চোখ

10 Nov 2022, 11:55 AM অভোগ শেয়ার:
চোখ

আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো চোখ। চোখ দিয়ে আমরা দেখি। চোখ আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের অন্যতম। চোখের দৃষ্টি মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সম্পদ। চোখের কাজকর্ম অনেকটা ক্যমেরার মতোই। চোখের রয়েছে নানান কাজ, রয়েছে চোখের নানান অসুখও। চোখ ভালো রাখার রয়েছে উপায়। চোখ সুন্দর রাখার রয়েছে নানা সাজও। চোখের সব কিছু নিয়েই এবারের অঁ ভোগ আয়োজন ...

চোখের গঠন

প্রথমেই আসি চোখের গঠন প্রসঙ্গে। চোখের কোটরে অক্ষিগোলক নামক একটি গোলাকার অংশ থাকে। অক্ষিগোলকের বাইরে সাদা, শক্ত ও ঘন অঁাঁশযুক্ত অস্বচ্ছ শ্বেতমÐল থাকে। এটি বাইরের বিভিন্ন ধরনের অনিষ্ট হতে চোখকে রক্ষা করে এবং চোখের আকৃতি ঠিক রাখে। শ্বেতমÐলের সামনের অংশে কর্নিয়া থাকে এই কর্নিয়া স্বচ্ছ এবং শ্বেতমÐলের অন্যান্য অংশ অপেক্ষা বাইরের দিকে অধিকতর উজ্জ্বল থাকে। চোখের এই শ্বেতমন্ডলের ভেতরের গাত্র কালো রঙের একটি ঝিল্লি দ্বারা গঠিত যাকে কৃষ্ণমন্ডল থাকে। এর জন্য চোখের ভেতরে যে আলো যায় তার প্রতিফলন হয় না। চোখের কর্নিয়ার ঠিক পেছনেই আইরিস অবস্থিত, এটি মূলত অস্বচ্ছ একটি পর্দা। পর্দাটি স্থান ও লোকবিশেষে বিভিন্ন রঙের হয়। যেমন- নীল, বাদামি বা কালো হয়ে থাকে। কর্নিয়ার একদম কেন্দ্রে মাংসপেশিযুক্ত মণি বা তারারন্ধ্র থাকে। এটি একটি গোলাকার ছিদ্রপথ। মাংসপেশির সংকোচন ও প্রসারণে তারারন্ধ্র্রের আকার পরিবর্তিত হয়। চোখের কর্নিয়ার পেছনে স্ফটিক উত্তর লেন্স থাকে। এটি জেলির মতো স্বচ্ছ পর্দাথ দিয়ে তৈরি। চোখের গোলকের পেছনে হালকা গোলাপি আলোকগ্রাহী পর্দা রেটিনা থাকে। রেটিনার ওপর আলো পড়লে মস্তিষ্কে দর্শনের অনুভূতি জাগায়। তখন মূলত অমরা দেখি।

চোখের কিছু সমস্যা, কারণ ও তার প্রতিকার

কথায় আছে মাথা থাকলে মাথার ব্যথাও থাকবে। মানে যেকোনো অঙ্গেরই কিছু আলাদা রোগ থাকে। চোখের যে সকল সাধারণ সমস্যা হয়, যেমন- চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখে চুলকানি, চোখ থেকে পানি পড়া, চোখের খচখচে ভাব এসব সমস্যার ব্যাপারে একটুু বিস্তারিত জানা যাক।

চোখ চুলকানো এবং পানি পড়া

অনেক সময় দুই চোখ চুলকায় এবং চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে। চোখ লাল হয়ে যায়। মূলত এলার্জির কারণে এমন হয়। অনেকের বিড়ালের সংস্পর্শে কিংবা ফুলের পরাগের সংস্পর্শে গেলে অথবা ধূলার কারণে এই আ্যালার্জি সৃষ্টি হয়। আর তাই অ্যালার্জির হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে পশমযুক্ত পশু-পাখি থেকে দূরে থাকতে হয়। অনেকের ধুলোতে অ্যালার্জি থাকে, তাই ঘরের ধুলো পরিষ্কারক যন্ত্র বা ভ্যাকুম ক্লিনার সাবধানে ব্যবহার করতে হবে এবং ফুলের রেণুর সংস্পর্শে কম থাকতে হবে। এছাড়াও অ্যালার্জির জন্য আইড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। চোখের জ্বালাপোড়া থেকে সরাসরি সুরক্ষা দেবে। তবে, একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক ড্রপ ব্যবহার করা উচিত।

চোখের পাতা ফুলে যাওয়া

চোখের সমস্যাগুলোর মধ্যে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া অন্যতম একটি সমস্যা। এ কারণে চোখ লাল হয়ে যায়। দুটি কারণে এই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণ কিংবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। ভাইরাল সংক্রমণের কারণে চোখের পাতা ফুলে যাওয়া চোখের একটি সাধারণ সমস্যা। ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে এর যন্ত্রণা কিছুটা কমে। তবে, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের প্রদাহ তার নিজ নিয়ম অনুসারেই কমতে থাকবে। এক্ষেত্রে আপনার চোখের ডাক্তার সংক্রমণের উপশম বৃদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করার নির্দেশ দিতে পারেন। যদি আপনার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ে, চোখে হালকা অথবা তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, কোনো কিছু দেখতে সমস্যা হয় কিংবা চোখ লাল হয়ে যায় তাহলে শিগ্গির একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

চোখের কোনায় বা পাতায় ঘা

চোখের পাতায় কিংবা পাতার সংযোগস্থলের একেবারে কোনায় মাঝে মাঝেই ব্রনের মতো আকারে কিছুটা বড়ো গোটা দেখা যায়। এটি মূলত চোখের পাতার লোমকূপের ময়লার কারণে সৃষ্টি হয়। ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ করলে এমন হয়। চোখের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া সচল রাখতে উষ্ণ পরিষ্কার কাপড় দিয়ে চোখের পাতা মুছলে উপকার হবে। তবে, যদি এই সংক্রমণ আরো বেদনাদায়ক কিংবা বিরক্তিকর হয় তাহলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


চোখের শুকনো ভাব

চোখে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা না থাকে কিংবা চোখে জলের উপস্থিতি না থাকে তাহলে এই সমস্যা হয়ে থাকে। অথবা আপনার চোখের ভেতরের লিকুইড যদি স্বাভাবিক না হয় কিংবা যদি চোখের জল জলদি শুকিয়ে যায় তাহলে এ সমস্যা হতে পারে। মূলত চোখের পাতার তেল উৎপাদনকারী গ্রন্থিগুলো বাধাগ্রস্ত হলে চোখের তরল উপাদান শুকিয়ে গিয়ে এই সমস্যা হয়।

বিভিন্ন ওষুধের প্রভাব, শরীরের হরমোনের পরিবর্তন এবং দীর্ঘ সময় ধরে চোখে কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহারের ফলে চোখের এই শুষ্কতা হতে পারে। চোখের এই শুষ্কতার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিত্যদিনের খাদ্যতালিকায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন এবং সেইসঙ্গে আপনার বাসার বাতাসে জলীয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে একটি হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। তবে সমস্যা যদি বেশি জটিল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুয়াযী চিকিৎসা নিতে হবে।


চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে ব্যথা হওয়া

মূলত চোখের কর্নিয়ায় আঘাত লাগলে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো সময়ক্ষেপণ না করে দ্রæত একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়াই জরুরি।


শুধু চোখ লাল হওয়া

এ সকল সমস্যা ছাড়াও যদি আপনার চোখ লাল হয়ে যায় [চোখে কোনো চুলকানি কিংবা ব্যথার অনুভূতি না হয়, কিংবা চোখের পাতায় কোনো গোটা না হয়, পাতা না ফুলে যায়] সেক্ষেত্রে আপনার চোখের ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।


চোখের যত্নে বেশ জরুরি

মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি কমার একটা বিষয় থাকে। চোখের প্রতি যতœশীল না হওয়ার কারণেও দৃষ্টিশক্তি কমতে পারে। বিশ্বের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ দৃষ্টিশক্তিজনিত কারণে চশমা ব্যবহার করে। খুব সাধারণ নিয়মে চোখের কিছু যতœ করা যেতে পারে।

চোখে জলের ঝাপটা

কাজের প্রয়োজনে বাইরে তো যেতেই হয়। বায়ুমÐলের ক্ষদ্র্র ধূলিকণা, বিষাক্ত ধোঁয়া চোখে চুলকানি সৃষ্টি করে, জল আসার সমস্যা সৃষ্টি করে এবং দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়। বাইরে থেকে এসে চোখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠেও জলের ঝাপটা দিন চোখে। এর ফলে চোখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং দৃষ্টিশক্তিও তীক্ষè হয়।


চোখের কিছু ব্যয়াম

চোখের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য সহজ কিছু ব্যায়াম আছে। এ ব্যায়ামগুলো যেকোনো সময়ই করা যায়। সোজা হয়ে বসে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে চোখ ঘোরান। এভাবে ৫-১০ মিনিট করুন এবং তারপর চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু ব্যায়াম শিখে নিতে পারেন।


চোখকে বিশ্রাম দিন

টিভি দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় বেশ কয়েকবার বিরতি নিন। একাধারে কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম তৈরি হয়। ২ ঘণ্টা পরপর ১০-১৫ মিনিটের বিরতি নিন। চোখের সতেজতার জন্য আপনার ডেস্কে কিছু ফুল রাখতে পারেন। এর ফলে চোখের উপর চাপ কমবে এবং চোখ কিছুটা রিলাক্স হতে পারবে।


চোখের খাবার

গাজর, বিট, পেঁপে, মাছ ও সবুজ শাকসবজি খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। লাল রঙের ফল ও সবজিতে ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই থাকে যা চোখের জন্য উপকারী। প্রচুর জল পান করুন এবং তাজা ফল ও সবজি খান। এর ফলে শরীর হাইড্রেটেড থাকবে এবং দৃষ্টিশক্তিরও উন্নতি হবে।


চশমার ব্যবহার

আজকাল লেন্স অধিক জনপ্রিয় হলেও চশমার ব্যবহার কিন্তু শরীরের জন্য ভালো এমনটাই বলছে গবেষণা। কেননা, সারাক্ষণ লেন্স পরে থাকার নানা অসুবিধা রয়েছে। ভারি চশমার বদলে অনেকেই লেন্সকে সুবিধাজনক মনে করেন।


চশমা ব্যবহাররে কিছু নিয়মও আছে। যা মানলে চোখ ভালো থাকে, টেকসই হয় চশমাও। এর জন্য মেনে চলুন কয়েকটি সহজ নিয়ম...

প্রতিদিন একবার চশমা পরিষ্কার করুন। এটুকু চোখের যতেœর জন্যও খুব প্রয়োজনীয়। হালকা গরম পানি ও নরম কোনো সাবান দিয়ে চশমা ধুয়ে নিন। এরপর চশমা মোছার জন্য যে নরম কাপড়টি দোকান থেকে দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে লেন্সের অংশ মুছে নিন। চশমা সবসময় একটি খাপের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। চশমা বাছতে বসে সাবধানী হোন। চশমাও কিন্তু লুকেরই অংশ, তাই ঠিক কেমন লাগছে তা নিশ্চিত হয়ে তবেই চশমা কিনুন। রোজ ব্যবহারের চশমা যেন শক্তপোক্ত হয়। অনেকেরই শুধু রিডিং গøাসেই কাজ চলে যায়। তেমন হলে চিকিৎসকের সঙ্গে ভালো করে পরামর্শ করে নিন। বাড়তি কয়েক সেট চশমা রাখুন। অফিসের ব্যাগেও অবশ্যই স্পেয়ার চশমা রাখবেন। কোনো কারণে চশমা ভেঙে গেলে বা হারিয়ে গেলে কাজে আসবে তা।


কন্টাক্ট লেন্সের ব্যবহার

এটি এমন একটি লেন্স, যা চশমার ফ্রেমে না বসিয়ে সরাসরি চোখের কর্নিয়া বা কালো পর্দার ওপর বসানো হয়। চোখের অনুভূতিতে এর উপস্থিতি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। যেহেতু লেন্সটি সরাসরি চোখের কন্টাক্টে থাকে, তাই এটি কন্টাক্ট লেন্স। ছানি অপারেশনে যে কৃত্রিম লেন্স [আইওএল] লাগানো হয়, সেটা চিরদিনের জন্য চোখের ভেতরে বসানো হয়।


ব্যবহার

দুই চোখের পাওয়ারের তারতম্য অনেক বেশি থাকলে চশমা দিয়ে দুই চোখে একসাথে দেখা যায় না। সে ক্ষেত্রে কন্টাক্ট লেন্স আদর্শ হতে পারে। যেসব রোগীর এক চোখে ছানি অপারেশন করা হয়েছে কিন্তু অন্য চোখ স্বাভাবিক, তাদের ছানি অপারেশন-পরবর্তী চশমা দিলে যেকোনো জিনিস দু’টি দেখেন। এ সমস্যা থেকে বাঁচতে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়। এছাড়া শিশুদের আঘাতজনিত ছানি অপারেশনের পর কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়। অধিক প্লাস পাওয়ার [আগের দিনে ছানি অপারেশনের পর ব্যবহৃত হতো] বা অধিক মাইনাস পাওয়ার থাকলে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা হয়।

চোখের নিজস্ব কিছু অসুখে চিকিৎসক কন্টাক্ট লেন্সের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া এক চোখ অন্ধ হলে সেটা ঢাকতেও ব্যবহার করা যায়। আর ফ্যাশনের জগতে কন্টাক্ট লেন্স এখন বহুল ব্যবহৃত। গাড়ি চালাতে, ভিড়ে চলাফেরা করতে, খেলাধুলায়, শোবিজে মাইক্রোস্কোপ, ক্যামেরা নিয়ে কাজকর্মের ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার করা হয়।


যাদের জন্য প্রযোজ্য নয়

চোখের অ্যালার্জি থাকলে ব্যবহার করা উচিত নয়। বেশি ধুলোবালু বা ময়লার মধ্যে যাদের কাজ করতে হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন থাকলে। চোখের যতœ সম্বন্ধে উদাসীন ব্যক্তিদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয় ; কেননা, তাতে নিজের অজান্তেই তারা চোখের সমস্যা সৃষ্টি করবেন। বাইফোকাল চশমার বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়। যাদের চোখ বারবার লাল হয় বা পানি পড়ে। যাদের ড্রাই আই সিনড্রোম রয়েছে বা শুকনো চোখ অথবা যাদের চোখে মিউকাসের পরিমাণ বেশি তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।


চোখের সাজ কেমন হবে

চোখের যতœআত্তি চিকিৎসা সমাধান সবই তো হলো। এবার তাহলে চোখকে সাজানো যাক। সাজতে কে না ভালোবাসে। চোখের সাজের আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে। যেকোনো অনুষ্ঠানে গেলে সে অনুযায়ী সাজাটাই ভালো। সকাল, দুপুর কিংবা রাত ভিন্ন সময়ের জন্য আমাদের চোখের সাজও ভিন্নরকম হয়ে থাকে। তাছাড়া আমরা কি ড্রেস পরছি কিংবা কোথায় যাচ্ছি তার ওপরও নির্ভর করে আমাদের সাজ কেমন হওয়া উচিত।

দিনের বেলার সাজ : দিনেরবেলায় আমাদের সাজ হওয়া উচিত একটু সিম্পল। সেক্ষেত্রে যাদের স্কিন অয়েলি তারা পাউডার বেসড আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন আর যাদের স্কিন ড্রাই তারা ক্রিম বেসড আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। দিনেরবেলায় হালকা কালারের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন এতে চোখ বড়ো দেখায় এবং সাথে এক কোট মাসকারাই যথেষ্ট। ভারি মাসকারা এই সময়ে ব্যবহার না করাই ভালো। যারা কালো কাজল দিতে ভালোবাসেন তারা কাজল দিতে পারেন আর যারা কালো কাজল দিতে চান না তারা সাদা কাজল ব্যবহার করতে পারেন এবং চোখের ইনার কর্নারে গোল্ডেন কিংবা সিলভার কালারের হাইলাইটার দিয়ে একটুখানি হাইলাইট করে নিতে পারেন এতে আপনার চোখ অনেক বড়ো দেখাবে।

