বলিউডে বিদেশি শিল্পী

06 Jan 2021, 03:03 PM নিকটদেশ শেয়ার:
বলিউডে বিদেশি শিল্পী

বলা হয়ে থাকে, সুরের কোনো ভাষা নেই। দেশ, কাল, সংস্কৃতি বা ভাষা নির্বিশেষে সুর জায়গা করে নিতে পারে যেকোনো মানুষের মননে আর হৃদয়ে। আজকের আয়োজনে থাকছে তারই সম্যক প্রমাণ। আসুন তবে, পরিচিতি হয়ে নেওয়া যাক এমন কিছু বিদেশি সংগীতশিল্পীর সঙ্গে, যারা ভারতীয় না হয়েও হিন্দি গানের বাজারে ভারতীয় শিল্পীদের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে নিয়েছেন...


তানিয়া ওয়েলস্

ইংরেজ গায়িকা তানিয়া ওয়েলস্ মেহদী হাসানের ধ্রæপদী সংগীত এবং গজল গাইবার ক্ষেত্রে এতটাই পারদর্শী- খোদ হিন্দি কিংবা উর্দুভাষীরাও তার গাওয়া গজল শুনে বুঝতে পারবেন না যে তিনি বিদেশি। তার ভাষ্যমতে, যোগ ব্যায়ামের সূত্র ধরেই ভারতীয় সংগীতের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। ‘সহজ ইয়োগা’ চর্চার জন্য তার পিতামাতা ভারতে এলে, সে সময় তার বোনের সঙ্গে হিমাচল প্রদেশের একটি আন্তর্জাতিক বোর্ডিং স্কুলে ৩ বছর লেখাপড়ার সুযোগ হয়। ১৭ বছর বয়সে তিনি আবার ভারতে ফেরত আসেন ধ্রæপদী সংগীত শিক্ষার উদ্দেশ্যে। এ সময় তিনি সুরের পাশাপাশি হিন্দি ভাষাও আয়ত্তে নিয়ে আসেন।


নেলি ফুরটাডো

পর্তুগিজ বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান গায়িকা নেলি ফুরটডো জন্মগ্রহণ করেন ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভিক্টোরিয়া অঞ্চলে। সারাবিশ্বে প্রায় ৪০ মিলিয়নেরও বেশি রেকর্ড বিক্রির মাধ্যমে কানাডিয়ান শীর্ষ শিল্পীদের মধ্যে তিনি নিজের অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। মন্টরিয়েল ভিত্তিক ভারতীয় ব্যান্ড দল ‘জোস্’-এর সঙ্গে করা ‘পাওয়ারলেস’ নামে একটি গানের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় শ্রোতামহলে বিপুল সমাদৃত হন। লতা মুঙ্গেশকর আর আশা ভোঁসলের এই ভক্তের গান শুনে আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, তিনি হিন্দিতে কথা বলতে পারেন না।


নাটালি ডি লুসিও

‘বলিউড সোপ্রানো’ নামে বিশেষভাবে খ্যাত এই ইটালিয়ান-কানাডিয়ান ধ্রæপদী গায়িকা ২০১০ সালে ইউটিউবে প্রকাশিত একটি বলিউড সিনেমার গানের মাধ্যমে বিখ্যাত সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের নজরে আসেন। তবে বলিউডে তার শুরু হয়েছিল বিখ্যাত গায়ক সনু নিগমের সঙ্গে। মাঝে ২০১১ সালে ভারতীয় অভিনেতা এজাজ খানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। হিন্দি গানের প্রতি আগ্রহের পেছনে এই সম্পর্কের ভূমিকা পরবর্তীসময়ে তিনি নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন।


টাটা ইয়াং

থাই-আমেরিকান গায়িকা আমিটা মারি ইয়াং মিডিয়া জগতে টাটা ইয়াং নামেই বেশি পরিচিত। অনেকেই তাকে আদর করে এশিয়ার ‘ব্রিটনি স্পিয়ার্স’ও বলে থাকেন। ২০০৪ সালে বলিউডে মুক্তি পাওয়া ‘ধুম’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাক ‘ধুম ধুম’ গেয়ে ভারতীয় শ্রোতাদের কাছে অর্জন করেন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। শুধু ভারতেই এই গানের প্রায় ৮ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। ভারত ছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের টপচার্ট তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে নেয় এ গানটি।


নোজিয়া কারোমাতুল্লো

তাজাকিস্তানের গায়িকা নোজিয়া কারোমাতুল্লোর বাবা কারোমাতুল্লো কুর্বোনভ ছিলেন বিখ্যাত তাজিক গায়ক। তাজাকিস্তানে প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া শেষ করে তিনি চলে আসেন ভারতের নয়া দিল্লিতে। এখানে তিনি দীর্ঘ ৪ বছর ভারতের ধ্রæপদী সংগীত আর নাচের তামিল নেন। তার গাওয়া বেশ কিছু হিন্দি গান অনেক ভারতীয় শিল্পীরও ঈর্ষার কারণ। ভারত এবং তাজাকিস্তানের পাশাপাশি পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলংকাতেও তিনি বেশ জনপ্রিয়।


আযম আলী

তেহরানে জন্ম নেওয়া ইরানিয়ান আমেরিকান গায়িকা আযম আলী ভারতে আসেন মাত্র ৪ বছর বয়সে তার মায়ের সঙ্গে। শৈশবের বেশিরভাগ সময় তার কেটেছে মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার পঞ্চগানি এলাকায়। এসময়ই ভারতীয় সংগীত এবং ভাষার ওপর দখল তৈরি করেন এ শিল্পী। পরবর্তীসময়ে মায়ের সঙ্গেই পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের লস এঞ্জেলস-এ। ৫০ বছর বয়সী এ গায়িকা বর্তমানে আছেন কানাডায়। গান গাওয়া ছাড়াও সানতুরসহ বেশ কিছু বাদ্যযন্ত্র বাজানোতেও তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। 

 গ্রন্থনা : ফাতেমা ইয়াসমিন