কলকাতার সিনেমায় বাংলাদেশি তারকা

12 Jun 2024, 12:29 PM মুভিমেলা শেয়ার:
কলকাতার সিনেমায় বাংলাদেশি তারকা

বাংলাদেশি তারকারা টালিগঞ্জের সিনেমায় যে নতুন তা কিন্তু নয়। গত শতকের সাতের দশক থেকেই দুই বাংলায় অভিনয়শিল্পীদের আনাগোনা চলছিল। যৌথ প্রযোজনায় সিনেমা হয়েছে অনেক। রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, আলমগীর, শাবানা, ববিতা, নূতন, টেলিসামাদ, সৈয়দ হাসান ইমাম, সুভাষ দত্ত, রাইসুল ইসলাম আসাদ প্রমুখ ওপার বাংলায় অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে কলকাতায় সফলতার দৌড়ে এগিয়ে নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, ববিতা, আলমগীর, চম্পা। কলকাতায় ‘বাবা কেন চাকর’ ছবি দিয়ে ওপার বাংলার ইন্ডাস্ট্রিতে তুমুল জনপ্রিয়তা পান রাজ্জাক। এরপর তিনি কাজ করেন ‘অন্নদাতা’, ‘জন্মদাতা’ ছবিগুলোয়। ববিতা ছিলেন ঢাকাই সিনেমার প্রথম অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক পরিম-লে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পাওয়া ‘অশনি সংকেত’ ছবির মাধ্যমে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে এ ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন প্রখ্যাত নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। একের পর এক ছবি মুনাফা হারানোর ফলে কমে এসেছিল প্রযোজক, কমেছিল পরিচালকের সংখ্যাও। তখন বাংলাদেশি কিছু সিনেমার রিমেক তৈরি করা হয় এবং বাংলাদেশি শিল্পীদের নিয়ে গিয়ে অভিনয় করিয়ে টালিগঞ্জের সিনেমা শিল্পকে আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন কয়েকজন পরিচালক যাদের মধ্যে অন্যতম স্বপন সাহা, যার সিনেমায় হাতেখড়ি হয়েছিল বাংলাদেশেই। বাংলাদেশে সুপারহিট হওয়া অনেক ছবি তিনি কলকাতায় রিমেক করেছেন। তার মধ্যে ‘সুজন সখী’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ উল্লেখযোগ্য। ঢাকার শিল্পীদের মধ্যে কলকাতার সিনেমায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন জয়া আহসান। এছাড়াও জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছেন শাকিব খান এবং ফেরদৌস আহমেদ। হালের ঢাকার তারকারা কলকাতায় কে কোন সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বা কাটাচ্ছেন, তাদের দিকে আলো ফেলা যাক আজ এখানে। লিখেছেন ইভা আফরোজ খান...

ফেরদৌস আহমেদ

ঢালিউড থেকে গিয়ে কলকাতার টালিগঞ্জে সবচেয়ে বেশি সিনেমা করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। একটা সময় ওপার বাংলায় বেশি সময় কাটিয়েছেন তিনি। কলকাতার চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন নিয়মিত। প্রথমে ‘মিট্টি’ নামে একটি বলিউড এর চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিতে অভিনয় করে বহুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। দুই বাংলার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস। বসু চ্যাটার্জির আরো দু’টি সিনেমা ‘চুপিচুপি’ এবং ‘টক ঝাল মিষ্টি’তে অভিনয় করেন ফেরদৌস আর তিনটিতেই সহশিল্পী ছিলেন প্রিয়াঙ্কা ত্রিবেদী আর হঠাৎ সেদিন সিনেমায় সহশিল্পী ছিলেন ঋতুপর্ণা। অন্যান্য সিনেমাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ফাইটার’, ‘খোকাবাবু’, ‘খোলা হাওয়া’ ইত্যাদি। তবে রাজনৈতিক প্রচারে অংশগ্রহণের দায়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘদিন কলকাতার সিনেমায় তার অভিনয় করা হয়নি। তবে, কালো তালিকা থেকে বেরিয়ে আবার ভারতীয় সিনেমায় ফিরছেন দুই বাংলার নায়ক ফেরদৌস। ছবির নাম ‘মীর জাফর চ্যাপটার ২’। এটি পরিচালনা করবেন অর্ক দীপ মল্লিকানাথ। ছবিতে ফেরদৌসের বিপরীতে অভিনয় করবেন কলকাতার শ্রাবন্তী। তাছাড়া এই ছবিতে বাংলাদেশের রোশানও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন। তার নায়িকা প্রিয়াঙ্কা সরকার।

জয়া আহসান

বাংলাদেশের যে কয়েকজন নায়িকা কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন জয়া আহসান। অরিন্দম শীলের পরিচালনায় ‘আবর্ত’ সিনেমা দিয়ে কলকাতায় শুভসূচনা তার। ওই ছবিতে কলকাতার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা আবীর ছিলেন জয়া আহসানের সঙ্গে। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার- পূর্বে শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পান। এরপর কলকাতার টেলিভিশনে প্রিমিয়ার হওয়া ‘একটি বাঙালি ভূতের গল্প’তে দেখা যায় তাকে। তবে সবচেয়ে আলোচিত হন সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায়। ছোট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গেছে। ‘রাজকাহিনীর’ পর কলকাতার মাটিতে কিছুটা জায়গা শক্ত হয় জয়ার। জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী জয়া আহসান ফিল্ম ফেয়ার ইস্টের নবীন অভিনেত্রীর মনোনয়ন পেয়েছিলেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভালোবাসার শহরে’ দেখা গেছে ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরীর পরিচালনায়। এটি মূলত ইউটিউবে প্রকাশিত হয়েছে। অরিন্দম শীলের পরিচালিত থ্রিলার সিনেমা ‘ঈগলের চোখ’ কলকাতায় মহাসমারোহে চলেছে। জয়া আহসান কলকাতার সিনেমাতেই অভিনয় করছেন, যৌথ প্রযোজিত সিনেমায় নয়। কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করেই আলোচিত হয়েছেন এবং সবার শীর্ষে রয়েছেন। এছাড়াও জয়া অভিনীত অন্য সিনেমাগুলো হলো- ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘ক্রিসক্রস’, ‘বিজয়া’, ‘বৃষ্টি তোমাকে দিলাম’, ‘কণ্ঠ’, ‘রবিবার’, ‘বিনিসুতোয়’, ‘অর্ধাঙ্গিনী’, ‘দশম অবতার’, ‘ভূতপরী’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’।

২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ‘বিনিসুতোয়’ চলচ্চিত্রের জন্য জয়া আনন্দলোক সেরা অভিনেত্রী সম্মাননা অর্জন করেন। কৌশিক গাঙ্গুলির ‘বিসর্জন’-এ অভিনয় তাকে এনে দেয় শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র পুরস্কার, জি সিনে পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, পূর্ব বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার।

এবার কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’-এর আসরে পুরস্কার জিতে নেন এই বাংলাদেশি তারকা। কৌশিক গাঙ্গুলির ‘অর্ধাঙ্গিনী’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের কারণে এবছর পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হয়েছেন জয়া আহসান।

শাকিব খান

ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানও ভারতীয় বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং সফল হয়েছেন। অভিনয় দাপটে দ্যুতি ছড়িয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। প্রসেনজিৎ, দেব আর জিতের রাজত্বে ভাগ বসিয়েছেন। কলকাতার সিনেমার ইতিহাসে ব্যবসাসফল শীর্ষ দশ সিনেমার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে শাকিব খানের ‘নবাব’। ভারতের মাটিতে নবাবের আয় ৯ কোটি ১০ লাখ রুপি আর সাড়ে পাঁচ কোটি রুপি আয় করে ২২ নম্বরে আছে শিকারী। তার অভিনীত ‘শিকারী’, ‘নাকাব’, ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এল রে’ সিনেমাগুলো কলকাতার দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় করেছে তাকে। গত বছর কলকাতায় শাকিব খান অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘চালবাজ’, ‘ভাইজান এলো রে’, ‘নাকাব’ মুক্তি পায়। এ চলচ্চিত্রগুলোর ব্যবসা, দর্শকদের চাহিদা, সহশিল্পী সবকিছু বিবেচনা করে ‘কলকাতা টাইমস’ সেরা ২০ তারকার মধ্যে ১৮-তে স্থান দিয়েছে ঢালিউড কিংকে। ‘কলকাতা টাইমস মোস্ট ডিজায়ারেবল ম্যান’-এ সেরা ২০ জন তারকার তালিকায় এবারই প্রথম এলো কোনো বাংলাদেশি অভিনেতার নাম।

সোহানা সাবা

জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবরী পরিচালিত ‘আয়না’ সিনেমা দিয়ে অভিষেক হওয়া সোহানা সাবা বেশ আগেই কলকাতার সিনেমায় কাজ করেছেন। প্রথম অভিনয় করেন ‘এপার ওপার’ সিনেমায়। এরপর অভিনয় করেছেন ‘ষড়রিপু’ সিনেমায়। অয়ন চক্রবর্তী পরিচালিত ‘ষড়রিপু’ দর্শকসহ সেখানকার সিনেমা সমালোচকদের মনোযোগ কেড়েছে। ‘ষড়রিপু’ সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন ইন্দ্রনীল।

জ্যোতিকা জ্যোতি

ঢাকার অনেক তারকাই এখন কলকাতার চলচ্চিত্রে কাজ করছেন। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন জ্যোতিকা জ্যোতি। ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবির মাধ্যমে জ্যোতির অভিষেক হয়েছিল টালিউডে। তার বিপরীতে আছেন সেখানকার অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। পরিচালনা করেছেন প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য।

মাহিয়া মাহি

বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে ‘ভালোবাসার রং’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পা রাখেন মাহি। যদিও তার টালিগঞ্জে শুরু এবছরে। এবছর ‘রোমিও বনাম জুলিয়েট’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে কলকাতার সিনেমায় অভিষেক হয় তার। কলকাতায় তার পরবর্তী সিনেমা ‘অগ্নি টু’। অবশ্য বাংলাদেশ-কলকাতা যৌথ প্রযোজনায় নির্মাণ হয়েছে সিনেমাটি।

বিদ্যা সিনহা মিম

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত ঢালিউড নায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম কলকাতার সিনেমায় নাম লিখিয়েছেন বেশ আগেই। গেল বছর সঞ্জয় সমদ্দরের পরিচালনায় ‘মানুষ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। তার বিপরীতে ছিলেন জিৎ। আরো আগে একই নায়কের সঙ্গে ‘সুলতান-দ্য সেভিয়র’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ‘মানুষ’ সিনেমাটি বিভিন্ন ভাষায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুক্তি পেয়েছে। দিল্লিতে বেশকিছু হলে হাউজফুল গিয়েছে।

নুসরাত ফারিয়া

উপস্থাপনার মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করলেও এখন চলচ্চিত্রের কাজ নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন নুসরাত ফারিয়া। দুই বাংলায় কাজ করে চলেছেন তিনি। নায়িকাদের মধ্যে নুসরাত ফারিয়া বেশ কয়েকটি সিনেমা করেছেন কলকাতায়। এ পর্যন্ত ওপার বাংলার কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া। রুপালি পর্দায় প্রেম-প্রতিশোধের গল্প নিয়ে তৈরি হয় ‘ভয়’ ; সিনেমাটিতে ফারিয়ার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা অঙ্কুশ। ছবিটি পরিচালনা করেছেন রাজা চন্দ। ‘ভয়’-এর আগে কলকাতার ‘ইন্সপেক্টর নটি কে’ ও ‘বিবাহ অভিযান’ ছবি দু’টিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ফারিয়াকে। এছাড়া সম্প্রতি রকস্টার এবং অন্য আরো একটি সিনেমায় স্বাক্ষর করেছেন।

অপু বিশ্বাস

ঢাকাই সিনেমার এক সময়ের সাড়া জাগানো নায়িকা অপু বিশ্বাস ওপার বাংলার মাত্র একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত সিনেমাটি ২০১৮-তে মুক্তি পেয়েছে। ‘আজকের শর্টকাট’ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন সুবীর ম-ল। সহশিল্পীরা হলেন পরমব্রত, গৌরব, অনিন্দিতা ও চন্দন সেন।

শবনম বুবলি

এবছরের শুরুতে জানা গেল, ‘ফ্ল্যাশব্যাক’ নামে সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন বুবলি। সিনেমাটি পরিচালনা করছেন রাশেদ রাহা। এতে বুবলীর সহশিল্পী হিসেবে আছেন কৌশিক গাঙ্গুলি ও সৌরভ দাস।

