তারকা পরিবারের তারকা

14 May 2023, 03:25 PM দূরদেশ শেয়ার:
তারকা পরিবারের তারকা

কথায় আছে, ‘রক্ত কথা বলে’। বাবা-মাকে দেখেই সন্তানেরা ভবিষ্যতের স্বপ্ন বোনে, এটা স্বাভাবিক। কোনো পেশা বা সখের ক্ষেত্রেও বিষয়টা এমনই। পিতা-মাতার পেশা বা সখকে নিজের পেশা বা শখে পরিণত করেছেন এমন অনেকেই আছেন। তারকাদের মধ্যে এই বিষয়টি বেশি দেখা যায়। তারকাখ্যাতি পেয়েছেন এমন মা-বাবার সন্তানরা সেই পথেই পা বাড়ান। হলিউডের সংগীতজগতে এমন তারকা রয়েছেন যারা তাদের গানের প্রতিভা দিয়ে সারাবিশ্ব মোহিত করছেন বর্তমানে। কিন্তু এদের অনেকের মা অথবা বাবাও যে আগে সংগীতের তারকা ছিলেন এটা হয়ত অনেকেই জানেন না। আজকের দূরদেশ আয়োজনে এমন কয়েকজন সংগীতশিল্পীর কথা থাকছে যারা এসেছেন তারকা পরিবার থেকেই...

মাইলি সাইরাস

এসময়ের জনপ্রিয় সংগীততারকা মাইলি সাইরাসকে চেনেন না এমন লোকের সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন পাওয়া যাবে। তবে অনেকেই হয়ত জানেন না যে, মাইলি সাইরাসের পিতা বিলি সাইরাসও তার সময়ের নামকরা জনপ্রিয় গায়ক ছিলেন। গানের পাশাপাশি তিনি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। বিলি রে সাইরাস ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের আগস্টে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র চার বছর বয়স থেকেই তিনি গান গাইতে শুরু করেছিলেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ৫৩টি সলো ও ১৬টি স্টুডিও অ্যালবাম করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের টপ কান্ট্রি সং চার্টে তার গান ‘অপযু ইৎবধশু ঐবধৎঃ’ টপে জায়গা করে নিয়েছিল। বিলি সাইরাসের মাইলি ছাড়াও আরো দুটি সন্তান রয়েছে। মাইলির মা টিশ ফিনে সাইরাস ছিলেন একজন চিত্র প্রযোজক।

মাইলি সাইরাসও সেই ছেলেবেলা থেকেই বাবার মতো গানের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ডিজনি চ্যানেলের ঐধহহধয গড়হঃধহধ সিরিজে তিনি অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান। তিনি একাধারে গায়িকা, গীতিকার ও অভিনেত্রী।

জ্যাকব ডিলন

সর্বকালের সেরা গীতিকার মানা হয় বিখ্যাত গায়ক ও গীতিকার বব ডিলনকে। তারই সন্তান জ্যাকব ডিলন। বাবার পথ অনুসরণ করে নাম লিখিয়েছেন সংগীতে। বাবা বব ডিলনের জন্ম ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে। তিনি তার জীবনে সংগীতে অবদানের জন্য নানা ধরনের পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে তিনি গ্র্যামি পুরস্কার জিতেছেন দশ বার। তাছাড়া তার অর্জনের তালিকায় আছে গোল্ডেন গেøাব, একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। ছেলে জ্যাকবও তার বাবার মতোই বিখ্যাত হতে পেরেছেন। বিখ্যাত ব্যান্ড ওয়ালফ্লাওয়ার্সের প্রধান গায়ক তিনি। গীতিকার হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। তিনি দুবার গ্র্যামি পুরস্কার জিতেছেন।

জিগগি মার্লে

নাম শুনেই হয়ত অনেকে বুঝে গেছেন, জিগগি মার্লের বাবা কে ! বিখ্যাত সংগীতশিল্পী বব মার্লের বড়ো সন্তান তিনি। বব মার্লে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রæয়ারি। তিনি জ্যামাইকার আদি সংগীতের মধ্যে নতুনত্ব এনেছিলেন যা সারাবিশ্বে জনপ্রিয় হয়েছিল।

যেসকল শিল্পীর সংগীত সবসময়ই বিক্রিতে শীর্ষে থাকে তিনি তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তার জীবদ্দশায় নানা ধরনের পুরস্কার পেয়েছেন। গ্র্যামি থেকে তিনি লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পেয়েছেন। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ১৯৮১ খ্রিষ্টব্দের ১১ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জিগগিও কোনো অংশে পিতা থেকে কম যান না। তিনি একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত প্রযোজক। তিনি এ পর্যন্ত আটবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন।

