ফেরদৌস অভিনেতা থেকে নেতা

30 May 2024, 01:49 PM মুভিমেলা শেয়ার:
ফেরদৌস  অভিনেতা থেকে নেতা

চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে নিয়ে আনন্দভুবনের ৬ বর্ষ ৫ সংখ্যা [১৬ জুলাই ২০০১], ১৮ বর্ষ ১৩ সংখ্যা [১৬ নভেম্বর ২০১৩]-সহ আরো কয়েকটি সংখ্যায় প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করা হয়েছে। ১৬ জুলাই ২০০১-এ শিরোনাম ছিল যথাক্রমে : দুই বাংলার নায়ক, সেই ফেরদৌস ‘...চান পিয়াংকাকে যেন বিয়ে করি’। সেই প্রতিবেদন থেকে তার জবানিতে জানা যায় :

সেটের বাইরে ছিলো পুলিশ প্রহরা। ঋতুপর্ণা ঢাকায় এসেছিল ‘স্বামী কেন আসামী’ ছবির শুটিংয়ের জন্য। আমি তখন একেবারেই নতুন। ঋতুর সাথে পরিচিত হতে পারাটাই একটা বড়ো ব্যাপার। এখন মনে পড়লেই হাসি পায়। সেই ঋতুপর্ণা এখন আমার একজন অসম্ভব ভালো বন্ধু। একসঙ্গে প্রচুর ছবিতে কাজ করছি। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে নাচছি, কখনো বুকে টেনে নিচ্ছি, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, সময়ের পর সময়। প্রতিটি সিকোয়েন্সে ভালো লাগা জন্ম নিচ্ছে। প্রতিটি ফ্রেমে সমঝোতা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। ক্যামেরা অন হয়ে যাওয়ার পর থেকে আবেগঘন দৃশ্যগুলোতে সত্যিকার প্রেমের একটু আধটু ছোঁয়াও থাকতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। একে অস্বীকার করার যো নেই।

সেরা আর সুন্দর মুখগুলোই তো শোবিজে আসে। একজন নায়িকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে লাখ লাখ তরুণ। অনেক তরুণীর হৃদয়জুড়ে থাকে একজন নায়ক। এই সুন্দর মানুষগুলো একে অন্যের প্রেমে পড়বে এটাই নিয়ম। চোখে চোখ, শরীরে শরীর থেকে দু’টি হৃদয় মিলে যেতেই পারে। দিনে চব্বিশ ঘণ্টার আঠার ঘণ্টা যাদের নিয়ে বসবাস তাদের মাঝে কেউ হবে বন্ধু, কেউ হবে বউ- ভাবাটা অন্যায় নয়। কিন্তু আমরা একটি অদ্ভুত সমাজের মানুষ। ভালো লাগলে বলি না, পাছে স্ক্যান্ডাল হয়ে যাবে। একজন সহশিল্পীর বিপদে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে অনেক হিসাব নিকাশ করি। ভালোবাসার কথা ? দিল্লি দূর অস্ত। তাহলে নাকি ক্যারিয়ারটাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার মন, আমার জীবন, আমার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে এইসব আতঙ্ক। কিন্তু কেন ?

ভক্তদের কিন্তু এসব মাথা ব্যথা নেই। তাদের ভালো লাগা কোনো নিয়ম মানে না। কোনো ধর্ম মানে না। আমি পর্দায় কী করছি, কতটুকু করতে পারছি ঠিক ততটুকু নিয়ে তাদের ভাবনা। একজন চলচ্চিত্রকর্মীরও ভাবা উচিত ফেরদৌস ঠিক নয়টায় শিফটে আসলো কি না, শিডিউল ঘাপলা করলো কি না কিংবা অশিল্পীসুলভ কিছু করছে কি না ব্যস। কিন্তু শোবিজে এক ধরনের পরচর্চা হয় নিজেরাই নিজেদের ছোটো করি। ফিল্মের মেয়ে বলে নায়িকাদের প্রতি এক ধরনের বিশ্রী ইঙ্গিত করা হয়। আমার নায়ক বন্ধুরাই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলে- ফিল্মের মেয়ে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠে না। কেন রে ভাই ? ফিল্মের টাকায় খাচ্ছি, ঘুরছি, দামি গাড়িতে চড়ে আরামে ঠান্ডা হাওয়া খাচ্ছি, অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট কিনছি আর বিয়ে করার বেলায় ফিল্মের মেয়ে শুনলে নাক সিঁটকাবো কেন ? আমি তো ফিল্মেরই ছেলে...

লেখা : সৈকত সালাহউদ্দিন।

চলতি সময়ে

সম্প্রতি ঢাকা ১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। তার এই বিজয় চলচ্চিত্র শিল্পে ফেলেছে ব্যাপক সাড়া। সিনেমার মানুষরা মনে করছেন, এবার সিনেমা শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন ফেরদৌস। অনেকদিন ধরেই সরকার দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ফেরদৌসের। সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মনোনয়ন চাইলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান ফেরদৌস। ধানমন্ডি এলাকা থেকে নির্বাচিত হন এই চিত্রনায়ক। নির্বাচিত হওয়ার পর তার প্রথম ছবি মুক্তি পেয়েছে গত ঈদে। সরকারি অনুদানে নির্মিত এই ছবির নাম ‘আহারে জীবন’। রাজনীতির পাশাপাশি অভিনয়েও সময় দেবেন তিনি। তার সমসাময়িক অনেকে ব্যস্ততা থেকে অবসর নিলেও ফেরদৌস অভিনয় করেছেন বরাবরই। ফেরদৌসের চাহিদা ছিল সবসময়। ছবিগুলো তাকে এনে দিয়েছে একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। ফেরদৌস এমন একজন অভিনেতা যিনি একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ধারা এবং বিকল্প ধারার সঙ্গে যুক্ত আছেন। যদিও ফেরদৌসের শুরুটা বাণিজ্যিক ছবি দিয়েই। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ মুক্তির পর তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। অসংখ্য হিট ছবিতে অভিনয় করেছেন এই তারকা। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড়ো ছবি মৌসুমীর সঙ্গে, ‘খায়রুন সুন্দরী’। তার অভিনীত ছবির সংখ্যা প্রায় ২০০। বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। এই পরিচয়ের বাইরে উপস্থাপক হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন এই মডেল কাম চিত্রনায়ক। এবার যুক্ত হলো রাজনীতিবিদ পরিচয়। 

লেখা : মাহফুজুর রহমান