ও বন্ধু আমার

04 Jan 2021, 02:51 PM কাভার জুটি শেয়ার:
ও বন্ধু আমার

ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা ফারহান আহমেদ জোভান ২০১৩ সালে ধারাবাহিক নাটক ইউনিভার্সিটিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এর আগে ২০১১ সালে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হন। নাটকে তার সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করে সবাইকে। এরপর সুযোগ আসতে থাকে একের পর এক নাটকে। প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য খুব অল্প সময়ে পরিচিতি পান তিনি। অন্যদিকে নাবিলা ইসলামেরও অভিনয়ে যাত্রা হয় ২০১৩ সালে। ছেলেবেলা থেকেই অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি, গানের চর্চাসহ সংস্কৃতির নানা শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রথম কাজেই বাজিমাত করেন তিনি। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়েন নাটক, উপস্থাপনা ও মডেলিংয়ে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...


ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে দুটি নাটক প্রচার হবে জোভানের। একটি মোস্তফা কামাল রাজের ‘আই হেট লাভ স্টোরি’। সহশিল্পী তানজিন তিশা, অন্যটি ইমরাউল রাফাতের ‘তোমার প্রেমে পাগল’। কাজ কমিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে জোভান বলেন, আমার কাছে একই ধরনের গল্প আসছিল, সেজন্য গ্যাপ নেওয়া, তাছাড়া গল্পে ভিন্নতা না থাকলে কাজ করব না, কাজ না করার এটা একটা কারণ, তাছাড়া নিজেকে একটু সময় দেওয়ার ব্যাপার ছিল, যেটা আমি প্রায় করি। ৩-৪ মাস পরপর আমি একা একটু বেড়াতে যাই। এখন আবার নিয়মিত কাজ করবো, কয়েকটি গল্প ভালো লেগেছে। 

বর্তমানে তরুণরা ইউটিউভে নাটক দেখছে বেশি, তাদের মতামত কেমন জানতে চাইলে জোভান বলেন, নাটক দেখা এখন খুব সহজ হয়ে গেছে, পুরো নাটক না দেখে অনেকে কমেন্টস করে বসেন, অথচ একটি নাটক নির্মাণের পেছনের যে গল্প তা আমরা অনেকেই জানি না, কমেন্টস করতে এক সেকেন্ড সময়ও লাগে না, একটা নাটক তৈরি হওয়ার পেছনের গল্প যদি তারা জানতেন, তাহলে এই ধরনের নেতিবাচক কমেন্টস থেকে বিরত থাকতেন। মন্তব্য দোষের কিছু না, কিন্তু পুরো নাটক না দেখে যখন একজন দর্শক মন্তব্য করেন, তখন কষ্ট লাগে। নাটক দেখা সহজ হওয়ার কারণে মূল্যায়নটা কমে যাচ্ছে। যার ফলে আমাদেরও সতর্ক থেকে কম কাজ হলেও বেছে বেছে কাজ করতে হবে, যেন দর্শক সেই সুযোগটা না পায়।


একই ধরনের গল্প প্রসঙ্গে জোভান বলেন- একই ধরনের গল্প আসার কারণ হচ্ছে দর্শক। দর্শক বেশি পছন্দ করে কমেডি ও রোমান্টিক গল্প। আমাদের সাউথ এশিয়ান প্যাটার্নই হচ্ছে এটা। সিরিয়াস গল্পও দেখেন সেটা সংখ্যায় কম। দর্শক চায় বলেই ডিরেক্টররাও একইধরনের গল্প দিচ্ছে। যেমন ‘ভাইরাল হতে চাই’ শুরুতে কমেডি ছিল, মানুষ দেখছে, যখন গল্পটা সিরিয়াসে চলে গেছে, তখন দর্শক কমে গেছে। এই জন্য একইধরনের গল্প এজেন্সি, চ্যানেল, নির্মাতারা দিচ্ছে, আমি বাস্তবধর্মী গল্পে কাজ করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি, যে গল্পে একটা ম্যাসেজ থাকে। 

চলচ্চিত্রে কাজ করা প্রসঙ্গে জোভান বলেন, পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো পরিকল্পনা নেই। নাটক নিয়েই থাকতে চাই। অভিনয়ে আরো উন্নতি করতে চাই।

নতুন বছরে বেশকিছু নাটকে অভিনয় করছেন নাবিলা ইসলাম। এরমধ্যে নতুন দুটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ শুরু করেছেন। নাটক দুটি মার্চ মাস থেকে প্রচার শুরু হবে। মাতিয়া বানু শুকুর বাখরখানি প্রচার হবে মাছরাঙা টেলিভিশনে আর জাহিদ হাসানের পরিচালনায় হুলস্থূল প্রচার হবে আরটিভিতে। এছাড়া ভালোবাসাদিবস উপলক্ষে  একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। বর্তমানে কাজ করছেন আরো কয়েকটি খÐ নাটকে। নাটকের পাশাপাশি একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হবেন তিনি। শরাফ আহমেদ জীবনের নির্দেশনায় নতুন এই বিজ্ঞাপনচিত্রটির শুটিং শুরু হবে খুব শিগগিরই। চলচ্চিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে বলেন সিনেমা নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও প্রতিনিয়ত অফার আসছে, কিন্তু এই মুহূর্তে কাজ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এই বছর থেকে ছবি নিয়ে চিন্তা করছি। দেখা যাক কী হয় !

ভালোবাসাদিবস আসন্ন। জোভানের কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে এমন- আমার কাজই আমার ভালোবাসা। কাজ করতে আমি প্রচÐ ভালোবাসি, কাজকে শ্রদ্ধা করি। দ্বিতীয় হচ্ছে আমার পরিবার। আমার পরিবারকে আমি খুব ভালোবাসি। নাবিলা সম্পর্কে জানতে চাইলে জোভান বলেন, নাবিলাকে নিয়ে বলার আগে নাবিলার হাজব্যান্ডকে নিয়ে বলি, ওর হাজব্যান্ড খুবই মিশুক, মিডিয়ার বাইরের একজন মানুষ হয়ে তার ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। তার সঙ্গে সময় পেলেই আড্ডা দেই। আড্ডা দিতে ভালো লাগে। নাবিলার চেয়ে ওর হাজব্যান্ডকে বেশি পছন্দ করি। নাবিলা খুবই সিম্পল একজন মেয়ে, ওর মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই, আজ পর্যন্ত বেশ কিছু কাজ করেছি, অন্যদের মতো কুটনামি করার স্বভাব পাইনি। কাজটি মনোযোগ দিয়ে করেন। 

নাবিলার মতে ভালোবাসার সংজ্ঞা হচ্ছে বিশ্বাস, সম্মান, দুজনের মধ্যে আকর্ষণ থাকা। আকর্ষণ না থাকলে ভালোবাসাটা বø্যাক অ্যান্ড হোয়াইট হয়ে যায়। নাবিলা দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ে করেছেন। প্রেম করলেও প্রেমের চেয়ে বন্ধুত্বটাই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন তারা। সেই বন্ধুত্বটা এখনও বিদ্যমান। জোভান সম্পর্কে বলেন, কাজের মাধ্যমে জোভানের সঙ্গে পরিচয়। তার সঙ্গে কাজ করতে আমার খুবই ভালো লাগে। আমরা জুটিবদ্ধ হয়ে বেশকিছু কাজ করেছি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি। কাজের প্রতি তার কতটা প্রেম রয়েছে। প্রতিটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে করেন। শটে যাওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিই এই দৃশ্যটি কীভাবে হবে। আমাদের রসায়ন খুব চমৎকার। বন্ধু হিসেবে ও চমৎকার। ব্যক্তি জোভানকে নিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারব না। শুধু বলবো, সে অসাধারণ একজন মানুষ।

বর্তমানে যে ক’জন অভিনয়শিল্পী অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তাদের মধ্যে ফারহান আহমেদ জোভান ও নাবিলা ইসলাম অন্যতম। তাদের প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য নির্মাতা থেকে শুরু করে চ্যানেলগুলোও তাদের নাটক প্রচারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। শুধু টিভি চ্যানেলেই নয়, ইউটিউবেও তারা বেশ জনপ্রিয়। আর তা সম্ভব হয়েছে তাদের পরিশ্রমের জন্য। দুজনেই সেটে খুব পরিশ্রম করেন। চরিত্রটিকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, দর্শকের কাছে সেরা অভিনয়টা কীভাবে পৌঁছানো যায়, এটাই থাকে এই জুটির মূল উদ্দেশ্য। সকলের সমন্বয়ে, আলোচনা করে প্রত্যেকটিই কাজ করেন বলে কাজটি হয় সবার প্রিয় কাজ। জোভান ও নাবিলা জুটিবদ্ধ হয়ে খুব একটা কাজ না করলেও যেকটি কাজ করেছেন প্রতিটি নাটক। দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এই জুটির উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘ভাইরাল হতে চাই’, ‘ভুলে ভরা গল্প’, ‘প্রিয়জন’ প্রভৃতি। জোভান অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘লাভ ভার্সেস ক্রাস’, পাওয়ার অব লাভ’, ‘প্রিয়’, ‘মায়া’, ‘ইরার পাগলামী’, ‘কাঁদবে না, ‘ইন্টারভিউ’, ‘ভালোবাসা দৌড়ের উপর’, ‘তবুও তোমাকে চাই’, ‘ফ্ল্যাট মেট’, ‘এইযে আমি’, ‘ঢাকাইয়া জামাই’, ‘ডেলিভারী বয়’, ‘লাল রঙ্গা স্বপ্ন’, ‘আলো আঁধারের কাব্য’ প্রভৃতি। অন্যদিকে নাবিলা অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে ‘লোফার’, ‘খেলোয়াড়’, ‘সিনেম্যাটিক’, ‘গৌতম’, ‘বেসিক আলী’, আশিষ রায়ের ‘ভালোবাসার রং’, ‘শট সার্কিট লাভ’, ‘নো অজুহাত’ প্রভৃতি। দু’জনেই এখন খুব বেছে বেছে কাজ করছেন। এর মধ্যে নাবিলা ইসলাম ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করলেও জোভান ধারাবাহিক নাটকে কাজ করছেন না। শুধু খÐ ও টেলিফিল্মে কাজ করছেন। ধারাবাহিক নাটকে কাজ না করা প্রসঙ্গে জোভান বলেন, এখন আর দর্শক ধারাবাহিক নাটকে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। শুধু ধারাবাহিক নাটকই নয় খÐ নাটকও কমিয়ে দিয়েছেন জোভান। এর কারণ জানতে চাইলে জোভান বলেন, সবার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আমার কাছে যে গল্পগুলো আসছে, তার বেশিরভাগ গল্পই গতানুগতিক। গতানুগতিক হওয়ার কারণ হচ্ছে দেখা গেল একটি নাটক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে, তখন বেশিরভাগ গল্প আসে ওই ধরনের। অন্যদিকে নাবিলা ইসলাম খÐনাটকের পাশাপাশি ধারাবাহিক নাটকেও নিয়মিত অভিনয় করছেন। সামনের মাসে একসঙ্গে তার অভিনীত দুটি নাটক প্রচার শুরু হবে। এক ভাই এক বোনের মধ্যে জোভান বড়ো। ছেলেবেলা থেকে জোভানের ইচ্ছে ছিল সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করবেন। কিন্তু বাবা-মায়ের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে বিবিএ করেছেন। ধারাবাহিক নাটক প্রসঙ্গে বলেন, ক্যারিয়ারের শুরুতে ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছিলাম। এখন না করার কারণ হলো ধারাবাহিক নাটকে দর্শক কম। আগের মতো মান ধরে রেখে কাজ হয় না। তাই পরিকল্পনা করেছি আপাতত ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করব না।