সাইমন-মৌ খানের প্রেমকাব্য

14 May 2023, 01:26 PM কাভার জুটি শেয়ার:
সাইমন-মৌ খানের প্রেমকাব্য

সারাবিশ্বেই বিষয়ভিত্তিক সিনেমার সফলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দর্শকও এই ধরনের গল্প পছন্দ করেন। বিশে^র মতো বাংলাদেশেও এখন বিষয়ভিত্তিক সিনেমা নির্মিত হচ্ছে, সেই সুবাদে হলমুখী হচ্ছেন দর্শক। সঙ্গত কারণে বাংলাদেশের নির্মাতা ও প্রযোজকেরা এখন ঝুঁকছেন বিষয়ভিত্তিক ছবির দিকে। সম্প্রতি এমনই এক ছবির সঙ্গে যুক্ত হলেন অভিনেতা সাইমন সাদিক ও মৌ খান। ছবির নাম ‘প্রেমকাব্য’। রাজু আহমেদ পরিচালিত ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত হবে ছবিটি। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...

সুন্দর একটি গল্প সিনেমাকে যেমন বাঁচিয়ে রাখে আবার দেশকেও পরিচিতি এনে দেয়। আমাদের দেশে বিষয়ভিত্তিক সিনেমা ভালো ব্যবসা করলেও এ ধরনের গল্পে খুব কম সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। যারা সেই পুরনো ধাঁচের গল্পের সিনেমা নির্মাণ করছেন, বিভিন্ন কারণে সেই সব ছবি তেমন একটা ব্যবসা করতে পারছে না। যারা বিষয়ভিত্তিক গল্প নিয়ে কাজ করছেন, তারাই সফল হচ্ছেন।

দেরিতে হলেও, এখন সিনেমার গল্প বদলাতে শুরু করেছে। কেউ কেউ পুরনো ধাঁচের গল্পের বাইরে গিয়ে বিষয়ভিত্তিক সিনেমা নির্মাণ করছেন। সেসব সিনেমা মানুষ দেখছেনও। এসব সিনেমার অনেকগুলোই ব্যবসাসফল। আবার কিছু সিনেমা আছে যেগুলো ব্যবসাসফল না হলেও প্রশংসিত হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীরাও এখন বিষয়ভিত্তিক গল্পের দিকে বেশি নজর দিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে অভিনেতা সাইমন সাদিক বলেন, পুরো বিশ^ই এখন বিষয়ভিত্তিক গল্প নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা তাহলে পিছিয়ে থাকব কেন ? এখন ছবির অফার এলে আমি আগেই গল্প দেখি। গল্প ভালো হলেই কাজটা করছি। কারণ, একটা গল্পই আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। পরিচালক রাজু আহমেদ স্যার যখন ‘প্রেমকাব্য’ ছবির গল্পটা শোনালেন, এতই ভালো লেগে গেল, চোখ বন্ধ করে কাজটি করতে রাজি হয়ে গেলাম।

অন্যদিকে মৌ খান বলেন, এটা সত্যিই যে একটি গল্পই একজন শিল্পীকে অমর করে রাখে। তাই গল্পের দিকে সবার নজর দেওয়া উচিত, ভালো গল্প হলে দর্শক সিনেমা হলে এসে ছবি দেখবেন।

‘প্রেমকাব্য’ ছবিতে প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করছেন এই জুটি। এর আগে তাদের একসঙ্গে কাজ না হলেও দু’জন দু’জনাকে চেনেন অনেকদিন ধরেই। তার একটা নমুনাও পাওয়া গেল তাদের ফটোসেশনের রসায়ন দেখে। সাবলীলভাবেই দু’জন আনন্দভুবন প্রচ্ছদের জন্যে পোজ দিচ্ছিলেন।

মৌ খানের সিনেমায় অভিষেক হয় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘প্রতিশোধের আগুন’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন নবাগত এই অভিনেত্রী। প্রথম ছবির সাফল্যের পর নির্মাতারা তাকে নিয়ে কাজের আগ্রহ দেখান এবং মৌও বেশকিছু ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। একাধিক ছবির কাজও সম্পন্ন হয়ে মুক্তির প্রহর গুনছে।

‘প্রতিশোধের আগুন’ যখন মুক্তি পায় তার কিছুদিনের মধ্যেই সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও হানা দেয় ভয়াল ঘাতক করোনা। প্রথম ছবিতে যখন বাজিমাত করলেন, নির্মাতারাও খুশি হলেন নবাগত এই অভিনেত্রীকে পেয়ে। কাজ করার আগ্রহও দেখালেন তারা। পরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধও হলেন। শুটিংও শুরু করেন। এর মধ্যে হানা দেয় করোনা নামক ভয়ানক ঘাতক ব্যাধি। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্ব কেঁপে ওঠে এই অচেনা ঘাতকের নির্মম আঘাতে। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বন্ধ রাখতে হয় সিনেমা প্রদর্শন ও শুটিং। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে আবার শুরু করেন শুটিং। বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন একাধিক ছবির শুটিং নিয়ে। শুটিংয়ের পাশাপাশি নতুন আরো বেশ কয়েকটা ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে বলেও জানান মৌ। সম্প্রতি কাজ করছেন মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত ও মনোয়ার হোসেন ডিপজল প্রযোজিত ‘যেমন জামাই তেমন বউ’, ‘অমানুষ হলো মানুষ’ এবং ‘বাংলার হারকিউলিস’ ছবিতে। তিনটি ছবিতেই মৌ খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন মনোয়ার হোসেন ডিপজল।

মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবিগুলো হচ্ছেÑ সুজন বড়–য়ার ‘বান্ধব’, সফিক হাসানের ‘বাহাদুরি’, শাহীন সুমন পরিচালিত ‘মাফিয়া’। ‘মাফিয়া’ শিরোনামে একটি ওটিটি প্লাটফর্মে কাজ করেছিলেন মৌ। এবার পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি হচ্ছে ‘মাফিয়া’। সবমিলিয়ে বর্তমানে মৌ খান অভিনীত আটটি ছবি রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়।

আট ছবির চরিত্র প্রসঙ্গে মৌ খান বলেন, একেকটি ছবির চরিত্র একেক রকম। প্রতিটি ছবির গল্প ভিন্ন হওয়ায় আমি নিজেকে ভাঙতে পেরেছি। অনেক অভিজ্ঞতাও হয়েছে কাজগুলো করে।

‘প্রেমকাব্য’ ছবিতে দ্বৈত চরিত্রে দেখা যাবে মৌ খানকে। ছবির চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রথম দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করব। এটা আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। একটি চরিত্রে আধুনিক মেয়ে আরেকটি সহজ-সরল, শান্ত মেয়ে। কাজটি আমার জন্য অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং হবে।’

প্রথমবারের মতো সাইমন সাদিকের সঙ্গে জুটি বাঁধা প্রসঙ্গে মৌ জানান, সাইমনের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে সত্যিই আমি খুশি। সাইমন আমার পছন্দের একজন অভিনেতা। ব্যক্তি সাইমন ভালো মনের এবং সহযোগিতাপূর্ণ একজন মানুষ। সাইমন অভিনীত ‘পোড়ামন’, ‘জি হুজুর’, ‘জান্নাত’ ছবিগুলো ভালো লেগেছে।

মৌ প্রসঙ্গে সাইমন বলেন, ‘মৌ খানের সঙ্গে আমার জানাশোনা আছে। তার চেহারায় নায়িকাসুলভ একটা ভাব রয়েছে। শুনেছি তার একটা ছবি মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ছবিটি দেখার সুযোগ হয়নি। নিটোল প্রেমের গল্প ‘প্রেমকাব্য’। শুধু দেশে নয়, লন্ডনেও এই ছবির দৃশ্য ধারণ করা হবে।

প্রথম ছবিতে কেমন সাড়া পেয়েছিলেন ? মৌ খান বলেন, বেশ সাড়া পেয়েছিলাম। এখনও সাড়া পাচ্ছি। সিনেমাটি মুক্তির পর আমি যখন প্রথম সিনেমা হলে যাই, দর্শকের আগ্রহ দেখে এই অঙ্গনে কাজের প্রতি আমার ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়। দর্শক ছাড়াও আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবেরা অনেক উৎসাহ দিয়েছেন। এই ছবিটির পরই শুরু করি শাহীন সুমন পরিচালিত ‘মাফিয়া’ ছবির কাজ।

মৌ খানের মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা ঘটে একটি ফ্যাশন হাউজের পোশাকের মডেল হয়ে। অনেকটা শখের বসেই কাজটি করেন তিনি। ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার পর থেকেই মিডিয়ার মানুষেরা ইনবক্সে নাটক, সিনেমার অফার দিতে থাকেন। এরমধ্যে সুজন বড়–য়া মৌ খানের পরিবারের পূর্ব পরিচিত থাকায় তিনি প্রথম মৌকে তার ছবিতে অভিনয়ের কথা বলেন। মৌ পরিবারকে বিষয়টি জানালে প্রথমদিকে তারা রাজি ছিলেন না। তবে মৌ’র মা মেয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কিছু শর্ত দিয়ে বললেন, যদি পড়াশোনা ঠিক রেখে কাজ করতে পারো। মা’র মুখে হ্যাঁ-সূচক কথা শুনতে পেয়ে মৌ তো আকাশের চাঁদটাই হাতে পেয়ে গেলেন ! এরপর নেমে গেলেন অভিযানে- জয় করলেন চাঁদ। চাঁদমাখা হাসি দিয়ে জয় করলেন দর্শক।

সুজন বড়–য়ার ছবির কাজ করতে গিয়ে সুযোগ আসে আরো একাধিক ছবির। ছবিতে অভিনয়ের জন্য যেক’টি উপাদান প্রয়োজন, তার মধ্যে নাচ অন্যতম। মৌ ক্ল্যাসিক্যাল নাচ রপ্ত করেছেন সেই ছেলেবেলাতেই। তাই অভিনয় করতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি তাকে।

সাইমন সিনেমায় অভিনয় করার পূর্বে একজন চাকুরে ছিলেন। চাকরি করলেও মনের ভেতরে স্বপ্নের জাল বুনন করে রেখেছিলেন সেই ছেলেবেলা থেকেই। কিন্তু সুযোগের অভাবে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পারছিলেন না। হঠাৎই জানতে পারলেন একটি প্লাটফর্মের কথা, যেখানে অংশ নিলে অভিনেতা হওয়ার কাজটি সহজ হয়ে যায়। অংশ নিলেন ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’ প্রতিযোগিতায়।

সাইমনের অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক দেখে খ্যাতিমান পরিচালক জাকির হোসেন রাজু একসময় তাকে নায়ক হওয়ার আশ্বাস দেন। যেই কথা সেই কাজ। সাইমনকে নিয়ে মাঠে নামেন পরিচালক জাকির হোসেন রাজু। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন সাইমন। প্রশংসা কুড়ান সকলের।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দে রাজুর পরিচালিত ‘জ্বি হুজুর’ ছবিতে অভিষেক হয় সাইমন সাদিকের। এক পর্যায়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে হয়ে ওঠেন পেশাদার অভিনেতা। প্রথম ছবিতে তেমন একটা আলো ছড়াতে না পারলেও সাইমন তার অভিনয় দিয়ে প্রশংসা কুড়ান সবমহলে। কিন্তু পরিচালক হতাশ হননি, দ্বিতীয় ইনিংসে নামেন তিনি। এই ইনিংসের নাম পোড়ামন। ‘পোড়ামন’ দিয়ে আলোচনায় আসেন সাইমন। ধীরে ধীরে তাকে গ্রহণ করেন দর্শক। এরপর একে একে ‘এর বেশি ভালবাসা যায় না’, ‘তোমার কাছে ঋণী’, ‘স্বপ্নছোঁয়া’, ‘তুই শুধু আমার’, ‘ভুলতে পারি না তারে’, ‘বø্যাক মানি’, ‘রানা প্লাজা’, ‘চুপি চুপি প্রেম’, ‘পুড়ে যায় মন’ এবং ‘জান্নাত’সহ বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন। সাইমন অভিনীত একাধিক ছবি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে।