গভীর রাতে কিংবা কাকডাকা ভোরে টেলিভিশন চ্যানেলে চলে সরাসরি সম্প্রচারিত গানের অনুষ্ঠান। টেলিভিশনের পরিভাষায় যাকে বলে ‘লাইভ শো’। ছুটির দিনগুলোতে আর ঈদের টানা ছুটিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান বেশি হয়। মানুষ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে জেগে প্রিয় কোনো শিল্পীর কণ্ঠে শুনতে পান ভালো লাগার কিংবা ‘ভালোবাসার’ কোনো গান। লাইভ অনুষ্ঠানগুলোতে যে শিল্পীবৃন্দ গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতার সুরের রসনার তৃপ্তি ঘটান তাদের কয়েকজন সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলেছেন আনন্দভুবনের পাতায়। সঙ্গে থাকছে আরো আরো প্রাসঙ্গিক কথকতা। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...
ভক্তরাই একজন শিল্পীকে শিখরে নিয়ে যান
-সন্দীপন
লোকগানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী সন্দীপন। একটি টেভি চ্যানেল-এর লোকগানের মিউজিক ভিডিও প্রজেক্টে তার ৩টি গান জে. কে মজলিসের কম্পোজিশনে আসছে। পার্থ মজুমদারের কম্পোজিশনে ১টি লালনগীতির মিউজিক ভিডিও আসছে জিসিরিজের ব্যানারে। এছাড়া কানাডা প্রবাসী কবি সুলতানা রোজীর লেখা ও কম্পোজারে সজীব দাসের সুর-সংগীতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দ্বৈত গানের মিউজিক ভিডিও আসছে শিল্পী অরিনের সঙ্গে একটি ইউটিউব চ্যানেলে। চট্টগ্রামের কয়েকজন প্রোথিতযশা পদকর্তাদের গান নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করার জন্য কাজ করছেন তিনি।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান করতে কী ধরনের অনুভূতি কাজ করে জানতে চাইলে বলেন, “টেলিভিশন চ্যানেল বলেন, সামাজিক মাধ্যম বলেন, সরাসরিই নিজেকে উপস্থাপন করার সক্ষমতা থাকা জরুরি প্রত্যেক শিল্পীর জন্যই। তবে, চ্যানেলগুলোতে সরাসরি শিল্পীদের গান গাওয়ার অনুষ্ঠানের মান কমে গেছে। টেলিভিশনে সংগীতানুষ্ঠানে সংগীতবোদ্ধা প্রযোজকদের দায়িত্ব নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ভীষণ প্রয়োজন। ব্যক্তিগতভাবে শো-এর আগে আমি ভীষণ চাপ অনুভব করি। কারণ, দায়বদ্ধতা কাজ করে। সফল শো শেষে নিশ্চয়ই পরম আনন্দ উপভোগ করি।”
বাংলাদেশের সবক’টি টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকবার করে গান গেয়েছেন সন্দীপন। খুব সকালের এবং রাত্রিবেলার লাইভ অনুষ্ঠান বেশি করেছেন তিনি।
যখন কোনো ভক্ত লাইভ চলাকালে কথা বলতে চান, পছন্দের গান শোনার অনুরোধ করেন বা প্রিয় শিল্পী হিসেবে আপনার প্রশংসা করেন, তখনকার অনুভূতির কথা বলুন, “আমার গান ভালোবেসে ফোন কল করবেন ভক্তেরা এটি জীবনের অনেক বড়ো প্রাপ্তি, সম্মানের। ভক্তরা আমার কাছে সবকিছু। তারাই তো একজন শিল্পীকে শিখরে নিয়ে যান।”
ওপেন এয়ার কনসার্টে সরাসরি অনেক দর্শকের উপস্থিতিতে গাওয়া অনেক বেশি আনন্দের শিল্পী সন্দীপনের কাছে। সরাসরি রি-অ্যাকশন দর্শকদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। নিজের সাহসিকতার জায়গাও তৈরি হয় এবং ধীরে ধীরে একজন শিল্পী পূর্ণতা লাভ করে বলে মনে হয় তার কাছে।
সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান কি একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তা বাড়ায় ? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “সরাসরি সম্প্রচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করা যায়, চর্চার জায়গাটাকে বেগবান করতে সাহায্য করে, পরিচিতিরও জায়গা তৈরি করে। জনপ্রিয়তা নিশ্চয়ই বাড়ায়। ঘন ঘন উপস্থিতি না হয়ে একটু কম হওয়াই ভালো। কারণে, ঘন ঘন লাইভ অনুষ্ঠান করলে কণ্ঠস্বরের কোয়ালিটি নিম্নগামী হওয়ার আশঙ্কা থাকে, এতে করে শিল্পীর কদরের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি থাকে।”
দর্শকশ্রোতাদের ভালোবাসায় গান গেয়ে টিকে আছি
-নোলক
ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ ২০০৫-এর প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে খ্যাতির শীর্ষে চলে আসেন নোলক বাবু। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টিভি লাইভ প্রোগ্রাম, ওপেন এয়ার কনসার্ট, নিজের মৌলিক গান নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি। বর্তমানে তরুণ সিং-এর লেখা ৫০টি গানের প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন নোলক। এর ভেতর ১৩-১৪টি গান ইতোমধ্যে গাওয়া হয়ে গেছে। এর মধ্যে নোলক বাবু অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে ৭টি গান। মেক্সিমাম গান তরুণ সিং এবং নোলক বাবুর সুর করা। ঈদে দুইটি গান আসবে মিউজিক ভিডিও আকারে। টেলিভিশনে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান করতে কী ধরনের অনুভূতি কাজ করে জানতে চাইলে নোলক বলেন, “টেলিভিশনে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান করতে দারুণ ভালো লাগে। কারণ আমরা যখন ওপেন কনসার্ট করি তখন দেখা যায়, কোনো কোনো জায়গায় ৫ থেকে ১০ হাজার অডিয়েন্স থাকে। কনসার্ট শেষ হওয়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠানটাও কিন্তু তখনই শেষ। আর টেলিভিশন প্রোগ্রামটা একটা স্মৃতি হয়ে থাকে। এটা পরবর্তীসময়ে ইউটিউবে যায়। আরো বিভিন্ন মাধ্যমে যায়। মানুষ বারবার সেগুলো দেখে। মোট কথা সরাজীবন থাকে। টিভি প্রোগ্রামে একদম গোছানো কিছু গান থাকে এবং আগে থেকে আমাদের প্রস্তুতিও থাকে। দর্শকদের কাছ থেকে গানের অনুরোধের ফোন আসে। অনেক মন্তব্য আসে। সব কিছু মিলিয়ে টিভি লাইভ অনুষ্ঠান ভালো লাগে।”
লাইভ চলাকালে বাজে কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, “লাইভ চলাকালে আমি একবার বাজে একটি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমি নাম বলবো না। কোনো একটি চ্যানেলে আমার সঙ্গে একজন নারী শিল্পীকে নেওয়া হয়েছিল। চ্যানেল থেকে আমাকে বলা হয়েছিল সে খুব ভালো গায়। কিন্তু যখন লাইভে গান গাইতে শুরু করেন তখন কয়েকটা গান গাওয়ার পর দর্শকদের পক্ষ থেকে বাজে মন্তব্য আসছিল। অনেকেই বলেছিল নোলক বাবুর পাশে এই শিল্পীকে বসানো ঠিক হয়নি। কিছু গান ওই শিল্পী খুবই বেসুরে গেয়েছেন। আসলে আমার সঙ্গে লাইভে গাওয়ার যোগ্যতা তার ছিল না। এটা হয়তো চ্যানেলও জানতো না যে মেয়েটা এত বাজে গায়। উনি দুই তিনটি গান গাওয়ার পর একটানা আমি গেয়ে লাইভ শেষ করেছি। উনি শুধু পাশে বসেছিলেন। আমার দীর্ঘ লাইভ প্রোগ্রামে এটা একটা বাজে অভিজ্ঞতা।”
যখন কোনো ভক্ত ফোন করে পছন্দের গান শুনতে চায়, প্রিয় শিল্পীর প্রশংসা করে তখন খুবই ভালো লাগে তার। নোলক বাবু বলেন, “এমনও অনেক ভক্ত আছে, যারা ফোন করে লাইন পেয়ে বলতে থাকে, ‘আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আল্লাহর কাছে হাজার-কোটি শুকরিয়া আদায় করছি। নোলক ভাই আমি আপনার বড়ো ভক্ত। আমার খুবই স্বপ্ন ছিল আপনার সাথে সরাসরি কথা বলার। টিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনার সঙ্গে কথা বলা হলো।’ তাদের এধরনের আবেগ আমার খুবই ভালো লাগে। এটাই আমার বড়ো পাওয়া। আমরা শিল্পীরা আসলে এখন পর্যন্ত দর্শকশ্রোতাদের ভালোবাসায় গান গেয়ে টিকে আছি। এটা আমার কাছে অনেক কিছু।”
টিভি লাইভ প্রোগ্রাম কি একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তা বাড়ায় এমন প্রশ্ন করলে বলেন, ‘অবশ্যই জনপ্রিয়তা বাড়ে। সব ভক্তরাই চায় তার প্রিয় শিল্পীকে টিভিতে দেখতে। টেলিভিশনে পছন্দের শিল্পীর চেহারা না দেখলে হয়ত অনেকেই মনে করেন এই শিল্পী বুঝি হারিয়ে গেছে।’
লাইভ শোতে মনের মতো গানগুলো গাইতে পারি
-অংকন
তরুণ প্রজন্মের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী অনন্যা ইয়াসমিন অংকন। বর্তমানে তিনি টেলিভিশনে লাইভ অনুষ্ঠান, ওপেন এয়ার কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সম্প্রতি পাগল সুজনের কথায় একটি গানের কাজ করেছেন। গানের শিরোনাম এখনো ঠিক হয়নি। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান করতে কী ধরনের অনুভূতি কাজ করে জানতে চাইলে বলেন, “টেলিভিশনে লাইভ প্রোগ্রাম করতে অবশ্যই ভালো লাগে। দর্শক ফোন করে তাদের পছন্দের গান শুনতে চায়। এছাড়া আমার পছন্দের গানগুলোও গাইতে পারি লাইভ অনুষ্ঠানে। সেগুলো কনসার্টে গাওয়ার সুযোগ হয় না। লাইভ শোতে মনের মতো গানগুলো গাইতে পারি। তবে, কিছু টেলিভিশন চ্যানেল আছে যারা নিজেদের মান নষ্ট করে ফেলেছে। সে চ্যানেলগুলো থেকে ডাকলেও এখন আর যাই না। তারা তাদের চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান ঠিক রাখতে পারেনি। সবাই সবার যোগ্যতার একটি জায়গা তৈরি করে লাইভ অনুষ্ঠানে গাইতে আসে। সেখানে যদি যে কেউ গান গাওয়ার সুযোগ পায় তাহলে নিজের মান-সম্মান বাঁচানোর জন্য ওই ধরনের চ্যানেলে গান না করাই ভালো।’
অংকন ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে লাইভ প্রোগ্রাম করছেন। এই লম্বা সময়ে বাজে কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। গানের লাইভ অনুষ্ঠানে ভক্তশ্রোতারা ফোন করে পছন্দের গান শুনতে চাইলে বা প্রশংসা করলে খুবই ভালো লাগে অংকনের। ওই সময়ে এনালাইসিস করতে পারেন, কোন গানগুলো মানুষ পছন্দ করছে, শুনছে। লাইভ চলাকালে ফোন কলের মাধ্যমে জানতে পেরে দারুণ এক অনুভূতি কাজ করে তার মধ্যে। দর্শকের পছন্দ-অপছন্দ তাকে ভালো ভালো গান করতে অনুপ্রাণিত করে। ওপেন এয়ার কনসার্ট থেকে টিভি লাইভ অনুষ্ঠান বেশি পছন্দ অংকনের।
সরাসরি সম্প্রচার কি একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তা বাড়ায় ? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “এখন টেলিভিশন থেকে ইউটিউবের অবস্থা ভালো। ইউটিউবে সবাই বেশি গান শোনে। আমি যখন ইন্ডাস্ট্রিতে আসি তখনো কিন্তু লাইভ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একজন শিল্পী জনপ্রিয়তা পেত, জনপ্রিয়তা বাড়তো। সেটা ২০১৮-২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের আগে। করোনার পর থেকে টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পাওয়ার কোনো অপশন নেই সেটা আমি মনে করি। আগে তো আইয়ুব বাচ্চু, জেমস, হাসানসহ বড়ো বড়ো শিল্পীরা টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করতেন। এখন বহু মানুষ ইউটিউব দেখছে এবং একজন শিল্পী ইউটিউব থেকে জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে।’
প্রশংসা ভালো লাগে আবার একটু ভয়ও লাগে
-ঝিলিক
‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০০৮’ বিজয়ী হয়েছিলেন হালের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জানিতা আহমেদ ঝিলিক। এরপর থেকে নিয়মিত গান করে চলেছেন অডিও এবং চলচ্চিত্রে। সম্প্রতি ইউরোপ থেকে শো শেষ করে দেশে এসেছেন ঝিলিক। এসে বাংলাদেশে শো করছেন। কিছুদিনের মধ্যে আবার কানাডা যাবেন। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে নতুন গানের কাজ শুরু করার সুযোগ পাচ্ছেন না তিনি। তবে, তিনি জানান খুব শিগ্গিরই নতুন একটি গানের কাজ শুরু করবেন। তিনি আরো বলেন, “সেটার জন্য একটু সময় লাগবে। কারণ, গান তো হুটহাট করে হয় না।” ভালো কিছু করতে গেলে একটু স্থির হয়ে সময় নিয়ে করতে চান তিনি। তিনি বরাবরই একটু সময় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। ব্যস্ততার কারণে এইভাবে চিন্তা করার সময় আসলে তিনি পাচ্ছেন না। টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান করতে অনুভূতি কেমন জানতে চাইলে বলেন, “আমার লাইভ গান গাইতে খুব ভালো লাগে। তো সেটা যদি টেলিভিশনে হয় তাহলে খুবই ভালো। সবার ফোন কল পাই, ইনস্টান্ট গানের রিকোয়েস্ট পাই। আসলে তখন বোঝা যায় মানুষ আমাকে কতটা ভালোবাসে। যখনই লাইভ করার সুযোগ আসে আমি দারুণ আনন্দিত হই এবং তখন প্রস্তুতিও আরেকটু ভালো নিই। ভাবি, কী নতুনত্ব করা যায়। প্রতিটি লাইভেই আমি নতুন কিছু করে থাকি, যারা আমার লাইভ দেখেন তারা জানে যে আমি কিছু না কিছু ডিফারেন্ট করার চেষ্টা করি।”
ঝিলিক ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তার গানের ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। মানুষ তাকে ভালোবাসে বলেই তিনি লাইভ অনুষ্ঠানে ডাক পান বেশি। বহু বছর ধরে কাজ করার পরেও এখনো নিয়মিত বিভিন্ন চ্যানেল থেকে ডাক পান বলে নিজের জন্য বড়ো আশীর্বাদ মনে করেন তিনি। লাইভ অনুষ্ঠান করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত বাজে কোনো অভিজ্ঞতার মুখোমুখী হতে হয়নি তাকে। সবসময় ভালো গেছে তার।
