শিপন-নাবিলা বাকবাকুম প্রেমের গল্প

21 Jun 2022, 11:56 AM কাভার জুটি শেয়ার:
শিপন-নাবিলা বাকবাকুম প্রেমের গল্প

‘দেশা দ্য লিডার’ খ্যাত অভিনেতা শিপন মিত্র অভিনীত সবশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল শাহীন সুমন পরিচালিত ‘মাতাল’। মুক্তির মিছিলে একাধিক ছবির তালিকা থাকলেও বিশ্বব্যাপী মহামারির কারণে, ছবিগুলো আর মুক্তি পায়নি। অন্যদিকে ছোটোপর্দার পরিচিত মুখ অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা নাবিলা ইসলামের ব্যস্ততাও ছিল বেশ। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী হানা দেয় করোনা ভাইরাস নামে এক অচেনা রোগ। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাসটি। বন্ধ হয়ে যায় সকল ধরনের শুটিং। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে আবার শুরু হয় শুটিং। শিল্পীরা এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি ফিল্মভ্যালি সিটিতে একটি ঈদের নাটকের শুটিং করছিলেন অভিনয়শিল্পী শিপন মিত্র ও নাবিলা ইসলাম। তাদের সঙ্গে কথা হয় নানা বিষয় নিয়ে। বিস্তারিত লিখেছেন শেখ সেলিম...
সকালের সূর্য দেখে যেমন বলে দেওয়া যায় দিনটি কেমন যাবে, ঠিক তেমনি ‘দেশা দ্য লিডার’ ছবিতে নবাগত অভিনেতা শিপন মিত্রের অভিনয় দেখে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এই অভিনেতা এই অঙ্গনে বেশ ভালো করবেন। বৃথা যায়নি তাদের ধারণা। বর্তমানে যেক’জন অভিনেতা ভালো করছেন তাদের মধ্যে শিপন মিত্র অন্যতম। শিপন মিত্র যখন ধীরে ধীরে টাইম লাইনে উঠে আসছেন, নির্মাতারাও তাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ দেখান এবং বেশকিছু কাজও সম্পন্ন করেন। সেন্সর ছাড়পত্র পেয়ে মুক্তির প্রস্তুতি চলছিল শিপনের একাধিক ছবির ; ঠিক সেইসময়ে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কোভিড নাইনটিন। বন্ধ হয়ে যায় সকল ধরনের শুটিং ও সিনেমা হল। করোনার প্রাদুর্ভাব কমে এলে আবার শুরু হয় শুটিং। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন কাজে। বর্তমানে বড়োপর্দার পাশাপাশি ছোটোপর্দায়ও দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অভিনেতা। তবে, শিপনের জন্যে সুখবর হচ্ছে দীর্ঘদিন পর মুক্তি পাচ্ছে রফিক শিকদার পরিচালিত ‘বসন্ত বিকেল’ ছবিটি। এরপরেই মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার অভিনীত একাধিক ছবি। সব মিলিয়ে বলা যায়, শিপন মিত্রের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে।অন্যদিকে নাবিলা ইসলামও এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিনই শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন এই অভিনেত্রী। ঈদ আসন্ন, ইতোমধ্যে বেশকিছু নাটকে কাজ করেছেন তিনি। নাটকের পাশাপাশি কাজ করছেন ওটিটি প্লাটফর্মেও।
নাবিলার অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে। ছেলেবেলা থেকেই অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি, গানের চর্চাসহ সংস্কৃতির নানা শাখার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রথম কাজেই বাজিমাত করেন তিনি। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়েন নাটক, উপস্থাপনা ও মডেলিংয়ে।
শিপন চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ছোটোপর্দায় নিয়মিত কাজ করলেও এখন পর্যন্ত নাবিলা বড়োপর্দায় কাজ করেননি। এই প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, সিনেমা নিয়ে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। যদিও প্রতিনিয়ত অফার আসছে, কিন্তু এই মুহূর্তে কাজ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এই বছর থেকে ছবি নিয়ে চিন্তা করছি। দেখা যাক কী হয়Ñ
শিপন সম্পর্কে নাবিলা বলেন, কাজের মাধ্যমে শিপনের সঙ্গে পরিচয়। তার সঙ্গে কাজ করতে আমার খুবই ভালো লেগেছে। আমরা জুটিবদ্ধ হয়ে এই প্রথম একটি ঈদের নাটকে কাজ করলাম। নাটকের নামটিও বেশ সুন্দর, ‘বাকবাকুম প্রেম’। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, কাজের প্রতি তার কতটা প্রেম রয়েছে। মানুষ হিসেবেও সে খুব আন্তরিক।
