লোকজ ধারার গান বাঁচলে বাংলা গান বাঁচবে -সন্দীপন...

26 Feb 2023, 03:05 PM সারেগারে শেয়ার:
লোকজ ধারার গান বাঁচলে বাংলা গান বাঁচবে -সন্দীপন...

দেশের সংগীতাঙ্গনে অতি পরিচিত মুখ সন্দীপন। তার সংগীতজীবন শুরু হয়েছিল মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। অভিনয়ের পাশাপাশি মঞ্চনাটকের আবহসংগীত নিয়ে কাজ করতেন এবং গান গাইতেন। সংগীত পরিচালক বাসুদেব ঘোষের মাধ্যমে ঢাকায় পরিচয় হয় মেধাবী সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদারের সঙ্গে এবং তখনই সিদ্ধান্ত নেন নিজের অ্যালবাম প্রকাশের। ভিন্নধর্মী কথা এবং সুরে গান গেয়ে এরই মধ্যে অগণিত ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে তরুণদের পছন্দের শিল্পী হিসেবে নিজের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু শ্রোতাপ্রিয় গানের পাশাপাশি একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়েও গান গেয়েছেন তিনি। এবারের সারেগারে আয়োজনে লোকগানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সন্দীপনকে নিয়ে থাকছে বিস্তারিত। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...


লোকগানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সন্দীপন। তার প্রথম অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয় ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে ‘একতার’-এর ব্যানারে। অ্যালবামের নাম ‘সোনাবন্ধু’। অ্যালবামটির সংগীতপরিচালক ছিলেন বাপ্পা মজুমদার। তখন ছিল অডিও ক্যাসেটের যুগ। অ্যালবামটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এরপর একে একে ‘সোনার মেডেল’, ‘ট্রিবিউট টু এসডি বর্মণ অ্যান্ড আরডি বর্মণ’, ‘চান মুখে মধুর হাসি’, ‘আয় প্রাণের উৎসবে’ [কথা ও সুর প্রয়াত বাল্যবন্ধু স্বপ্নীল], ‘সাদা ক্যানভাস’, ‘ভাবের ঘরে’, ‘বন্ধু পরবাসী’, ‘চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান’, ‘সেল্ফ টাইটেলড সন্দীপন’সহ বেশ কয়েকটি একক, দ্বৈত, মিক্সড অডিও অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। তিনি প্রায় দেড়যুগ ধরে গান গেয়ে মাতিয়ে রেখেছেন তার অগণিত ভক্ত-শ্রোতাদের। সংগীতাঙ্গনে তিনি এখন একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পী এবং পরিচিত মুখ। এই অবস্থানে আসতে তাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। পরিশ্রমের ফল তিনি পেয়েছেন। ছেলেবেলা থেকেই গান হৃদয়ে লালন করেছেন তিনি।

‘সন্দীপন’র সংগীতের শুরুটা হয়েছিল বাবার হাত ধরে। বাবা পুরোপুরি একজন সংগীতমনস্ক মানুষ ছিলেন। উনি অভিনয় করতেন, নির্দেশনা দিতেন। গান খুব ভালো বাসতেন। তার মাও দারুণ সংগীতপ্রেমী। মোট কথা বাবা-মা দুজনেই ছিলেন সংস্কৃতি অন্তঃপ্রাণ।

সন্দীপন’র গানের হাতেখড়ি তার বড়ো বোনের কাছে। বড়ো বোনও ভালো গান গাইতেন। এরপর ওস্তাদ মিহির কান্তি লালার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পথনাটকে অভিনয় করতে থাকেন। বাড়ি চট্টগ্রামে তাই শুরুটা ছিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক। ওখান থেকেই আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠা।

বর্তমান ব্যস্ততার কথা জানতে চইলে বলেন, “আসলে আমার অনেক দিনের একটা ইচ্ছা ছিল শিশুদের নিয়ে কাজ করার। সেই ইচ্ছা থেকেই আমি ঢাকায় সিদ্ধেশ্বরী সুধী সমাজের গলিতে শিশুদের নিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান করেছি নাম শিশুরাজ্য। সেখানে প্রি-স্কুলিং-সহ শিশুদের মেধা-মননের বিকাশে খেলাধুলার মাধ্যমে নাচ, গান, চিত্রাংকন, ক্রাফটিং, ক্যারাটে, যোগব্যায়াম এ গুলো শিখবে। ওখানে খেলাধুলার সরঞ্জাম আছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা আমার স্ত্রীসহ তিনজন নারী। পিছন থেকে আমি তাদের সাহায্য করছি। এছাড়া গান নিয়ে আমি সংগীতপরিচালক জে কে মজলিসের একটি লোকজ গানের প্রোডাকশনে কাজ করছি। এটা মাছরাঙা টেলিভিশনের জন্য। সংগীত পরিচালক বাপ্পা মজুমদারের সংগীতায়োজনে বিজয় সরকারের একটি গান নিয়ে কাজ করছি। গীতিকার দেলোয়ার আরজুদা সরফে’র কথায় এবং অভি আকাশের সুরে গাংচিল থেকে একটি গান আসছে। জিসিরিজের ব্যানারে একটি গানের কাজ করছি। এটাও দেলোয়ার ভাইয়ের লেখা। এটা আমার আর সালমার ডুয়েট গান। এটা এখনও রিলিজ হয়নি। পাশাপাশি ভয়েস ডাবিংয়ের কাজ করছি সিসিমপুর প্রজেক্টে। মাঝখানে কিছুদিন কাজ করিনি। এখন আবার শুরু করেছি ‘ধ্বনিচিত্রে’র সঙ্গে। এটা সিসিমপুরের রোহিঙ্গা ভার্সন। ওখানে ছয় বছরের একটা পাপেটের ক্যারেক্টারে নিয়মিত কণ্ঠ দিচ্ছি। পাপেটের নাম ‘জাড’। এছাড়া নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের বিভিন্ন কাজে এখন আবার অংশগ্রহণ করছি। সম্প্রতি ‘আলী যাকের নতুনের উৎসব’-এ নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে সবাই মিলে দলীয় সংগীত গেয়েছি। এছাড়া দেশ-বিদেশে নিয়মিত স্টেজ শো, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে লাইভ শো এবং বেতারে গান করছি। মোট কথা গান নিয়েই আছি।”

