মুক্ত আকাশের গানের পাখি অংকন

08 Dec 2022, 02:28 PM সারেগারে শেয়ার:
মুক্ত আকাশের গানের পাখি অংকন

‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা ২০০৯’-এ গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন এবং ‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান ২০১৫’-তে দ্বিতীয় রানারআপের স্থান অর্জন করেন অনন্যা ইয়াসমিন অংকন। অংশগ্রহণ করেছিলেন ভারতের গানের রিয়েলিটি শো সারেগামাপাতেও। চল্লিশটিরও বেশি মৌলিক গান রয়েছে তার। অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে অল্প সময়ের মধ্যেই জায়গা করে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত-শ্রোতার হৃদয়ে। এবারের সারেগারে আয়োজনে থাকছেন অংকন। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...



অনন্যা ইয়াসমিন অংকন স¤প্রতি ব্যস্ত সময় পার করছেন নিজের মৌলিক গানের অডিও রেকর্ডিং এবং মিউজিক ভিডিও’র শুটিংয়ের কাজ নিয়ে। তাছাড়া ফোক গানের বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজ নিয়েও ব্যস্ত আছেন। আত্মহত্যার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করতে নির্মিত সিনেমা ‘জীবন পাখি’র টাইটেল গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন অংকন। ‘যে পাখি মুক্ত আকাশ পায়’ শিরোনামের গানটির কথা ও সুর করেছেন সিনেমাটির পরিচালক আসাদ সরকার। সংগীতায়োজন করেছেন আকাশ মাহমুদ। ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সিনেমাটির কাহিনি একটু ভিন্ন। গানটির কথা, সুর এবং সংগীতও হয়েছে ছবিটির সঙ্গে খুবই প্রাসঙ্গিক। নিজের পুরোটা দিয়ে গাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস গানটি সবার ভালো লাগবে।’

ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মোহনা মিম, গায়ক মুহিন খান, গায়িকা ফাতেমা-তুজ্ জোহরা, মীরাক্কেলের আবু হেনা রনি, আজাদ আবুল কালাম, সুজন হাবিব, সুমনা সরকার, লাবণী, সঞ্জিব আহমেদ।

এছাড়া ‘ভোমরা’ শিরোনামে আরো একটি নতুন গান রিলিজ হয়েছে ফেব্রæয়ারির ১৪ তারিখে। এর কথা ও সুর করেছেন জাহাঙ্গীর রানা, সংগীতায়োজন করেছেন আকাশ মাহমুদ। পানের বাটার ভেতরে যেমন ছোটো ছোটো কোটরা বা কৌটা থাকে, তেমনি আমাদের এই দেহ রূপ-এর ভেতরে রয়েছে হৃদ কোটরা। এই কোটরার মাঝেই বাস করে আমাদের মন ভোমরা। ডানাবিহীন যখন ইচ্ছা যেখানে উড়ে যাওয়া, এই অবাক ভোমরা নিয়েই মূলত ‘ভোমরা’ শীর্ষক গানটি করা হয়েছে। গানটি মিউজিক ভিডিওসহ প্রকাশ হয়েছে গেøাবাল প্লাস ইউটিউব চ্যানেলে। ‘ভোমরা’র পর আইপিডিসি থেকে ‘বাপুই চ্যাংড়া রে’ শিারোনামে ভাওয়াইয়া গান রিজিল হয়েছে। এরপর ‘চক্ষু নদীর চল শুকাইল’ বের হয়েছে। গানটি লিখেছেন মাহমুদ মুরাদ, সুর ও সংগীত করেছেন আহমেদ সজিব। অংকনের ‘চ্যাংড়া বন্ধুয়া’ গামছা পলাশের সঙ্গে ‘বাড়ির পাশে বেতের আড়া’সহ বেশ কয়েকটি গান ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স¤প্রতি ‘বুইজা প্রেম কইরো’ শিরোনামে একটি গানের কাজ শেষ করেছেন। জাহাঙ্গীর আলমের লেখা ও সুরে গানটির সংগীত করেছেন রিলে বিপ্লব। শিল্পী আরমানের সঙ্গে ফোক ঘরানার আরো একটি দ্বৈত গানের কাজও শেষ করলেন। এটির কথা লিখেছেন প্রসেনজিৎ মন্ডল, সুর আরমান খান, সংগীত এবি রহমান। গানটির শিরোনাম এখনো ঠিক হয়নি। এছাড়া আরো কিছু প্রজেক্টের কাজ চলছে সেগুলো আগামীতে রিলিজ হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের শো, দেশে এবং দেশের বাইরে স্টেজ শো নিয়ে দারুণ ব্যস্ত আছেন অংকন।

