একটা স্কুল খুলতে চাই, যেখানে শিশুরা আনন্দের সাথে পড়ালেখা করবে -ফয়জুল্লাহ সাঈদ

21 Mar 2021, 03:05 PM আবৃত্তি শেয়ার:
একটা স্কুল খুলতে চাই, যেখানে শিশুরা আনন্দের সাথে পড়ালেখা করবে -ফয়জুল্লাহ সাঈদ

তিনি একাধারে আবৃত্তিশিল্পী, উপস্থাপক, নির্দেশক, সংগঠক ও লেখক। বাংলাদেশ টেলিভিশনে উপস্থাপক ও সিনিয়র সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত। তার একাধিক আবৃত্তি অ্যালবাম ও গ্রন্থ প্রকাশ পেয়েছে। শিল্পীজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছেন। নন্দিত উপস্থাপক ফয়জুল্লাহ সাঈদ ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে বাংলায় এমএ পাস করেন। আনন্দভুবন-এর সঙ্গে বলেছেন তাঁর আবৃত্তিচর্চা নিয়ে...


আনন্দভুবন : আপনার আবৃত্তিচর্চার শুরু কীভাবে ?

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : আবৃত্তিচর্চার শুরু নব্বই দশকের গোড়ার দিকে। আমি তখন কচিকাঁচার মেলা করতাম। তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। একবার এক অনুষ্ঠানে একটা আবৃত্তি করি। এই আবৃত্তি শুনে দর্শক এতটাই মুগ্ধ হন যে ১৬জন দর্শক এবং বিশিষ্ট জন আমাকে পুরস্কৃত করেন। মূলত সেখান থেকেই আবৃত্তির প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়। এযাবৎ ৪০টি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা ৩০টির মতো বৃন্দ আবৃত্তি প্রযোজনার নির্দেশনা দিয়েছি। ১৯৮৬ সালে আমি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ‘উচ্চারণ আবৃত্তি সংসদ’ নামে একটি আবৃত্তি সংগঠন তৈরি করি। ’৯৪ সালে আমি ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে ’৯৫ সালে স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্রের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাই। এরপর ২০০০ সালে ঢাকা স্বরকল্পন প্রতিষ্ঠা করি।

আনন্দভুবন : আপনার-তো আবৃত্তি অ্যালবাম ও বই প্রকাশ হয়েছে ?

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : ময়মনসিংহ থেকে বের হয় আমার প্রথম আবৃত্তির অডিও অ্যালবাম ‘নেই কেন সেই পাখি’। নজরুল ইন্সটিট্যুট থেকে বের হয় মিক্সড অ্যালবাম। আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পাখির গান ফুলের ঘ্রাণ’ বের হয় বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প থেকে। আমার আবৃত্তিবিষয়ক প্রকাশনা ‘আবৃত্তি মঞ্জরি’ সারাদেশের আবৃত্তি শিল্পীদের কাছে সমাদৃত একটি গ্রন্থ। শিশু-কিশোরদের জন্য আমার লেখা ‘আবৃত্তি ও উপস্থাপনা’ বইটি সারাদেশে শিশু একাডেমিগুলোতে সহযোগী বই হিসেবে পড়ানো হয়।

আনন্দভুবন : বাংলাদেশ টেলিভিশনে কাজ করছেন কত দিন থেকে ?

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনে উপস্থাপক, সাংবাদিক, নাট্যশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত। ১২ বছর ধরে বিটিভি ‘এ সপ্তাহের সংস্কৃতি’ নামে একটি অনুষ্ঠান করছি। এখানে দেশ-বিদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য শিল্প-সংস্কৃতি নানা প্রসঙ্গ তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ‘বৃত্তের বাইরে’ নামে আরেকটা অনুষ্ঠান করছি। শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষা ও বিনোদনমূলক এ অনুষ্ঠানটি সারাদেশের শিশু-কিশোরদের মাঝে সাড়া জাগিয়েছে।

আনন্দভুবন : আপনার বর্তমান কাজ নিয়ে বলুন-

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও বাফাতে প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি নিয়মিত। এছাড়া আমি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে এখানে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। যখন যে দায়িত্ব আসছে সেগুলো পালন করছি।

আনন্দভুবন : আপনার নিজের সংগঠনের কাজ নিয়ে বলুন-

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : আমরা আবৃত্তিচর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রে কাজ করে চলেছি। এখন অনলাইনে আমাদের কার্যক্রম চলছে। করোনাকালীন আমরা নতুন ৪টি প্রযোজনা তৈরি করছি। ‘ঢাকা স্বরকল্পন’ এযাবৎ ৪০টি প্রযোজনা মঞ্চে এনেছে। এছাড়া ‘শিল্পবৃত্ত’ নামে আমার নিজের একটি সংগঠন আছে।

আনন্দভুবন : ‘ঢাকা স্বরকল্পন’-এ আপনার আলোচিত কাজ নিয়ে বলুন-

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : আমার নির্দেশনায় যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে ’৯০ সাল থেকে ‘রাজাকারের নামতা’ ও ‘মেঘ জমেছে আকাশ জুড়ে’ বৃন্দ আবৃত্তি প্রযোজনা মঞ্চায়ন হচ্ছে। এ দুটি প্রযোজনার সারাদেশে সাতশ’র অধিক প্রদর্শনী হয়েছে। এছাড়া আমার নির্দেশনায় উল্লেখযোগ্য প্রযোজনা হলো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ‘রণাঙ্গনের কথা’, নির্মলেন্দু গুণের কবিতা অবলম্বনে ‘বক্ষ ছেঁড়া বজ্রের লণ্ঠন’।

আনন্দভুবন : এসব কাজের স্বীকৃতি কতটা পেয়েছেন ?

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক সম্মাননাই পেয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে ‘কাজী নজরুল ইসলাম আবৃত্তি সম্মাননা পদক’, ‘কবি জসীমউদ্দীন সাংবাদিকতা পুরস্কার’, শিশু একাডেমির শিশু নাট্য প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্দেশক, ‘সাঁকো টেলিফিল্ম সম্মাননা’, ‘স্টার প্লাস কমিউনিক্যাশন পারফর্মিং আর্ট সম্মাননা’, ‘মাদার তেরেসা পদক’, ‘নরেন বিশ্বাস পদক’ ‘বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর পদক’, ‘শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা’ পুরস্কার ইত্যাদি।

আনন্দভুবন : আপনার ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ?

ফয়জুল্লাহ সাঈদ : আমার যদি কখনো সামর্থ্য হয়, আমি এমন একটা স্কুল খুলতে চাই যেখানে শিশু-কিশোরেরা আনন্দের সাথে পড়ালেখা করবে, প্রমিত ভাষায় কথা বলবে, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিল্প-সংস্কৃতির চর্চাও সেখানে থাকবে। 

সাক্ষাৎকার : নিথর মাহবুব