আপনার শিশুকে সময়মতো টিকা দিন

12 Jul 2021, 04:51 PM শিশুভুবন শেয়ার:
আপনার শিশুকে সময়মতো টিকা দিন

বর্তমান বিশে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হলো টিকা। বৈশিক মহামারি করোনার টিকা প্রসঙ্গ আছে এখন আলোচনার শীর্ষে। বছর জুড়েই কিন্তু চলে টিকার কার্যক্রম। শিশু জন্মের পরে নির্দিষ্ট সময়ে তাকে টিকা দিতে হয়। নবজাতক, শিশু-কিশোরসহ বহু জনেরই বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক টিকা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবে কখন কোন টিকা, অসুস্থ থাকা অবস্থায় টিকা দেওয়া যাবে কি না, কোনো কারণে তারিখ পেরিয়ে গেলে কী করতে হবে এসব বিষয়ে আমাদের অনেকেরই পরিষ্কার ধারণা থাকে না। 

বাংলাদেশে সরকারিভাবে ইপিআই কর্মসূচির আওতায় শূন্য থেকে দুই বছরের শিশুদের বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া হয়। প্রায় সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দানের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক চিকিৎসকের চেম্বারেও রয়েছে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা। মেরি স্টোপস, রাড্ডা, সূর্যের হাসিসহ বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী বা বেসরকারি সংস্থায়ও টিকা দেওয়ার সুব্যবস্থা আছে।


নবজাতকের টিকা

শিশুর জন্মের ১৫ মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় টিকাগুলোর পুরো কোর্স শেষ করতে হয়। টিকার একটি কার্ড থাকে, যাতে যে টিকা দেওয়া হলো এবং ভবিষ্যতে দেওয়া হবে, তার সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করা থাকে।

এ ছাড়াও অন্যান্য রোগের জন্য আরো কিছু টিকা দিতে হয় যেমন :


টাইফয়েডের টিকা

শিশুর দুই বছর পূর্ণ হওয়ার পর থেকে যেকোনো বয়সে টাইফয়েডের টিকা দেওয়া যায়। এই টিকা প্রতি তিন বছর পরপর দিতে হয়। কারণ, এই টিকা সারাজীবনের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে না।


চিকেন পক্সের টিকা

এক বছর বয়সের পর যেকোনো সময় এক ডোজের এই টিকা দেওয়া যায়।

কিশোর-বয়ঃসন্ধিকালের টিকা

শৈশব পেরিয়ে কৈশোর বা বয়ঃসন্ধিকালে যাদের অবস্থান, তাদের রোগ প্রতিরোধ সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কিছু টিকাদানের পরামর্শ দেওয়া হয়। যেমন : টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, পারটুসিস [টিডিএপি] : হবু মায়েদের টিটেনাস টিকা নিতে হবে, যেন শিশুর ধনুষ্টঙ্কার না হয়। 

১৫ থেকে ৪৯ বছরের মহিলাদের গর্ভধারণের আগেই পাঁচটি টিটি ডোজ নেওয়া জরুরি। প্রথমটি নেওয়ার একমাস পরে দ্বিতীয়টি, তার একমাস পরে তৃতীয়টি, তার ছয় মাস পরে চতুর্থ এবং শেষ ডোজটি তার একবছর পরে দিতে হয়।

হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস [এইচপিভি] : ৯ বছর বয়স পূর্ণ হলে বালিকা ও কিশোরীদের ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য এই টিকা শুরু করা যায়। এই টিকার তিনটি ডোজ, যা ১১-১২ বছর বয়সে এবং ১২ থেকে ২৬ বছরের সব নারীর নেওয়া উচিত।

মেনিনগোকক্কাল এমসিভি ৪ : সাধারণত ১১-১২ বছর বয়সে এ টিকা নিতে হয়, তবে ১১ থেকে ১৮ বছরের সবাই এ 

টিকা নিতে পারে। ১৬ বছর বয়সে একটা বুস্টার ডোজ দিতে হয়।

ভেরিসেলা : এটি জলবসন্তের টিকা।

ইনফ্লুয়েঞ্জা : প্রতিবছর নিতে হয়।


মনে রাখতে হবে

* ছোটোখাটো অসুস্থতা। যেমন : জ্বর, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি কারণে টিকাদান স্থগিত না করলেও চলে। তবে মারাত্মক অসুস্থ শিশু, খিঁচুনি হচ্ছে এমন শিশু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেমন : কেমোথেরাপি গ্রহণকারী বা এইচআইভি আক্রান্ত শিশুকে টিকা না দেওয়াই উচিত।

* যেসব শিশুর স্নায়ুরোগ আছে, তাদের ডিপিটি না দিয়ে ডিটি দেওয়াই ভালো।

* মা যদি এইচআইভি পজিটিভ হয়, তবে নবজাতকের টিকা পিছিয়ে দিতে হবে। যদি শিশুটি এইচআইভি নেগেটিভ শনাক্ত হয়, তবেই শুধু বিসিজি টিকা দেওয়া যাবে।

* কোনো টিকা প্রদানের পর মারাত্মক কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে, পরবর্তী টিকা প্রদানের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জেনে রাখা জরুরি

* একই দিনে একাধিক টিকা দিতে তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে একই টিকার দুটি ডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতিতে দিলে ভালো হয়

* কোনো কারণে টিকা প্রদানের তারিখ পার হয়ে গেলে পোলিও, ডিপিটি, হেপাটাইটিস ‘বি’ তারিখের অনেক পরে এমনকি এক বছর পরে দিতেও সমস্যা নেই

* পোলিও টিকা মুখে খেতে হয় বলে ডায়রিয়া থাকলে শিডিউলের ডোজ খাওয়ানোর পর ২৮ দিন বিরতিতে একটি অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো হয়

* বিসিজি টিকা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে টিকার স্থানে ঘা হওয়ার কথা। এতে ঘাবড়ানোর তেমন কিছু নেই

* সাধারণত ডিপিটি বাঁ ঊরুতে ও হেপাটাইটিস ডান ঊরুতে দেওয়া হয়

* ৯ মাস বয়সের আগে হামের মতো র‌্যাশ হয়ে থাকলেও যথাসময়ে মানে ৯ মাস পূর্ণ হলেই হামের টিকা দিতে হয়। 

চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে লিখেছেন শ্যামল কায়া

মডেল : আর্শিয়ান