সবজি বা টমেটো চাষের মাটি আমি যেভাবে প্রস্তুত করি
১০০ কেজি সার মাটি প্র¯‘ত করতে আনুমানিক ব্যবহার করি ৪০ কেজি পুরাতন ব্যবহৃত শুকনো মাটি ২০ কেজি, নতুন মাটি ৩০ কেজি, শুকনা পঁচানো গোবর/ভার্মিকম্পোস্ট ৫ কেজি, কোকোডাস্ট/বাগানের পাতা পঁচা সার ৫ কেজি, বালি আনুমানিক ২০০-২৫০ গ্রাম করে, ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম ক্যালশিয়াম সালফেট, জিংক সালফেট, এপসম সল্ট, চুন/ডলোচুন, ৫০ গ্রাম, বোরন ২৫০ গ্রাম, ডিমের খোসা ২৫০ গ্রাম, নীমখৈল/ নীমপাতাচূর্ণ ৩৫০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়া, ৩৫০ গ্রাম, শিংকুচি, কিছু পেঁয়াজের খোসা চূর্ণ, ২০০ গ্রাম ছাই।
- ম্যাডাম রাসায়নিক সার দিচ্ছেন যে।
- আপা সামান্য রাসায়নিক সারে সমস্যা নেই। তবে সমপরিমাণ শুকনো পঁচা গোবর আর নতুন মাটি হলে শুধুই জৈব উপাদানগুলো মিশালে চলবে। কোনোপ্রকার রাসায়নিক সার না দিলেও ইনশাআল্লাহ ভালো ফলন পাওয়া যাবে। পরে অভাবজনিত লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে রাসায়নিক সার দেওয়া যেতে পারে। এগুলো একত্রে মিশিয়ে হালকা পানি ছিটিয়ে দিয়ে ১০-১৫ দিন বস্তায় ভরে ঢেকে রেখে দিই। তারপর হালকা রোদে শুকিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নির্দিষ্ট টবে ভরে বিকেলের দিকে একটা টবে একটা করে চারা আর ফলের ঝুড়ি হলে ২টা চারা ২ পাশে লাগিয়ে ছোটো কাঠির সাথে চারাটা বেঁধে উপরে নেট কেটে ঢেকে দিই যাতে পাখি না খেতে পারে। আর যেহেতু কিছুদিন পরপর তরল সার দিই তাই বড়ো ফলের গাছের ড্রামে জায়গাভেদে ২ বা ১টা করে সবজির চারা সাথি ফসল হিসেবে লাগিয়ে দিই।
- ম্যাডাম টমেটো গাছের যত্মের কথা বলুন-
- বলছি আপা, টমেটোর ফলন ভালো পেতে হলে আপনাকে নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। আমি ১০-১৫ দিন পরপর গোবর-খৈল পঁচানো পানি-লিকুইড ওয়েস্ট ডিকম্পোজার সলিউশন ৫০ ঃ ৫০ অনুপাতে দিই। নিয়মিত গাছের নিচের পাতা ছাটাই করে গাছের গোড়া পরিষ্কার রাখি, টবের মাটি খুচিয়ে আলগা করে দিই যাতে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে।
প্রতিকৃত মাটিতে টমেটোর চারা লাগানোর পর গাছগুলো বেড়ে উঠতে শুরু করলে আমি নিম্বোক্ত পদ্ধতিতে পুষ্টি সরবরাহে তরল সার দিই।
তরল সার প্র¯‘ত : ১ কেজি খৈল ১০-১৫ দিন ২০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে রেখে দিই। মাঝে মাঝে কাঠি দিয়ে নাড়ি, সামান্য ওয়েস্ট ডিকম্পোজার সলিউশন, দইয়ের পানিও দিই। তারপর ১০ দিন অন্তর অন্তর ১ মগ সবজি পঁচানো পানির সাথে আরো ১০ মগ ফ্রেস পানি মিশিয়ে টবের চারিদিকে, গাছের গোড়ায় নয়, বড় ড্রামে ১ মগ আর ছোটো টবে আধা মগ পঁচা পানি দিই। সবগুলো গাছে দেওয়া হয়ে গেলে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঝাঝড়ি দিয়ে হালকা সেচ দিই এমনভাবে যাতে কোনো পানি টবের বাইরে যেতে না পারে।
- ম্যাডাম, সবজি পঁচা পানি ? এটা কীভাবে তৈরি করব ?