ছবির গল্প অনেকটা এরকমÑ মঞ্চের একসময়ের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব অঞ্জন। অন্যদিকে ছবিতে অন্য এক চরিত্র ‘ডিকে’ হলেন একজন ভবঘুরে। কোথাও তার স্থায়ী ঠিকানা নেই। এই দুই চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলো একজন সিনেমার পরিচালক যার নাম শ্বেতা। ‘ছবির পরিচালক’ শে^তার ভূমিকায় অভিনয় করছেন শবনম বুবলী। ছবিটি মুক্তি পাবে ভারতে। যৌথ প্রযোজনায় নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও কাজী জাফরিন মুন।

দিলরুবা ইয়াসমিন রুহি

মূলত টিভি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন রুহি। যদিও শুরুটা করেছিলেন মডেলিংয়ের মাধ্যমে। জনপ্রিয় মডেল রুহি কলকাতার ‘গ্ল্যামার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। মহুয়া চক্রবর্তী পরিচালিত ‘গ্ল্যামার’ সিনেমায় রুহির বিপরীতে অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। সিনেমাটি খুব বেশি আলোচনায় আসেনি। পরে আর কোনো কলকাতার সিনেমায় দেখা যায়নি রুহিকে।

নিপুণ

জনপ্রিয় নায়িকা নিপুণ কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা প্রসেনজিতের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ‘পরিচয়’ নামের একটি সিনেমায়। রূপালী চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘পরিচয়’ সিনেমার শুটিং শেষ হয়ে গেলেও প্রযোজনা বিষয়ক ঝামেলার কারণে সিনেমাটি এখনো মুক্তি পায়নি। সেই কারণে নিপুণের সূচনা শুরুতেই থমকে আছে কলকাতায়।

পরীমণি

বর্তমানের সবচেয়ে আলোচিত নায়িকা পরীমণি অভিনীত যৌথ প্রযোজিত ‘রক্ত’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল অনেক আগেই। সিনেমার ‘ডানাকাটা পরী’ গানটা দুই বাংলাতেই শ্রোতারা পছন্দ করেন। এবার পুরোপুরি কলকাতার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে তৈরি ছবিতে অভিনয় করতে চলেছেন তিনি। ‘ফেলুবকশি’ ছবিটি পরিচালনা করবেন দেবরাজ সিনহা। এটি হতে যাচ্ছে টলিউডে পরীর প্রথম ছবি। জানা গেছে, গত বছর কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা তাকে বাংলাদেশের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার দেয়। সেই পুরস্কার সশরীরে গ্রহণ করতে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। তখনই সিনেমায় কাজের ব্যাপারে আলোচনা হয়। ‘ফেলুবকশি’ থ্রিলার গল্পের ছবি। ছবিতে পরীমনির চরিত্রের নাম লাবণ্য, রহস্যময় এক চরিত্র। পরীমনির বিপরীতে অভিনয় করছেন কলকাতার সোহম।

ববি হক

কলকাতার সিনেমায় অভিষেক হয়েছে ববির। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ‘রক্তমুখী নীলা’ কলকাতার ৪০টি সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েছে। এছাড়াও ‘বেপরোয়া’, ‘নোলক’ এসব ছবিতেও ববি অভিনয় করেছিলেন।

তাসনিয়া ফারিন

টালিউড দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হয়েছে ঢাকার অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিনের। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পায় ‘আরও এক পৃথিবী’ নামের সেই সিনেমা। অতনু ঘোষ নির্মিত ছবিটি প্রশংসা পেয়েছিল বেশ। শোনা যাচ্ছে, এবছর আরো একটি সিনেমার কথা। এবারের ছবি ‘পাত্রী চাই’। পরিচালনায় বিপ্লব গোস্বামী। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার সূত্রে জানা গেছে এই ছবিতে তাসনিয়া ফারিনের সঙ্গে দেখা যাবে অর্জুন চক্রবর্তীকে। এছাড়াও থাকছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী ও মমতাশঙ্কর প্রমুখ। ‘পাত্রী চাই’ প্রযোজনা করছে প্রমোদ ফিল্মস। এদিকে, অতনু ঘোষের ‘আরো এক পৃথিবী’ ছবির জন্য সেরা নবাগত অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তাসনিয়া ফারিন। ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’-এর আসরে পুরস্কার জিতেছেন এই বাংলাদেশি তারকা।