যখন কোনো ভক্ত লাইভ চলাকালে পছন্দের গান শুনতে চায় বা প্রশংসা করে তখনকার অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, “এটা অবশ্যই ভালো লাগার একটা অনুভূতি আমার কাছে। কারণ, তারা আমার গান পছন্দ করেন বলেই হয়তো ফোন কল করেন। ভালোবাসেন বলেই পছন্দের গান শুনার রিকোয়েস্ট করেন। আমাকে নিয়ে যে তারা এভাবে চিন্তা করে এটা আসলে প্রত্যেক শিল্পীর জন্য খুবই আনন্দের একটা বিষয়। প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে আবার একটু ভয়ও লাগে। কারণ আমার মনে হয় এই প্রশংসাটা আবার নেক্সটটাইম পাবো তো ! সেটার জন্য আমাকে আরো বেশি পরিশ্রম করতে হবে, আমার মাথায় আসলে এরকম চিন্তা কাজ করে। আমার ভক্তের অনুরোধের গান যদি আমি নাও গাইতে পারি তাহলেও আমি এক লাইন বা দুই লাইন হলেও গেয়ে থাকি। ভক্তদের এই ভালোবাসা আমি সারাজীবন চাই। তাদের প্রশংসা শোনার পর আমার মনে হয় পরের বার প্রশংসটা যেন আরেকটু বেশি হয়। সেই চিন্তাটা আসলে আমার মধ্যে কাজ করে।”
টিভি লাইভ অনুষ্ঠান বা ওপেন এয়ার কনসার্ট, গানের প্রত্যেকটা সেক্টরের আলাদা মজা ঝিলিকের কাছে। কোনটা থেকে কোনটা ভালো এটা বলাও তার জন্য কঠিন। তার কাছে দুই মাধ্যমই প্রিয়।
টিভি লাইভ অনুষ্ঠান কি শিল্পীর জনপ্রিয়তা বাড়ায় ? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি সবসময় সব মাধ্যমকেই পজেটিভলি দেখি। টিভি লাইভে গান গাইলে একসঙ্গে অনেক মানুষ দেখছে। এখানে দর্শকদের পছন্দের গান গাওয়ার যেমন সুযোগ পাওয়া যায় তেমনি নিজের পছন্দের গান গাওয়ারও সুযোগ থাকে। যেমন একজন দর্শক আগে যে গানটি কখনো শোনেননি সেটা হয়ত লাইভে শুনতে পাচ্ছেন। যেহেতু লাইভ প্রোগ্রাম রাতেই বেশি হয়, তাই একসঙ্গে অনেক মানুষ দেখতে পায়। এতে করে একজন শিল্পীর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। যেমন ধরুন আপনি এই নিউজটা করবেন। এই নিউজটা না করলেও কিন্তু কিছু হবে না। কিন্তু নিউজটা করলে আমার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে সবাই দেখলে। আমি তো এমনিতেই বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, গান গাইছি, কম-বেশি মানুষ আমাকে দেখছে। কিন্তু টেলিভিশনে গাইলে হয় কী, অনেকে হয়ত আগে আমাকে দেখেননি, আমার গানও শোনেননি তারা দেখতে পান। আমি মনে করি, একজন শিল্পী যখন সরাসরি গান গাইছেন সেটা যদি অনেক দর্শক দেখেন, তার মধ্যে অনেকেই নতুন থাকেন, তার মানে কিছু-না-কিছু জনপ্রিয়তা বাড়লো।”
ভালো লাগা কীভাবে প্রকাশ করব, জানা নেই
-শ্রাবণী সায়ন্তনী
চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠখ্যাত এসময়ের উদীয়মান শিল্পী শ্রাবণী সায়ন্তনী। বর্তমানে নতুন বেশ কিছু গান নিয়ে কাজ করছেন। সামনে গানগুলো প্রকাশিত হবে। সম্প্রতি ‘ডেড বডি’ সিনেমায় ‘জানরে’ শিরোনামের একটি গান গেয়েছেন। আরো বেশ কিছু গানের রেকর্ডিং সম্পন্ন হয়েছে। সেগুলো রিলিজের অপেক্ষায় আছে। বিভিন্ন চ্যানেল থেকে গানগুলো প্রকাশিত হবে। এছাড়া টিভি লাইভ প্রোগ্রাম, ওপেন এয়ার কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রাবণী।