সন্দীপন ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ভাষা দিবসে একুশে ফেব্রæয়ারি নিয়ে গান গেয়েছেন। গানের শিরোনাম ‘আমার একুশ’। গানের কথা : আমার একুশ তোমায় শোনায় কবিতা,/ আমার একুশ তোমায় শোনায় গান,/ আমার একুশের বক্ষে এতো সুর,/ পার হয়ে যায় সাত মহাদেশ, পাঁচটি সমুদ্দুর। গানটি লিখেছেন প্রসেনিজিৎ ওঝা, সুর করেছেন প্রসেনজিৎ ও শোভন রায়। গানটির মিউজিক ভিডিও হয়েছে এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটি ইউটিউবে দেখে কলকাতার অনেক বড়ো বড়ো চলচ্চিত্র পরিচালক শেয়ার করেছেন। এটা একজন শিল্পীর বড়ো পাওয়া বলে মনে করেন সন্দীপন। গানটি প্রকাশিত হয়েছে ‘স্টুডিও প্রোটিউন বিডি’র ইউটিউব চ্যানেলে। একুশ যে আজ সারাপৃথিবী জয় করে নিয়েছে। বাংলা ভাষা আমাদের। একুশ আজকে সারাপৃথিবীতে আমাদের মহিমান্বিত করেছে। বাংলা ভাষাকে দিয়ে, একুশকে দিয়ে পৃথিবীর মানুষ আমাদের বাংলাদেশকে চিনেছে। গানটিতে সেই মেসেজটাই দেওয়া হয়েছে।

দেশের গান নিয়ে বরাবরই কাজ করার ইচ্ছা আছে তার। কিছুদিন আগে একটি দেশাত্ববোধক গান করেছেন। গানটির কথা : ‘মুক্তির মন্দির, সোপান তলে, / কত প্রাণ হলো বলি দান, / লেখা আছে অশ্রুজলে’ এটি মোহিনী চৌধুরীর বিখ্যাত একটি গান। এই গানটিরও মিউজিক ভিডিও হয়েছে প্রোটিউনের ব্যানারে। তিনি বিখ্যাত পরিচালক সালাউদ্দিন জাকি’র ‘হারানো পাতায় প্রেম’ টেলিফিল্মে রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের জলের লাগলো জোয়ার’ গানটি গেয়েছেন সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। রবীন্দ্রনাথের আরো একটি গান ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’ সম্প্রতি সংগীতপরিচালক সুমন কল্যাণ-এর সংগীতায়োজনে ‘প্রোটিউনে’র ব্যানারে মিউজিক ভিডিও মুক্তি পেয়েছে। সন্দীপন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বেশ কয়েকটি মিউজিক ভিডিও করেছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ভাষায়ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান করেছেন “মুজিব আঁরার নেতা” শিরোনামে। সম্প্রতি ‘আইপিডিসির’ ব্যানারে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার ‘নাইওর’ নিবা নিবা’ দ্বৈত গানটি বেশ সাড়া জাগিয়েছে। সেটার একটা মিউজিক ভিডিও আছে। মোটকথা দেশের গান নিয়ে সবসময় কাজ করতে চান তিনি।

সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে বলেন- ‘শুদ্ধ-সংগীতের সঙ্গে থাকতে চাই, বাংলা গান নিয়ে এগুতে চাই। যেহেতু সৌভাগ্যের ব্যাপার আমার লোকজ ধারার গানগুলো শ্রোতারা ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন, সেই শেকড়ের গানগুলোই বাংলা গানের মূল ভিত্তি তাই মনেপ্রাণে লোকজ ধারার গানগুলোকে ধারণ করে এগুতে চাই। লোকজ ধারার গান বাঁচলেই কিন্তু আমাদের বাংলা গান বাঁচবে।