খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নানাধরনের মশলা ব্যবহার হয়। এই মশলার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য গুণ। বিভিন্ন ধরনের মশলা হৃদরোগের উন্নতি, স্বাস্থ্যকর ত্বক, চর্বি নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরকে সক্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে। গ্রন্থনা করেছেন শেখ সেলিম...
মশলা কী ?
মশলা এমন একটি উপাদান যা বিভিন্ন বীজ, শিকড়, ফল, বাকল, সবজি এবং অন্যান্য উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয়। মশলা সাধারণত রং, স্বাদ এবং খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। খাবারের স্বাদ এবং রং বাড়িয়ে তুলতে মশলার বিকল্প নেই। মশলা ছাড়া যেকোনো খাবার পানসে লাগে। মশলার একটি ভালো গুণ হচ্ছে এটি একটি শুকনা পদার্থ যা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হলে এটি নষ্ট হয় না, পঁচে না এবং এটি দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়।
মশলার কার্যকারিতা
মশলা বিভিন্ন সংক্রমণের সঙ্গে যুদ্ধ করে শরীরকে রক্ষা করে। ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করে, প্রদাহ কমাতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কিছু কিছু মশলা ওজন হ্রাস, সক্রিয়তা বৃদ্ধি, হাড় শক্তিশালী করা, রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা, ঠান্ডা কাটা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং হরমোনের সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্যও কাজ করে থাকে। মশলায় ক্যালোরি খুবই কম থাকে তাই এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। মশলায় প্রোটিন এবং জৈব যৌগ থাকে যা একজন মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয়।
কিছু মশলার স্বাস্থ্য গুণাগুণ এবং উপকারিতা
রান্নায় আমরা বিভিন্ন ধরনের মশলা ব্যবহার করলেও এর বিভিন্ন স্বাস্থ্য গুণাগুণ আমাদের অনেকের অজানা। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মশলা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বহু অবদান রাখে।
এলাচ
এলাচের স্বাস্থ্য সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে খাদ্য হজমে সহায়তা করা, রক্তচাপ কমায়, বিপাক ও সঞ্চালন বাড়ায়। এবং প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এটি রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন সি এবং লোহা, ম্যাঙ্গানিজ এবং পটাসিয়ামের মতো খনিজ ও ভিটামিন প্রদান করে।
দারচিনি
প্রদাহ কমাতে, ব্যথা দূর করতে, ডায়াবেটিস পরিচালনা, সংক্রমণ দূর করতে, অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে এবং হৃদরোগের উন্নতির জন্য দারচিনি খুবই কার্যকর। এটি বুদ্ধির বিকাশ, শক্তিশালী হাড় গঠন, ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং চোখের ও ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে !
লবঙ্গ
এই মশলাটি আমরা বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতে ব্যবহার করে থাকি। এই মশলায় রয়েছে নানা গুণাগুণ। লবঙ্গ ক্যান্সার প্রতিরোধ এবং হাড়ের স্বাস্থ্য সংরক্ষণের জন্য ভালো।
জিরা
জিরা একটি অত্যন্ত উপকারী মশলা উপাদান। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি প্রদাহ যা হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও শুক্রাণু বৃদ্ধি, হাড় শক্তিশালী দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ডিজিজ প্রতিরোধ করে। জিরার একটি অন্যতম উপকারিতা হলো এটি নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়াও জিরা রক্তের কোষ বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
মৌরি বীজ
মৌরি এমন একটি মশলা উপাদান যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি এটি পেটিক, এন্টি-স্পমোডিক্যাল, এন্ডিজাইটিভ, এন্টিসেপটিক, হজমজনিত যেকোনো সমস্যা সমাধান করে। এতে রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ লৌহ, পটাসিয়াম, তামা এবং ম্যাগনেসিস। মৌরি বীজ শরীরের অঙ্গগুলোর সঞ্চালন এবং অক্সিজেনেশন বাড়ায় পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে উন্নত করে। এবং ত্বকের গুণমান উন্নত করে।
তেজপাতা
সারাবিশ্বে একটি খুব জনপ্রিয় মশলা। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা, স্নায়ুর নল ত্রুটিগুলো কমাতে, স্বাস্থ্য, ত্বকের যতœ এবং চুলের যতেœর জন্য প্রশংসিত। এটা স্নায়ুতন্ত্র উন্নত করতে সাহায্য করে, শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের সাথে সম্পর্কিত অবস্থার উন্নতি করে।
গোল মরিচ
গোল মরিচ সবচেয়ে সাধারণ মশলা কিন্তু অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা এতে বিদ্যমান। এতে প্রদাহ এবং অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল কর্ম নিখুঁত এবং এনজাইম্যাটিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। গোল মরিচ হার্ট রেট এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এটির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দ্বারা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
মরিচ
মরিচ দেহের সাইনোসিস পরিষ্কার করতে, প্রস্রাব বৃদ্ধি, বিষক্রিয়াগত মাথাব্যথা দূর করতে। এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং রক্তচাপ কমায়। এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যের কারণে, বিষণœতা, বিষক্রিয়াগত মাথাব্যথা এবং সম্ভাব্য সংক্রমণের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
কেওড়া বীজ
কেওড়া বীজ হজমে সাহায্য করে। কলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে, অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে এবং বিভিন্ন রোগ যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এই বীজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এথেরোসেক্লরোসিস নিষ্কাশন করে। এই বীজ থিয়ামিন, পাইরিডক্সিন, রাইবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিনের মতো ভিটামিন সরবরাহ করে। শুধু তাই নয়, এটি লৌহ, তামা, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সেলেনিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজপদার্থ সরবরাহ করে।
মেথি বীজ
মেথি এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মশলা। এটি শরীরের পুষ্টি বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকর। মেথি হজমশক্তি বাড়ায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে, ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে উপকারী। এটি শরীরের তরলপদার্থ পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
রসুন
রসুন একটি বহুগুণ বিশিষ্ট মশলার নাম। খাবারের অনন্য স্বাদ যোগ করার জন্য ব্যবহৃত একটি চমৎকার মশলা। এটি হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ঠান্ডা এবং কাশি ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে।
আদা
আদা সাধারণত হজম করতে সাহায্য করার জন্য বেশি পরিচিত। আদা এমন একটি মশলা যা ক্যান্সার প্রতিরোধ, ক্ষুধা বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থার উন্নতিসহ অন্যান্য অনেক সুবিধা প্রদান করে।
সজিনা
সজিনায় দেহের প্রদাহ বৃদ্ধি এবং স্নায়ু প্রশান্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ, হজম করতে এবং এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যোগের কারণে ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
জয়ত্রি
জয়ত্রি দেহে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শক্তিশালী হাড় গড়ে তোলে, বিষণœতা হ্রাস, যৌন কামনা বৃদ্ধি, হজম করা, অতিরিক্ত গ্যাস এবং অনিদ্রা কমাতে ভূমিকা রাখে। এটি ত্বক সুস্থ রাখে, চুলের স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে। শরীরের সমস্ত অংশে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
সরিষা বীজ
সরিষা বীজ জৈব যৌগ এবং ভাসমান তেল দিয়ে হয় যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করতে পারে। এতে রয়েছে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের একটি চমৎকার উৎস, যা আপনার অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যকারিতার জন্য প্রয়োজনীয়।
জায়ফল
জায়ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ভিটামিন এবং স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজের উৎস। এটি ফাঙ্গাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে, হজম করতে, অতিরিক্ত গ্যাস কমাতে, চুল এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ভূমিকা রাখে। এটি ম্যাকুলার ডিজেয়ার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির আশঙ্কা কমিয়ে দেয়।
জাফরান
জাফরানে রয়েছে অনেক ক্যারোটিয়েড। জাফরান বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ, নিদ্রাহীনতা, রক্তের কোষ গঠনে সহায়তা করে। হরমোনের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। জাফরান রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে।
হলুদ
মশলার মধ্যে সব থেকে সাধারণ এবং বেশি ব্যবহৃত মশলার নাম হলুদ। হলুদ সাধারণত এন্টি-প্রদাহর জন্য সুপরিচিত। এটি ত্বকের যতেœ সহায়তা করে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এটি ঋতুস্রাব স্বাভাবিক ও সহজ করে দেয় এবং দেহকে সক্রিয় করে তোলে।
কালোজিরা
কালোজিরায় রয়েছে বিভিন্ন গুণের সংমিশ্রণ। হৃদরোগের জন্য কালোজিরা অত্যন্ত উপকারী। আমরা বিভিন্ন রান্নায় কালোজিরা ব্যবহার করে থাকি। এটি আমাদের হৃদরোগ ভালো করতে সাহায্য করে এবং আমাদের হার্টকে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও কালোজিরা চুলের উপকারিতার জন্য দারুণ জনপ্রিয়। এটি চুল বৃদ্ধি এবং চুল গজাতে বেশ কার্যকর।
ছবি : সংগ্রহ