ইউটিউব টু টেলিভিশন

12 Apr 2023, 01:48 PM আকাশলীনা শেয়ার:
ইউটিউব টু টেলিভিশন

ছোটোপর্দার বর্তমান সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা শামীম হাসান সরকার। বেশ কয়েক বছর ধরেই ছোটোপর্দায় একের পর এক নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তার অভিনয় দক্ষতা দিয়ে যেকোনো চরিত্রই সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন তিনি। নাটকে অভিনয়ের আগে থেকেই একজন সফল ইউটিউবার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। শামীম হাসান সরকারকে নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবার আকাশলীনা আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


শামীম হাসান সরকার ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা শেষ করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে। তারপর মালয়েশিয়া চলে যান। সেখানে ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন চাকরি করেন। মিডিয়ায় কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে অভিনয়ে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। মালয়েশিয়ায় থাকাকালেই প্রতিষ্ঠা করেন ইউটিউব চ্যানেল ‘ম্যাঙ্গো স্কোয়াড’। মেধা, কর্মদক্ষতা এবং পরিশ্রমের ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই হয়ে ওঠেন বাংলা ভাষার জনপ্রিয় ইউটিউবার।

ইউটিউবার হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভের পর টেলিভিশন নাটকে দেখা যায় শামীম হাসান সরকারকে। সাবলীল অভিনয়গুণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকহৃদয়ে জায়গা করে নেন তিনি। ইতোমধ্যে ১ ডজনের বেশি ধারাবাহিক নাটক এবং বহু একক নাটকে দেখা গেছে তাকে।

শামীম হাসান বলতে গেলে ইউটিউব থেকেই সফলতা পেয়েছেন। ইউটিউব অভিনেতা থেকে হয়ে গেছেন একজন জনপ্রিয় টিভি অভিনেতা। শামীম হাসান সরকারের শুরুটা হয়েছিল ক্যাডেট কলেজ থেকে। ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় গান, অভিনয়, মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। বহুমুখী প্রতিভায় বিকশিত শামীম হাসান একসময় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নেন ইউটিউবকে। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে ছুটির দিনগুলোতে ছোটো ছোটো মজার মজার হাসির ভিডিও বানিয়ে ছেড়ে দিতেন ইউটিউবে। ভিডিওগুলো শুধু মজারই ছিল না, সেগুলোতে থাকত বিশেষ বার্তা। যার কারণে, অল্প সময়ের মধ্যে অসংখ্য ভিউ হতো। ইউটিউব থেকে ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পান তরুণ এই অভিনেতা। নাটকের কয়েকটি পর্ব টিভিতে প্রচারিত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো দেশের বেসরকারি টেলিকম অপারেটর রবির বিজ্ঞাপনে কাজের সুযোগ আসে তার। জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাচেলার পয়েন্ট, নাইন অ্যান্ড হাফ, হাউজ নাম্বার ৪৪, ব্যাক বেঞ্চার, তরুণ তুর্কি এবং কারসাজি। এরমধ্যে ব্যাচেলর পয়েন্টের মাধ্যমে তিনি সবচাইতে বেশি আলোচিত হন।

বছরের প্রায় সময়ই শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন শামীম হাসান সরকার। বিশেষ দিবস কিংবা ঈদের সময় সেই ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যায়। গত ঈদে তার বেশ ক’টি নাটক প্রচার হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক সাড়া ফেলেছে। পেয়েছেন দর্শকের প্রশংসাও।

বর্তমান ব্যস্ততার কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘ঈদের কাজ নিয়ে প্রচÐ ব্যস্ত আছি। এবার ঈদে আমার বেশ কিছু নাটক প্রচারিত হবে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন এবং ইউটিউব চ্যানেলে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক প্রচারিতও হয়েছে আমার। আর্টিস্ট কল, মিট মাই ওয়াইফ, শ্বশুরবাড়ি নোয়াখালী, ওয়াইফ ইজ বিউটিফুল, আগে প্রেম পরে বিয়ে, বিয়ের ট্রাভল নাটকগুলো দর্শকদের বেশ প্রশংসা পেয়েছে।’

মাস দুয়েক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ছোটোপর্দার জনপ্রিয় জুটি শামীম হাসান সরকার ও অহনা রহমানকে ঘিরে একটি পোস্ট। গোপনে বিয়ে করা নিয়ে আলোচনায় আসেন শামীম-অহনা। মূলত, অভিনেতা শামীমই মজার ছলে বিষয়টি উসকে দেন।

২৩ জানুয়ারি, ২০২৩ মধ্যরাতে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে ‘বিবাহের হলফনামা’ প্রকাশ করেন শামীম। অহনাকে ট্যাগ করে দেওয়া সেই পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ।’ এরপরই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা সৃষ্টি হয়, মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় শামীম হাসান সরকারের সেই পোস্টটি। নেটিজেনদের অনেকেই তাদের অভিনন্দনও জানান। আসলে বাস্তবে নয়, সেটি ছিল নাটকের ‘বিবাহের হলফনামা’।

এরপর তাদের দু’জনের আরেকটি পোস্ট নিয়ে চলে ফের আলোচনা। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেক কাটার মুহূর্তের একটি ভিডিও পোস্ট করে নেটিজেনদের দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন অহনা। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘দুই ডজন কাজ এত অল্প সময়ে, আলহামদুলিল্লাহ।’ আসলে একসঙ্গে দুই ডজন নাটকের কাজ শেষ করেছেন তারা। এ উপলক্ষে কেক কেটে সেটাই উদ্যাপন করেছেন এ জুটি।

অন্যদিকে অহনার পোস্টটি নিজের ওয়ালে শেয়ার করে শামীম হাসান সরকার লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমরা পেরেছি। আরো যেতে হবে।’ তারা দুজনই নিজেদের পোস্টে একে অপরকে ট্যাগ করে দিয়েছেন। সঙ্গে যুক্ত করেছেন লাভ ইমোজি। শামীম-অহনা জুটি বেঁধে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। গেল ভালোবাসা দিবসে রিফাত আদনান পাপনের পরিচালনায় ‘কোটি টাকার কাবিন’ নামের একটি নাটকে জুটি বেঁধে কাজ করেন শামীম-অহনা।

শামীম হাসান সরকার ১৫ ডিসেম্বর, যশোর জেলার, ঝিনাইদহে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। তার বাবা একজন ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। শামীম নিজের শহরে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ায় [ইউটিএম] থেকে স্নাতক পাস করেন।