একজন অভিনয়শিল্পীর যে গুণাবলি জরুরি, সবই বিদ্যমান মিম চৌধুরীর মধ্যে। মিষ্টভাষী, সুন্দর গঠন, ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতা, শিক্ষিত... এছাড়াও তিনি একজন ক্লাসিক্যাল নৃত্যশিল্পী। আর এই গুণগুলো তাকে আজ একজন ভালো অভিনয়শিল্পীতে পরিণত করেছেন। বর্তমানে এই অভিনয়শিল্পীর একাধিক ধারাবাহিক নাটক বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে। অভিনয়ের পাশাপাশি সমানতালে উপস্থাপনা ও নৃত্যানুষ্ঠানে নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
আবেদনময়ী শ্যাম-বর্ণের প্রতি যুগযুগ ধরেই মানুষের একটা আগ্রহ রয়েছে। আর সেই শ্যাম-বর্ণ যদি হয় একটু বেশি উজ্জ্বল, তাহলে তো অনেকেই সেই রংয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাবেন, এটাই স্বাভাবিক, বলছি এই সময়ের দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী মিম চৌধুরীর কথা। যিনি সাবলীল অভিনয় দিয়ে জয় করে নিয়েছেন অসংখ্য দর্শকের হৃদয়। মিমের গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের, চোখ জোড়া বড়ো বড়ো, চুলে পাহাড়ি ঝরনার ঢল, ঠোঁট জোড়া আলাওলের অনবদ্য সৃষ্টি পদ্মবতীর মতো। হাসিতে মুক্তা ঝরে, সেই হাসিতে কুপোকাত হাজারো যুবক। মিম শ্যামবর্ণের হলেও কোনো আসরে গেলে সেখানে লোডসেডিং হলেও আলো জ্বালানোর দরকার পড়ে না। মিমের রূপের দ্যুতি ছড়াবে কমপক্ষে হাজার ওয়াট। দু’চোখের জেট ব্ল্যাক গভীরতা তার সূর্য গ্রহণের আভা ছড়ায় যেমন চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়া অমিত তেজ উপচে ওঠা সৌরসভা।
এই রকম উপমা প্রায়ই শুনতে হয় মিমকে। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে, মিমও এর বাইরে নন, তবু সৌন্দর্যের কথা তুলতে মিম বলেন, মানুষ যত বলেন, তত নই আমি। আপাতত সৌন্দর্য নয়, অভিনয়কেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন এই অভিনয়শিল্পী। অভিনয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল সেই কিশোর বয়েস থেকেই। মূলত নাচের ক্লাশে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। অভিনয় রপ্ত করার জন্য নাচ শেখার পাশাপাশি গুণী অভিনয়শিল্পীদের প্রচুর নাটক ও সিনেমা দেখতেন। নিজের প্রতিভাকে মেলে ধরতে একটি প্লাটফর্ম খুজছিলেন তিনি ; পেয়েও গেলেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে চলে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ‘ম্যাঙ্গোলি নাচো বাংলাদেশ নাচো’ প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হন। সেখান থেকেই স্বপ্নের বীজ বপন শুরু। ক্যারিয়ারের শুরুটা বেশ ভালোভাবেই হয়েছিল। গুণী অভিনেতা ও নির্মাতা মাহফুজ আহমেদের পরিচালনায় ‘সরীসৃপ’ নাটকে প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান। মিম তো অবাক ! যে অভিনেতা ছিল মিমের পছন্দের তালিকায় একজন, তারই সঙ্গে সূচনা !
স্বভাবতই প্রিয় অভিনেতার সঙ্গে প্রথম কাজ, একটু বেশিই উচ্ছ্বাস ছিল মনে।
ঈদুল আজহায় তার দু’টি নাটক প্রচারিত হয়, দু’টি নাটকই দর্শকপ্রিয়তা পায় একটি তাইফুজ্জামান আশিকের পরিচালনায় ‘বউ একটা প্যারা’ অন্যটি শামস করিমের পরিচালনায় ‘বাঁদি যখন বেগম’।
‘বউ একটা প্যারা’ নাটকটি সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে খুনসুটি হয় সেই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। মিম বলেন, নাটকটি দেখে কেউ কেউ আমাকে ইউটিউবের কমেন্টসে এসে বকাও দিয়েছেন। একজন শিল্পীর সার্থকতা এখানেই যখন একটি চরিত্রের ভেতরে তিনি ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারেন। মিম এখনো সংসার করেননি, তবে এই রকম একটি চরিত্র কীভাবে ফুটিয়ে তুললেন, বলতে হাসলেন, কোনোভাবে হাসি থামিয়ে বললেন, এই চরিত্রের পুরোই উল্টো আমি। তবে, আমার অনেক বিবাহিত বন্ধু রয়েছে তাদের সঙ্গে চরিত্রটি শেয়ার করি, একটি সংসারে কী কী হয়, ঝগড়ার সময় তাদের অবস্থা কেমন হয়, তাছাড়া আশেপাশেও এই রকম ঘটনা ঘটে অনেক, সেখান থেকেই কিছু রপ্ত করে আমি অভিনয় করেছি। ইউটিউবে দর্শকের কমেন্টসগুলো দেখে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ, তারা নাটকটিতে আমার অভিনয়ে ক্রোধ প্রকাশ করেছে। এখানেই একজন শিল্পীর বড়ো প্রাপ্তি।
গুণী অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ আমাকে শিখিয়েছিলেন “অ্যাকটিং হচ্ছে রি-অ্যাক্টিং, অতিরিক্ত কিছু করতে হয় না, একজনের কথা শুনে আর একজন যে রি-অ্যাকশন দেবে সেটাই অভিনয়”। এই কথাটি হৃদয়ে ধারণ করেই আমি অভিনয় করে যাচ্ছি। আমার সৌভাগ্য, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তার সঙ্গে টানা পাঁচ থেকে ছয়টি নাটকে কাজ করতে পেরেছিলাম।
বর্তমানে দর্শকের কাছে খ--নাটকের চাহিদা খুব, কিন্তু খ--নাটকে মিমকে বেশি দেখা যায় না কেন ? এই প্রসঙ্গে মিম বলেন, খুব একটা কমও করি না, অনেকে যেখানে শুধু খ--নাটকে অভিনয় করেন, আমি সেখানে খ--নাটকের পাশাপাশি ধারাবাহিক নাটকগুলোতেও নিয়মিত অভিনয় করছি। অনেক খ--নাটকের সুযোগ আসে, ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করায় অনেক সময় ডেট মেলাতে পারি না। তারপরও অনেক খ--নাটকে অভিনয় করা হয়। ধারাবাহিকে বেশি সময় দিই কারণ, এখান থেকে অভিনয়ের চর্চা হয়।
বর্তমানে মিম অভিনীত দুটি ধারাবাহিক নাটক প্রচার হচ্ছে। এনটিভিতে প্রচার হচ্ছে ‘প্রবাসী পরিবার’। নাটকটি দেশ বিদেশের দর্শকের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অন্যটি আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে কায়সার আহমেদের পরিচালনায় ‘গোলমাল’। আরো কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন, সেগুলো পর্যায়ক্রমে প্রচার হবে।
সবাই যেখানে ওটিটি প্লাটফর্ম নিয়ে ব্যস্ত সেখানে মিম অনুপস্থিত, এই প্রসঙ্গে মিম বলেন, সেখানে অনেক ভালো ভালো কাজ হচ্ছে, বাজেটও বেশি থাকছে, কাজগুলো আমিও এনজয় করি, আমার এখনো সৌভাগ্য হয়নি এই প্লাটফর্মে কাজ করার। আমি চাই কাজ করতে। আপনারা জানেন, পড়াশোনা ও করোনার কারণে আমি দীর্ঘদিন কাজ থেকে দূরে ছিলাম। যেহেতু অভিনয়ে একটা গ্যাপ পড়ে গেছে, তাই আবার নিজেকে তৈরি করছি, অভিনয়ের চর্চা এখন করছি, যখন মনে হবে এখন ওটিটি প্লাটফর্ম বা সিনেমায় কাজ করতে পারব, তখন থেকে এই মাধ্যমগুলোতে কাজ করব।
সব অভিনয়শিল্পীরই বড়ো একটা স্বপ্ন থাকে রুপালি পর্দাকে ঘিরে, সেই স্বপ্ন ধরা দিয়েছিল মিমের ক্ষেত্রেও, তখন মিম অপরিণত। মাত্র ১৫ বছর বয়েসে শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান সাফি উদ্দিন সাফির পরিচালনায় ‘ভালোবাসা এক্সপ্রেস’ ছবিতে। তবে, সেখানেই থেমে গেলেন তিনি। কারণ হিসেব জানান, পড়াশোনাÑ এখন যেহেতু গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন, তাই এখন আর বাধা নেই সিনেমায় কাজ করার। প্রবল আগ্রহ রয়েছে এই মাধ্যমে কাজ করার।
নাচ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু, করেছেন উপস্থাপনা এই দুটি শাখার কী অবস্থা ?
মিম বলেন নাচ কখনো ছাড়ব না। কারণ, এই নাচ দিয়েই আমার এখানে আসা। নাচ চলছে, এখনো নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিই। আজও ইন্টারভিউ দিয়ে নাচের একটি রিহার্সেলে যাব। উপস্থাপনাও নিয়মিত করছি। বাংলাভিশনে প্রতি বৃহস্পতিবার একটি মিউজিক্যাল অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছি।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে এমন কোনো গল্পে কাজ করেছেন, যে গল্প একজন অভিনয়শিল্পীর তৃঞ্চা মেটায় ? মিম বলেন, অভিনয়ের তৃঞ্চা সমুদ্রের মতো এখন পর্যন্ত সমুদ্রের একফোঁটা জলের তৃষ্ণাও মেটেনি। আরো ভালো ভালো গল্পে কাজ করতে চাই, আগে অভিনয়ের ক্ষুধা কতটা ছিল জানি না, এখন অনেক বেড়েছে।
মিম পরিকল্পনা করে পথ চলতে পারেন না, যখন কোনো কিছুর পরিকল্পনা করেন, তার উল্টোটা ঘটে তার জীবনে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মিম বলেন, আমি স্রোতের সাথে বহমান।