ন্যান্সি সিনাট্রা

আমেরিকার একসময়ের জনপ্রিয় গায়িকা ন্যান্সি সিনাট্রা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন। পিতা ফ্যাঙ্ক সিনান্ট্রা ও মাতা ন্যান্সি বার্বাটো। ন্যান্সি সিনট্রা কিন্তু বেশ খ্যাতিমান পরিবারেই জন্ম নিয়েছেন। পিতা ফ্রাঙ্ক সিনাট্রা একসময়ের বেশ জনপ্রিয় গায়ক ও অভিনেতা ছিলেন। প্রায় একশত পঞ্চাশটি রেকর্ড বিক্রি হয়েছে তার। তিনি তার প্রথম অ্যালবাম বের করেন ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে। অ্যালবামটির টাইটেল ছিল দ্য ভয়েস অব ফ্রাঙ্ক সিনাট্রা। গানের পাশাপাশি তিনি অভিনয়েও সমান দক্ষ ছিলেন। বিভিন্ন মিউজিক্যাল সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছিলেন। তিনি একটি রেডিও শো শুরু করেছিলেন।

বাবার মতো ন্যান্সিও গান আর অভিনয়ে নিজের দক্ষতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। বাবার একটি টিভি শোতেই ন্যান্সি প্রথম তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। অনেক সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসিত হয়। তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাঞ্জেল, গেট ইউরসেলফস এ কলেজ গার্ল, দ্য ঘোস্ট ইন দ্য ইনভিজিবল বিকিনি।

লিলি অ্যালান

সংগীতভুবনের অনেকেই লিলি অ্যালানকে চেনেন। তিনি একজন প্রতিভাময়ী জনপ্রিয় গায়িকা এবং একজন গীতিকারও বটে। বাবা কিথ অ্যালানও ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। তিনি বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি একাধারে টিভি প্রেজেন্টার, অভিনেতা, গায়ক ও কৌতুক অভিনেতা ছিলেন। তিনি বেশ কয়েকটি কমেডি শোও পরিচালনা করতেন। লিলির মা অ্যালিসন নিজেও ছিলেন এই চিত্র জগতের সঙ্গে জড়িত। তিনি চিত্র প্রযোজক ছিলেন। তার নিজের প্রোডাকশনের নাম ছিল ‘রুবি ফিল্মস’।

লিলি তার মাতা-পিতার মতোই প্রতিভা নিয়ে জন্মেছেন। তিনি সংগীতের ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে। তার প্রথম রেকর্ডের জন্য গ্র্যামি পুরস্কার জেতেন। এছাড়াও তিনি আরো অনেক পুরস্কার জেতেন। কয়েকটি সিনেমায় তিনি নিজের অভিনয় প্রতিভা দেখিয়েছেন। লিলি থিয়েটারেও কাজ করেছেন।

রোমিও মিলার

হলিউডের জনপ্রিয় র‌্যাপার, অভিনেতা এবং টিভি ব্যক্তিত্ব মিলার। তিনি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। রোমিওর পিতা মাস্টার পি এবং মাতা সোনিয়া সি। পার্সি রবার্ট মিলার সিনিয়রের স্টেজ নাম মাস্টার পি। তিনি নিজেও তার সময়ের জনপ্রিয় র‌্যাপার, গীতিকার, অভিনেতা এবং একজন সফল উদ্যোক্তা ছিলেন। তিনি দুটি রেকর্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। ১৫টির মতো স্টুডিও অ্যালবাম রিলিজ করেছিলেন। রোমিও মিলারের মা সোনিয়া সি নিজেও বেশ জনপ্রিয় র‌্যাপার ছিলেন। তার দলের নাম ছিল ‘দ্য আনটাচেবল’। রোমিও নিজের একটি শো পরিচালনা করেছেন। তাকে বেশ কয়েকটি সিনেমায়ও অভিনয় করতে দেখা গেছে।

নোরা জোনস

বিখ্যাত সেতার বাদক রবিশঙ্করের মেয়ে নোরা জোনস। ২০ শতকের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় সেতার বাদক হিসেবে রবিশঙ্কর পরিচিত। সারাবিশ্বের অনেক সংগীতবিশেষজ্ঞ ও সুরকারদের অনুপ্রেরণা তিনি। উত্তর ভারতের সংগীতকে তিনি সারাবিশ্বে পরিচিত করেছেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ভারত রতœ পুরস্কার পান। মেয়ে নোরা জোনস বাবার প্রতিভা পেয়েছেন। তিনি একাধারে গায়িকা, গীতিকার এবং একজন চিত্রকরও বটে। তার ঝুলিতে ৯ বার গ্র্যামি পুরস্কার পাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে সেরা জাজ আর্টিস্ট ছিলেন। তিনি অনেকগুলো অ্যালবাম বের করেছেন। তাকে মাই বøুবেরি লাইটস সিনেমায়ও দেখা গেছে।

লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন