ওটিটি ও বাংলাদেশ

11 Apr 2023, 03:17 PM আকাশলীনা শেয়ার:
ওটিটি ও বাংলাদেশ

প্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয়। সমস্ত পৃথিবীর উপর নজরদারি করার জন্য এক স্মার্ট ফোনই যথেষ্ট। আর বিনোদনের দুনিয়াও কিন্তু পিছিয়ে নেই। নাটক, সিনেমা দেখার জন্য টিভি বা সিনেমা হলে যাওয়ার ঝক্কি ঝামেলাও কিন্তু কমিয়ে দিয়েছে এই স্মার্ট ফোন। দেশ-বিদেশের নাটক, কিংবা ওয়েব সিরিজ সবই পাবেন এখন ঘরে বসেই। সেই ধারণা থেকেই ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-এর শুরু। বর্তমানে সিনেমা কিংবা সিরিজ প্রেমীদের কাছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বেশ পরিচিত নাম। তবে, যারা ভাসা ভাসা জানেন- তাদের জন্য ওটিটি নিয়ে থাকছে বিস্তারিত



ওটিটি

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের পূর্ণরূপ হলো ‘ওভার দ্য টপ’। এই প্ল্যাটফর্মে আপনি বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে পারবেন। নির্দিষ্ট কিছু পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে দেখতে পারবেন এসব প্রোগাম।

বিনোদন জগতের এমন যুগান্তকারী পরিবর্তন খুব বেশিদিন আগের কথা নয়। প্রথম যে ওটিটি প্ল্যাটফর্মটি এই নতুন যুগের সূচনা করেছে তার নাম হলো নেটফ্লিক্স এবং যিনি এই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের চিন্তা করেছিলেন যে ব্যক্তি তার নাম রিড হ্যাস্টিংস। তিনি মূলত একজন প্রযুক্তি ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি চিন্তা করেন যে, থিয়েটার ছাড়া মানুষের সিনেমা দেখার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে দোকান থেকে ভিডিও টেপ ধার করা। তখন তিনি পরিকল্পনা করেন ডিভিডিতে করে সিনেমা বিক্রি করার। ডিভিডির রেজ্যুলুশন ভিডিও-টেপের চেয়ে অনেকগুণে ভালো এবং আকারেও ছোটো। সে সময়ে ডিভিডি প্লেয়ার সবেমাত্র আমেরিকার বাজারে আসতে শুরু করেছে। আর বেশির ভাগ বাসাতেই ডিভিডি প্লেয়ার নেই। চিন্তাটা বেশ ঝুকিপূর্ণ জেনেও রিড এই ব্যবসায় নিজের ভাগ্য যাচাইয়ের ঝুঁকিটা নিলেন। বন্ধু মার্ক র?্যান্ডলফকে নিয়ে খুললেন একটি ডিভিডি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, যার নাম নেটফ্লিক্স। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় নেটফ্লিক্সের পথচলা। রিড ভুল করেনি তার সিদ্ধান্তে। যুক্তরাষ্ট্রে বছর খানেকের মধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নেটফ্লিক্স। প্রতিদিনই ১০ হাজারের মতো অর্ডার পেতে শুরু করেন তিনি। খুব দ্রæতই তার প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ ডলারের মতো আয় করে ফেলে। নেটফ্লিক্সের সাথে প্রতিযোগিতা করে পরবর্তীসময়ে ওয়ালমার্ট এবং বøকবাস্টার্স নামে দুইটি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু বেশিদিন তারা ব্যবসায় টিকতে পারেননি। ডিভিডির বাজারে একচেটিয়া ব্যবসা অব্যাহত রাখে নেটফ্লিক্স।

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সব টিভি সিরিজই এসেছে এই প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে। নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন, ডিজনি প্লাস ও এইচবিও ম্যাক্স বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম।

নেটফ্লিক্স

সারাবিশ্বে নেটফ্লিক্স সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। দুনিয়ার সেরা ওটিটি বলা যেতে পারে এটিকে, বিদেশের সেরা সব সিনেমা, ওয়েব সিরিজ এখানে দেখতে পাওয়া যায়। যারা সেরা সব সিনেমা সিরিজে বুঁদ হয়ে থাকতে চান তাহলে একটু খরচ অবশ্য করা লাগবে। নেটফ্লিক্স ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে কনটেন্ট প্রযোজনা শিল্পে আত্মপ্রকাশ করে। প্রথম ধারাবাহিক সিরিজ পরিচালিত ধারাবাহিক ‘হাউজ অব কার্ডস’। এরপর চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ধারাবাহিক তৈরিতে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। নেটফ্লিক্সের সদর দপ্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লা গ্যাটস শহরের উইনচেস্টার সার্কেলে। এ ছাড়াও নেদারল্যান্ডস, ব্রাজিল, ভারত, বাংলাদেশ, জাপান ও উত্তর কোরিয়ায় তাদের কার্যালয় আছে।

বিশে^র নানা দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতো আমাদের দেশেও নিজস্ব কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। বলা যেতে পারে গত কয়েক বছরে খুব দ্রæতই বাংলাদেশে বেশকিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্ম হয়েছে।


বাংলাদেশের জনপ্রিয় কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম

হইচই

বাংলা সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম বলা যেতে পারে হইচইকে। হইচইয়ের লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী ২৫০ লাখ বাঙালি দর্শকের কাছে পৌঁছানো। দুই বাংলার অসাধারণ সব সিনেমা উপভোগ করতে পারবেন এতে। এর প্রতিষ্ঠাকাল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ। সদর দপ্তর কলকাতায়। এটি এসভিএফ এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন একটি অন-ডিমান্ড ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে হইচই অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস, অ্যাপল টিভি ও অ্যামাজন ফায়ার টিভিতে লভ্য।

চরকি

আমাদের দেশীয় নাটক, সিরিজ কিংবা সিনেমা দেখার জন্য জনপ্রিয় একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হলো চরকি। এটি ট্রান্সকম গ্রæপের মালিকানাধীন মিডিয়াস্টার লিমিটেডের অধীনে পরিচালিত। ফিল্ম, ফান, ফুর্তি, নীতিবাক্য দিয়ে যাত্রা চরকির। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই যাত্রা শুরু করে। ২০০টিরও বেশি চলচ্চিত্র, টিভি ধারাবাহিক, প্রামাণ্যচিত্র টিভিনাটক ইত্যাদি দিয়ে চরকির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড আইওএস, অ্যাপল টিভি, অ্যামাজন ফায়ার টিভি, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, স্যামসাং স্মার্ট টিভির জন্য উপযুক্ত এটি।

বঙ্গ

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে আহাদ মোহাম্মাদ ও নাভিদুল হকের হাত ধরেই এসেছিল এই প্ল্যাটফর্মটি। দেশের সবচেয়ে পুরোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গ। একদম নিজস্ব কনটেন্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল বঙ্গ। বঙ্গ প্ল্যাটফর্মটি আরেকটি কারণে জনপ্রিয় হয় তা হলো তারা বিদেশি সিনেমা ডাবিং করে। যা খুব দ্রæত দর্শকদের চাহিদার শীর্ষে পৌঁছে যায়। শুধু ইংরেজি নয়, তুর্কি সিরিজ ডাবিং করে তারা জনপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে। সিরিজ ডাবিং করার পর এই প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়।

বায়োস্কোপ

টেলিকম অপারেটর গ্রামীণ ফোনের ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা ‘বায়োস্কোপ’। খেলা, চলচ্চিত্র, নাটক ও টিভি শো দেখার সুবিধা রয়েছে এতে। এছাড়া বাংলাদেশি ও ভারতীয় টিভি চ্যানেলও দেখা যায়। পছন্দমতো কোনো অনুষ্ঠান বা সিনেমা চাইলে প্রিয় বিভাগে রাখা যাবে, যা পরে দেখে নেওয়া যাবে। কোনো সাবস্ক্রাইব ফি ছাড়াই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় অ্যাপটি। অ্যান্ড্রয়েড ওএস চালিত স্মার্ট টিভিতে অ্যাপটি ব্যবহার করা যায়।

বিঞ্জ

দেশীয় আরেকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এটি। তবে এর আলাদা একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে তারা নিজেদের একটু আলাদাভাবেই তুলে ধরেছে। বাজারে টিকে থাকতে ভিন্নভাবেই উপস্থাপন করেছে সাইটটি। অন্যান্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মতো লাইভ টিভি, মুভি, সিরিজ দেখানোর পাশাপাশি বিঞ্জ নামের বিশেষ এক যন্ত্রকে তারা বেছে নিয়েছে। যেটি টিভির সঙ্গে জুড়ে দিলেই টিভি হয়ে উঠবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য প্রস্তুত। বিঞ্জের সাহায্যে টিভি ও ফোন দুটোই যুক্ত করতে পারবেন। দেশ-বিদেশের ১৫০টিরও বেশি লাইভ টিভি চ্যানেল রয়েছে এতে। বিঞ্জের যাত্রা শুরু ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে। হ গ্রন্থনা : ফাতেমা ইয়াসমিন