২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’ রিয়েলিটি শো’তে দ্বিতীয় হন মিম চৌধুরী। এর আগে মিম দীর্ঘ একটা সময় নৃত্যাঞ্চল পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে নাচ শিখেছেন, নেচেছেন বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানে। রিয়েলিটি শো’র প্রতিযোগিতার পর সুযোগ আসতে থাকে অভিনয়ে। সুযোগ কাজেও লাগান দারুণভাবে । বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
একজন অভিনয়শিল্পীর যে-গুণগুলো জরুরি, সবই রয়েছে মিম চৌধুরীর মধ্যে। ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার মিম তার দীর্ঘ ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে দর্শকদের উপহার দিয়েছেন বেশকিছু ধারাবাহিক নাটক, খ-নাটক, টেলিফিল্ম ও চলচ্চিত্র। বর্তমানে এই অভিনয়শিল্পীর একাধিক ধারাবাহিক নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। অভিনয়ের পাশাপাশি সমানতালে উপস্থাপনা ও নৃত্যানুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন।
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করা মিম চৌধুরী এখন ঈদুল আজহার কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি দু’টি টিভি চ্যানেলে নিয়মিত উপস্থাপনা করছেন। অনুষ্ঠান দু’টি হচ্ছে বাংলাভিশনে ‘স্টার ওয়ার্ল্ড আর গ্লোবাল’ টিভিতে ‘গ্লোবাল মিউজিক’। অভিনয় ও উপস্থাপনা ছাড়াও বেশকিছু বিজ্ঞাপনচিত্রেও মডেল হয়েছেন তিনি।
শ্যাম বর্ণের প্রতি যুগযুগ ধরেই মানুষের একটা আবেদন রয়েছে। আর সেই শ্যাম বর্ণ যদি হয় একটু বেশি উজ্জ্বল, তাহলে তো অনেকেই সেই রঙের প্রেমে হাবুডুবু খাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে, মিম সৌন্দর্য দিয়ে দর্শকের মন জয় করার চেয়ে সাবলীল অভিনয় দিয়ে জয় করে নিয়েছেন অসংখ্য দর্শকের হৃদয়।
নিজের সৌন্দর্য নিয়ে নানা উপমা প্রায়ই শুনতে হয় মিমকে। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে, মিমও এর বাইরে নন। তবু সৌন্দর্যের কথা তুলতেই মিম বলেন, মানুষ যতটা বলেন, ততটা নই আমি। আপাতত সৌন্দর্য নয়, অভিনয়কেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন এই অভিনেত্রী। অভিনয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল সেই কিশোর বয়েস থেকেই। মূলত নাচের ক্লাশে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। অভিনয় রপ্ত করার জন্য নাচ শেখার পাশাপাশি গুণী অভিনয়শিল্পীদের প্রচুর নাটক ও সিনেমা দেখতেন। নিজের প্রতিভাকে মেলে ধরতে একটি প্লাটফর্ম খুঁজছিলেন তিনি ; পেয়েও গেলেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে চলে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হন। সেখান থেকেই স্বপ্নের বীজ বপন শুরু। ক্যারিয়ারের শুরুটা বেশ ভালোভাবেই শুরু করলেন তিনি। গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা মাহফুজ আহমেদের পরিচালনায় ‘সরীসৃপ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান। মিম তো অবাক ! যে অভিনেতা ছিল মিমের পছন্দের তালিকায়, তার সঙ্গে সূচনা ! স্বভাবতই প্রিয় অভিনেতার সঙ্গে প্রথম কাজ, একটু বেশিই উচ্ছ্বাস ছিল মনে।
গুণী অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ আমাকে শিখিয়েছিলেন ‘অ্যাকটিং হচ্ছে রি-অ্যাক্টিং, অতিরিক্ত কিছু করতে হয় না, একজনের কথা শুনে আর একজন যে রি-অ্যাকশন দেবে সেটাই অভিনয়’। এই কথাটি হৃদয়ে ধারণ করেই আমি অভিনয় করে যাচ্ছি। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তার সঙ্গে ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে টানা পাঁচ থেকে ছয়টি নাটকে কাজ করতে পেরেছিলাম।
বর্তমানে দর্শকের কাছে খ-নাটকের চাহিদা ব্যাপক, কিন্তু খ-নাটকে মিমকে বেশি দেখা যায় না কেন ? এই প্রসঙ্গে মিম বলেন, খুব একটা কমও করি না, অনেকে যেখানে শুধু খ- নাটকে অভিনয় করেন, আমি সেখানে খ- নাটকের পাশাপাশি ধারাবাহিক নাটকগুলোতেও নিয়মিত অভিনয় করি। অনেক খ- নাটকের সুযোগ আসে, ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করায় অনেক সময় ডেট মেলাতে পারি না। তারপরও অনেক খ-নাটকে অভিনয় করা হয়। ধারাবাহিকে বেশি সময় দিই কারণ এখান থেকে অভিনয়ের চর্চা হয়।
বর্তমানে মিম অভিনীত দু’টি ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। এনটিভিতে প্রচার হচ্ছে ‘প্রবাসী পরিবার’। নাটকটি দেশ বিদেশের দর্শকের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অন্যটি আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে কায়সার আহমেদের পরিচালনায় গোলমাল। আরো কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছি, সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রচার হবে।
সবাই যেখানে ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে ব্যস্ত, সেখানে মিম অনুপস্থিত। এই প্রসঙ্গে মিম বলেন, সেখানে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, বাজেটও বেশি থাকছে, কাজগুলো আমিও এনজয় করি, আমার এখনো সৌভাগ্য হয়নি এই প্লাটফর্মে কাজ করার। আমি চাই কাজ করতে। আপনারা জানেন, পড়াশোনা ও করোনার কারণে আমি দীর্ঘদিন কাজ থেকে দূরে ছিলাম। যেহেতু অভিনয়ে একটা গ্যাপ পড়ে গেছে, তাই আবার নিজেকে তৈরি করছি, অভিনয়ের চর্চা এখন করছি, যখন মনে হবে, এখন ওটিটি প্লাটফর্ম বা সিনেমায় কাজ করতে পারব, তখন থেকে এই মাধ্যমগুলোতে কাজ করব ।
সব অভিনয়শিল্পীরই বড়ো একটা স্বপ্ন থাকে রুপালি পর্দাকে ঘিরে। সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছিল মিমের ক্ষেত্রেও, তখন মিম অপরিণত। মাত্র ১৫ বছর বয়েসে শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান সাফি উদ্দিন সাফির পরিচালনায় ‘ভালোবাসা এক্সপ্রেস’ ছবিতে। তবে বয়স কম থাকায় সেখানেই থেমে গেলেন তিনি। এখন যেহেতু গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন, তাই আর বাধা নেই সিনেমায় কাজ করার। প্রবল আগ্রহ রয়েছে এই মাধ্যমে কাজ করার।
নাচ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু, করেছেন উপস্থাপনা- এই দু’টি শাখার কী অবস্থা ?
মিম বলেন, নাচ কখনো ছাড়ব না। কারণ, এই নাচ দিয়েই আমার এখানে আসা। নাচ চলছে, এখনো নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিই। আজও ইন্টারভিউ দিয়ে নাচের একটি রিহার্সেলে যাব। উপস্থাপনাও নিয়মিত করে যাচ্ছি। বাংলাভিশনে প্রতি বৃহস্পতিবার একটি মিউজিক্যাল অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছি।
দীর্ঘ অভিনয় জীবনে এমন কোনো গল্পে কাজ করেছেন, যে-গল্প একজন অভিনয়শিল্পীর তৃষ্ণা মেটায় ? মিম বলেন, অভিনয়ের তৃষ্ণা সমুদ্রের মতো এখন পর্যন্ত সমুদ্রের একফোঁটা পানির তৃষ্ণা মিটেনি। আরো ভালো ভালো গল্পে কাজ করতে চাই, আগে অভিনয়ের ক্ষুধা কতটা ছিল জানি না, এখন অনেক বেড়েছে।
মিম পরিকল্পনা করে পথ চলতে পারেন না, যখন কোনো কিছুর পরিকল্পনা করেন, তার উল্টোটা ঘটে তার জীবনে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিম আরো বলেন, আমি স্রোতের সঙ্গে বহমান।
বলতে গেলে, মিমের বেড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক পরিম-লেই। একটা সময় মিমের বাবা গান করতেন, মা নাচের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাই এখানে কাজ করতে পারিবারিক কোনো প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়নি তাকে। শুরু থেকেই বাবা-মা মিমকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। মিমও বলেন, তাদের সহযোগিতার কারণে আমি আজ অনেক দূর পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আরও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে চাই আমি।
হয়ত অনেকেই লবিং করে ভালো ভালো প্রজেক্টে কাজ করছেন। কিন্তু অভিনয় যদি ভালো না করা যায় কোনো লবিংয়ে কাজ হবে না, দর্শক তাকে গ্রহণ করে না। তাই লবিং ছাড়াই নিজের যোগ্যতায় যতটুকু এগিয়ে যেতে পারছি তাতেই তৃপ্ত আমি।
ছবি : জাকির হোসেন