- হ্যাঁ আপা আমি সব শিখিয়ে দিচ্ছি। সবধরনের সবজি কাটার অবশিষ্টাংশ একটা ২০ লিটারের পানির ঝাড়ের নিচের দিকটা পুরোটা কেটে উল্টিয়ে চিকন মুখের অংশটুকু একটা ছোটো বালতির উপর রেখে, ঢেকে জমাতে থাকি। মাঝে মাঝে ওয়েস্ট ডিকম্পোজার সলিউশন বা পানি ছিটিয়ে দিই। সবজি পঁচা পানি নিচের বালতিতে জমা হয়। এ সলিউশন ১ মগ আরো ১০ মগ পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করি সব গাছে।
- অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম। আজ অনেক কিছু শিখলাম। আশা করি আরো অনেক কিছু জানতে পারব আপনার কাছ থেকে।
শাকিলা সবসময় প্রকৃতি প্রেমিক। শীতের শেষ আর বসন্তের আগমনে সে আবেগে আপ্লুত। সে কৃতজ্ঞচিত্তে অনুভব করে- স্রষ্টার তুলির আঁচড়ে সৃষ্টি এই পৃথিবী আর তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। তার এক মহান দান আমাদের বাংলার প্রাকৃতিক রূপবৈচিত্র্য। নিসর্গের এত অপরূপ শোভা বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথায় কি আছে। ছয়টি ঋতুর স্বতন্ত্র রূপ আপন আপন সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বাংলাকে করে তোলে লাবণ্যমণ্ডিত। এ তো এক মহান শিল্পীর আঁকা নিখুঁত চিত্রকর্ম।
শাকিলা ভাবে- কী সুন্দর প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্য। শীতের কুয়াশার চাদর ছিড়ে আবির্ভাব হলো বসন্তের। সবুজ কিশলয়ে ভরে উঠল চারিদিক। দক্ষিণের মিষ্টি হাওয়া আনমনে বয়ে যায় সবুজ ধানক্ষেতে। সবুজ ধানের চারা আনন্দে আন্দোলিত হয়। নীল আকাশে বলাকার ঝাঁক উড়ে যায়। ফুলে ওঠে নৌকার পাল। বৃক্ষের বাকল চিরে বেরিয়ে আসে নতুন পাতা।
প্রকৃতি যেন অপেক্ষায় ছিল এই বসন্ত ঋতুর জন্য। তার বিরহী মন নিয়ে রাতভর চোখের পানি ফেলে অপেক্ষা করছিল প্রিয় বসন্তের জন্য। কবির ভাষায় বলতে হয়-
“কঠোর হিমের বিরহী পাথার একাকিনী নিশি জাগি।
গুনিয়াছে দিন নিরজনে বসি নয়ন বসনে ঢাকি।
চাঁদ জাগিয়াছে মুখ চাহি তার
নিবীড় ব্যথায় ছেয়েছে আঁধার
আকুল পবন দিয়ে গেছে দোল ব্যাকুলিয়া সারা মন
নয়নে ঝরেছে বেদনা শিশির নিশি ভরি সারাক্ষণ”
দীর্ঘ অপেক্ষার পর জেগে উঠল বসন্ত। শীত শেষে দক্ষিণা হাওয়া আর ফুল পাখিদের কলরবে পরিবেশ মুখরিত হলো। নানা জাতের, নানা বর্ণের, নানা সুবাসের ফুল ফুটেছে এই বসন্তে। চারিদিক হলো সুরভিত। বসন্তের আরামদায়ক শান্ত পরিবেশে মনে সাহিত্যভাব জেগে ওঠে। পত্র-পল্লবে যেন কবিতার আসা যাওয়া।
ফাল্গুন-চৈত্র দুই মাস বসন্ত কাল। এই বসন্ত প্রকৃতিতে নিয়ে আসে নব ছন্দের ব্যাকুল শিহরণ। পুরাতন জীর্ণ সব মুছে দিয়ে বসন্তের নবীন পাতায় জেগে ওঠে সবুজের আভা। বসন্ত নিয়ে আসে পুষ্পারতির পরম লগ্ন। মৃদুমন্দ দক্ষিণা বাতাসের জাদুস্পর্শে বর্ণ বিরল পৃথিবীর সর্বাঙ্গে লাগে অপূর্ব পুলক প্রবাহ। বন-বিথীর রিক্ত শাখায় জাগে কচি কিশলয়ের অফুরন্ত উল্লাস। বাতাসের মর্মর ধ্বনি, দূর বনান্তরাল থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহুগীত তারই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যিনি সৃষ্টি করেছেন এত সৌন্দর্য্য। অশোক পলাশের বিহব্বলতায়, শিমুলের বিপুল উল্লাসে, বিকশিত মধু মালতী আর মাধবী মঞ্জরির গন্ধ মদির উ”ছলতায় সারা আকাশ হয় সুরভিত। তাই তো কবি লিখেছেন-
“হিম কূহেলীর অন্তরতলে আজিকে পুলক জাগে
রাঙিয়া উঠেছে পলাশ কলিকা মধুর রঙিন রাগে।”
আজকের বসন্ত আর কয়েক যুগ আগের বসন্তের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। আগের বসন্ত আরো সুন্দর আরো প্রাণবন্ত ছিল। সবুজের আয়োজনে চারিদিক ছিল আরো সবুজ। ফুলের সুরভিতে পাখির কূজনে ভরপুর ছিল। মানুষের অনৈতিক চলনে অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে। হারিয়ে যেতে বসেছে প্রিয় সবকিছু।
এতকিছু ভাবতে গিয়ে শাকিলার মনে পড়ে গেল ড. জেসমিন ম্যাডামের ছাদবাগানের কথা। তখন বিকেলের ম্লান আলোর মিষ্টি আভা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে। সে বাগানে গিয়ে দেখে ফুলে ফলে পরিপূর্ণ। সেতো আত্মহারা। ম্যাডাম কী সুন্দর নিজের হাতেই গাছের পরিচর্যা করছেন। শাকিলা ঘুরে ঘুরে গাছগুলো দেখছিল। সে লক্ষ্য করল ফুল ফল এবং সবজির গাছ ছাড়াও আরো অনেক ধরনের অচেনা গাছ বাগানে বেড়ে উঠেছে। সে ম্যাডামকে বলল- ম্যডাম এই গাছগুলো বাগানে কেন রেখেছেন ?
ম্যাডাম উত্তর দিলেন- একটু সুস্থ থাকার জন্য এসব আয়োজন আপু। মানুষের জীবনে বেঁচে থাকার জন্য কত কি দরকার হয়।
- বেশির ভাগ গাছই তো চিনতে পারছি না।
- কোন গাছের কী নাম আমি বলে দিচ্ছি। বিদেশি ঔষধি গাছের নামগুলো বলছিলেন ড. জেসমিন।
করোসল, ননিফল, ইটালিয়ান সুইট বেসিল, থাইবেসিল, লেমনবেসিল, কারিপাতা, লেমন গ্রাস, দেশি লাল তুলসি, কিডনি প্লান্ট, পোলাও পাতা, চিরতা, বাসকপাতা, অরিগ্যানো, হাড়জোড়া, পাথরকুচি, রোজমেরী, লাল সাজনা, সবুজ সাজনা, নিম, পার্সলে, সেলারীপাতা, থানকুনি, দেশি পুদিনা, ইন্ডিয়ান পুদিনা, গাইনুরা প্রোকাম্বেল, এলোভেরা, গার্লিকচাইভ, দুধসর গাছ।
শাকিলা বলে- এতসব গাছ রেখে কী লাভ ম্যাডাম আমি বুঝতে পারছি না।
শাকিলার কথা শুনে ম্যাডাম মুচকি হাসেন। বলেন- আ”ছা আমি শুধু ননিফলের কথা বলি। কেন লাগিয়েছি ননিফল। [চলবে]