সংগীতের শুরুটা হয়েছে কীভাবে জানতে চাইলে বলেন, ‘সংগীতের শুরুটা হয়েছে আমার একদম ছেলেবেলা থেকে আব্বুর কাছে। আব্বুর কাছেই আমার গানের হাতেখড়ি এবং আব্বুই আমার গানের ওস্তাদ। আসলে ছেলেবেলায় খেলতে খেলতেই আমার গান শেখা। গানের পরিবেশেই সবসময় থাকতাম। হারমোনিয়াম যখন বাজাতে জানতাম না তখন বসে বসে গান শুনতাম, গান শিখতাম, গলা মেলাতাম- এভাবেই ছেলেবেলা থেকেই আমার গানের শুরু।’

অংকনের পরিবারের বাবা, মা, ছোটোভাই সবাই সংগীতশিল্পী। অংকন যখন বুঝতে শিখেছেন তখন থেকেই বাবা-মায়ের গান শুনে শুনেই গানের প্রতি আগ্রহ জন্মে তার।

‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান’ ২য় রানারআপ হওয়ার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে বলেন, তখন আমার মনে হয়েছিল আমি ঠিক যেভাবে স্বপ্নটা দেখেছিলাম সেটা হয়ত পূরণ হতে চলেছে। আসলে আমি একটা রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার শুরু করতে চেয়েছিলাম। ওই শো’র মাধ্যমে আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। আমি জানতাম রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমে যদি আমার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয় তাহলে আমার যাত্রা বহুগুণে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। আমার একটা প্লাটফর্ম তৈরি হলে সেটা আমার জন্য, আমার ক্যারিয়ারের জন্য মোট কথা, আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য আরো বেশি সহায়ক হবে। আর ‘আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান’-এর মাধ্যমে আমার সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।

অংকন যখন শিশুশিল্পী ছিলেন তখনই জাতীয় পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা ২০০৯’-তে অংশগ্রহণ করেন এবং চ্যাম্পিয়ান হন। চ্যাম্পিয়ান হিসেবে সেই অনুষ্ঠানে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে গোল্ড মেডেল পান সেই সময়ের স্মৃতিটা তার কাছে বিশেষভাবে স্মরণীয়। কখনো আশা করেননি গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হবেন। তাকে যখন গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন এবং গোল্ড মেডেলের জন্য নাম ঘোষণা করা হয় তখন তিনি খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ওটা ছিল তার জীবনে বড়ো অর্জন। ওই অর্জনই তাকে আরো বেশি উৎসাহী করে তোলে সংগীতের প্রতি। তখন থেকেই একটি চিন্তা মাথায় ঢোকে আরো ভালো করে গান শিখতে হবে এবং ভালো গান গাইতে হবে।

সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী ? ‘সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে আমি সংগীতের যে ট্র্যাকে আছি অর্থাৎ ফোক গান, এই ফোক নিয়ে আমার ভালো ভালো কিছু গান করার ইচ্ছে এবং সেই গানগুলো যেন মানসম্মত হয়, মানুষ মনে রাখে এরকম কিছু গান করা জরুরি। গান দিয়ে আমি নিজের পরিচয় তৈরি করতে চাই এবং সেটা হবে নিজের একটা আলাদা পরিচয়। সেটা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই যেন আমার গানের জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখে। অংকন নামে একজন শিল্পী আছে, যার গানগুলো তাদের খুব প্রিয়- এরকম কিছু। মোটকথা, নিজের এমন কিছু গান থাকবে যে গানগুলো শুনে মানুষ আমাকে চিনবে।’