দুপুর কিংবা বিকেলের সাজ : এইবার আসা যাক দুপুর কিংবা বিকেলের সাজে। আমাদের অনেক সময় দুপুরে দাওয়াত থাকে কিংবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান থাকে। এই সময়ে আমরা একটু কালারফুল জামা, শাড়ি কিংবা ভারি করা জামা পরতে পারি। পাশাপাশি মিডিয়াম বেইজের মেকআপও করতে পারি কিন্তু সাজ যাতে বেশি ভারি না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। চোখে কনসিলার বা প্রাইমার ব্যবহার করে তারপর ড্রেসের সাথে মিলিয়ে চোখের পাতায় হালকা আইশ্যাডো দিয়ে নিন এবং চোখের আউটার কর্নারে একটু ডিপ কালার দিয়ে বেøন্ড করে নিতে পারেন। চাইলে একটু গিøটারও ব্যবহার করতে পারেন। এরপর আইলাইনার, কাজল এবং মাশকারা দিতে পারেন। যদি কোনো বিয়ের দাওয়াত থাকে কিংবা আমরা কোনো উৎসব পালনে যাই তবে আমরা ফলস্ আইল্যাশ এবং কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করে আমাদের চোখের সাজকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে পারি।

রাতেরবেলার সাজ : রাতেরবেলায় সাধারণত আমরা গাঢ় রঙের জামা পরতে ভালোবাসি। তাই সাথে আইলুকও হওয়া চাই অনেক গø্যামারস। কনসিলার বা প্রাইমার লাগিয়ে চোখের বেইজ তৈরি করে নিন। যারা লেন্স পরতে চান তারা আগেই লেন্স পরে সাজ শুরু করতে পারেন। রাতে আমরা স্মোকি আইলুক করতে পারি কিংবা ডার্ক কালারের আইশ্যাডো বা চোখে গিøটার ব্যবহার করতে পারি এতে চোখ অনেক আকর্ষণীয় লাগে। তারপর টানা করে আইলাইনার দিয়ে তারপর চোখে ফলস্ আইল্যাশ লাগাতে পারেন। চোখের ভেতরে সাদা কাজল দিয়ে চোখের ইনার কর্নারে গিøটার শ্যাডো দিয়ে হাইলাইট করে নিয়ে তারপর চোখের নিচের পাপড়িতে মাসকারা লাগিয়ে নিতে পারেন। দেখবেন অসাধারণ সুন্দর এবং আকর্ষণীয় লাগছে আপনার চোখ।

ভালোবাসার ক্ষেত্রে চোখের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রচলিত তত্ত¡ানুযায়ী চোখে চোখে মিলন হলেই না কি প্রেম হয়। চোখ-কে আশ্রয় করে রচিত হয়েছে বহু গান বহু কবিতা। প্রিয়ার চোখের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে প্রেমিক পুরুষ খরচ করেছেন শত শত পৃষ্ঠা কাগজ। বনলতা সেন তো ‘পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে’ জীবনানন্দ দাশকে বলেছিলেন, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন ?’ চোখের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চোখ নিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবাদ প্রবচনও প্রচলিত আছে অনেক। চোখের সুখ, চোখের ক্ষিদে, চোখ রাঙানো, চোখে সরষে ফুল দেখা, চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো, চোখ লাগা, চোখে ধরা, চোখ রাঙানো, চোখের বালি। চোখের আছে রকমফেরও, টানাটানা চোখ, পাটলচেরা চোখ, পানসে চোখ।

তাই চোখ নিয়ে কোনো অবহেলা বা অসতর্কতা নয় ; সবসময় চোখের প্রতি যতœশীল হোন। হ

গ্রন্থনা : ফাতেমা ইয়াসমিন