ভালোবাসা অক্সিজেন ভালোবাসা মায়াজাল

14 Feb 2023, 02:54 PM কাভার জুটি শেয়ার:
ভালোবাসা অক্সিজেন  ভালোবাসা মায়াজাল

দিনদিন বেড়েই চলছে ইউটিউব ও ওটিটি প্লাটফর্মের জনপ্রিয়তা। এই প্লাটফর্মের দৌলতে দর্শক ঘরে বসেই অনলাইনে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে পারছেন। যার ফলে কমে যাচ্ছে টেলিভিশন দর্শক। আর এর সুফল পাচ্ছেন মিডিয়ার সংশ্লিষ্টরা। আগে যেখানে একজন শিল্পী মাসে ৪-৫টি নাটকে কাজ করতে পারতেন, আজ সেখানে প্রায় প্রতিদিনই ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে। শুধু তাই নয়, এই প্ল্যাটফর্ম থেকে উঠে আসছে অনেক নতুন মুখও। এদের দুইজন হচ্ছে হোসেন নীরব ও রিসা চৌধুরী। যারা ইতোমধ্যে বেশকিছু কাজ করে তাদের অবস্থান শক্ত করেছেন। তাদের নিয়ে থাকছে আনন্দভুবন-এর এবারের প্রচ্ছদ রচনা। লিখেছেন শেখ সেলিম...


বিশ্বজুড়েই এখন ওটিটি প্ল্যাটর্মের জয়জয়কার অবস্থা। সা¤প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বজুড়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। তাই অনেক প্রতিষ্ঠান এখন এই মাধ্যমে অর্থ লগ্নি করেছেন। এতে করে কর্মসংস্থানও যেমন বাড়ছে, তেমনি কনটেন্ট তৈরিরও একটা প্রতিযোগিতা বেড়েছে। মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্তরা এখন অনায়াসে এই মাধ্যমকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন। সেইসঙ্গে প্রতিনিয়ত উঠে আসছেন নতুন মুখও। এদেরই দুইজন মিডিয়াকর্মী হোসেন নীরব ও রিসা চৌধুরী। ইতোমধ্যে তারা সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শকের হৃদয়ে আসন করে নিয়েছেন।

কাজের পরিধি বাড়ায় দুজনেই এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এই প্রসঙ্গে নীরব বলেন, আগে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল টেলিভিশন। এখন এর পরিধি অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ওটিটি প্লাটফর্ম আসায় এখন কমবেশি সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন, দর্শকও অবসর সময়ে দেখে নিতে পারছেন তার প্রিয় অনুষ্ঠানগুলো। শুধু তাই নয়, ওটিটি প্লাটফর্মের কারণে আমাদের কাজগুলো দেশ ছাড়িয়ে দেশের বাইরেও দেখা যাচ্ছে। শিল্পীদের পাশাপাশি টেকনিশিয়ানদেরও কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। আর মিডিয়ার সবাই কাজের ব্যাপারে আরো বেশি যতœবান হয়েছেন। কারণ, আমাদের কাজগুলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইড দর্শক দেখছেন।

রিসা নীরবের সঙ্গে একমত হয়ে বলেন, আগে শুধু টেলিভিশনে পারফর্মেন্স করা হতো, যেহেতু ওটিটি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডভাবে দেখা যাচ্ছে, সেইসঙ্গে ইউটিউব চ্যানেল ব্যাপকতায় কাজের পরিধির পাশাপাশি শিল্পী, নির্মাতা, কলাকুশলী সবারই কাজ বেড়ে গেছে। এর ফলে নতুনরাও তাদের কাজ দেখানোর সুযোগ পেয়েছে।

রিসার ক্যারিয়ারের বয়েস মাত্র তিন বছর। শুরুতে অভিনয়ের চেয়ে মডেল ফটোগ্রাফিতেই বেশি উৎসাহিত ছিলেন। আর এই আগ্রহটা পান রাস্তার দু’ধারের বিলবোর্ড দেখে। রাস্তা দিয়ে যেতেন আর ভাবতেন ইস্ আমার ছবিটা যদি এই বিলবোর্ডে দেখা যেত !

এই ভাবতে ভাবতেই একদিন সুযোগ চলে আসে ফটোসেশনের। নিজের ভেতরে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে, ফটোসেশনের আগের দিন একটা চর্চা করেই ফেললেন। প্রায় একবছরে ফটোগ্রাফি মডেল হন তিনি। ফটোসেশন করতে গিয়ে চলে আসে অভিনয়ের সুযোগ। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম কোনো নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান। প্রথম নাটকে ভালো অভিনয় করায় সুযোগ আসে একের পর এক নাটকে। যার বর্তমান সংখ্যা ৫০টির ওপরে। এরমধ্যে কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি ধারাবাহিক নাটকেও। বর্তমানে আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে ধারাবাহিক নাটক ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’। টিভি নাটকের পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ওয়েব সিরিজেও।

হোসেন নীরব ছেলেবেলা থেকেই নাটকের পোকা ছিলেন। কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রচুর নাটক দেখতেন। নাটক দেখতে দেখতেই নাটকের প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়। বিশেষ করে মোশাররফ করিমের অভিনয় তার ভালো লাগত, তার অভিনয় দেখে অভিনয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন নীরব। মোশাররফ করিম অভিনীত ‘কেরাম’ নাটকটি দেখার পর নীরব অভিনেতা হবেন বলে মনে মনে স্থির করেন। নিজের ভেতরের স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ শুরু করলেন। একবন্ধু নীরবের ইচ্ছের কথা শুনে বললেন, তুমি যদি অভিনয় করতে চাও তাহলে আগে থিয়েটারে য্ক্তু হও। ‘দেশ নাটক’র সঙ্গে য্ক্তু হলেন নীরব। এরমধ্যে সুযোগ আসে রবির একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করার। করলেন। সকলের প্রশংসাও পেলেন। এরপর বেশকিছু রবির বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হলেন নীরব।

“আমার বিজ্ঞাপনচিত্র দেখেই ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে দীপ্ত টিভি থেকে আমার ডাক পড়ে সেখানে ‘পালকি নাটকের’ জন্য অডিশন দিই। সেখানেও আমি উত্তীর্ণ হই। এককথায় আমি এই পর্যন্ত যতগুলো বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছি, প্রতিটিতেই একটি প্রতিযোগিতার মধ্যে গিয়ে টিকেছি।”

দু’জনই এখন বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন এবং সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে একসঙ্গে তাদের কাজের সংখ্যাও বেশি। কাজ করতে করতে তাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্বও তৈরি হয়েছে। ১৪ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় বিশ^ ভালোবাসা দিবস। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় ভালোবাসার সংজ্ঞা, নীরবের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে এমনÑ “ভালোবাসা আমার জন্য অক্সিজেন। ভালোবাসা আমার কাছে এক টুকরো শান্তি যা আমাকে সারাদিন নিজের অজান্তেই হাসতে শেখায়। দিনশেষে তার হাতটি ধরে বলতে ইচ্ছে করে তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।”

রিসার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞাÑ “ভালোবাসা আমার কাছে এমন একটা মায়াজাল, যার আবদ্ধ থেকে চাইলেও আমরা বের হতে পারি না।”

ভালোবাসা দিবসটিকে কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে নীরব বলেন, “আমার কাছে ভালোবাসা দিবসটি হচ্ছে সারাবছরের সঞ্চিত ভালোবাসাগুলোর হিব-নিকাশ করা এবং সেই ভালোবাসা যদি আগের বছরের চেয়ে কম হয় তা নিয়ে ঝগড়া করা।” রিসা বলেন, “ভালোবাসা দিবসটিকে আমি একটু অন্যভাবেই দেখি, ভালোবাসাদিবসে ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে ভালোবাসায় কাটাতে চাই।”

ভ্যালেন্টাইন ডে’র পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, “ভ্যালেন্টাইন ডে-তে প্রিয় মানুষকে নিয়ে সারাদিন ঘুরবো, ফুচকা খাব। প্রেমের শুরুটা যেখান থেকে হয়েছিল সেখানে যাব। সেখানে বসবো, পুরনো স্মৃতিগুলো মনে করবো এবং মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখবো আর বলবো, ভালোবাসি।”

নীরব খুব সাবলীলভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তাই তার ব্যক্তিজীবন নিয়ে প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি বলেন, “কিছুই লুকানোর নেই”। প্রশ্নটি জানতে চাইলেন, নীরবের কাছে জানতে চাওয়া হলো মনের মানুষ সম্পর্কে বলুন। নীরব খুব সহজ সরলভাবে উত্তর দিলেন, “মনের মানুষ আছে এবং তার প্রেমে এখনো এতটাই মুগ্ধ হয়ে আছি যে, ১৩ বছর কাটিয়ে দিয়েছি।”