এপ্রিলের শুরু থেকেই এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে জনজীবনে প্রায় নাজেহাল অবস্থা। দিনেরবেলা তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে কোনো কোনো দিন। গাছপালার কারণে কিছুটা স্বস্তিতে আছেন গ্রামের মানুষ। কিন্তু গাছপালাহীন ইট-পাথরের শহরে একটু সতেজ বাতাস পাওয়াটা যেন এখন দুষ্কর হয়ে উঠেছে। তাই গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলারই বিকল্প ভাবছে সবাই। খরচের একটা বিষয় তো আছেই সেইসঙ্গে পরিবেশের জন্যও এয়ার কন্ডিশন ভালো নয়। তবে উপায় অবশ্যই আছে ! কিছু পন্থা অবলম্বন করলেই এই গরমেও ঘর থাকবে ঠান্ডা। বর্তমানে জলবায়ুর যে পরিবর্তন আমরা দেখতে পাচ্ছি তা আমাদের অদূর ভবিষ্যতের জন্য অনেক বিরূপ প্রভাব ফেলবে। যার কিছুটা আঁচ আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি। অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা নির্মূল, জলাশয় ভরাট, হিমবাহের বরফ গলে যাওয়া-সহ নানা কারণে তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ঘরেও পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত আরাম। জেনে নিন, যা করতে পারেন এই গরমে ঘরে আরামের জন্য। জানাচ্ছেন ফাতেমা ইয়াসমিন...
ঘরে কিছু গাছ রাখুন
গরম বশে আনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো গাছপালা বাড়ানো। ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য বারান্দায় ও রুমের কোণে বিভিন্ন গাছ ও ইনডোর প্ল্যান্ট লাগানো যেতে পারে। অ্যালোভেরা, বস্টন ফার্ন, স্নেক প্ল্যান্ট, চাইনিজ এভারগ্রিন, মানি প্ল্যান্ট, উইপিং ফিগ, অ্যারিকা পাম ইত্যাদি গাছ রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকবে। ছায়া দিতে পারে এমন গাছ পূর্ব-পশ্চিম অনুযায়ী লাগালে ঘরে সরাসরি সূর্যের আলো আসতে পারে না। বারান্দায় বিভিন্ন ফুলগাছ থাকলে ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ে অনেকখানি। আজকাল অনেকেই বারান্দায় শাক সবজির চাষও করছেন এতে খাবারের চাহিদাও কিছুটা পূরণ হয়।
জানালায় ছাউনি ব্যবহার
ঘরের আশপাশে গাছপালা থাকা মানে ঘরে সরাসরি সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না। ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। জানালায় ছাউনি থাকলে প্রায় ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত তাপ কমাতে সহায়ক হয়।
ভারি পর্দা ব্যবহার করুন
ঘরের পর্দা অনেকেই খুব ভারি পছন্দ করেন না। তবে রোদ আটকানোর জন্য ভারি পর্দা অত্যন্ত কার্যকর। সূর্যের আলো যাতে রুমের ভেতর সরাসরি প্রবেশ না করে তার জন্য জানালায় ভারি পর্দা ব্যবহার করুন।
ঘরের গরম বাতাস বের করে দেওয়া
এক্সস্ট ফ্যানের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এক্সস্ট ফ্যান ঘরের গরম বাতাস বের করে দেয়। বাথরুম বা রান্না ঘরে এটা ব্যবহারে গরমভাব কমায়। রাতে জানালা খোলা রাখার পাশাপাশি এক্সস্ট ফ্যান চালিয়ে রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকে।
তীব্র আলো পরিহার করুন
ঘরে সবসময় আলো জ¦ালিয়ে রাখলে এমনিতেই ঘর গরম থাকে। তাই এই গরমে খুব প্রয়োজন না হলে আলো না জ¦ালানোই ভালো। প্রয়োজন হলে ডিম লাইট বা টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে।
ঘরের সাজসজ্জা আরামদায়ক করুন
ঘরে যদি অনেক আসবাবপত্র থাকে বা আসবাব অগোছালো থাকে তাহলে একধরনের অস্বস্তি কাজ করে। ঘরে এক ধরনের গুমোট ভাব কাজ করে। তাই আসবাবপত্র রাখতে হবে সীমিত ও গোছানো। এতে করে দেখতেও ভালো লাগবে, আর ঘরে হাওয়া চলাচল নিশ্চিত হবে। ঘরের কার্পেট এই সময় তুলে রাখা ভালো এতে মেঝে ঠান্ডা থাকে। এসময় মাদুর বা চাটাই বিছিয়ে রাখা যেতে পারে।
বাড়িতে সাদা রঙের আধিপত্য
আমরা জানি সাদা রং তাপ শোষণ করে না, প্রতিফলিত করে। এই গরমে বাড়িতে সাদা রং করিয়ে নেওয়া যেতে পারে। পুরোটা সম্ভব না হলে জানালার কার্নিশ ছাদে সাদা রং দিন। দরজা জানালার পর্দা ও বিছানার চাদর সাদা ব্যবহার করা ভালো। এতে চোখেরও আরাম হয় আর গরমেও প্রশান্তি ভাব আসে।
বাড়ির অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র বন্ধ রাখা
বাসা বাড়িতে নানা ধরনের যান্ত্রিক আসবাব থাকে। যেমন ডিসওয়াশার, ওয়াশিং মেশিন, ড্রায়ার এমনকি মোবাইল চার্জার ইত্যাদি। এগুলোও কিন্তু ঘরের তাপমাত্রা বাড়ায়। তাই এসব যন্ত্র ব্যবহার হয়ে গেলে তা বন্ধ করে রাখতে হবে।
বরফ ব্যবহার করা
ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য বরফ ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘর ঠান্ডা রাখার একটি পুরনো উপায়। ফ্যানের নিচে বা সামনে বরফভর্তি বালতি রেখে ফ্যান চালিয়ে দিতে হবে। বরফ না থাকলে একবালতি ঠান্ডা পানি রেখেও ফ্যান চালানো যায়, এতে গরম কিছুটা হলেও কমে।
এসব কাজ জাদুমন্ত্রের মতোন এই অতিরিক্ত তাপমাত্রা একদিনেই কমিয়ে দেবে না। তবে গরমে অন্তত ঘরের আবহাওয়াকে সহনীয় রাখবে। গরমে একটু প্রশান্তির নিশ^াস নিতে সহায়ক হবে।