গরমে শিশু যেন ঘেমে না যায়

23 Mar 2022, 03:10 PM শিশুভুবন শেয়ার:
গরমে শিশু যেন ঘেমে না যায়

প্রচণ্ড গরমে ছেলেবুড়ো সবার জন্যই ভীষণ কষ্টের। গরমে বড়োদের মতো শিশুরাও ঘেমেনেয়ে একসার হয়। শিশুরা ঘেমে গেলে তাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি বের হয়ে যায়, ঘামের সঙ্গে লবণ-ও বেরিয়ে যায়। ফলে শিশুর শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। আবার এ সময়ে শরীরে ঘামাচিও ওঠে। তাই গরমকালে শিশুকে ঘাম ও ঘামাচি থেকে মুক্ত রাখতে বাবা-মা-কে শিশুর

প্রতি একটু বাড়তি নজর দিতে হবে...

দুর্বল হয়ে পড়তে পারে

গরমে শিশু প্রচুর ঘেমে গেলে রক্তচাপ কমে যায়, শিশু দুর্বল হয়ে পড়ে, মাথা ঝিমঝিম করে। গরমকালে পানিস্বল্পতা শিশুদের সাধারণ সমস্যা হলেও অবহেলা করলে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমন ক্ষেত্রে শিশু অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, কিডনির সমস্যাও হতে পারে।


ঠান্ডা লেগে জ্বর হতে পারে

শিশু যদি বেশি ঘেমে যায় এবং সেই ঘাম গায়ে শুকিয়ে যায়, তাহলে তার ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। তাই শিশুর গায়ের জামা ঘামে ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে দিতে হবে, যাতে ঘাম গায়ে শুকিয়ে না যায়। এরপর শিশুর শরীর পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। এতে শিশু আরাম পাবে। ঘাম গায়ে শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা লেগে শিশুর জ্বর -ও হতে পারে।

প্রতিদিন গোসল করাতে হবে

গরমের দিনে শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। অনেক সময় বৃষ্টি হলে বা একটু ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া দেখলে মা-বাবারা শিশুকে গোসল করাতে চান না। কিন্তু গোসল না করালে ঘাম বসে ঠান্ডা লেগে যায়। তবে ঘামে জবজবা হয়ে স্কুল থেকে কিংবা বাইরে থেকে ফিরলে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করানো যাবে না। ঘাম মুছে শরীর একটু জুড়ালে তারপর গোসল করাতে হবে।

বেশিক্ষণ রোদে নয়

গরমের দিনে শিশুদের যতটা সম্ভব রোদে কম যেতে দিতে হবে। রোদে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখতে হবে। বারবার পোশাক বদলে দিতে হবে।


চুলের গোড়া মুছে দিতে হবে

গরমে গা যেমন ঘামে, তারচেয়ে বেশি ঘামে শিশুদের চুলের গোড়া। এমন হলে সাবধান থাকতে হবে। অনেকে মনে করেন, ঘামের কারণে চুল ভিজলে সেটা বাতাসেই শুকিয়ে যাবে। বাতাসে শুকায় ঠিকই, তবে বাতাসে শুকাতে যতক্ষণ সময় লাগে, ততক্ষণে শিশুর ঠান্ডা লেগে যায়। তাই বাতাসে শুকানোর অপেক্ষায় না থেকে যত  দ্রুত সম্ভব চুলের গোড়া ভালো করে মুছে দিতে হবে।

নিয়মতি ঘাম মুছে দিতে হবে

ঘাম ও ধুলাবালি থেকেই ঘামাচির জন্ম। শিশুদের ত্বক খুব কোমল হয়। গরমের কারণে ঘামের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর শরীরে ঘামাচিও দেখা দিতে পারে। গরমে অতিরিক্ত ঘাম তৈরি হয়, ফলে ঘামের গ্রন্থি ও নালি ফেটে যায়। ত্বকের নিচে ঘাম জমতে থাকে। এটাই ঘামাচি। অনেক সময় ঘাম ও ময়লা জমে ঘামের নালির মুখ বন্ধ হয়ে ইনফেকটেড হয়ে যায়। এতে ঘামাচি আরও বেড়ে যেতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে ঘামে দুর্গন্ধও দেখা দিতে পারে। ঘামাচি হলে তা যেন বেশি না চুলকায় কিংবা নখ দিয়ে আঁচড় না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘাম ও ময়লার কারণে গরমের দিনে শিশুদের ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত রোগও দেখা দেয়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত শিশুর ঘাম মুছে দিতে হবে।


বেশি বেশি পাউডার নয়

ঘামাচি হলে অনেকে শিশুকে বেশি করে পাউডার মাখিয়ে দেয়। পাউডার একেবারে ব্যবহার করা যাবে না তা নয়। বেশি বেশি পাউডার ব্যবহার করা ঠিক না। তবে, ঘামেভেজা শরীরে পাউডার দেওয়া উচিত নয়। ঘাম মোছার পর বা গোসলের পর পাউডার দিতে পারেন। বেশি পুরো করে পাউডার লাগিয়ে দিলে রোমক‚প বন্ধ হয়ে ত্বকের রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে। শিশুর গায়ে ভালো করে সাবান মেখে প্রতিদিন নিয়মিত গোসল করাতে হবে। একইভাবে চুলে শ্যাম্পু করে দিতে হবে।

শিশুকে পানি পান করাতে হবে

গরমে শিশুকে এমন খাবার দিতে হবে, যাতে শিশুর পেট ও শরীর ঠান্ডা থাকে। এ সময় শিশুকে বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে। বেশি ঘামলে শুধু পানি নয়, এর সঙ্গে পান করাতে হবে লেবুর শরবতও। কেননা, ঘামের সঙ্গে কিছু দূষিত পদার্থ ও যথেষ্ট পরিমাণে সোডিয়াম এবং স্বল্প পরিমাণে পটাশিয়াম ও বাইকার্বোনেট শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তবে, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করানো যাবে না। এতে শিশুর কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগ হতে পারে। খুব গরম পড়লে শিশুকে দুই-একদিন পরপর খাওয়ার স্যালাইনও দিতে পারেন। তবে প্রতিদিন না দেওয়াই ভালো। গ্রীষ্মের রসালো ফল যেমন, তরমুজ, বেল, পেঁপে, কাঁচা আম, বাঙ্গি, আনারস প্রভৃতি নিয়মিত খাওয়াতে পারেন। সরাসরি খেতে না চাইলে জ্যুস করে খাওয়াতে পারেন। গরমে ভাজা-পোড়া, তেল-ঝালযুক্ত খাবার না খাওয়ানোই উত্তম।