বর্তমান বলিউডের সফল নায়কদের মধ্যে জুবিন নটিয়াল অন্যতম। একের পর এক হিট লিস্টের তালিকায় আছে তার গান। তার ব্যতিক্রমী গায়কির ভক্ত লাখ লাখ গানপ্রেমী মানুষ। তবে এই খ্যাতি জুবিন রাতারাতি পাননি। তার আজকের সফলতার পেছনে রয়েছে বারবার ব্যর্থতার গল্প। হার না মানা এই গায়ককে নিয়েই এবারের নিকটদেশ আয়োজন...
উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জুবিন নটিয়াল। বাবা রাম সারান নটিয়াল সেখানের বেশ জনপ্রিয় ব্যবসায়ি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। মা নিনা নটিয়ালও একজন ব্যবসায়ী।
জুবিনের গান গাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয় সেই ছেলেবেলা থেকে। বাসায় সবসময়ই গানের পরিবেশ ছিল। জুবিনের বাবা গান দারুণ পছন্দ করতেন। মাত্র ৪ বছর বয়সেই জুবিনের গনের প্রতিভা প্রকাশ পায়। একদিন বাবার কোলে বসে গান শুনছিলেন সেই পিচ্ছি বয়সে, সেই থেকেই নাকি গানের প্রতি বেশ ভালোলাগা, ভালোবাসা জন্মে তার। গানের পাশাপাশি হারমোনিয়াম, গিটারসহ নানান বাদ্যযন্ত্রও তিনি বাজানো শিখেছেন। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সংগীত শিখতে মীঠিবাই কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়েই নিজ শহরে তিনি বেশ পরিচিতি পান তার গায়কির জন্য। নিয়মিত অংশ নেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। এই সময়েই তার দেখা হয় খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক এ আর রহমানের সঙ্গে। ওই সময় এ আর রহমান তাকে উপদেশ দেন যে, বলিউডে ঢোকার আগে যেন আরো কয়েক বছর খুব ভালো করে সংগীত ও সুর রপ্ত করেন। এ আর রহমানের উপদেশমতো তিনি তার শিক্ষকের কাছে হিন্দুস্তানি ক্লাসিকালে তালিম নেন। চার বছর ধরে তিনি সংগীতে নিজেকে দক্ষ করেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে তিনি নানা ধরনের সংগীত সম্পর্কে ধারণা নেন ও তা আয়ত্ত করেন। হালকা ক্লাসিকাল সংগীত শেখার জন্য তিনি বানারাস যান পÐিত চান্নুলাল মিসরার কাছে গান শিখতে। চেন্নাইয়ের মিউজিক একাডেমি থেকে ওয়েস্টার্ন মিউজিকের ওপরও তিনি তালিম নিয়েছেন।
২০১১ খ্রিষ্টাব্দে জুবিন টিভি রিয়েলিটি শো এক্স ফ্যাক্টরে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি সেরা ২০ জনের মধ্যে স্থান করে নেন। তখনই সারাভারত জুড়ে তিনি পরিচিতি পান। ওই অনুষ্ঠানে সনু নিগম তাকে বাতিল করে দেন কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েননি। এই ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে পরবর্তী জয়ের উদ্দেশ্যে নিজেকে তৈরি করেছেন। বিভিন্ন মিউজিক কম্পোজারদের কাছে যেতেন প্রায় প্রতিদিনই। তাকে দিয়ে অনেকেই গান প্রাকটিস করাতেন। তিনি মোটেই বিরক্ত হতেন না। বলতেন গান তো সারাজীবনই গাইতে হবে আমাকে। অবশেষে অক্ষয় কুমারের ‘মেহেরবান’ ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ পান তিনি। দারুণ সুপারহিট হয় তার এ গান। মোনালি ক্যারল [২০১৪] সিনেমায় ‘এক মুলাকাত’ গান দিয়ে তার ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি শুরু।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বাজরাঙ্গী ভাইজান’ সিনেমায় জিন্দেগি গানটি তার দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। একে একে তার বান্দেয়া, তু ইতলি খুবসুরত হ্যয়, সাদান্দার গানগুলো রিলিজ হয়। এগানগুলোই তাকে বেশ পরিচিতি এনে দেয়। তিনি তার গানের জাদু শুধু বলিউডেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তামিল ও বাঙালি সিনেমায়ও গান গেয়ে বেশ সফল হয়েছেন।
এরপর অনেক টিভি শোতে তিনি অংশগ্রহণ করেন। বড়ো বড়ো সুরকারদের সঙ্গে তখন তিনি অনেক কাজ করার সুযোগ পান। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে তার নতুন গান ‘লুট গায়ে’ গানটি প্রায় ৯১৫ মিলিয়ন ভিউ হয় ইউটিউবে। তার পরবর্তী গান ‘বেদারদি সে পেয়ার কা’ ১৩ দিনে ৫৫ মিলিয়ন ভিউ হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ‘বাজরাঙ্গী ভাই’ সিনেমায় জিন্দেগি গানের জন্য তিনি মিরচি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস পান। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে পান আইটিএ অ্যাওয়ার্ড। সেরা গায়কের জন্য।
জুবিনের কিছু অজানা কথা
* জুবিন নাটিয়াল বø্যাক বেল্টপ্রাপ্ত এবং মার্শাল আর্টে অনেক দক্ষ
* তিনি ন্যাশনাল লেভেল সুটার
* জুবিন তার গিটার ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারেন না
* তার ডাক নাম জুবি
* তিনি সেলুনে যেতে একদমই পছন্দ করেন না। তিনি নিজের চুল নিজেই কাটেন
* ছেলেবেলায় এতই দুষ্টু ছিলেন যে বার বার স্কুল ত্যাগ করতে হতো
লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন