সিফাত-ইমতুর কথকতা

08 Dec 2022, 02:18 PM কাভার জুটি শেয়ার:
সিফাত-ইমতুর কথকতা

টিভি নাটক, মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা, লোককাহিনিভিত্তিক নাটক ‘হীরামন’-এ অভিনয় করছেন ইমতু রাতিশ ও নাইরুজ সিফাত। দু’জনের কথকতা লিখেছেন শেখ সেলিম ...



ইমতু রাতিশ কখনো কথার ফুলঝুরি দিয়ে, আবার কখনো সাবলীল অভিনয় দিয়ে দর্শকের মন জয় করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেকে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ইমতু তার সাবলীল অভিনয় ও উপস্থাপনা দিয়ে দিন দিন আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।

অন্যদিকে নাইরুজ সিফাতও কম যান না, উপস্থাপনা, নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। সিফাতকে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি এনে দেয় দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত ‘অপরাজিতা’ নাটকটি। নাটকটি এতই জনপ্রিয় ছিল যে, দর্শকের অনুরোধে দীপ্ত টিভি এটি পুনঃপ্রচার করছে।

নাটক, টেলিফিল্ম, সিনেমা ছাড়াও অন্যান্য মাধ্যমেও দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই জুটি। অভিনয় করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ছবিতেও।

এখন বাংলাদেশে প্রচুর কাজ হচ্ছে। তাই শিল্পীদের ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে। ইমতু, সিফাতও তার বাইরে নন। প্রতিদিনই এই জুটির কোনো-না-কোনো অনুষ্ঠান, নাটক প্রচার হচ্ছে বিভিন্ন চ্যানেলে। বর্তমানে দীপ্তটিভিতে পুনঃপ্রচার হচ্ছে জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘পালকী’, বৈশাখী টেলিভিশনে ‘মুসা’, বিটিভিতে ‘হীরামন’, এটিএন বাংলায় প্রচার হচ্ছে ‘টু-লেট’সহ আরো কয়েকটি নাটক। প্রচারিত নাটক ছাড়াও আরো নতুন কিছু নাটকে অভিনয় করছেন তিনি। ইমতু উপস্থাপনা কমিয়ে দিলেও এখন ব্যস্ত আছেন অভিনয়ে। এই প্রসঙ্গে ইমতু বলেন, অভিনয়ের ব্যস্ততার কারণে উপস্থাপনা কমিয়ে দিয়েছি। এখন আরটিভিতে প্রচার হচ্ছে ‘দূর-পরবাসে’, গ্লোবাল টিভিতে ‘স্টার কাপল’ প্রভৃতি।  

নাটকের পাশাপাশি সিনেমায়ও নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি। এই পর্যন্ত তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ছবিগুলো হচ্ছে- অনন্য মামুনের ‘আবার বসন্ত’, নার্গিস আক্তারের ‘যৈবতী কইন্যার মন’, শিহাব শাহীনের ‘যদি কিন্তু তবুও’ এবং চতুর্থ ছবি ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে সিফাত ব্যস্ত রয়েছে, একাধিক নাটক ও সিনেমা নিয়ে। এরমধ্যে দীপ্তটিভিতে পুনঃপ্রচার হচ্ছে মেগাসিরিয়াল ‘অপরাজিতা’। বিটিভিতে ‘হীরামন’, বৈশাখী টেলিভিশনে যাচ্ছে ‘মুসা’, এটিএনবাংলায় ‘টু-লেট’ এছাড়াও নিয়মিত অভিনয় করছেন সিনেমা ও ডকুমেন্টরিতে ।

এই জুটির সঙ্গে যখন কথা হয় তখন তারা কালজয়ী ‘কাজল রেখা’ গল্পে অভিনয় করছেন। এই নাটকে ইমতু শাহজাদা সেলিম চরিত্রে অভিনয় করছেন। যদিও এটি তিনশ’ বছর আগের গল্প, বর্তমান প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এর চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। নাটকের চিত্রনাট্য প্রসঙ্গে ইমতু আরো বলেন, ‘কাজল রেখা’ তিনশ’ বছরের আগের একটি গল্প। বাংলা সংস্কৃতিতে শিকড়ের গল্প বলতে যেটা বোঝায় ‘কাজল রেখা’ তেমন একটি গল্প। এর আগে ‘কাজল রেখার’ গল্প দর্শক দেখেছেন, আগের মতো হলে তো দর্শক তেমনভাবে গ্রহণ করবেন না। তাই নির্মাতা চেয়েছেন একটু ভিন্ন আঙ্গিকে গল্পটি উপস্থাপন করতে। দর্শক নাটকটি দেখে আনন্দ পায় সেই দিক চিন্তা করেই নির্মাতা নাটকটি নির্মাণ করছেন। আমার চরিত্রটি খুবই চ্যালেঞ্জিং। এখানে শাহাজাদা সেলিম সৃষ্টিশীল মানুষের প্রেমে পড়েন। যেহেতু এটা তিনশ’ বছর আগের গল্প তখন গল্পের প্রয়োজনে যতটুকু পরিবর্তন করা যায় সেটাই করা হয়েছে, মূল গল্পটাকে ঠিক রেখে। এখানে পরিচালক মনে করেছেন একটি নাটকে যদি ৬০-৭০ পর্ব পর্যন্ত যদি বিছানায় শুয়েই থাকে, তাহলে দর্শক অস্বস্তি বোধ করতে পারে। এজন্য নায়ককে এখানে শোয়া অবস্থায় না রেখে, তাকে কল্পনায় সক্রিয় রাখা হয়েছে। যেমন নায়ক হাঁটছে, নায়িকার সঙ্গে দেখা করছে প্রভৃতি। এই যে টুইস্ট এটা দর্শকের কাছে নতুন মনে হবে। গল্পটি যখন শুনেছি, খুবই ভালো লেগেছে।

এই রকম একটি চরিত্র করার জন্য যে প্রস্তুতি দরকার, সে প্রস্তুতি কী ছিল ? ইমতু বলেন, একটি চরিত্রের জন্য যে প্রস্তুতি দরকার তা আমরা পাই না। মানুষ সহনশীল প্রাণী। যে মানুষটি বরফের দেশে থাকেন, সেটার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে, আবার যখন মরুরদেশে থাকে সেটার সঙ্গেও খাপ খাইয়ে চলতে পারে। আমাদের শিল্পী সত্তাও এমন হয়ে গেছে আমরা একেকদিন একেক চরিত্রে অভিনয় করি। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে, তাই কঠিন মনে হয় না। তবে এই গল্পের রিলেটেড যত ডকুমেন্টারি আছে সেগুলো দেখেছি। স্ক্রিপ্টও আগে পেয়েছি, তাই একটু প্রস্তুতি নিতে পেরেছি। সেক্ষেত্রে বলতে পারি আমাদের জায়গা থেকে কোনো ক¤েপ্রামাইজ করছি না। দর্শক দেখলেই তা বুঝতে পারবেন। এই নাটকে আধুনিক যত প্রযুক্তি রয়েছে সবকিছু ব্যবহার করা হয়েছে।

সিফাত বলেন, যেকোনো চরিত্রে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে, কিন্তু আমরা তো সেটা পাই না। তাই সর্বত্র চেষ্টা করি গল্পে মিশে যেতে। গল্পটাকে ইন্টারেস্টিং করার জন্যই বর্তমান প্রেক্ষাপট মাথায় রেখে এর চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে। আশা করি গল্পটি সবারই ভালো লাগবে। বাংলা সংস্কৃতিতে শিকড়ের গল্প বলতে যেটা বোঝায় ‘কাজল রেখা’ তেমনই একটি গল্প। শুধু ভালো লাগা নয়, আমরা যখন কাজ করছি, গল্পের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যাচ্ছি মনেই হচ্ছে না, আমরা অভিনয় করছি।

চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে নাইরুজ সিফাত বলেন, ‘ঢাকা ড্রিম’ আমার প্রথম চলচ্চিত্র। সবকিছু মিলিয়ে চলচ্চিত্রটিতে কাজ করে আমি তৃপ্ত। আমার চরিত্রটিও বেশ চ্যালেঞ্জিং। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পরিচালক আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। ঢাকা ড্রিম ছাড়াও মুক্তি পেয়েছে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আমার বাবার নাম’। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ভারতের শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘বঙ্গবন্ধুর ‘বায়োপিক’। ‘বায়োপিকে’ সিফাত শেখ জামালের স্ত্রী রোজী জামালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই প্রসঙ্গে নাইরুজ সিফাত বলেন, বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া আমার অভিনয় জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পুরো বিষয়টিই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এছাড়া শুটিং চলছে সৌরভ কুÐের গিরগিটি নামের একটি ছবির। আরো কয়েকটি ছবি নিয়ে কথা চলছে।

উপস্থাপনা প্রসঙ্গে নাইরুজ সিফাত বলেন, অভিনয় আমার ভালোলাগা ভালোবাসা, আর উপস্থাপনা করি শখের বশে।

উপস্থাপনা প্রসঙ্গে ইমতু বলেন, উপস্থাপনা একটা সাবলীল বিষয়। উপস্থাপক নিজে যদি সেটা উপভোগ করতে না পারে দর্শকের ভালো লাগার কারণ সে হতে পারবে না। নিজের মতো করে, নিজের ঢঙে যেকোনো বিষয়কে তথ্যভিত্তিক উপস্থাপন করাটাই উপস্থাপনা।

উপস্থাপনা কতটা উপভোগের এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইমতু বলেন, সময়, প্রকৃতি, মানুষের কাছ থেকে আমরা প্রতিনিয়তই শিখি, শেখার তো শেষ নেই। আর শিখে শিখে নিজেকে আরো তৈরি করছি। উপস্থাপনা পুরোপুরি একটা উপভোগের বিষয়। আমি কথা বলতে পছন্দ করি, গল্প করতে পছন্দ করি। আর সেটা উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করি। উপস্থাপনায় দীর্ঘদিন কাজ করছি।

আশি ও নব্বইয়ের দশকে বিটিভির জনপ্রিয় আলেখ্য অনুষ্ঠান ছিল ‘হীরামন’। লোককাহিনি ও লোকগাঁথা অবলম্বনে নির্মিত ‘হীরামন’ দারুণ জনপ্রিয় ছিল। সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লোকগাঁথা অবলম্বনে নির্মিত হতো এর প্রতিটি পর্ব। ‘হীরামন’-এ অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন অনেক শিল্পী। মাঝে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অনুষ্ঠানটি। ‘হীরামন’ আবারও প্রচার হচ্ছে বিটিভিতে। এবার রহিম চরিত্রে অভিনয় করছেন ইমতু রাতিশ ও রূপবান চরিত্রে অভিনয় করছেন সিফাত।

২০০৫ খিষ্টাব্দে একটি পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে মিডিয়ায় যাত্রা করেন ইমতু রাতিশ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই অভিনেতাকে। কখনো উপস্থাপনা, কখনো মডেলিং আবার কখনো অভিনয়Ñ তিন মাধ্যমেই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন এই অভিনেতা। ছোটোপর্দার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নাম লেখান বড়োপর্দায়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ‘যৈবতী কইন্যার মন’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। এরপর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অনন্য মামুন পরিচালিত ‘আবার বসন্ত’ ছবিতে কাজ করেন। পাশাপাশি বেশকিছু ওয়েবসিরিজেও তিনি কাজ করেন।

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে দীপ্ত টিভির দীর্ঘ ধারাবাহিক নাটক ‘অপরাজিতা’য় মন্দিরা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শককে মুগ্ধ করেন নাইরুজ সিফাত। তারপর একাধিক নাটকে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন। তারই ধারাবাহিকতায় নাম লেখান চলচ্চিত্রে। নাইরুজ সিফাতের মিডিয়ায় যাত্রা শুরু হয় মডেলিংয়ের মধ্য দিয়ে।