কেন অভিনয় করতে চাননি পঙ্কজ উদাস

12 Jun 2024, 01:27 PM নিকটদেশ শেয়ার:
কেন অভিনয় করতে চাননি পঙ্কজ উদাস

উপমহাদেশের প্রবাদপ্রতিম গজলশিল্পী পঙ্কজ উদাসের সংগীত জীবনের বিস্তার চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। হিন্দি সিনেমা এবং ইন্ডি-পপের জগতে তার অবদান ভোলার নয়। লাইভ অনুষ্ঠান হোক বা অ্যালবাম কিংবা ছবির গান, শ্রোতাপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল তার অবস্থান।

‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিল কর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যার করো’, নিকলো না বেনাকাব’ পঙ্কজ উদাসের গাওয়া এইসব গজল আজও ভুলতে পারেনি শ্রোতারা।

পঙ্কজ উদাস রাজকোটের কাছে অবস্থিত চারখাদি নামের একটি ছোট্ট শহরে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে জন্মগ্রহণ করেন। জমিদার পরিবারের ছেলে তিনি। বাবা কেশুভাই উদাস সরকারি চাকরিজীবী হলেও দিলরুবা বাজাতেন। ছেলেবেলা থেকেই সংগীতের পরিবেশে বেড়ে ওঠেন তিনি। ছেলেকে রাজকোটের সংগীত একাডেমিতে ভর্তি করান পঙ্কজ উদাসের বাবা। শুরুতে তবলার তালিম নিলেও পরবর্তীসময়ে গুলাম কাদির খান সাহেবের কাছে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের তালিম নিতে শুরু করেন। পরে মুম্বাইয়ে এসে গোয়ালিয়ার ঘরানার শিল্পী নবরঙ্গ নাগপুরকরের কাছে সংগীতশিক্ষা শুরু করেন। মূলত গজলের গায়ক হিসেবে তিনি বহুল পরিচিতি পান। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ‘আহাত’ শিরোনামের গজল অ্যালবাম প্রকাশের মাধ্যমে তিনি তার সংগীত দুনিয়ায় যাত্রা শুরু করেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বলিউডের সংগীতজগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে ওঠেন। সঞ্জয় দত্ত অভিনীত ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের মুক্তি পাওয়া ছবি ‘নাম’-এর ‘বড়ে দিনো কে বাদ/ হাম বে বসনে কো ইয়াদ...’ সংগীতপ্রেমী অগণিত শ্রোতাকে মুগ্ধ করেছে, এখনো এ গানের জনপ্রিয়তা আছে।

‘চিঠঠি আয়ি হ্যায়’ গানটি পঙ্কজ উদাসকে রাতারাতি সংগীতপ্রেমী উপমহাদেশীয় শ্রোতার মনে পাকাপোক্ত আসন করে দেয়। এরপর তাঁর সংগীতজীবনে একের পর এক গজলের অ্যালবাম প্রকাশ হতে থাকে। আমন্ত্রণ পেতে থাকেন লাইভ কনসার্টের।

‘চান্দি জ্যায়সা রং’, ‘না কাজরে কি ধার’, ‘দিওয়ারো সে মিলকর রোনা’, ‘আহিস্তা’, ‘থোড়ি থোড়ি প্যায়ার করো’, ‘নিকলো না বেনাকাব’ পঙ্কজ উদাসের গাওয়া অসাধারণ সব গজল এখনো শ্রোতাদের মনের মধুর রসদ। ‘নশা’, ‘পয়মানা’, ‘হসরত’, ‘হামসফর’-এর মতো বেশ কয়েকটি বিখ্যাত অ্যালবামও প্রকাশ হয়েছে তার। বাংলা ‘যায়রে চলে যায়’, ‘তুমি খাঁচা হলে আমি হব পাখি’, ‘কত স্বপ্ন দেখেছি, কত ছবি এঁকেছি’, ‘তোমার চোখেতে ধরা’ ইত্যাদি গান দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর সংগীতপ্রেমীদের কাছে তো পঙ্কজ উদাস বরাবরই ‘গজল কিং’।

সংগীতজগতে অবদানের জন্য অজ¯্র সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন পঙ্কজ উদাস। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের তরফে চতুর্থ সর্বোচ্চ নাগরিক পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন তিনি। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ৭২ বছর বয়সে গানের আর প্রাণের মায়া ত্যাগ করেন তিনি।

পাঁচটি গান ক’টি কথা

১. যদি আরেকটু সময় পেতাম : পঙ্কজ উদাসের এই গানটি গত শতকের আট বা নয়ের দশকের শৈশবে কেউ শোনেনি এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। গানপ্রেমীদের ক্যাসেটের সুরে ভেসে বেড়াতো পঙ্কজের গানগুলো।

২. তুমি খাঁচা হলে আমি হব পাখি : রোদেলা দুপুরে কিংবা গভীর রাতের ঘন অন্ধকারে প্রেমিকের মনে শিল্পীর গানের কথাগুলো যেন প্রেয়সীর জন্য হৃদয়ে লেখা হতো।

৩. চোখ তার চোরাবালি : দুঃখের সাগরে ভাসা প্রেমিকেরও পাশে দাঁড়িয়েছেন পঙ্কজ উদাস। তার সুরের লহরী আর কথার জাদু সাহস দিয়েছেন ভাঙা হৃদয়।

৪. চান্দি জ্যায়সা রং হে তেরা : আটের দশকে যখন ছিল অ্যালবামের ট্রেন্ড তখন পঙ্কজ উদাসের গানের ক্যাসেটের সংগ্রহ ছিল প্রতিজন তরুণ-তরুণীর ঘরে। মনের অগোচরের কথাগুলো গায়কের গানের মাধ্যমে প্রকাশ করা হতো। এই গানটিও ঠিক তেমনই।

৫. চিঠঠি আয়ি হ্যায় : এই গানটি নিয়ে পঙ্কজ উদাস তার পেছনের গল্প শেয়ার করেন এভাবে, চিঠি নয়, ফোন এসেছিল সেদিন আমার কাছে। আজ মনে হয় ওই ফোনটাই বদলে দিল আমার জীবন। ফোনের ওপার থেকে বলা হল ‘‘আমি রাজেন্দ্রকুমার বলছি। আমি চাই ‘নাম’ ছবিতে তুমি অভিনয় করো।’’ ততদিনে ‘মুকারার’, ‘তরন্নাম’য়ের মতো আমার গজলের অ্যালবাম দেশ বিদেশে সাড়া ফেলেছে। বিদেশেও গজলের কয়েকটা অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছে। এই রকম অবস্থায় হঠাৎ অভিনয় করতে যাব কেন আমি ?

ওটা তো আমার জায়গা নয়! কিন্তু মুখের ওপর রাজেন্দ্রকুমারের মতো মানুষকে ‘না’ বলার সাহস পাইনি। অবস্থা সামাল দিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। আর তাতেই চটে গেলেন রাজেন্দ্রকুমার। আমার ভাই মনহর উদাসের কাছে ফোন গেলÑ “তুমহারা ভাই তো বহত বদতমিজ হ্যায়!’’ ভুল বোঝাবুঝির অবসান হলো। অনেক সাহস সঞ্চয় করে রাজেন্দ্রকুমারকে অভিনয় না করার কারণটা বুঝিয়ে বলতে পেরেছিলাম। বুঝলাম রাজেন্দ্রকুমার ছবিতে আমাকে দিয়ে লাইভ গাওয়াতে চান। 

লেখা : শহিদুল ইসলাম এমেল