১২ই মার্চ দিনটিও ছিল আন্দোলনমুখর। স্বাধিকারের দাবিতে সারাবাংলায় মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হয়। লাগাতার অসযোগ আন্দোলনের মুখে পাকিস্তান সরকার ২৩-এ মার্চের পাকিস্তান প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হয়। দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সম্মিলিত কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় সরকারি-আধা সরকারি কর্মচারীরা এ দিনও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মস্থল বর্জন করেন। সারাবাংলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সরকারি ও বেসরকারি ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালো পতাকা উড়তে দেখা যায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে সভা-সমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য শপথ নেওয়া হয়।
আর্টস কাউন্সিলে চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সৈয়দ শফিকুল হোসেনের সভাপতিত্বে চারু ও কারুশিল্পীদের এক সভায় মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। পরিষদ স্বাধিকার আন্দোলনে বাংলার জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে তোলার উদ্দেশ্যে সাইক্লোস্টাইল করা দেশাত্মবোধক ও সংগ্রামী স্কেচ বিতরণ, পোস্টার ও ফেস্টুন প্রচার, পোস্টার- ফেস্টুনসহ মিছিল আয়োজন করার কর্মসূচি নেয়। ১৬ই মার্চ বিকেলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করারও সিদ্ধান্ত হয়।
জাতীয় পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ জহিরউদ্দিন ১১ই মার্চ এক ঘোষণায় পাকিস্তান সরকারের দেওয়া খেতাব বর্জন করেন। রেডিও পাকিস্তানের করাচি কেন্দ্রের বাংলা সংবাদপাঠক সরকার কবীর উদ্দিন বেতারে বঙ্গবন্ধুর খবর প্রচারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিবাদে রেডিও পাকিস্তান বর্জন করেন।
আওয়ামী লীগের নেতা ক্যাপ্টেন [অব.] এম মনসুর আলী এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জন্য পাঠানো খাদ্যবোঝাই মার্কিন জাহাজের গতিপথ বদল করে করাচি অভিমুখে প্রেরণের ঘটনায় উৎকণ্ঠা ও নিন্দা জানান।
ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপপ্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মুক্তিসংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি আবার তার সমর্থন জানান।
এদিন রাতে বিবিসির এক খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৩ই মার্চ করাচি থেকে ঢাকা পৌঁছাবেন। খবরে আরো বলা হয়, প্রেসিডেন্টের একটি প্যাকেজ ডিলের প্রস্তাব নিয়ে ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনের আগেই প্রাদেশিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্ভাবনা আছে।
-শ্যামল কায়া