মডেল ও অভিনয়শিল্পী রুমানাকে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ অক্টোবর ১ বর্ষ ১১ সংখ্যায় প্রথম প্রচ্ছদ প্রতিবদন প্রকাশ করা হয়। শিরোনাম ছিল সাদাকালোর বৈপরীত্যে মডেল রুমানা। এরপর তাঁকে নিয়ে আরো কয়েকটি সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সংখ্যাগুলো হলো ৪ বর্ষ ১৯ সংখ্যা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ, ৯ বর্ষ ২২ সংখ্যা ১ এপ্রিল ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে।
১ বর্ষ ১১ সংখ্যা ১৬ অক্টোবর ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তার সম্পর্কে লেখা হয়- ‘না, না। আমি মোটেই কোনো স্টার হতে পারিনি। আকাশটাই ছুঁতে পারিনি, আবার স্টার। লোকে আমাকে দেখে চিনে ফেলে এটা অবশ্য ঠিক। সেদিন থেকে কিঞ্চিৎ স্টারও হয়েছি হয়ত। আগেও মানুষ তাকিয়ে থাকত কিঞ্চিৎ, এখন বেশি করে তাকায়, আর কীভাবে যেন তাকায়’Ñ বলছিলেন রুমানা, তসলিমা মুশতাক রুমানা, বাংলাদেশের একমাত্র ১০০% হালাল মডেল। অ্যাড করার পর মানুষ এত বিরক্ত করে যে, আমি ফোন ধরি না। এখনো রাস্তাঘাটে অবশ্য খুব একটা বিরক্ত কেউ করে না।’
১৪ বছর বয়সী ধনু রাশির এই জাতিকার শাসক গ্রহ বৃহস্পতি, সুতরাং প্রফেশনালিজমের কন্ট্রাডিকশন তার মধ্যে থাকবে এ আর আশ্চর্য কী ! তবু লালমাটিয়া গার্লস স্কুলে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী রুমানার জন্য কন্ট্রাডিকশনটি সহজ হয়নি মোটেই। অ্যারোমেটিকের বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার পর ছোট্টো একটা তারকা খ্যাতি তার হয়েছেই, যার প্রভাব পড়েছে স্কুলে আর বাড়িতেও।
পারফর্মিং আর্টসে রুমানার প্রবেশ ঘটেছে মেলা আগেই, প্রথম শ্রেণিতে পড়তে নাচ গানের ইশকুল ঝঙ্কারে নাচ শিখতে ভর্তি হওয়ার সময়ে। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ির কাছেই কিংব খালেদ ইন্সটিট্যুটের ছাত্রী ছিলেন তিনি, তিন মাস নাচের ক্লাস করে পা ব্যথা হয়ে যাওয়ার পর ভয়ে নাচটা ছেড়ে দিয়েছিলেন তখনই। এখনও নাচেন তিনি, কিন্তু কোনো ধ্রুপদী নাচ নয়, হিন্দি গানের সঙ্গে ফুর্তির নাচ। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি নজরুলসংগীত শিখতে ভর্তি হয়েছিলেন বাফায়, এখন বাকি আছে শুধু সার্টিফিকেট পরীক্ষা।
মডেলিং করার আগ্রহও ছিল তার মেলাদিন ধরেই। অ্যারোমেটিক পণ্যের জন্য নতুন মডেল দরকার- এই মর্মে পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপন তাকে সে সুযোগও করে দিল। সেই দেখে তারা যোগাযোগ করলেন, সাক্ষাৎকার নিলেন অ্যারোমেটিকের পাবলিক রিলেশন্স ম্যানেজের বেনু শর্মা, বললেন চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করতে। তারপর রুমানার কথায় শুনুন, ‘চেয়ারম্যান আঙ্কেলের অফিসে গিয়ে দেখি কত সুন্দর সুন্দর সব মেয়ে এসেছে, দেখলে পাগল হয়ে যেতে হয়। তিনি আমাকে একটা কার্ড দিয়ে ফটোকমে স্ক্রিন টেস্ট দিতে পাঠালেন। স্ক্রিন টেস্ট দিয়ে এসে বললাম, কোনো আশা কোরো না আম্মু। আমার হবে না। দু’মাস পরে বেনুদা খবর দিলেন, প্রথম সিলেকশনেই আমাকে নেওয়া হয়েছে।
লেখা : অলোকা অরুন্ধতী
চলতি সময়ে
রুমানার শোবিজে যাত্রা শুরু হয়েছিল মডেলিং দিয়ে। সেই সময়ে অ্যারোমেটিক সাবানের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হয়ে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মডেলিংয়ের পাশাপাশি শুরু করেন অভিনয়। প্রথমে ছোটোপর্দায় পরে বড়োপর্দায় অভিনয় করেন তিনি। এক টাকার বউ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে নায়িকার খাতায় নাম লেখান তিনি। তবে তিনি মঞ্চ ও টিভিতে বেশি জনপ্রিয় ছিলেন। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তিনি। সেখানেই বিয়ে করে সংসার করছেন।
রোমানা প্রথম বিয়ে করেন উপস্থাপক ও নির্মাতা আনজাম মাসুদকে। আনজামের সঙ্গে সংসার ভেঙে যাওয়ার পর তিনি বিয়ে করেন সাজ্জাদ নামের ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে। কিন্তু ধীরে ধীরে রোমানা-সাজ্জাদের দাম্পত্যজীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের বিচ্ছেদের গুঞ্জন ওঠে। এর পরপরই রোমানা দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমান। সেখানে যাওয়ার পর ব্যবসায়ী এলিন রহমানের সঙ্গে তার পরিচয়। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ৭ আগস্ট ২০১৫ তারিখে নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা হলে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে দুই সন্তানের জননী। তিনি ২০১০ খ্রিষ্টাবে ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ ছবিতে তার ভূমিকার জন্য পাশর্^চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। লেখা : শেখ সেলিম