প্রতিরক্ষা খাতের বেসামরিক কর্মচারীরা নেমে আসে রাজপথে

13 Mar 2023, 06:05 AM মুক্তিযুদ্ধ শেয়ার:
প্রতিরক্ষা খাতের বেসামরিক কর্মচারীরা নেমে আসে রাজপথে

টানটান উওেত্তজনার মধ্যে পর হলো একাত্তরের অগ্নিঝরা ১৩ই মার্চ। স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত বিক্ষুব্ধ গোটা বাঙালি জাতি। পূর্ব-বাংলার সব জায়গায় সিভিল প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে। মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু তার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি থেকে পরপর ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন। বস্তুত বঙ্গবন্ধুর এই নির্দেশেই বাংলার সর্বত্র প্রশাসন পরিচালিত হচ্ছিল। পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রভুত্ব গোটা বাংলায় ছিল পুরোপুরি অচল। যদিও সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব ছিল এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সেখানে বাঙালি অফিসারদের একটু সন্দেহের চোখেই দেখা হচ্ছিল।

বাংলাদেশে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বাঙালি সেনারা ব্যারাকেই থাকে। তবে, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দিক-নির্দেশনার প্রতিও তাদের সুনজর ছিল। তারাও গোপনে একপ্রকার প্রস্তুতি নিতে থাকে। তবে প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে বেতনভোগী বাঙালি বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী অসহযোগ আন্দোলন করতে থাকেন।

এ-রকম একটি পর্যায়ে পাক সামরিক জান্তা এক সামরিক ফরমানে প্রতিরক্ষা বাজেট থেকে যাদের বেতন দেওয়া হয় সে-সকল কর্মচারীকে ১৫ই মার্চ সকাল ১০টায় কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়। ব্যর্থতার জন্য চাকরি থেকে বহিষ্কারসহ দশ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হবে বলে ভীতি প্রদর্শন করে। এটা ছিল পাকিস্তানি সরকারে ১১৫ নম্বর সামরিক ফরমান। কিন্তু এ বিধি কার্যকর হয়নি। স্বাধীনতা ও মুক্তির নেশায় পাগলপ্রায় গোটা বাঙালি জাতি তখন জীবন দিতে রাজি। বাঙালির প্রাণে তখন সামনে এগিয়ে যাবার সংগ্রামী সুর বাজছে। এই ফরমান জারির পরদিন অর্থাৎ ১৪ই মার্চ প্রতিরক্ষা খাতের বেসামরিক কর্মচারীরা রাজপথে এই ফরমানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে।

১৩ই মার্চ মওলানা ভাসানী কিশোরগঞ্জের ভৈরবে এক জনসভায় ভাষণ দেন। এই ভাষণে তিনি পাকিস্তান পিপলস পার্টির [পিপিপি] প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর উদ্দেশে বলেন, ‘এখন ভুট্টোর উচিত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা। আর আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করবো। বাঙালিরা আর শাসিত হবে না।’ স্বাধীনতাকামী অন্যান্য রাজনৈতিক দলও স্বাধীনতার দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রাখে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ আরেও কয়েকটি জেলখানার বিদ্রোহের পর ১৩ই মার্চ বগুড়া জেলখানায় বিদ্রোহ দেখা দেয়। জেল ভেঙে ২৭ জন বেরিয়ে পড়তে সক্ষম হয়। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৮ জন এ দিন হতাহত হয়।

-শ্যামল কায়া