বর্ষায় আপনার শিশুর প্রতি বাড়তি নজর দিন

21 Jun 2022, 12:01 PM শিশুভুবন শেয়ার:
বর্ষায় আপনার শিশুর প্রতি বাড়তি নজর দিন

বর্ষাকাল কারো খুব প্রিয় ঋতু, কারো-বা আবার ভীষণ অপ্রিয়। বর্ষাকালে কেউ কেউ খুব রোমান্টিক হয়ে ওঠেন আবার বর্ষার বৃষ্টি, কাদামাটি কারো কারো কাছে অসহ্য ঠেকে। তবে, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহের পর বর্ষার বারিপাত জনজীবনে প্রশান্তি নিয়ে আসে। বর্ষার জল না পেলে ফসল ফলে না। তাই কারো ভালো লাগুক আর না-ই-বা লাগুক, বর্ষাকাল আমাদের জন্য অপরিহার্য এক ঋতু। বর্ষাকালে আপনার শিশুর যত্ন-আত্তি করবেন কীভাবে ? চলুন জেনে নেওয়া যাক...

বর্ষায় আকাশে মেঘ ও রৌদ্রের মধ্যে লুকোচুরি খেলা চলে অবিরাম। এই কড়া রোদ তো এই আবার ঝমঝম করে অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়ে। তাই এই সময়ে আবহাওয়া কখনো গরম, কখনো ঠান্ডা থাকে। তাই বর্ষায় আপনার শিশুর প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে। বর্ষাকালে আবহাওয়া স্যাঁতসেঁতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বড়োদের তুলনায় অনেক কম থাকে। তাই বর্ষার স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে তাদের অসুখ-বিসুখ বেড়ে যায়। বর্ষায় যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে সেহেতু এ সময়ে সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস খুব সহজেই রোগ ছড়াতে পারে। বর্ষাকালে শিশুদের সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ডায়রিয়া, ডেঙ্গুজ¦র, সর্দি-কাশি, টাইফয়েড, ছত্রাকজনিত ত্বকের সমস্যা। তাই এ সময়ে শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে খুব সতর্ক থাকা দরকার।
নিয়মিত গোসল করানবর্ষাকালে আপনার শিশুকে নিয়মিত গোসল করান এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। কারণ, বর্ষায় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, গরম আর ঘাম মিলে শিশুদের পায়ের আঙুলের ফাঁকে, কুচকিতে, মাথায় ও চুলে ছত্রাক সংক্রমিত হতে পারে। নিয়মিত গোসল না করালে ময়লা আটকে ছত্রাক সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গোসলের পর চুলের গোড়া ভালো করে মুছে দিন, যাতে ছত্রাক সংক্রমিত না হয়। ভ্যাপসা গরমের জন্য কানের ভেতর ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে। এই আবহাওয়ায় ফাংগাল ইনফেকশন খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায়। এতে কানে চুলকানি হতে পারে। এক্ষেত্রে চুলের ক্লিপ, কাঠি, কটন বাড বা অন্যকিছু দিয়ে কান না চুলকিয়ে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। এ সময় চুলের জন্য ব্যবহার করতে পারেন বিশেষ শ্যাম্পু। গোসলের জন্য কুসুম-গরম পানি ব্যবহার করা উত্তম।
ডেঙ্গু থেকে সতর্ক থাকুনবর্ষায় মশার উপদ্রব অনেক বেড়ে যায়। আর এ থেকে ডেঙ্গু জ্বরসহ নানা রোগের আশঙ্কাও থাকে বেশি। তাই এই ঋতুতে বাড়ির ভেতরটা এবং তার সঙ্গে বাইরেরটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। বাড়ির ভেতরে গাছের টব থাকলে নিয়মিত পরিষ্কার করুন। ফুলের টবের পানি প্রতি তিনদিন অন্তর বদলে দিন। ওই পানিতে এডিস মশা হতে পারে। বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড় থাকলে তাও পরিষ্কার করিয়ে মশার ওষুধ ছিটিয়ে দিন। ঘরের ভেতর খাটের নিচ, আলমারির পেছনসহ বিভিন্ন আসবাব দিয়ে আটকানো জায়গাগুলো পরিষ্কার করে নিন। ঘরের এসব জায়গাতেই মশা নিশ্চিন্তে লুকিয়ে থাকে। বাড়ির আশেপাশে ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার, দৈয়ের ফেলে দেওয়া পাত্র বা অন্য কোনো খালি পাত্র থাকলে সেগুলো আবর্জনা ফেলার জায়গায় পৌঁছে দিন। কারণ, ওইসব পাত্রে পানি জমে সেখানে এডিস মশা জন্মাতে পারে। ঘরের ভেতরেও এমন কোনো বোতল বা পাত্র থাকলে সেগুলো ফেলে দিন। রাতে তো বটেই, দিনের বেলায়ও যদি শিশু ঘুমায় তো তাকে মশারি টাঙিয়ে দিন।