সোহেল মন্ডল

ইন্দ্রনীল রায়ের ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমার জন্য সেরা নবাগত অভিনেতা হয়েছেন সোহেল মন্ডল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটো মাস্টারপিস গল্প নিয়ে পরিচালক ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী তৈরি করেছেন ‘’মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমাটি। সেই সিনেমাতেই সোহেল ম-ল ‘সেরা অভিষেক অভিনেতা’ হিসেবে পুরস্কার জিতে নেন। ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’-এর আসরে এই পুরস্কার জিতেছেন এই বাংলাদেশি এই তারকা। ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমাটি ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত।

অপি করিম

ইন্দ্রনীল রায় চৌধুরী পরিচালিত ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর মধ্য দিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় পর বড়ো পর্দায় দেখা গিয়েছিল অপি করিমকে। ‘মায়ার জঞ্জালে’ অপি করিমের সঙ্গে আরো অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের সোহেল ম-ল এবং কলকাতার ঋত্বিক চক্রবর্তী, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, চান্দ্রেয়ী ঘোষ। প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুই ছোটগল্প ‘বিষাক্ত প্রেম’ ও ‘সুবালা’ অবলম্বনে সাজানো হয়েছে এর চিত্রনাট্য। ‘মায়ার জঞ্জালে’ অভিনয়ের কারণে এবারের ‘ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডস বাংলা ২০২৪’-এ মনোনয়ন পেয়েছিলেন অপি করিম।

রাফিয়াত রশীদ মিথিলা

সাড়ে ৩ বছরে কলকাতার ৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন মিথিলা। মিথিলাকে কলকাতার সিনেমায় প্রথম দেখা যায় ‘মায়া’য়। এরপর ‘ও অভাগী’ সিনেমায় অভিনয় করেও প্রশংসা কুড়িয়েছেন অভিনেত্রী। ‘অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ’ কলকাতায় করা অভিনেত্রীর তৃতীয় ছবি। মুক্তির অপেক্ষায় আছে মেঘলা ও নীতিশাস্ত্র।

মোশাররফ করিম

দেশীয় টিভি নাটকের জাঁদরেল এই অভিনেতার জনপ্রিয়তা এখন দেশের গ-ি ছাড়িয়ে পাশের দেশ ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে বেশ আগে থেকেই। উপরন্তু ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজে ওসি হারুনের চরিত্রে অভিনয় করে পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার দর্শকের কাছে ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। শুধু তাই নয়, তার অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে টলিউডের নির্মাতাদের মধ্যেও। এরই মধ্যে ‘ডিকশনারি’ নামের সেখানকার একটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। কলকাতায় মোশাররফ করিমের প্রথম সিনেমা ‘ডিকশনারি’ মুক্তি পেয়েছে ২০২১-এ। মোশাররফ করিম ছাড়াও এতে আরো অভিনয় করেছেন কলকাতার আবির চ্যাটার্জি, নুসরাত জাহান ও পৌলমী বসু। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ব্রাত্য বসু। বুদ্ধদেব গুহর দুইটি ছোটো গল্প ‘বাবা হওয়া’’ ও ‘স্বামী হওয়া’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘ডিকশনারি’ সিনেমাটি। ব্রাত্য বসু নির্মিত মোশাররফ করিমের দ্বিতীয় সিনেমা ‘হুব্বা’ মুক্তি পেল ২০২৩-এ। এক গ্যাংস্টারের জীবনকে কেন্দ্র করে বেড়ে উঠেছে ছবির গল্প। এখানে আরো অভিনয় করেছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, শ্রাবণী দাস, সৌমিক হালদার প্রমুখ। ‘হুব্বা’ ছবিটি প্রযোজনার দায়িত্বে ছিল প্রযোজনা সংস্থা ‘ফ্রেন্ডস্ কমিউনিকেশন’।

