দুই ভুবনের বাসিন্দা পড়শী

12 Apr 2023, 01:44 PM সারেগারে শেয়ার:
দুই ভুবনের বাসিন্দা পড়শী

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবরিনা পড়শী। ছেলেবেলায় নাচের প্রতি প্রচÐ আগ্রহ থাকার কারণে নাচ শেখেন তিনি। পরবর্তীসময়ে ক্লাসিক্যাল সংগীত শেখায় মনোনিবেশ করেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সরকারিভাবে আয়োজিত ‘কমল কুড়ি’ সংগীত প্রতিযোগিতায় দেশের গান বিভাগে বিজয়ী হন পড়শী। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সংগীত রিয়েলিটি শো ‘ক্ষুদে গানরাজ’ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ নির্বাচিত হন। ওই প্রতিযোগিতার পর থেকেই রিলিজ হতে থাকে বেশ কয়েকটি অডিও অ্যালবাম। পাশাপাশি কণ্ঠ দিতে থাকেন একের পর এক সিনেমার গানে। এ পর্যন্ত দুশো’র বেশি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এবার গানের পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করছেন পড়শী। তার সংগীত এবং অভিনয় জীবনের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল ...


পড়শী ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে সংগীত রিয়েলিটি শো ‘ক্ষুদে গানরাজ’-এ দ্বিতীয় রানারআপ হওয়ার পর থেকেই মূলত পরিচিতি পেতে শুরু করেন। বলতে গেলে সংগীতের শুরুটা তখন থেকেই। এর পরের বছর ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘পড়শী’ রিলিজ হয়। অ্যালবামটি সবশ্রেণির শ্রোতাদের কাছে সাড়া জাগায়। বাড়তে থাকে তার জনপ্রিয়তা। তখন থেকেই সিনেমার গানে কণ্ঠ দেওয়া শুরু করেন। এরপর ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ফেব্রæয়ারি মুক্তি পায় তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘পড়শী-২’। ২০১৩-এর ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় তার ‘পড়শী-৩’ অ্যালবামটি। ওই সময়ে ‘বর্ণমালা’ নামে একটি ব্যান্ডদল গঠন করেন পড়শী। সেই সময়ে পড়শী-৩ অ্যালবামের ‘জনম জনম’, ‘হৃদয় আমার’, ‘লাভ স্টেশন’ শিরোনামের গানগুলো শ্রোতামহলে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়। যার ফলে বর্তমান সংগীতাঙ্গনে একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সংগীতে সফলতার পর এবার অভিনয়জগতে নাম লিখিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী। তার প্রথম নাটক ‘মারিয়া ওয়ান পিস’। এটি গত বছর ঈদে প্রচারিত হয়। তার বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার খুশি কৌশিক। ‘শাদি মোবারক’সহ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। সংগীতের পর এবার অভিনয়েও সফল হতে চলেছেন পড়শী।

সংগীত এবং অভিনয় নিয়ে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। এছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের দেশ এবং দেশের বাইরে স্টেজ শো নিয়েও ব্যস্ত রয়েছেন তিনি। বর্তমান ব্যস্ততার কথা জানতে চইলে বলেন, “ঈদে ‘হৃদয় জুড়ে’ এবং ‘এখানে প্রেম শেখানো হয়’ নাটকের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। ‘হৃদয় জুড়ে’ নাটকটি করছি জোবান ভাইয়ার সঙ্গে। নাটকটিতে স্কুলজীবনের দু’জন ছেলে-মেয়ের প্রেমের কাহিনি এবং তাদের যে স্ট্রাগল সেটাই দেখানো হয়েছে। ‘এখানে প্রেম শেখানো হয়’ নাটকের কাহিনি হচ্ছে একটি মেয়ে গুগল নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে। গুগলে সার্চ করে করে সে প্রেম শিখতে চায়। সে অনেকটাই ইন্টারনেট-এর ওপর নির্ভরশীল। নাটকটি একটু ফানি টাইপের।”

পড়শী শখের বসে নাটকে অভিনয় করলেও তার অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক। যদিও তার নাটকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এ পর্যন্ত পাঁচ-ছয়টি নাটকে অভিনয় করেছেন। বর্তমানে কয়েকটির কাজ করছেন।

স¤প্রতি পড়শী অভিনীত সুলতান এন্টারটেইনমেন্ট ইউটিউব চ্যানেলে রিলিজ হয়েছে মহিদুল মহিমের পরিচালনায় খÐনাটক ‘ভালোবাসার তিন দিন’। নাটকটিতে আভরাল সাহিরের সুর ও সংগীতায়োজনে তিনটি গান রয়েছে। গানগুলো গেয়েছেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় তিনজন সংগীতশিল্পী দিলশাদ নাহার কনা, সোমনুর মনির কোনাল ও সাবরিনা পড়শী নিজে। নাটকটিতে পড়শীর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ফারহান আহমেদ জোবান। নাটকটিতে ৪টি গান রয়েছে। এর আগে আর কোনো নাটকে এতগুলো মৌলিক গান নেই। নাটকটি দেখে মনে হবে সিনেমা দেখছি। নাটকটিতে ‘আমার হয়ে থাক না’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন পড়শী এবং আভরাল। ‘প্রেমে পড়ার কারণ’ গানটি গেয়েছেন কনার সঙ্গে আভরাল। আর কোনালের সঙ্গে আভরাল গেয়েছেন ‘ভালোবাসা পাইনি’। মেহেদী দু’হাতে একক কণ্ঠে গানটি গেয়েছেন আভরাল।

পড়শী অভিনীত ‘ভালোবাসার তিন দিন’ নাটকটি ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। নাটকটি একসপ্তাহে ৪০ লাখের বেশি মানুষ দেখেছেন। পড়শীর সঙ্গে জোবানের দ্বিতয় নাটক ‘লাভ স্টেশন’। এই নাটকটিও দর্শকদের মাঝে বেশ সাড়া ফেলেছিল। ‘ভালোবাসার তিন দিন’ নাটকটি সম্পর্কে পড়শী বলেন, ‘আমি যখন নাটকটির শুটিং করছিলাম তখনই বুঝেছিলাম ভালো কিছু হতে চলেছে। কিন্তু নাটকটি মুক্তি পাওয়ার এত অল্প সময়ের মধ্যে দশর্কের কাছ থেকে এত সাড়া এবং মন্তব্য পাবো ভাবতে পারিনি। দর্শকের এরকম ভালোবাসা পেলে ভালো ভালো কাজ করার আগ্রহ আরো বহুগুণে বেড়ে যায়। দর্শক নাটকের সব গান দারুণভাবে পছন্দ করেছেন।’

আসন্ন ঈদে নাটকের পাশাপাশি গান রিলিজেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন পড়শী। গানগুলো তৈরি হয়ে গেলে তবেই বিস্তারিত জানাবেন তিনি।

পড়শীর সংগীতের যাত্রা শুরু ‘ক্ষুদে গানরাজ’ দ্বিতীয় রানারআপ হওয়ার পর থেকে। তখনকার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘অনুভূতি ভালো ছিল। প্রথম দিকে একটু নার্ভাস ছিলাম। ভয়ও লাগছিল, আসলে আমি গানটাকে তখন এতটা গুরুত্বের সাথে নেব ভাবিনি। ক্ষুদে গানরাজ প্রতিযোগিতা শেষে আস্তে আস্তে গানে গুরুত্ব দিই।”

ক্ষুদে গানরাজে কীভাবে এলেন ? ‘ওটা আসলে কোনো প্ল্যানিং করে নয়। একদিন আমার ওস্তাদজি আমাকে এসে বললেন, ‘তোমাকে একটা গানের ট্যালেন্ট হান্টে যেতে হবে। ব্যস, আমিও গেলাম। এতটুকুই। সেরকমভাবে আগে থেকে প্রিপারেশন নিয়ে যাওয়া এরকম কিছু ছিল না।’

পড়শীর প্রথম নাটক ‘মারিয়া ওয়ান পিস’। প্রথম প্লেব্যাক করে ‘চাচ্চু আমার চাচ্চু’ ছবিতে। এ পর্যন্ত দু’শোর বেশি সিনেমার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। অভিনয় করি শখের বসে এবং ভালো লাগা থেকে জানান পড়শী। পড়শী সুইটি ড্রিমস কালচারাল অ্যাওয়ার্ড, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার, যুগান্তর পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড, কালচারাল জার্নালিস্ট ফেডারেশন অব বাংলাদেশ, মিডিয়ার জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বিজয়ী, বাংলাদেশ বিনোদন সাংবাদিক সমিতি পুরস্কারসহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন।

পড়শী ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌলভী পাড়ায়। তার বাবা প্রকৌশলী এহসান-উর-রশিদ এবং মা জুলিয়া হাসান একজন গৃহিণী। তার একমাত্র ভাইয়ের নাম সিয়াত এহসান স্বাক্ষর।