খাবারের প্রতি শিশুর ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে

07 Jun 2021, 02:24 PM শিশুভুবন শেয়ার:
খাবারের প্রতি শিশুর ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে

শিশুর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ওজন বাড়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে। বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী শিশুর ওজন বাড়ছে কি না সেদিকে নজর রাখা প্রয়োজন। শিশুর বয়সের তুলনায় ওজন কম বা বেশি কোনোটাই হওয়া উচিত নয়। ওজন বেশি হলে যেমন অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, তেমনি কম হলেও ধীরে ধীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে। এতে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক অক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। তাই শিশুর বয়সের সাথে সাথে ওজন বাড়ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে আটটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে


ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে

শিশুর শরীরের ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালোরিযুক্ত খাবারের ভূমিকা অনেক বেশি। তাই ক্যালরি আছে এমন খাবারগুলো খেতে দিতে হবে। যেমন : ফল-ফলাদি, মাছ-মাংস, বীজ-বাদাম ইত্যাদি ক্যালোরিযুক্ত খাবার বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। তাই শিশুর ওজন বাড়াতে এই খাবারগুলো তাদের বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে।


ঠিক খাবার নির্বাচন করতে হবে

শিশুর খাবার যেন হয় সুষম, সেদিকে মনোযোগী হতে হবে। প্রত্যেক বেলার খাবার ঠিক সময়ে খেতে দিন। সকালের নাস্তা দিনের প্রথম খাবার। তাই সকালের খাবার যেন সুষম ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয় সেদিকে পরিবারের সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে। ঠিক খাবার খাওয়ার উপরেও অনেকাংশে শিশুর ওজন বৃদ্ধি নির্ভর করে থাকে। এজন্য খাবারে সব ধরনের পুষ্টিগুণ আছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।


দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খাওয়ানো প্রয়োজন 

দুধজাতীয় খাবারে আছে অনেক পুষ্টিগুণ। শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য দুধ ও দুধজাতীয় খাবার খুবই উপকারী। ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রেও দুধের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। দুধ ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি আদর্শ খাবার। শিশুর বয়স একবছরের পর থেকে শিশুকে গোরুর দুধ খেতে দিতে পারেন। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস দুধ শিশুকে খাওয়ানো উচিত। এছাড়াও দুধের সর অন্যান্য খাবারের সাথে যুক্ত করে খাওয়ানো যেতে পারে।

বারেবারে খাওয়াতে হবে

শিশুর ওজন যদি কম হয় তাহলে তারা বেশি খাবার খেতে পারে না। আবার এ-সময় যদি তারা শুধু তিন বেলার খাবার খায় তাহলেও চলবে না। যেহেতু শরীরের ওজন কম তাই ওজন বাড়াতে প্রতিবেলার খাবারের মাঝখানে বারেবারে কিছু হালকা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো জরুরি। আর বারেবারে একই খাবার না দিয়ে খাবারের তালিকা পরিবর্তন করে দিন। সেক্ষেত্রে তাদের ওজন যেমন বাড়বে তেমনি রুচিরও পরিবর্তন ঘটবে। এবং ধীরে ধীরে তাদের ওজন বাড়ার সম্ভবনা থাকে।


শারীরিক অনুশীলন অভ্যাস করতে হবে

শিশুরা শারীরিক অনুশীলন করতে বরাবরই খুব অনীহা প্রকাশ করে থাকে। শারীরিক অনুশীলন না করার ফলে দিনে দিনে শিশুরা তাদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের খাওয়ার রুচিও কমতে থাকে। তাই শিশুদের নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন বা ব্যায়াম করা দরকার। শিশুর সব ধরনের ব্যায়াম দরকার হয় না বলে ওজন বাড়ার জন্য দু-একটি ব্যায়াম করলেই চলে। এতে শিশুর আলসতা যেমন কমবে তেমনি শিশুর শারীরিক বৃদ্ধিও ঠিকভাবে হবে।


প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়াতে হবে

শরীরের বৃদ্ধি ও ওজন বাড়ার জন্য শিশুকে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে সঙ্গে প্রোটিনযুক্ত খাবারও বেশি পরিমাণে খেতে দিতে হবে। শিশুর ওজন বৃদ্ধিতে প্রোটিনের ভূমিকা অন্যতম। ডিম প্রোটিনের উৎস হিসেবে উল্লেখযোগ্য উপাদান। তাই প্রতিদিন শিশুর খাবারে ডিম রাখা যেতে পারে। এছাড়াও প্রোটিনের অন্য আরেকটি উৎস হলো মুরগির মাংস। এটি পেশি মজবুত করে শিশুর শরীরের ওজন বাড়ায়। তাই শিশুর খাবারে মাছ এবং অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত দুই-এক দিন মুরগির মাংস রাখুন।


বাইরের খাবার খেতে নিরুৎসাহিত করুন

সাধারণত শিশুরা বাইরের খাবার খেতে খুব বেশি পছন্দ করে থাকে। বাইরের খাবার সবসময় যেমন পুষ্টিকর হয় না তেমনি অস্বাস্থ্যকরও হয়ে থাকে। এগুলো খাওয়ার ফলে তারা বাসার খাবারের প্রতি অনাগ্রহ প্রকাশ করে এবং শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। এতে ওজন ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই শিশুদের যতটুকু সম্ভব বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবারের খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।


খাবার তৈরিতে শিশুর সাহায্য নিন 

শিশুদের যখন খাবার তৈরির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয় যে, ‘তারা খাবারে কী খেতে চায়’ তখন তারা বেশ খুশি হয়। ঝটপট বিভিন্ন খাবারের তালিকা বলে ফেলে। তাই শিশুদের জন্য খাবার রান্না করার আগে বিভিন্ন রেসিপি সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞেস করুন। এতে তারা সে খাবারের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। তখন শিশুকে বারবার খাবার খেতে উৎসাহ দিতে পারবেন, যেটা শিশুর ওজন বাড়ার মূল চাবিকাঠি।

সর্বোপরি বাবা-মাকে সন্তানের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হতে হবে। একেবারে শুরু থেকেই খাবারের প্রতি শিশুর ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। কেননা, বাবা-মাই একজন শিশুর প্রথম শিক্ষক। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুর প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাসের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে।