সেলিব্রিটি আগনেজ মনিকা

22 Dec 2021, 12:21 PM দূরদেশ শেয়ার:
সেলিব্রিটি আগনেজ মনিকা

ইন্দোনেশিয়ার জনপ্রিয় নায়িকাদের তালিকা করলে আগনেজ মো-এর নাম তালিকার সবার আগে থাকবে। আগনেজ মো অবশ্য তার স্টেজ নাম। তার পুরো নাম আগনেস মনিকা মুলজতো। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে ধনী সেলিব্রিটি তিনি। শুধু গায়িকা হিসেবে নয়, তিনি একাধারে গীতিকার ও অভিনেত্রীও বটে। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন দেশের গান ও সিনেমা সম্পর্কে পরিচিত। আগনেজ মো বেশ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ায়ও। জনপ্রিয় এই ইন্দোনেশিয়ার গায়িকাকে নিয়ে এবারের দূরদেশ আয়োজন ...

আগনেজ মনিকা মুনজতো ১৯৮৬ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার মূলত জার্মান, জাপানিজ ও চাইনিজ বংশোদ্ভূত। মা জেনি সিময়োনো ছিলেন একজন টেনিস খেলোয়াড় আর বাবা রিকি মুনজোতো একজন বাস্কেট খেলোয়াড় ছিলেন। তার ভাই স্টিভ মূলত বর্তমানে আগনেজের ম্যানেজার হিসেবেই কাজ করছেন। খেলোয়াড় পরিবারে বড়ো হলেও আগনেজের মূলত খেলাধুলার প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না। ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতিই তার আগ্রহ ছিল বেশি। সেই বয়সেই তার গানের প্রতিভা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন সকলকে।
মাত্র ছয় বছর বয়সে শিশু গায়িকা হিসেবে তিনি তার গানে কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথম দিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংগীত শেখেননি তিনি। কিন্তু তার প্রতিভা নজরে আসার পর বাড়িতেই তিনি তালিম নিতে শুরু করেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে সংগীতে তার ক্যারিয়ার শুরু করার পর সে তার প্রথম অ্যালবাম ‘সি মিয়ঙ্গ’ রিলিজ করেন ১৯৯২ সালে। তবে এই অ্যালবাম শ্রোতারা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তিনি শিশু গায়িকা হিসেবেই তার ২য় অ্যালবাম ‘ইয়েস’ মুক্তি দেন ১৯৯৫ সালে। এই অ্যালবাম তিনি যৌথভাবে করেন ইন্দোনেশিয়ার আরেক জনপ্রিয় শিশু গায়িকা ইজা ইয়াইয়ার সঙ্গে। এই অ্যালবামটি অবশ্য তার প্রথম অ্যালবাম থেকে বেশি সফল হয় এবং শিশু গায়িকা হিসেবে অনেক নামডাকও হয়। পরবর্তীসময়ে তার তৃতীয় অ্যালবাম ‘বালা-বালা’ মুক্তি পাওয়ার পরই মূলত তিনি আর শিশু গায়িকা হিসেবে কাজ করেননি। এই অ্যালবামটি অবশ্য দারুণ ব্যবসায় সফল হয়।
এরপর অবশ্য তিনি পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেন। অনেক টিভি শোতেও তিনি অংশ নেন। ‘ভিডিও আনাক এনটিভে’ ও ডিবা রোমিও টিভি শোতে তিনি অংশগ্রহণ করেও দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টিভির বিভিন্ন উপস্থাপনায়ও তিনি ছিলেন সাবলীল। ১৯৯৯ ও ২০০০ সালে তিনি সেরা ছোটদের অনুষ্ঠান সঞ্চালক হিসেবে প্যানাসনিক পুরস্কার জেতেন। পরবর্তীসময়ে তিনি বিভিন্ন সিরিয়ালে ছোট ছোট রোলে অভিনয় শুরু করেন। ২০০০ সালে ‘পার্নিকাহান দিনি’ সিরিজে টিনএজার হিসেবে দারুণ অভিনয় করে তিনি বুঝিয়ে দেন তিনি আরো চ্যালেঞ্জিং চরিত্রের জন্য তৈরি। এই সিরিজে অভিনয়ের জন্য তিনি প্যানাসনিক পুরস্কারও জেতেন। পরবর্তী দুই বছরে তিনি ইন্দোনেশিয়ার টিভি জগতে বেশ নামকরা অভিনেত্রীর তালিকায় নিজেকে নিয়ে যান। অসধহফধ, ঈরাসধহ চবৎফধসধ ধহফ শবলধৎ উধশঁ শধঁ শঁ ঞধহমশধঢ় ডেইলি যোগগুলোতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ইন্দোনেশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকাতে পরিণত হন।
টিভির জনপ্রিয়তা শেষ করে আবারো তিনি নাম লেখান মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে। ২০০৩ সালে তিনি তার অ্যালবাম ‘অ্যান্দ দ্য স্টোরি গোজ’ মুক্তি দেন। এর মধ্যে তিনি বেশ নামিদামি ইন্দোনেশিয়ান সংগীতশিল্পী, সুরকার ও গীতিকারদের সঙ্গে কাজ করেন। তার অ্যালবাম ‘অয়ঁধৎরঁং গঁংরশরহফষড়’ সারাদেশব্যাপী দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এই অ্যালবাম দেশব্যাপী দারুণ সাড়াও ফেলে। এই সফলতার পর তিনি তার টিভি ক্যারিয়ারেও আরেক ধাপ এগিয়ে যান। অনেকগুলো টিভি শোতে তিনি যোগ দেন।
২০০৫ সালে তিনি তার ২য় অ্যালবাম রিলিজ করেন। এই অ্যালবামে তার সঙ্গে ছিল ইন্দোনেশিয়ার নামিদামি শিল্পীরা। এই অ্যালবামে আমেরিকান শিল্পী কেথ মার্টিনের সঙ্গে একটি দ্বৈত গান করেন যা তাকে আরো জনপ্রিয় করে তোলে। এই অ্যালবামটি ৪৫০ হাজার বিক্রি হয় যা বছরের সেরা সফলতা তার জন্য। ২০১০ সালে ইন্দোনেশিয়ান আইডল অনুষ্ঠানে তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানেও তিনি হোস্ট হিসেবে ডাক পান। ২০১৩ সালে তিনি বেশ কয়েকজন আমেরিকান শিল্পীদের সঙ্গে গান করেন। ২০১৮ সালে তিনি ভোগ ইউএসএ-তে কাভার হন।
ব্যক্তিগত জীবনে আগনেজ একেবারেই মুখ খুলতে নারাজ। তকে অনেকের সঙ্গেই বিভিন্ন সময় সম্পর্কে জড়াতে দেখা গেছে। কিন্তু কারো সঙ্গে সম্পর্কের কথা তিনি কখনোই স্বীকার করেননি। তার ভাষ্যমতে, ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তিগত থাকাই উচিত। ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ সংগীত তার বিশাল এক অংশ জুড়ে রয়েছে। আগনেজ মো সেই শিল্পকে বিশ্বদরবারে নিয়ে গেছেন। ইন্দোনিশিয়ান সংগীতকে বিশ্বদরবারে পরিচিতি ও জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনেক।
লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন