চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পূর্ণিমাকে নিয়ে আনন্দভুবনে ৩ বর্ষ ৩ সংখ্যা [১৬ জুন ১৯৯৮], ৫ বর্ষ ১৫-১৬ সংখ্যায় [১৬ ডিসেম্বর ২০০০ ও ১ জানুয়ারি ২০০১], ৭ বর্ষ ১৬ সংখ্যা [১৬ জানুয়ারি ২০০৩] প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর ২০০০ ও ১ জানুয়ারি ২০০১-এ শিরোনাম ছিল যথাক্রমে : মধুপূর্ণিমা, পূর্ণিমাকে নিয়ে এত সমালোচনা কেন, ‘ভরা পূর্ণিমা’। তাকে নিয়ে লেখা হয়েছে :
নবীন পরিচালক জাকির হোসেন রাজু একজন নায়িকা খুঁজছিলেন। সাংবাদিক শামীম আহমেদ-এর সূত্রে তিনি দেখলেন রীতা নামের চৌদ্দ বছরের কিশোরী মেয়েকে। মেয়েটির বড়োবোন রেখা ‘সুখের আগুন’ ছবিতে সোহেল চৌধুরীর বিপরীতে নায়িকা ছিলেন। রীতা ‘শত্রুঘায়েল’ ছবির শিশুশিল্পী। আলোর দিশারী ও এসো গান শিখি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন, দু’তিনটি পণ্যের মডেলিং করেছেন, আবার নাচতেও পারেন। চাচারা সবাই চমৎকার গজল গান। সব মিলিয়ে সংস্কৃতির চর্চা ছিল বলে রাজু বাসায় নিয়ে এলেন প্রযোজক মতিউর রহমান পানুকে। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’খ্যাত প্রযোজক পানু রীতার কাছেই জানতে চাইলেনÑ নায়িকা হবে কোন মেয়ে ? রীতাই নায়িকা শুনে বললেনÑ এতো পিচ্চি মেয়ে। তিনি উঠেই যেতেন যদি বসার ঘরে ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি না দেখতেন। স্টিল ফটোগ্রাফার কামরুলের তোলা কিছু ছবি দেখলেন। ছবিতে তো ম্যাচিউর মনে হয়। কিন্তু এই মেয়ে, তুমি পারবে তো ? পারতে রীতাকে হবেই। প্রযোজকের পরামর্শে সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকতেন রীতা নামের কিশোরী, শুটিংয়ের সময় রিফ্লেক্টর বোর্ডের আলো সহ্য করার এটাই ছিল টিপস। পানু তার নাম দিলেন ‘পূর্ণিমা’। আটঘাট বেঁধে কিশোরী নায়িকাটি নেমে পড়লেন শুটিংয়ে। যে বয়েসে ঝুটিবেঁধে তার স্কুলে যাবার কথা। সযতেœ তোলা রইল ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন। পূর্ণিমা মনকে প্রবোধ দিলেনÑ অল্প বয়েসে তার দুই প্রিয় নায়িকা শ্রীদেবী আর দিব্যাভারতীও ফিল্মে নেমেছিলেন।
এ গল্প হয়তো পুরনো। এবার কিছু তেঁতো গল্প। প্রথম ছবি ‘এ জীবন তোমার আমার’ ট্রেডের ভাষায় ফ্লপ। কাজেই ছবি মুক্তির আগে যারা পূর্ণিমার সম্ভাবনা নিয়ে একমত হয়েছিলেন তারা হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। একই সাথে মুক্তি পাওয়া ‘ভ-’ ছবির দুর্দান্ত সাফল্যে নির্মাতাদের ভীড় উপচে পড়লো নায়িকা তামান্নার বাড়ির সামনে। ছবি মুক্তির পর পূর্ণিমার সকল দোষ বের হতে লাগল- যেমন প্রথম ছবির নায়ক রিয়াজই মন্তব্য করলেন পূর্ণিমা ইমম্যাচুউরড। কাজেই তাকে অপেক্ষা করতে হবে। একজন ফ্লপ নায়িকার আরো কিছু গল্প থাকে। যেমন- পারিশ্রমিক চাইলে আকাশ থেকে পড়েন কেউ কেউ। যেন ছবিতে সুযোগ পাওয়াটাই তার জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। সহশিল্পীকেই হয়তো আগ্রহ নিয়ে স্ক্রিপ্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তার বেলায় নির্মাতা আর মুড পান না। তবে আমি ভাগ্যবানÑ পূর্ণিমা বলছিলেন, হিট ছবির নায়িকা না হলেও নিয়মিত ছবির অফার পেয়েছি। নির্মাতাদের মাঝে অন্তত এতটুকু আশা ছিলÑ চেষ্টা করলে আমাকে দিয়ে হবে। আর প্রচ- সম্ভাবনাময়ী এই নায়িকার সংগ্রামে সার্বক্ষণিক উৎসাহ জুগিয়েছিল প্রেস। তারকা হলে অনেকে সে কথা ভুলে যান। পূর্ণিমা ভুলতে চান না। রাজ্জাক পরিবারের সন্তান যখন ‘শত্রু’, বাদল খন্দকার পরিচালিত ‘মিস ডায়না’ ছিল আলোচনায় টিকে থাকার ভালো অবলম্বন। প্রযোজক মতিউর রহমান পানু দু’বছরের বাইন্ডিং ভেঙে তাকে সব ছবিতে কাজ করার সুযোগ তৈরি করে দিলেন। পূর্ণিমা তার কাছে কৃতজ্ঞ। আর দু’জন প্রিয় মানুষ হচ্ছেন- পরিচালক জাকির হোসেন রাজু ও শহীদুল ইসলাম খোকন...
লেখা : সৈকত সালাহউদ্দিন।
চলতি সময়ে
সম্প্রতি সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়েছেন অভিনেত্রী পূর্ণিমা। তার মুকুটে নতুন একটি পালক যুক্ত হলো। এতদিন নিজের অভিনয়প্রতিভা দিয়ে দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছেন, সেন্সর বোর্ডে বসে কাজ করবেন তিনি। তার কাছে সিনেমাবাসীদের অনেক প্রত্যাশা। সিনেমার স্বার্থে সেন্সর বোর্ডে তাকে ভূমিকা রাখতে দেখা যাবে, এমন প্রত্যাশা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের। এই প্রথম এ ধরনের কোনো কর্মকা-ে খুব একটা সরব নন পূর্ণিমা। অভিনেত্রী হিসেবেই চলচ্চিত্রে খ্যাতি তার। তার খ্যাতির সূচনা শূন্য দশকের শুরুর দিকে, যদিও তার আগমন গত শতকের নয়ের দশকের শেষের দিকে। রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রথম আলোচনায় আসেন তিনি, উপহার দেন একের পর এক জনপ্রিয় ছবি। রোমান্টিক ছবিতে পূর্ণিমাকে দারুণভাবে গ্রহণ করেন দর্শকেরা। ‘মনের মাঝে তুমি’, ‘নিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি’, ‘হৃদয়ের কথা’, ‘আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা’ ইত্যাদি ছবিগুলোর রোমান্টিক অভিনেত্রী হিসেবে সফলতার প্রমাণ।
লেখা : মাহফুজুর রহমান