বাংলা উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ -ইকবাল খোরশেদ

24 Aug 2021, 11:41 AM সাহিত্যভুবন শেয়ার:
বাংলা উপন্যাসে বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গ -ইকবাল খোরশেদ

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার পর স্তব্ধ হয়ে যায় বাংলাদেশ, বিস্ময় জাগে বিশ্ববাসীর মনে। ১৯৭১-এ যারা ষড়যন্ত্র করেছিল, সেই পরাজিত শক্তিই স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের নীতি থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র চিরতরে মুছে ফেলতে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের বুলেটের আঘাত থেকে বাঁচতে পারেন না বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, তাঁদের নবপরীণিতা স্ত্রী সুলতনানা কামাল ও রোজি জামাল। বাদ পড়েনি দশ বছরের শিশু রাসেলও। ১৫ অগস্টের মর্মন্তুদ ঘটনার মধ্যদিয়ে রক্তাক্ত হয় বাঙালির সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা, বাঙালির দীর্ঘ দিনের লালিত অসাম্প্রদায়িক চেতনাসহ যাবতীয় শুভচিন্তা।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা বাংলা ভাষার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-বুদ্ধিজীবীদেরও বেদনাহত ও আন্দোলিত করে। দ্রোহে, ক্ষোভে, প্রতিবাদে ফেটে পড়েন তারা। কিন্তু সেই বৈরি পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করাও ছিল নিষেধ। তবু থেমে থাকেননি তাঁরা। প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে তাদের রচিত কবিতায়, গানে, গল্পে, নাটকে ও উপন্যাসে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা, গান, গল্প-উপন্যাস, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা রচনার ধারা এখনো বহমান। যাঁরা বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখেছেন তারা যেমন লিখেছেন, যারা দেখেননি, তাঁর কথা শুনেছেন, বইপত্রে পড়েছেন তাঁরাও লিখেছেন, এখনও লিখছেন। 

বঙ্গবন্ধুকে উপজীব্য করে শত শত কবিতা, ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ তো লেখা হয়েছেই, বেশ কটি উপন্যাসও রচিত হয়েছে। তার মধ্যে সেলিনা হোসেনের ‘আগস্টের একরাত’, ‘সাতই মার্চের বিকেল’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘দুধের গেলাশে নীল মাছি’, মুনতাসীর মামুনের ‘জয় বাংলা’, আনিসুল হকের সিরিজ উপন্যাস ‘যারা ভোর এনেছিল’, ‘উষার দুয়ারে’, ‘আলো-আঁধারের যাত্রী’, ‘এই পথে আলো জ্বেলে’, ‘এখানে থেমো না’, আবদুল মান্নান সরকারের ‘জনক’, মোস্তফা কামালের ‘অগ্নিকন্যা’, ‘অগ্নিপুরুষ’, ‘অগ্নিমানুষ’, মোহিত কামালের ‘উড়াল বালক’, শেখ সাদীর ‘১৫ আগস্টের ১০০ মিনিট’, স. ম. শামসুল আলমের ‘গল্পের গাড়ি মিরধা ভাই’, আউয়াল চৌধুরীর ‘সেই কালো রাত’, হুমায়ূন মালিকের ‘মুজিবপুরাণ’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। উপন্যাসগুলোর বিষয়বস্তু নানামুখী। আলোচ্য নিবন্ধে আমরা দু-একটি উপন্যাস সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষেপে কিছু কথা উপস্থাপন করার প্রয়াস পাবো।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ নির্মমভাবে খুন হন। বিবিসির সংবাদ পাঠক মাহাতাব টেলিফোনের শব্দে সকালে ঘুমচোখে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর পায়। বিশ্বাস হতে চায় না তার। সে ছুটে যান লন্ডন শহরের বিবিসি কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। তারপর থেকে এক মানসিক দ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে মাহতাব। লন্ডন প্রবাসী মাহতাব নামের এই যুবকের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব নিয়েই বেড়ে উঠেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘দুধের গেলাশে নীল মাছি’ উপন্যাসের কাহিনি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার খবর শোনার পর তার চিন্তাজগৎ এলোমেলো হয়ে যায়। উপন্যাস শুরু হয়েছে মাহতাবের স্মৃতিচারণায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের সূচনা কথাগুলো দিয়ে। উপন্যাসের প্রথম অধ্যায়জুড়ে ৭ই মার্চের ভাষণের বেশখানিকটা শুনতে পায় মাহতাব। এরপর ছুটে যায় বিবিসিতে, সেখানে গিয়ে জানতে পারে ঘটনা সত্য। সপরিবারে নিহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। খন্দকার মুশতাক নতুন প্রেসিডেন্ট। মুহূর্তের মধ্যে মুশতাক সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তান এবং কিছুক্ষণের মধ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে সৌদি আরব। এরপরই দিগি¦দিক শূন্য হয়ে পড়ে মাহতাব। কোনো কাজেই সে আর মন বসাতে পারে না। পুরো লন্ডন শহরে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়ে। ওই শহরের সকল শ্রেণির মানুষের মনে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- ঘৃণার সঞ্চার করে। নৃশংস হত্যাক-ই মাহতাবের অস্থিরতার মূল কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উপন্যাসের শেষে মাহতাব তার অস্থিরতার কারণ খুঁজে পায়। আর সেটাই হলো ‘দুধের গেলাশে নীল মাছি’। 

মুনতাসীর মামুনের ‘জয় বাংলা’ কিশোর উপন্যাস। উপস্যাসের কাহিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই উপন্যাসের পাত্রপাত্রীরা কিশোর তরুণ। এই কাহিনি সংগ্রাম আর বিজয়ের। আর এর মধ্যদিয়েই ঔপন্যাসিক কিশোর-তরুণদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।  

আনিসুল হকের ‘যারা ভোর এনেছিল’ উপন্যাসের কাহিনি বেড়ে উঠেছে শেখ মুজিবর রহমানকে কেন্দ্র করে। শেখ মুজিবর রহমানের জন্ম থেকে শুরু করে বেড়ে ওঠা খুব নিবিড়ভাবে উপস্থাপিত। এই উপন্যাসের ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সরাসরি সংযোগ ঘটে শেখ মুজিবুর রহমানের কলকাতায় ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সময় থেকে। দ্বি-জাতি তত্ত্ব নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক, রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার দাবি আদায়ের আন্দোলন, আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণ ও গ্রেপ্তার, ভাষার দাবিতে জেলখানায় অনশন ইত্যাদি ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিষয় উঠে এসেছে উপন্যাসে।

১৯৫২ সাল। বঙ্গবন্ধু কারান্তরীণ। ১৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঢাকা কারাগার থেকে ফরিদপুর কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ফরিদপুর জেলে অনশনরত শেখ মুজিবুর রহমান শুনতে পান ঢাকায় ছাত্রদের মিছিলে গুলি করা হয়েছে, তিনি তাঁর অনশনের কারণের মধ্যে নিজের মুক্তির সঙ্গে ছাত্রমিছিলে গুলির প্রতিবাদও যুক্ত করে দেন। তাঁর শারীরীক অবস্থার অবনতি হলে সরকার তাঁকে ২৭-এ ফেব্রুয়ারি মুক্তি দেয়। আনিসুল হক লিখেছেন : 

“শেখ মুজিব তার দুর্বল শরীর নিয়ে বের হচ্ছেন কারাগার থেকে।... 

বড় গেটটা বন্ধ।

বড় গেটের ভেতর একটা ছোট গেট।

কারাগার কর্তা সেই ছোট গেটটা দিয়ে মাথা নিচু করে বের হয়ে গিয়ে ঘুরে মুজিবের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আসেন।’

মুজিব তার রোগা দেহ থেকে বাঘের গর্জন বের করে বললেন, ‘বড় গেটটা খোলেন।’

কর্তা বললেন, বড় গেটের চাবি তো এখন আমার কাছে নাই।

মুজিব বললেন, ‘যার কাছে আছে তার কাছ থেকে আনেন। শেখ মুজিবুর রহমান কোনোদিনও মাথা নিচু করে কারাগার থেকে বের হয় নাই। আমার নাম শেখ মুজিবুর রহমান, আমি মাথা নিচু করি না।’

তার কণ্ঠস্বরে একটা অমোঘতা ছিল। মন্ত্রতাড়িতের মতো কারাগার কর্তা ছুটে গেলেন বড় গেটের চাবি আনতে। মুজিব ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন অসুস্থ শরীর নিয়ে।

ঘড়ঘড় করে বড় দরজার পাল্লা খুলে গেল।

শেখ মুজিবুর রহমান কারা প্রাচীরের অন্তরাল থেকে বের হয়ে এলেন মাথা উঁচু করে।”

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের ঘটনা নিয়ে শেখ সাদী লিখেছেন ‘১৫ আগস্টের ১০০ মিনিট’ শিরোনামে একটি উপন্যাস। সত্যসন্ধানী গোয়েন্দা সুমন বর্নণা করেন ঘটনা। সুমন ছাড়াও আরো দু’একটি কাল্পনিক চরিত্র আছে উপন্যাসটিতে। বাকি চরিত্রেরা সবাই পাঠকের চেনা বা ঐতিহাসিক চরিত্র। উপন্যাসের মূল উপজীব্য বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড হলেও উপন্যাসে উঠে এসেছে ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহও। ’৭১-এর পরাজিত শক্তি কীভাবে আবার সঙ্ঘবদ্ধ হয় ; দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে বিদেশি চক্রান্তকারীরা মিলেমিশে কীভাবে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্দুকে হত্যা করেছিল এসবই উঠে এসেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিক শেখ সাদীর কলমে। লেখক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রায় প্রত্যেকর বিস্তারিত বর্নণা দিয়েছেন। ষড়যন্ত্রকারী ও খুনিদের সর্দার ফারুক, রশীদ কীভাবে ফুসছিল, কীভাবে লোকজন জড়ো করছিল, কার কার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছিল, কোথায় না কোথায় গিয়েছিল সব তথ্যই সংগ্রহ করেছেন শেখ সাদী।

উপন্যাসের উপস্থাপনরীতিতে ১৫ আগস্টের ঘটনা নিয়ে রচিত সেলিনা হোসেনের ‘আগস্টের একরাত’ স্বতন্ত্র মাত্রায় উজ্জ্বল। সেলিনা হোসেনের ‘আগস্টের একরাত’ উপন্যাসের কাহিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের ভোর থেকে শুরু হয়ে পরদিন ১৬ই আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুকে দাফন করার পর পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে কী ঘটেছিল তা বাঙালিমাত্রেরই কম-বেশি জানা। সেই জানা ঘটনাটির সঙ্গেই সেলিনা হোসেন পাঠককে পরিচয় করিয়ে দেন ; কেবল তাই নয়, তিনি পাঠককে ঘটনার সঙ্গে একাত্ম করে তোলেন ঔপন্যাসিকের শিল্পিত সৃজন-প্রক্রিয়ায়। 

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে, সে-বিচারের রায়ও কার্যকর হয়েছে। বিচারিক প্রক্রিয়ায় ৬১জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। সেলিনা হোসেন ৬৯৬ পৃষ্ঠার সেইসব জবানবন্দি মনোযোগ সহকারে পড়েন এবং সেখান থেকে ২১জনের জবানবন্দি উপন্যাসে সন্নিবেশ করেন। সেলিনা হোসেন ঔপন্যাসিকের শিল্পিত প্রকরণকৌশলের প্রক্রিয়ায় জবানবন্দিগুলো এমন কৌশলে তাঁর নিজস্ব বিবরণের ফাঁকে ফঁকে উপন্যাসে যুক্ত করেছেন যে, বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার ২১জন সাক্ষী ও পাঠককুল মুহূর্তে উপন্যাসের চরিত্র হয়ে উঠেছে এবং পাঠকের মনে হয়েছে, সমস্ত ঘটনা তার চোখের সামনে ঘটছে। একজন সাক্ষী হাবিলদার (অবঃ) কুদ্দুস সিকদার তাঁর জবানবন্দিতে বলেন :

“এই সময় মেজর নূর ইংরেজিতে কি যেন বলিলেন। তখন মহিউদ্দিন ও তাহার ফোর্স এক পাশে চলিয়া যায়। এই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, তোরা কি চাস ? এর পরই মেজর হুদা ও মেজর নূর হাতের স্টেনগান দ্বারা বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু সিঁড়ির মধ্যে পড়িয়া মৃত্যুবরণ করেন। তখন বঙ্গবন্ধুর পরনে একটা লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবী, একহাতে সিগারেটের পাইপ, অন্য হাতে দিয়াশলাই ছিল।... বেগম মুজিব সিঁড়ির নিকট আসিয়া শেখ মুজিবের লাশ দেখিয়া কান্নায় ভাঙিয়া পড়েন। এরপর বেগম মুজিবকে পুনরায় বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে নিয়া যায়। মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেউদ্দিন হাতের স্টেনগান দ্বারা বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে থাকা সবাইকে গুলি করে। সেখানে বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ জামালের স্ত্রী ও শেখ কামালের স্ত্রী ছিল। তাহারা গুলি খাইয়া মৃত্যু বরণ করে।...” 

ঘটনার পর যখন বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাকিদের লাশ ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় বনানী গোরস্থানে, যখন বাড়িটিতে নেমে আসে সুনসান নীরবতা। বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে থাকে শুধু বঙ্গবন্ধুর মরদেহ। সেলিনা হোসেন তাঁর কল্পনা শক্তির প্রখরতায় একাকী পড়ে থাকা মরদেহে প্রাণের সঞ্চার করেন। অনন্যসাধারণ এক কুশলতায় লেখক সেখানে হাজির করেন সেইসব বিশ্ব নেতা ও ব্যক্তিত্বদের যাঁদের সাথে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরপর সাক্ষাৎ ঘটেছিল বঙ্গবন্ধুর। বঙ্গবন্ধুকে শেষ বিদায় জানাতে, শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে ছুটে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব কুর্ট ওয়াইল্ডহেম, সোভিয়েত ইউনিয়নের পার্টি প্রধান লিয়েনেভ ব্রেজনেভ, মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি, মিশরের প্রেসিডেন্ড আনোয়ার সাদাত, আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ারি বুমেদিনসহ আরো বহুজন। ৩২ নম্বর সড়কে বসবাসকারী কবি সুফিয়া কামালও ছুটে আসেন। বাদ পড়েন না রবিশঙ্কর, জজ হেরিসনও। 

উপন্যাসের শেষাংশে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর দাফন শেষে যখন সবাই চলে যায় তখন কবরে শায়িত বঙ্গবন্ধুর কাছে শান্তিনিকেতনের সব ফুল হাতে আসেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেন :

“প্রিয় মুজিব, আমি তোমাকে বলতে এসেছি যে, তোমার মৃত্যু বাংলাদেশের মানুষের সামনে জ্যোতি। এই জ্যোতি ওদের পথ দেখাবে।... আজ আমি তোমাকে ভালোবাসা জানাতে এসেছি মুজিব। শান্তিনিকেতনের সবখানে ফুটে থাকা সব ফুল নিয়ে এসেছি তোমার জন্য।”

প্রত্যুত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন :

“আমি ধন্য কবিগুরু। আমি আপনার লেখা সেই অমর বাণীটি মান্য করি। আপনি আপনার শেষ লেখায় লিখেছিলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।’ মানুষই আমার কাছে প্রকৃত সত্য। মানুষই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ।” 

মৃত্যুর পর কবরে শায়িত বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের কথোপকথনের কাল্পনিক ও প্রতীকী অধ্যায়ের অবতারণা করে সেলিনা হোসেন যেমন উপন্যাসটিকে শিল্প সৃষ্টির চূড়ান্ত শিখরে উন্নীত করেন তেমনি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধুর মানবপ্রীতি এবং এই দেশ এই জাতি যে একদিন বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই উন্নতির শিখরে পৌঁছাবে সেই অনিবার্য সত্য। যা আজ আমরা বাংলাদেশের প্রভূত উন্নয়নের মধ্যে প্রত্যক্ষ করছি। বঙ্গবন্ধুর জ্যোতিই আমাদের পথ দেখিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।