ভালো সিনেমা দেখলে সাধারণত দুই ধরনের আরাম হয়। চোখের আরাম আর মনের আরাম। দিন দ্য ডে চোখকে আরাম দেয়। গল্পই আপনাকে নিয়ে যাবে ইরান, তুরস্ক, আফগানিস্তান-এর সুন্দর সুন্দর সব লোকেশনে। অনেকটা এক টিকেটে নানা দেশ ঘুরে আসার মতো। শেষের দিকে সুলতান সুলেমানের দেশ তুরস্কে রোমান্টিক গানটি তো মুগ্ধ করে দেয়।
সিনেমার গল্পটি এমন যে, বাংলাদেশি-সহ প্রবাসের একদল মানুষকে বিশ্বের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী তাদের পরিবারকে জিম্মি করে ড্রাগ ডিলিংয়ের কাজে ব্যবহার করে। এই অপরাধীর আস্তানা হলো আফগানিস্তান। ইন্টারপোলের অপারেশনে বাংলাদেশ পুলিশের চৌকষ অফিসার এ জে যোগ দেয়। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে দুষ্টের দমন করে।
বাংলাদেশসহ নানা দেশে চিত্রায়িত এবং ভরপুর অ্যাকশন দৃশ্য আর নাচগানের সিনেমাটি ১০০ কোটি টাকার কি না এই বিষয় নিয়ে আমার তেমন কোনো উদ্বেগ নেই। এর কারণ, সিনেমায় যা যা দেখা গেছে সবই যদি অর্থ ব্যয় করে হয় তাহলে হতেও পারে। আবার এই সহায়তাগুলো যদি কোনো সরকারি বা পার্টনারশিপের আওতায় হয়ে থাকে তাহলে ‘না’। এখন এই বিষয় পর্দায় সিনেমা দেখে প্রমাণের সুযোগ নেই।
এই সিনেমার সবচেয়ে বড়ো দুর্বলতা হলো সিনেমায় ‘পরিচালক’ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। গল্প, অনন্ত জলিল, বর্ষা নিজের মতো ছুটে চলেছেন। অনন্ত জলিলের সংলাপের ভুল ধরার কেউ নেই। তার চুল এই বড়ো এই ছোটো কেন, এটা দেখারও কেউ নেই। চরম স্পর্শকাতর একটি অপারেশনে পুলিশ অফিসার স্ত্রী বর্ষা যে ইমোশনাল ড্রামা করে যুক্ত হয়ে গেলেন তা অবিশ্বাস্য। মনে রাখা দরকার, এই সিনেমাটি টিপিকাল সিনেমা নয়, কপ থ্রিলার। তাও ইন্টারপোলের বিষয় আছে এখানে। দেশীয় পুলিশদের পোশাক, চুল, সবকিছুতেই অমনোযোগিতার ছাপ।
একটি আশার কথা বেশ কয়েক বছর বছর পর পর্দায় যে অনন্ত জলিলকে দেখলাম তার অনেক উন্নতি চোখে পড়েছে। বিরতির আগ পর্যন্ত তিনি নতুন এক অনন্ত জলিল। বর্ষা মাঝে মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি পুলিশ অফিসার। কিন্তু বডিল্যাঙ্গুয়েজ বা ব্যক্তিত্বে তিনি সাধারণ একজন নারীর মতোই।
অনন্ত-বর্ষার ইমোশনাল দৃশ্যগুলো বেশ দুর্বল। যা সিনেমার গতি বাধাগ্রস্ত করেছে। আবার গানের দৃশ্যে তারা স্বচ্ছন্দ ছিলেন। সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, বাংলাদেশে যে অংশগুলো চিত্রায়িত হয়েছে তা বেশ দুর্বল। শুধু সংলাপে ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ না করে এখানকার লোকেশনগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপনও জরুরি ছিল। তাহলে বিশ্বের সিনেমামোদী দর্শকেরা দারুণ এক সাহসী এবং সুন্দর দেশ দেখতে পেতেন সিনেমার পর্দায়।
সব মিলিয়ে, দিন দ্য ডে ‘মনের আরাম’ দিতে পারেনি।