সুতি-কাপড় পরান
বর্ষায় আপনার শিশুকে আরামদায়ক সুতি-কাপড় পরান। ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পোশাক বদলে দিন। বর্ষায় যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে সেহেতু জামা-কাপড়, বিছানার চাদর, কাঁথা-বালিশ স্যাঁতসেঁতে হয়ে থাকে। শিশুদের কাঁথা, বিছানার চাদর সাবান দিয়ে ধুয়ে ভালোভাবে শুকিয়ে রাখুন। যখনই কড়া রোদ উঠবে, তখনই বালিশ বিছানা রোদে দিন, স্যঁতসেঁতে ভাব চলে যাবে। এ সময় প্রায়ই রাতে বৃষ্টি হয়ে, কিছুটা ঠান্ডাভাব বিরাজ করে। রাতে বৃষ্টি হলে শিশুর ঘরে এসি থাকলে তা বন্ধ রাখুন এবং ঘুমের সময় শিশুর গায়ে পাতলা কাঁথা দিয়ে দিন।
ঠান্ডা যেন না লাগেজ্বর, সার্দি-কাশি, জন্ডিস, টাইফয়েড, চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের মধ্যে এই সময় সর্দি-কাশিতেই শিশুদের বেশি আক্রান্ত হতে ও ভুগতে দেখা যায়। প্রচণ্ড গরমের পর হঠাৎ করে বৃষ্টি এবং কিছুটা ঠান্ডা আবহাওয়ায় শ্বাসতন্ত্র সহজেই সংক্রমিত হয়। জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, গলাব্যথা, নাক দিয়ে পানি ঝরা, হাঁচি-কাশি ইত্যাদি বেশি দেখা দেয়। সর্দি-কাশি হলে ফার্মেসি থেকে কিনে কাশির সিরাপ খাওয়াবেন না। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। এ সময়ে ঠান্ডা পানি একেবারেই পান করাবেন না। কুসুমগরম পানি পান করতে দিন। হালকা লিকারের রং-চা খাওয়াতে পারেন মাঝেমধ্যে। ঠান্ডায় মধু খুব উপকারি। ভেজালের দুনিয়ায় খাঁটি মধু নিশ্চিত হলেই খাওয়াতে পারেন। ডায়রিয়া হলে আতঙ্কিত না হয়ে নিয়মিত খাবার স্যালাইন খাওয়ান। শিশুকে পরিচ্ছন্ন থাকতে সাহায্য করুন আর সৌচাগার জীবাণুনাশক দিয়ে বারবার পরিষ্কার করে দিন।
তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুনবর্ষার মিশ্র আবহাওয়ায় শিশুর খাবারের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। এ সময় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। সে জন্য শিশুদের বাইরের খাবার এবং কোনো অবস্থাতেই বাসি খাবার খাওয়াবেন না। শিশুকে ঘরে তৈরি হালকা ধরনের খাবার খাওয়ান। তেল-মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। অনেক শিশুর পুষ্টিকর খাবার ও শাক-সবজির প্রতি অনীহা থাকে। জোর করে না খাইয়ে কৌশলে ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করে শিশুদের এসব খাবার খাওয়ান। প্রয়োজনে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, শাক-সবজি-সহ সব উপকরণ দিয়ে সুস্বাদু খিচুড়ি বা ফিসফাস বানিয়ে দিন। এ সময় বাজারে আম, আনারস, জাম, জামরুল, লিচু, কাঁঠালসহ নানারকম মৌসুমি ফল ওঠে। এসব ফল বেশি বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। তবে এসব ফলে যেহেতু ফরমালিন দেওয়া থাকে তাই খাওয়ানোর আগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
বৃষ্টিতে ভিজতে দেবেন না
শিশুদের ঘরের বাইরে যাওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে। অনেক শিশুই [একটু বড়োরা] বৃষ্টিতে ভিজতে চায়। শিশুকে বর্ষার পানিতে ভিজতে দেবেন না। কখনো যদি স্কুল থেকে ফেরার পথে বৃষ্টিতে ভিজেও যায় তবে, কুসুম গরম পানিতে গোসল করিয়ে ভালোভাবে গা-মাথা মুছে দিন। হালকা লিকারের রং-চা মধু দিয়ে খাইয়ে দিন। এতে শরীরের ভেতরটা গরম হবে এবং বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ভেতরে যে ঠান্ডাটা জমে ছিল তা বেরিয়ে যাবে।