টেলিভিশনে লাইভ গাইতে সবসময় ভালো লাগে তার। সেই সাথে একটু হলেও নার্ভাসনেসও কাজ করে। তিনি বলেন, “টেলিভিশন অন্যরকম একটা ভালো লাগার জায়গা। টেলিভিশনে একসাথে অনেক মানুষ দেখতে পারেন। এবং চাইলে ফোন কলের মাধ্যমে আমাদের গানের অনুরোধ করতে পারেন। সেইসাথে ফোন করে যখন তারা বিভিন্ন গানের প্রশংসা করে বলেন যে, খুব ভালো হচ্ছে অনুষ্ঠান এবং আমার কণ্ঠে এই এই গান শুনতে চান তারা তখন দারুণ অনুপ্রাণিত হই। এভাবেই সবসময় অনুপ্রাণিত হতে চাই এবং দর্শকদের ভালোবাসা চাই।”
লাইভ চলাকালে বাজে কোনো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন কখনোই হননি এবং কোনোরকমের বাজে মন্তব্যের শিকারও হননি শ্রাবণী। যখন কোনো ভক্ত লাইভ অনুষ্ঠানে কথা বলতে চান, পছন্দের গান শুনতে চান বা প্রিয় শিল্পীর প্রশংসা করে তখন কেমন অনুভূতি হয় জানতে চাইলে বলেন, “তখন আমার খুবই ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা কীভাবে প্রকাশ করব আমার জানা নেই। এছাড়াও প্রশংসা শুনতে সবারই সবসময় ভালো লাগে। অনেকে প্রশংসার সাথে ভালো এবং খারাপ দুটোর দিকই বলেন। অনেকেই বলেন, এরকম গান করলে ভালো হবে বা এভাবে এগুলে ভালো হবে, অথবা এই ধরনের গানে ফোকাস করলে ভালো হবে। এসব শুনে অনেক ভালো লাগে এবং আমি চেষ্টা করি সবসময় সেগুলো মেনে চলার। দর্শকরা আমার থেকে যে ধরনের গান শুনতে চান, আমি সবসময় চেষ্টা করি সে ধরনের গান গাইতে।”
টিভি লাইভ এবং ওপেন লাইভ কনসার্ট দুটোতেই গান গাইতে ভীষণ ভালো লাগে শ্রাবণীর। তবে, ওপেন লাইভ কনসার্টে গাইতে একটু বেশি ভালো লাগে। কারণ ওপেন লাইভ কনসার্টে একসাথে অনেক মানুষের সম্মুখীন হয়ে গান গাওয়া যায়। মানুষের অনেক কাছাকাছি থেকে গান শোনাতে পারা যায়। সরাসরি মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়, পারফর্মেন্স শেষে সবার থেকে অনেক প্রশংসা পাওয়া, সব মিলিয়ে ওই ভালো লাগা একদম অন্যরকম মনে হয় শ্রাবণীর কাছে।
সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান শিল্পীর জনপ্রিয়তা বাড়ায় কি না, জানতে চাইলে বলেন, “সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা কতটা বাড়ায় তা জানি না। তবে আমার মনে হয়, যারা সত্যিকার অর্থেই খুব ভালো গেয়ে থাকেন, দর্শকেরা তাদের গান বারবার শুনতে চান, তাদের অনুষ্ঠান বারবার দেখতে চান। এবং ভালো শিল্পীদের কণ্ঠ সবার কাছে পৌঁছানোর দারুণ একটা মাধ্যম সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান। এ থেকে বলা যায় যে, সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে শিল্পীর জনপ্রিয়তা অবশ্যই বাড়ে।”
লাইভের অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকার
-ইয়াসমিন লাবণ্য
‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ ছবিতে প্লেব্যাকে ফিমেল সিঙ্গার হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ ফিল্মস অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া এই প্রজন্মের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন লাবণ্য। তিনি সম্প্রতি চারটি গানের কাজ শেষ করেছেন। একটি গান ঈদের আগেই প্রকাশিত হবে। বাকি গানগুলো ভিডিও-সহ ধারাবাহিকভাবে আসবে। এসবের বাইরে টিভি লাইভ প্রোগ্রাম এবং ওপেন এয়ার কনসার্ট নিয়ে ব্যস্ত আছেন তিনি।
টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার অনুষ্ঠান করতে কী ধরনের অনুভূতি কাজ করে, জানতে চাইলে বলেন, ‘২০১৫ বা ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে টিভিতে প্রথম লাইভ অনুষ্ঠান করি এসএ টেলিভিশনে। অনুভূতি বলতে প্রথম দিকে খুব ভয় লাগত। কারণ, সরাসরি গাইবো কোনো ভুল গেয়ে ফেলি কি না। ভুল হলে ভুলটাই মানুষ শুনবে এটা ভেবে। তারপর একটা সময় এসে বুঝতে পারলাম, এটার অভিজ্ঞতা খুবই চমৎকার। এখানে সরাসরি আমি একটা গান গাইতে পারছি। দর্শকেরা ফোন করে তাদের পছন্দের গান শোনাবার অনুরোধ করছেন এবং তাৎক্ষণিক তাদের অনুরোধ রাখতে পারা সেই অনুভূতি খুবই ভালো লাগে। দর্শকরা সরাসরি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। বলতে গেলে এখন আমি দারুণ এনজয় করি। এককথায় টেলিভিশন এবং ওপেন কনসার্ট দুটোই আমার ভালো লাগে।”
ইয়াসমিন লাবণ্য শুরু থেকে এই পর্যন্ত প্রতিটি লাইভই যে সুন্দরভাবে করতে পেরেছেন এটাই তার কাছে অনেক বড়ো পাওয়া।
লাইভ চলাকালে ভক্তের ফোন এলে পছন্দের গানের অনুরোধ করলে বা প্রিয় শিল্পীর প্রশংসা যখন করেন তখনকার অনুভূতির কথা বলুন, “ভক্তদের কাছ থেকে যখন প্রশংসা পাই, তখন খুবই ভালো লাগে। এটাই একজন শিল্পীর কাজ করে যাওয়ার জন্য, কাজের জায়গায় সঠিকভাবে থাকার জন্য একমাত্র উৎসাহ, একমাত্র অনুপ্রেরণা। যখন কোনো দর্শক বলেন আমি ভালো গাইছি, তাদের কাছে প্রিয় শিল্পী হয়ে আছি। এটা একজন শিল্পীর কাছে অনেক কিছু। আমার গান তারা শোনেন, তারা জানেন কোন গানটি আমার কণ্ঠে ভালো লাগে এবং সেই গানটি শুনতে অনুরোধ করে। তাছাড়া ভক্তদের কথা বলার যে একটা আকাক্সক্ষা এটা খুবই ভালো লাগে। বেশির ভাগ লাইভ রাতে হয়। দর্শকরা রাত জেগে প্রোগ্রাম দেখেন, তাদের কাছ থেকে একটা পজেটিভ ফিডব্যাক যখন পাই আসলে সব মিলিয়ে খুবই ভালো লাগে। এই ভালো লাগার অনুভূতি কোনো শব্দ দ্বারা প্রকাশ করার মতো নয়।”
টিভি লাইভ প্রোগ্রাম এবং ওপেন কনসার্ট দুটোই ভালো লাগে ইয়াসমিন লাবণ্যের। তিনি বলেন, “আমি আসলে যে ধারার শিল্পী সে হিসেবে আমার খুব একটা বেশি ওপেন কনসার্ট করা হয় না। আমার ওপেন কনসার্টগুলো একটু সিলেকটিভ। টিভি লাইভ প্রোগ্রাম আমার বেশি করা হয়। ওপেন কনসার্টের বেলায় আমি যেখানে সুন্দরভাবে গাইতে পারবো, স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবো সেখানেই করি। যারা আমার গান শোনেন, মিউজিশিয়ান, অ্যারেঞ্জার যারা আছেন তারাই মোটামুটি ওভাবেই আমাকে একটা কমফোর্ট জোন দেওয়ার চেষ্টা করেন। একজন শিল্পীর সম্মানের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। আসলে আমার কাছে দুটোর দু’রকম অনুভূতি। ওপেন কনসার্টে চোখের সামনে দর্শকদের দেখতে পাচ্ছি, কথা বলতে পারছি। অপরদিকে টিভি লাইভ প্রোগ্রামে ভক্তদের সরাসরি কানেক্ট করা যায়। তাদের প্রতিক্রিয়া, তাদের ভালো লাগা, খারাপ লাগা সরাসরি ফোনের মাধ্যমে বলতে পারেন। এ থেকে তাদের কোনো গান খারাপ লাগলে বুঝতে পারি। ওই সময়ে একটা পছন্দের গানের অনুরোধ এলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা গাওয়ার চেষ্টা করি। তখন দশর্কেরাও শিল্পীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন।”
ছবি : সংগ্রহ