চঞ্চল চৌধুরী

বাংলাদেশে চঞ্চল চৌধুরী দারুণ জনপ্রিয় সব বয়সী দর্শকের কাছে। তার এই সুনাম ও দর্শকপ্রিয়তার ঢেউ ওপার বাংলাতেও। বিশেষ করে ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে কলকাতা শহরে এবং পশ্চিমবঙ্গে তার অনেক ভক্তের জন্ম হয়েছে। কলকাতার নন্দিত নির্মাতা সৃজিত মুখার্জি নির্মাণ করছেন ‘পদাতিক’। এ সিনেমায় মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করছেন বাংলাদেশের চঞ্চল চৌধুরী। মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ওপার বাংলার মনামী ঘোষ। টালিগঞ্জের সিনেমায় একের পর এক কাজের প্রস্তাব আসছে চঞ্চলের কাছে। তবে তিনি মেপে পা ফেলতে চাইছেন কারণ, কেরিয়ারের শুরুতে বাংলাদেশে টিভিতে চুটিয়ে অভিনয় অভিনয় করেছেন। তারপরে সিনেমায় আসার পর দর্শকদের কাছ থেকে যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন সেটা হারাতে চান না। একটা মানদ- বজায়ে রাখতে চান এবার।

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব

ছোটোপর্দার জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব। ‘বুকের মধ্যে আগুন’’ ওয়েব সিরিজের মাধ্যমে ওপার বাংলার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিষেক হয়েছে। বাকি ছিল চলচ্চিত্রে, এবার সেটাও হলো। প্রথমবারের মতো পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হলেন বাংলাদেশি এই অভিনেতা। নির্মাতা প্রতিম ডি গুপ্ত পরিচালিত থ্রিলার ঘরানার ‘চালচিত্র’ সিনেমায় দেখা যাবে তাকে। ছবিটি প্রযোজনা করছে টালিউডের প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশনস। এই ছবিতে অপূর্বের সঙ্গে থাকছেন রাইমা সেন, টোটা রায়চৌধুরী, শান্তনু মহেশ্বরী, স্বস্তিকা দত্ত, অনির্বাণ চক্রবর্তীর মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। টোটার বিপরীতে রয়েছেন রাইমা সেন। আর অপূর্বকে দেখা যাবে পুলিশ চরিত্রে।

তারিন

জনপ্রিয় অভিনেত্রী তারিন জাহান। তার এবার দেশের গ-ি পেরিয়ে অভিষেক হলো কলকাতার সিনেমায়। ‘এটা আমাদের গল্প’ শিরোনামের সিনেমাটি গত ২৬ এপ্রিল [শুক্রবার] পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। সিনেমাটি নির্মাণ করেন মানসী সিনহা।

‘এটা আমাদের গল্প’ সিনেমায় প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও অপরাজিতা আঢ্য। তারিন এখানে অভিনয় করেছেন অপরাজিতা আঢ্যের ছেলের বউয়ের চরিত্রে। চরিত্রের নাম মিসেস বসু। তারিনের পাশাপাশি এই সিনেমায় খরাজ মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহাগ সেন, আর্য দাশগুপ্ত, তাপসী মুন্সী প্রমুখ অভিনয় করেছেন।

আরিফিন শুভ

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফিন শুভ। কাজ করেছেন কলকাতার সিনেমাতেও। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে রঞ্জন ঘোষের ‘আহা রে’ সিনেমার হাত ধরে টলিউডে অভিষেক ঘটে তার। চার বছর পর ফের কলকাতার সিনেমায় কাজ করেছেন শুভ। সিনেমার নাম ‘১৯শে এপ্রিল’। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ঘটে যাওয়া এক চাঞ্চল্যকর মৃত্যুরহস্যের গল্পে সিনেমাটি পরিচালনা করছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় নির্মাতা অরিন্দম শীল। ছবিতে ইন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করবেন আরিফিন শুভ। তার বিপরীতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে অঙ্কিতা চক্রবর্তীকে সুরূপা গুহ’র চরিত্রে। এছাড়াও থাকবেন সৌরসেনী মৈত্র। তিনি থাকছেন এক পুলিশ অফিসারের চরিত্রে। এরা ছাড়াও বাংলাদেশি আরো কয়েকজন তারকার সাথে কথাবার্তা চলছে কলকাতার প্রযোজকদের। ব্যাটে বলে মিলে গেলে হয়ত তাদের সংবাদও জানা যাবে অচিরেই।