করোনায় শিশুর যত্ন নেবেন যেভাবে

01 Feb 2022, 01:36 PM শিশুভুবন শেয়ার:
করোনায় শিশুর যত্ন নেবেন যেভাবে

সারাপৃথিবীতে এখন একটাই আলোচনাÑ করোনা। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পর এখন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অমিক্রন। বলা হচ্ছে, অমিক্রনের উপসর্গ মৃদু, সাধারণ ঠান্ডা কাশি বা ঠান্ডা জ¦রের মতো। তবে করোনা ভাইরাস যাকে একবার আক্রান্ত করে তার শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে যায়। অমিক্রন থেকে রোহাই পাচ্ছে না শিশুরাও। শিশুদের বেলায় বেশি সমস্যা হলো ওরা মাস্ক পরতে চায় না। স্বাস্থ্যবিধি কী তাও তাদের বোঝানো যায় না। অনেক শিশু বিকালে ঘরের বাইরে বাড়ির লনে, ছাদে বা মাঠে খেলতে গিয়ে আক্রান্ত কিন্তু উপসর্গহীন অন্য শিশুদের সাথে মিশে নিজে আক্রান্ত হচ্ছে এবং পরিবারে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তাই উচ্চ সংক্রমণের এই সময়ে শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া দরকার।

* শিশুদের যথা সম্ভব ঘরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। যারা অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছে, তাদের পরিবারের বয়স্কদের থেকে দূরে রাখতে হবে। তবে, ঘরে রাখতে গিয়ে মোবাইল বা ইন্টারনেটে আসক্ত হতে দেওয়া যাবে না। যে-খেলাগুলো ঘরের ভেতরে খেলা যায়, যেমন লুডু, ক্যারাম বোর্ড, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদিতে অভ্যস্থ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশুরা যেন সবসময় হাসিখুশি থাকে। মাঝে মাঝে টিভিতে কার্টুনজাতীয় ছবি দেখতে দেওয়া যেতে পারে। যে শিশুরা ঘরের বাইরে খেলতে যায় এবং অন্যদের সঙ্গে মেশে তাদের পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের থেকে দূরে রাখতে হবে

* শিশুদের সহজ ভাষায় গল্পের ছলে স্বাস্থ্যবিধি বোঝাতে হবে, যেন তারা বাইরে গেলে মাস্ক পরে থাকে, ঠিকভাবে হাত ধোয়, হাঁচি-কাশি দেওয়ার শিষ্টাচার মেনে চলে। শিশু মাস্ক পরতে না চাইলে বকাঝকা করা যাবে না বরং ধৈর্যসহকারে বুঝিয়ে বলতে হবে

* পরিবারে মা বা বাবা করোনায় আক্রান্ত হলে শিশুরও করোনা পরীক্ষা করাতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে

* শিশুরা বাইরের খাবার খেতে বেশি পছন্দ করে, ওদের ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমিয়ে পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। ভিটামিন সি, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিতে হবে। ফলমূল, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ খাওয়াতে হবে। বাদাম, পনির, মাংস, লাউ, কুমড়া, সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক, ভিটামিন বি, আয়রনসহ নানা খনিজ পদার্থ থাকে, এগুলো রোগ প্র্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এ খাবারগুলো শিশুদের নিয়মিত খাওয়াতে হবে

* শিশু যদি মায়ের বুকের দুধ পান করে এবং মা যদি করোনা আক্রান্ত হন সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিবার দুধ খাওয়ানোর আগে মাকে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। মাকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। সম্ভব হলে ব্রেস্ট ও নিপল ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে

* যে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার বয়স হয়নি তাদের আসলে কিছু বোঝানো সম্ভব নয়, এ ক্ষেত্রে নিজেদেরই সতর্ক থাকতে হবে, প্রয়োজনে বাসায় নিজেরা মাস্ক পরে থাকতে হবে

* শিশুর জ্বর হলেই করোনা হয়েছে ভেবে ভয় পাওয়া যাবে না। নিয়মিত থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপতে হবে। জ্বর ১০০ ডিগ্রির ওপরে উঠলে প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে

* অক্সিজেন স্যাচুরেশান ঠিক আছে কি না তা দেখার জন্য নিয়মিত পালস্ অক্সিমিটার পরীক্ষা করতে হবে। অক্সিজেন স্যাচুরেশান ৯৪ শতাংশের কম হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালে নিতে হবে। করোনার অন্যান্য উপসর্গ আছে কি না খেয়াল করতে হবে

* এ সময়ে শিশুর ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে, তবে মনে রাখবেন শিশুদের জন্য বয়স ও ওজনের ভিত্তিতে প্যারাসিটামলের ডোজ ভিন্ন ভিন্ন

* শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে। ঠান্ডার মৌসুমে গোসলে কুসম গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। শিশু যেন গরম কাপড় পরে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোনোভাবেই ঠান্ডা লাগানো যাবে না

* শিশুর বয়স বারো বছরের বেশি হলে করোনার টিকা দিতে হবে


অমিক্রনের লক্ষণ বা উপসর্গগুলো এমন

 নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে

 হাঁচি হতে পারে

 মাথা ব্যথা ও মাথায় ঝিমঝিম ভাব থাকতে পারে

 গলা ব্যথা হতে পারে

 ক্লান্তি বা দুর্বলভাব অনুভ‚ত হতে পারে

 কণ্ঠস্বর ভেঙে যেতে পারে

 প্রচন্ড কাশি হতে পারে

 কাঁপুনি বা কাঁপুনি দিয়ে জ¦র আসতে পারে

 মাংস পেশীতে ব্যথা হতে পারে

 স্বাদ ও গন্ধ চলে যেতে পারে

 বুকে ব্যথা হতে পারে