিমের বড়ো প্রাপ্তি। আমি সমস্ত দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞ তারপরও বলবো, যারা এখনো ছবিটি দেখতে পারেন নি তারা হলে এসে অবশ্যয়ই সিনেমাটি দেখবেন।


রুম্মান রশিদ খান

[কাহিনিকার]

পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী ২০১৬ সাল থেকেই সিনেমার জন্য গল্প চাইছিলেন। ২০১৮ সালের ১৬ জুন ঈদের দিন, তিনি প্রায় আবেগী হয়েই বলেছিলেন, আমার গল্প না পেলে সিনেমার কাজ শুরু করতে পারবেন না। আমি বলেছিলাম, প্রযোজক প্রস্তুত ? তিনি অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ৫জন প্রযোজক প্রস্তুত। তাদের মধ্যে যার সঙ্গে ব্যাটে-বলে মিলবে, তার সঙ্গেই কাজটি করবেন। এরপর কয়েক মাস কেটে যায়। ব্যস্ততার কারণে আর বসা হয় না। ১৬ জানুয়ারি, ২০১৯ দুজনের সময় হয়। পরিচালক আমাকে একটি গল্প শোনান। আমার ঠিক পছন্দ হয়নি। ২৫ জানুয়ারি আমি একটি গল্প শোনাই চয়নিকা চৌধুরী এবং তার ছেলে অনন্যকে। পরিচালক গল্প শুনে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকেন। অনন্যও খুব পছন্দ করেন। এভাবেই জন্ম নেয় ‘বিশ্বসুন্দরী’। শিল্পী তালিকা নিয়ে আলোচনা হয়। তখনও প্রযোজক চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তীসময়ে আমি পরামর্শ দিই, সিনেমার নামটি নিবন্ধন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার জন্য। ঠিক তার পরদিন সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্স লিমিটেড-এর নির্বাহী প্রযোজক অজয় কুমার কুণ্ড পরিচালককে সিনেমা প্রযোজনা করার প্রস্তাব দেন। ‘বিশ্বসুন্দরী’ আমার ক্যারিয়ারের সবচাইতে যতেœ লেখা স্ক্রিপ্ট। বলতে দ্বিধা নেই, ছোটোখাটো অসঙ্গতি বাদ দিলে ‘বিশ্বসুন্দরী’ একটি ভালো ছবি হিসেবেই দর্শকের সামনে এসেছে। আর এ ছবিটি ভালো হবার অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব প্রযোজকের অকৃত্রিম ও স্বচ্ছ পৃষ্ঠপোষকতা, চিত্রগ্রাহক খায়ের খন্দকার, সম্পাদক ইকবাল কবীর জুয়েল, আবহসংগীত পরিচালক ইমন সাহা, সহকারী পরিচালক অমিতাভ আহমেদ রানা, সুব্রত মিত্র এবং মইনুল ওয়াজেদ রাজীবের। এই শক্তিশালী স্তম্ভগুলোর একটি সরিয়ে নিলেই ছবিটি দুর্বল হয়ে যেতে পারত। তাছাড়া ছবির গানগুলো গল্পটিকে অনেক শক্তিশালী করেছে। পরীমণি-সিয়ামের জুটি এবং তাদের অভিনয় মন ছুঁয়ে গেছে। আলমগীর, চম্পা, ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আনন্দ খালেদ, হীরা, সুজন, সীমান্ত নিজেদের জায়গায় সেরা কাজটুকু দেখিয়েছেন। দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা, বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়েও তারা সময় বের করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সিনেমাটি দেখতে এসেছেন। আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। 