নাবিলা সম্পর্কে শিপন বলেন, নাবিলার সঙ্গে আমার প্রায় পাঁচ বছর আগে পরিচয় হয়, একটি অনুষ্ঠানে আমি অতিথি হিসেবে যাই, সেখানে নাবিলা উপস্থাপিকা ছিলেন। সেই পরিচয়ে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। তার সঙ্গে ‘বাকবাকুম প্রেম’ আমার প্রথম কাজ। কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে নাবিলা খুবই ডেডিকেটেড। খুব যত্ন নিয়ে কাজ করেন। মানুষ হিসেবেও সে খুব ভালো মনের অধিকারী।
বর্তমানে যেক’জন অভিনয়শিল্পী অভিনয় করে দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তাদের মধ্যে শিপন ও নাবিলা অন্যতম। তাদের প্রাণবন্ত অভিনয়ের জন্য নির্মাতা থেকে শুরু করে চ্যানেলগুলোও তাদের নাটক প্রচারে আগ্রহ দেখাচ্ছে। শুধু টিভি চ্যানেলেই নয়, ইউটিউবেও তারা বেশ জনপ্রিয়। আর তা সম্ভব হয়েছে তাদের পরিশ্রমের জন্য। দু’জনেই সেটে খুব পরিশ্রম করেন। চরিত্রটিকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, দর্শকের কাছে সেরা অভিনয়টা কীভাবে পৌঁছানো যায়, এটাই থাকে এই জুটির মূল উদ্দেশ্য। সকলের সমন্বয়ে আলোচনা করে প্রতিটি কাজ করেন বলে কাজটি হয় সবার প্রিয় কাজ। শিপন ও নাবিলা এর আগে জুটিবদ্ধ হয়ে কাজ না করলেও একই নাটকে তারা অন্য শিল্পীর সঙ্গে অভিনয় করেছেন। যেক’টি কাজ করেছেন প্রতিটি নাটক দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।
নাবিলা অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হচ্ছে ‘ভাইরাল হতে চাই’, ‘রকেট ভাই’, ‘লোফার’, ‘খেলোয়াড়’, ‘সিনেম্যাটিক’, ‘গৌতম’, ‘বেসিক আলী’, আশিষ রায়ের ‘ভালোবাসার রং’, ‘শট সার্কিট লাভ’, ‘নো অজুহাত’ প্রভৃতি। দু’জনেই এখন খুব বেছে বেছে কাজ করছেন।
ছোটোপর্দার অন্যতম ব্যস্ত একজন অভিনয়শিল্পী নাবিলা ইসলাম। খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই ভক্তদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পান তিনি।
নাবিলার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। পাহাড়-সমুদ্রের সঙ্গে বেড়ে উঠেছেন তিনি। এখনো সুযোগ পেলে সেখানে ছুটে যান এই অভিনেত্রী। স্কুলে পড়ার সময় গানের স্কুলেও ভর্তি হয়েছিলেন নাবিলা। কিন্তু বেশিদিন টেনে নিতে পারেননি। তার ভাষায়, আবৃত্তি-অভিনয়ের জন্য আমি রেডি থাকতাম। গান আমাকে দিয়ে হতো না। এখনো মনে আছে, শুক্রবার সকাল ১০টায় অভিনয় ক্লাস থাকত। সেগুলোর কথা প্রায়ই মনে পড়ে।
সপ্তম শ্রেণিতে প্রথম প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছেন নাবিলা। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় মুঠোফোন পেয়েছেন তিনি। স্মৃতিচারণ করে নাবিলা বলেন, বাসায় ল্যান্ড লাইন ছিল। আমার জন্য প্রথম ফোন কল এসেছিল ক্লাস ফাইভে থাকতে। মা ফোন রিসিভ করেছিল। আম্মু অনেক কষ্টে ছেলেটাকে বুঝিয়ে ফোন রেখে দিয়েছিলেন।
শিপন মিত্র সৈকত নাসির পরিচালিত ‘দেশা দ্য লিডার’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন। সুদর্শন এই তরুণ প্রথম ছবিতেই সকলের দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হন। তিনি ফিল্ম বিষয়ে মালয়েশিয়া থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশে এসে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। সেখান থেকে ‘আরাধনা’ শিরোনামে একটি মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করা হয়। কণ্ঠশিল্পী ইমরান ও নির্ঝরের গাওয়া গানটিতে শিপন মিত্র মডেল হন। গান দেখেই চিত্রনাট্যকার আব্দুল্লাহ জহির বাবু তাকে পছন্দ করেন। তারপর একসময় সৈকত নাসির ও বাবুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় শিপনের। তাদের প্রস্তাবে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন শিপন। প্রথম ছবিতে দর্শকের গ্রহণযোগ্যতা পেলেও নিজেকে আরো ভালোভাবে তৈরি করতে তিনি ভারতে অভিনেতা অনুপম খেরের কাছে অভিনয় প্রশিক্ষণ নেন।
প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিনয়ে। কাজ করেন বেশকিছু সিনেমায়। বর্তমানে একাধিক ছবিতে অভিনয় করছেন শিপন। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বেশকিছু ছবি। ছবিগুলো হচ্ছে ইদ্রিস হায়দারের ‘নীল ফড়িং’, রহিম বাবুর ‘আনওয়ান্টেড চাইল্ড’, রাজু আলীমের ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ প্রভৃতি।