শরতের দুধফুল টগর

23 Aug 2021, 12:01 PM প্রকৃতি শেয়ার:
শরতের দুধফুল টগর

এসেছে শরৎ হিমের পরশ

লেগেছে হাওয়ার পরে

সকাল বেলায় ঘাসের আগায়

শিশিরের রেখা ধরে।

আমলকীবন কাঁপে যেন তার

বুক করে দুরু দুরু 

পেয়েছে খবর পাতা খসানোর

সময় হয়েছে শুরু।

শিউলির ডালে কুঁড়ি ভরে এল

টগর ফুটিল মেলা

মালতীলতায় খোঁজ নিয়ে যায়

মৌমাছি দুই বেলা।

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পদ্য পড়লে বোঝা যায় প্রকৃতিতে শরৎ এসেছে। শরতের অন্যতম ফুল টগর। টগর গুল্মজাতীয় চিরসবুজ গাছ। টগর ফুল দুই রকমের হয় : থোকা টগর আর একক টগর। বাংলাদেশ ও ভারতে এই দুই রকমের টগরই পাওয়া যায়। একটি টগরের একক পাপড়ি, অন্যটির গুচ্ছ পাপড়ি। এদের ‘বড়ো টগর’ ও ‘ছোটো টগর’ নামে ডাকা হয়। হালকা সুগন্ধ পাওয়া যায় গুচ্ছ পাপড়ির টগর ফুলের। টগর ছাড়াও এলাকাভেদে চাঁদনী, অনন্ত, সাগর ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ইংরেজি ভাষায় Crape jasmine, Caation of India নামে পরিচিত। সারাপৃথিবীতে এই ধরনের ৪০টি প্রজাতি আছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতে নজরে পড়ে চার প্রজাতির টগর। টগর গাছের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। সেখান থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।

ঝাঁকড়া মাথার জন্য টগর গাছ দেখতে বেশ সুন্দর। ডালগুলো সোজা ওঠে না। সুন্দর করে ছেঁটে দিলে বহু শাখা প্রশাখা নিয়ে চমৎকার ঝোপ হয়। কলম করে চারা করা যায়। আবার বর্ষাকালে ডাল পুঁতে দিলেও গাছ হয়। সমতল ভূমির গাছ টগর প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলেও দেখা যায়। বাংলাদেশের বনেবাদাড়ে টগর এমনিতেই জন্মে। টগরের কান্তের ছাল ধূসর। গাছে পাতা বা ডাল ছিড়লে সাদা দুধের মতো কষ ঝরে। এ-কারণে সিলেট অঞ্চলে টগরকে দুধফুল বলে ডাকে। সারাবছর ফুল ফোটে। ফুল থেকে ফলও হয়। তার মধ্যে তিন থেকে ছয়টি বীজ হয়। বড়ো টগরের বোঁটা মোটা এবং একক ফুল ধরে। পাতাও একটু বড়ো।

টগরের মূল ও শেকড় ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। শেকড় তেতো ও কটু স্বাদের। এতে কৃমি ও চুলকানি দূর হয়। ঘামাচিতে টগরের কাঠ ঘষে প্রতিদিন চন্দনের মতো গায়ে মাখলে উপকার হয়। অনেকে টগরের কাঁচা ডাল চিবিয়ে দাঁতের অসুখ সারায়। 

লেখা : শ্যামল কায়া