রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে নিয়ে আনন্দভুবন [১৯ বর্ষ ২০, ১ মার্চ ২০১৫] সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শিরোনাম ছিল : ‘রবীন্দ্রনাথ আমার পাশে থাকেন ‘পরাণসখা’র মতো’। এতে তাকে নিয়ে লেখা হয় :
বন্যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বৃহৎ এক সাংস্কৃতিক পরিম-লে। রবীন্দ্রনাথের গান পরিবেশনায় তিনি যেমন অনন্যসাধারণ একজন শিল্পী তেমনি রবীন্দ্র-গবেষণা এবং শিক্ষাক্ষেত্রেও আন্তরিক ও শ্রমনিষ্ঠ। রবীন্দ্রসংগীতের ভাবমাধুর্য ও সুরলহরি তিনি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন প্রায় একক কৃতিত্বে। রবীন্দ্রনাথের গান তথা রবীন্দ্রচর্চার অনন্য প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’ গড়ে উঠেছে তারই একক প্রচেষ্টায়। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অনগ্রসর শিশুদের জীবনে ‘আলোক শিখা’ জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য গড়ে তুলেছেন আরেক প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়নের জন্য সংগীত’। বিদেশ বিভূঁইয়ে ঘুরে ঘুরে তিনি খুঁজে ফেরেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিস্থান। তার জীবন ও চিন্তনজগতজুড়ে সর্বক্ষণই রবীন্দ্রনাথ বিরাজমান।
সাক্ষাৎকার : ইকবাল খোরশেদ
অনুলিখন : প্রশান্ত অধিকারী, ফাতেমা ইসয়ামিন
চলতি সময়ে
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার জন্ম ১৩ জানুয়ারি রংপুরে। বাবা মাজহার উদ্দীন খান ও মা ইসমত আরা খান। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন যথাক্রমে ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও হলিক্রস কলেজ থেকে। তিনি শান্তিনিকেতন থেকে আইসিসিআর বৃত্তি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপরও শিক্ষা লাভ করেন। এছাড়াও শান্তিনিকেতন থেকে এস্রাজ বাদনে একবছরের ডিপ্লোমা কোর্সও সম্পন্ন করেন।
তিনি ছায়ানটে শিক্ষকতা করেছেন ১৯৮১ থেকে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প ‘দীপ’-এর সভাপতি হিসেবে কাজ করেছেন ২০০৪ থেকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। তিনি ঢাকা ‘সংগীতভবন’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও শিক্ষক। তাছাড়া এমএফডি [উন্নয়নের জন্য সংগীত]-র প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। সুরের ধারা কলেজ অব মিউজিকের অধ্যক্ষ ও পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকে তার অনেক গানের অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে।
এর মধ্যে ‘স্বপ্নের আবেশে’, ‘ভোরের আকাশে’, ‘লাগুক হাওয়া’, ‘আপন পানে চাহি’, ‘প্রাণ খোলা গান’, ‘এলাম নতুন দেশে’, ‘সুদূরের মিতা’, ‘মাটির ডাক’, ‘কালের সাথী’, ‘গেঁথেছিনু অঞ্জলি’, ‘মনের মাঝে যে গান বাজে’, ‘মোর দরদিয়া’, ‘সুরের আসনখানি’, ‘সুরের খেয়া’, ‘শ্রাবণ তুমি’, ‘ছিন্নপত্র’, ‘কবি প্রণাম’, ‘বাজে রম্যবীণা’ উল্লেখযোগ্য।
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গত ২২ এপ্রিল ২০২৪ পদ্মশ্রী [ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা] পদকে ভূষিত হয়েছেন। এদিন সন্ধ্যায় দিল্লিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন তিনি।
ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা হচ্ছে ভারতরতœ। তারপরই রয়েছে পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ ও পদ্মশ্রী। নানা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে পুরস্কারগুলো। এবছর দেশটির সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১৩২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে পদ্ম সম্মাননার জন্য মনোনীত করেছে। এদের মধ্যে পাঁচজন পদ্মবিভূষণ, ১৭ জন পদ্মভূষণ আর ১১০ জন পদ্মশ্রী সম্মাননা পেয়েছেন। এদের মধ্যে রেজোওয়ানা চৌধুরী বন্যা একজন।
এছাড়াও তিনি সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১৬, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বঙ্গভূষণ ২০১৭, ফিরোজা বেগম মেমোরিয়াল স্বর্ণপদক ২০১৭, পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক সংগীত মহাসম্মান ২০১৭, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন ২০১৯-সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।
রেজোওয়ানা চৌধুরী বন্যা রবীন্দ্রসংগীত বিষয়ক বেশ কিছু গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ ও গ্রন্থ লিখেছেন। যার মধ্যে বিষ্ণুপুর ঘরানা ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বরলিপি, গানের ভেলায় বেলা অবেলা, নির্বাচিত রবীন্দ্রসংগীত স্বরলিপি, প্রসঙ্গ : রবীন্দ্র নৃত্যধারা, সংগীত প্রসঙ্গ, বৈভব ও বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথের গান, diversity in rabindranath tagor's music নমি নমি চরণে, আমার গুরুর আসনতলে, রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গান, শ্রদ্ধাঞ্জলি বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা, the gayoki [style of singing] of great singer of rabindrasangeet গীতাঞ্জলি ; গীতাঞ্জলির কবি শতবর্ষের আলোর গীতাঞ্জলি ও নোবেল প্রাপ্তি উল্লেখযোগ্য।
লেখা : শহিদুল ইসলাম এমেল