শিশুদের ঈদ-আনন্দ

07 Apr 2024, 12:30 PM শিশুভুবন শেয়ার:
শিশুদের ঈদ-আনন্দ

শামামা সুব্রানা

প্রথম শ্রেণি, রয়্যাল স্কুল, বসুন্ধরা, ঢাকা

ঈদের দিন আমি আম্মুর সাথে অনেক জায়গায় বেড়াতে যাই নতুন জামা-জুতো পরে। আমার নানু, ফুপু আমাকে সালামি দেয়। আমি সেই সালামি জমিয়ে কোনো একটা খেলনা কিনি, রং পেন্সিল কিনি। এবার আমি আমার সালামি জমিয়ে রাখার জন্য একটা ব্যাংক বাক্স কিনেছি। এটা পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করে রাখা যায়।

পাসওয়ার্ডটা আমার আম্মু ছাড়া আর কেউ জানে না। ঈদের দিন আমার বন্ধুরা আমার বাসায় আসে। আমি ওদের নিয়ে খেলি এবং আরো অনেক আনন্দ করি।

আফিয়া সাইয়ারা আহানা

২য় শ্রেণি, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি পৌর বিদ্যালয়

রোজা শুরু হওয়া থেকেই আমার ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে যায়। বাবাকে রোজার দিন থেকে মার্কেটে নিয়ে যেতে বলি। মাঝে মাঝে দোকানে গিয়ে পোশাক দেখে আসি। ১০ রোজার পর বাবা-মা আমাকে মার্কেটে নিয়ে যায়, সঙ্গে আমার ছোটোবোন আফরা সাইয়ারা আহানাও যায়। আমরা একটা বড়ো মার্কেটে যাই। সেখানে কয়েকটি পোশাকের দোকান দেখি। সব পোশাকই আমার ভালো লাগে। কিন্তু বাবা-মা আমার পছন্দের একটি পোশাক কিনে দেয়, আর একটি বাবা-মা পছন্দ করে দেন। আগে পোশাক কিনি, পোশাক কেনা হয়ে গেলে পোশাকের রঙের সাথে মিল রেখে জুতো কিনি। আমার হিল জুতা পছন্দ কিন্তু মা বলে, তুমি এটা পরে হাঁটতে পারবে না, তাই হিল জুতা আর আমার পাওয়া হয় না। পোশাকের মতো জুতাও দুই জোড়া কিনে দেয়, একটি নাগরা অন্যটি, ফিতা জুতা। লাল আর গোলাপি কালার আমার পছন্দ। এই দুটির মধ্যে পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে কেনা হয়েছে। এখনো কান ফুড়াইনি, তাই দুল কেনা হয় টিপ দুল। পোশাক ও জুতা কেনা হয়ে গেলে, পোশাক ও জুতা কেনা হয়ে গেলে পোশাক অনুযায়ী ব্যাগ ও কসমেটিকস কেনা হয়। লিপস্টিক ও নেইলপলিশ আমার অনেক ভালো লাগে, মা কিনে দেন। সেইসঙ্গে কিছু খেলনাও কেনা হয়। চাঁদরাত পর্যন্ত আমি বাবা-মার সঙ্গে মার্কেটে যাই। মার্কেট শেষ হওয়ার পর রাতে আমরা বাইরে খেয়ে বাসায় ফিরি। বাসায় এসে আমার জুতা, পোশাক মাকে লুকিয়ে রাখতে বলি যেন কেউ আমার ঈদের কেনাকাটা দেখতে না পারে।

সালমান ইউসুফ

তৃতীয় শ্রেণি, মণিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে নতুন পোশাক। ঈদের দিন আমরা দাদুর বাসায় যাই, নানুর বাসায় যাই, ফুপির বাসায় যাই। আমরা দাদুর বাসায় খেলাধুলা করি, মজা করি। নানুর বাসায় গিয়ে আমরা অনেক ঘোরাফেরা করি এরপর ফুপির বাসায় যাই ফুপি আমাকে অনেক আদর করে। আমি ঈদে নতুন জামাকাপড় কিনি, জুতা কিনি, আমার নানু আমাকে ঈদের সালামি দেয়। আমার নানার বাসায় একজন মামি আছে তিনি আমাকে অনেক আদর করেন। আমি নানুর বাসায় গিয়ে মেহেদি দিই। দাদুর বাসায় গিয়ে গাছে পানি দিই, গাছ লাগাই। ফুপির বাসায় গেলে ফুপির সঙ্গে রান্নাবান্না দেখি। ফুপির সঙ্গে ঘুরতে যাই। আমি ঈদের দিন সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠি। গোসল করি আর ঈদের নামাজ পড়তে যাই। ঈদের নামাজ পড়ে বাসায় এসে পায়েস খাই, সেমাই খাই, বিরিয়ানি খাই। ঈদের দিন আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। অনেক আনন্দ লাগে।

আদনান খালিদ

চতুর্থ শ্রেণি, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা

আমরা যৌথ পরিবারে বাস করি। আমি প্রতিবছর ঈদ করতে গ্রামে চলে যাই। দাদা-দাদি, চাচ্চু, ফুপি ও কাজিনরা মিলে আমরা অনেক মজা করি। আমার ঈদের কেনাকাটা ঢাকা থেকেই করি। এবার ঈদে পাঞ্জাবি, পায়জামা, শার্ট, প্যান্ট ও জুতা কিনবো। বাবা ব্যস্ত থাকায় এখনো সব কেনাকাটা হয়নি। চাচ্চুরাও গ্রামের বাড়ি থেকে জামা কাপড় গিফট করে। ঈদের দিন পাঞ্জাবি পায়জামা পরে আতর মেখে গ্রামের ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাই, সেখানে অনেকের সাথে দেখা হয়। ঈদের দিন বিকেলে আমি আমার নানুবাড়ি যাই। নানুবাড়ি গিয়ে মামা-মামি, নানা-নানু ও কাজিনদের সঙ্গে অনেক মজা করি। ঈদের সময় সবাই আমাকে সালামি দেয়।

মো. মিহরানুর রহমান আজরাফ

চতুর্থ শ্রেণি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ আমার জন্য খুবই খুশির একটি দিন। আমি প্রতিবছর নানুর বাসায় ঈদ করি। কিন্তু এবছর আমি নানুর বাসায় ঈদ করতে পারব না। কারণ আমার নানুভাই ও নানুমনি ওমরাহ করতে গিয়েছেন। এজন্য আমার মন খারাপ হলেও আমি অনেক খুশি। কারণ এবছর প্রথম আমি আমার ছোটো ভাইয়ের সঙ্গে [৮ মাস] ঈদ উদ্যাপন করব। ঈদের দিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন পাঞ্জাবি, পায়জামা পরে বাবার সাথে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করব এবং সবার সাথে কোলাকুলি করব। বাসায় এসে মা-বাবাকে সালাম করে সালামি নেব। এরপর মায়ের হাতের মজার নাশতা খাবো। লাচ্ছা সেমাই আমার খুবই প্রিয়। বিকেলে সবাই মিলে বেড়াতে যাব। এভাবে আনন্দে এবারের ঈদ কাটাবো। সবাইকে ঈদ মোবারক।

মারিয়া মাহরীন খান

৪র্থ শ্রেণি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ঈদের কেনাকাটার জন্য বায়না ধরতে থাকি রোজার আগ থেকেই। সকালে, বিকেলে, রাতের জন্য আলাদা ড্রেস আমার চাই। বাবার সাথে মার্কেটে যেতে সবচেয়ে মজা পাই। প্রতিটি ড্রেসের সঙ্গে ম্যাচ করে জুতা এবং জুয়েলারি কিনি। বাবা খুব খুশি মনে আমাকে এগুলো কিনে দেন। আমি ড্রেসগুলো লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি, যাতে কেউ দেখতে না পারে। তারপর আসে কাক্সিক্ষত দিন, ঈদের দিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করব এবং নতুন জামা পরব। রান্না ঘরে গিয়ে দেখব মা কী রান্না করছে ? বড়ো আপুকে ঘর সাজানোর জন্য সাহায্য করব।

এরপর সাবই মিলে সকালের নাশতা করব। বাবা ঈদের নামাজে যাবে। আসার সঙ্গে সঙ্গে সালাম করে সালামি নেব। এছাড়া মা, বড়ো আপু, নানা, নানু, মামাদের কাছ থেকে সালামি নেব। আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও সালামি নেব। তাদের বাসায় বেড়াতে যাব, তাদের খোঁজখবর নেব। বিকেলবেলা সবার সঙ্গে পার্কে ঘুরতে যাব। সবাই মিলে অনেক মজা করব। সবাইকে ঈদের শভেচ্ছা জানাব। বন্ধুদের ফোন দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করব।

সন্ধ্যায় বাড়িতে সাধারণত মেহমান আসে, তাই আমি আমার নতুন ড্রেস পরব। তাদের সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করব। রাতে সবাই মিলে আম্মুর রান্না করা খাবার খাব। কখন যে ঈদের দিন শেষ হয়ে যায় আমি বুঝতেই পারি না।

সুমাইয়া সিদ্দিকী ইশা

৭ম শ্রেণি, টাঙ্গাইল কালেক্টরেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ

ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদের দিন আমরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠি। উঠে মিষ্টি কিছু খাই। আর ঈদের দিন সবাই মিষ্টিজাতীয় খাবার রান্না করে। ঈদের দিন সকাল সকাল গোসল করি। গোসল করার পর নতুন জামা পরে একটু সাজগোজ করি। তারপর একটু ছবি তুলি। প্রতিবেশীদের ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে তাদের বাসায় যাই। তারা সেমাই, পায়েসসহ অনেক কিছু খেতে দেন। অনেকে সালামিও দেন। তারপর ভাইবোনদের সাথে একটু আনন্দ করি। গান শুনি, নাচ করি, মজার মজার খাবার খাই, একসাথে ছবি তুলি, একসাথে ঘুরতে যাই আরো কত কী ! তারপর পরিবারের সদস্যদের সাথে একসাথে বসে গল্প করি। সব মিলিয়ে ঈদের দিন খুবই আনন্দের সাথে কাটাই।

আমার ঈদের যত আবদার সব মায়ের কাছে। রোজা শুরু হতে না হতেই আমার বায়না শুরু হয়, মা মার্কেটে যাব। যতদিন যায় আমার বায়না আরো বাড়তে থাকে। তারপর মা যখন আমাকে মার্কেটে নিয়ে যান, তখনো আমার বায়না, এটা কিনব ওটা কিনব, একটা কিনে দিলে আরেকটা চাই। সব কেনাকাটা যখন শেষ হয় তখন আমার আবার আবদার, মা আইসক্রিম খাব। আমার সব আবদার না মেটানো পর্যন্ত মা যেন বাড়িই ফিরতে পারেন না। তারপর কেনাকাটা শেষে আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরে আসি। কেনাকাটা শেষে মনে হতে থাকে ঈদ কবে আসবে ? কবে নতুন জামা পরব ? ঈদ আসছে না কেন ? আর অধীর আগ্রহে ঈদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকি।

সালামি না পেলে যেন ঈদের আনন্দের একটা অংশ বাকিই থেকে যায়। ঈদের দিন সকালে নতুন জামা পরে প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করতে থাকি কখন বড়োরা নামাজ শেষে বাসায় আসবেন আর সালাম করে সালামি নেব। সবাই বাসায় আসার পর তাদের সালাম করি এবং সবাই খুশি হয়ে সালামি দেন। সালামি পেয়েই সেখান থেকে কিছু টাকা সরিয়ে জমিয়ে রাখি আর কিছু টাকা নিয়ে চলে যাই দোকানে। ঈদ সালামি ছাড়া যেন ঈদটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

সুইটি সিদ্দিকী শৈলী

৯ম শ্রেণি, পুলিশ লাইন্স আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, টাঙ্গাইল

সবাই ঈদের চাঁদ দেখতে পায় কিন্তু আমি অনেক খোঁজাখুঁজি করেও দেখতে পাই না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর হঠাৎ মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাঁকানো চাঁদ যখন চোখে পড়ে তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাই।

আগে থেকে বড়োদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাজি কিনে রাখি। ঈদ আনন্দে কখন সেই বাজিগুলো ফুটবে, চাঁদ দেখা মাত্র বাজির শব্দ আর আলোর ঝলকানিতে মুখরিত হবে চারিদিক এই অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকি। রাতে ঈদের জন্য কেনা জামা, জুতা ও অন্যান্য জিনিসগুলো বের করে নিজেও একবার দেখি অন্যদেরও দেখাই।

এরপর চলে অপেক্ষার পালা, কখন রাত ভোর হবে, মসজিদে মুয়াজ্জিন আজান দেবেন। ঈদের দিন ফজরের নামাজ শেষে গোসল করে নতুন জামা কাপড় পরে, মার রান্না করা ঈদের নানারকম বাহারি খাবার খেয়ে, পরিবারের সকল বড়োদের সালাম করে সালামি নিই। এরপর সেগুলো দিয়ে আইসক্রিমসহ অন্যান্য কিছু কিনে খাই, কতই না মজা।

গত ঈদে মনের আনন্দে ঘুরতে বাড়ি থেকে বের হতেই পাশের দু’তিন বাড়ি পর ছোটো শিশুদের কান্নার শব্দ শুনতে পাই। মনে প্রশ্ন জাগে, আজ আনন্দের দিনে ওরা কাঁদছে কেন ? আগ্রহ নিয়ে যাওয়ার পর শুনলাম- ওদের বাবা-মা নতুন জামা কিনে দিতে পারেনি তাই ওরা কাঁদছে। ওদের পায়ের জুতোটাও পুরনো। কান্নার মাত্রা যেন বেড়েই চলছে।

নিমিষেই আমার সকল আনন্দ যেন বিষাদে ভরে গেল। মনে হলো, আমার আনন্দটাও যেন মাটি হয়ে গেল। কিন্তু এমন কেন হলো ? ওর বাবা-মা কেন নতুন জামা, জুতো কিনে দিতে পারলেন না। কেন এই আনন্দের দিনেও কাঁদতে হলো ছোটো শিশুদের ? তাহলে যে মানুষ বলে ঈদ মানেই আনন্দ ! সে আনন্দ কী তাহলে সকলের জন্য নয় ? শুধু যাদের সামর্থ্য আছে তাদের জন্যই এই আনন্দ ? ঈদ কারো জন্য আনন্দ কারো জন্য কি অভিশাপ ? যদি এমন হতো, সবাই ঈদে সমান আনন্দ ভোগ করতে পারত। সমাজে যদি এই বৈষম্য না থাকত তাহলে কতই না ভালো হতো ! আজকের ঈদের আনন্দের দিনে একটাই প্রত্যাশা, সবার জন্য ঈদ নিয়ে আসুক আনন্দ। সবার জন্য ঈদ হোক সুখের। সকলকে ঈদ মোবারক।

সাউদা মাহজাবিন

দশম শ্রেণি, মণিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ

‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’- এই গানটি বাজলেই প্রকৃতপক্ষে ঈদের খুশি পূর্ণতা পায়। শবেবরাত এলেই শুরু হয়ে যায় রজমান মাসের প্রস্তুতি। তাই রমজান মাস আসার আগেই আমি ঈদের কেনাকাটা করে রাখি। রমজান মাস শুরু হলেই দিন গুনতে থাকি কবে ঈদ আসবে। আর ফাঁকে ফাঁকে ঈদের জামা, জুতো এগুলো দেখি আর ট্রায়াল দিই। সকালে কোন জামা পরব, ঈদের দিন ঘনিয়ে আসতেই মনের মাঝে শুরু হয় খুশি খুশি আলোড়ন। ঈদের আগের রাত অর্থাৎ চাঁদরাতে সবচেয়ে বেশি মজা হয়। হাতে মেহেদি পরা, কার হাতের মেহেদির ডিজাইন কত সুন্দর হবে, সেই নিয়ে চলে জল্পনা কল্পনা। অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি। মা ফিরনি, পায়েস, সেমাই এগুলো রাতেই রান্না করে রাখেন। অবশেষে চলে আসে খুশির ঈদ, সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন জামা জুতা পরে আত্মীয়স্বজন পরিচিতিজন সবার সঙ্গে দেখা করি। এ-বাড়ি ও-বাড়ি যাই সেখানেও সালামি পাই। ঈদে সালামি পেতে খুবই ভালো লাগে। একসময় বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসে, ঈদের খুশিও ম্লান হয়ে আসে। তখন মনে হয় ঈদের দিনটা যদি আর দুইতিনদিন থাকত তবে খুব মজা হতো।

অনন্য আরেফিন

একাদশ শ্রেণি, নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা

ঈদ হলো আনন্দের দিন। প্রতিবছর একমাস রোজা শেষে এ-দিনটির জন্য অপেক্ষা করি।

ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে আম্মু জাগিয়ে দেন তারপর হাতমুখ ধুয়ে গোসল করে কিছু নাশতা খেয়ে সালাম করে বহু প্রতীক্ষিত সালামির জন্য অপেক্ষা করি। আব্বু ও আম্মুর কাছ থেকে ঈদের সকালে সালামি নিই। এতে যে কী আনন্দ ! এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ে বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করে বাসায় আসি। বন্ধুরা আমাদের বাসায় আসে ঈদের দিন আম্মুর হাতের মজার নাট ব্রাউনি খেতে। ঈদের দিন দুপুরে নানুর বাসায় যাব, খালামণি, কাজিনদের সাথে অনেক মজা করব এবং প্রিয় আদরের ছোট্টো সেহরিশ বাবুর [ভাইয়ের ছেলে] সঙ্গে মজা করব। ওইদিন দুপুরে সবাই একত্র হই ইস্কাটনে নানুর বাসায়। নানু এবং খালামণিরা সালামি দেয়, পকেট ভারি হয়ে যায়। ঈদে আমি সারাদিন পাঞ্জাবি পরে ঘুরে বেড়াই। পাঞ্জাবিতে কমফোর্ট ফিল করি। ছেলেবেলায় দেখতাম আম্মু একটার পর একটা ড্রেস পাল্টিয়ে পরাত। এবার ঈদে আমার শখ ইলিয়েনের কালো পাঞ্জাবি তাই সেটা কিনে দিয়েছে আম্মু। জুতা, গেঞ্জি কেনা হয়েছে। এরচেয়ে বেশি চাহিদা নেই আমার। নানু আমার বড়ো ভাইয়াও টাকা দিয়েছে কিছু কেনার জন্য। এবার বিকেলে বন্ধুদের নিয়ে গাড়িতে ঘুরে বেড়াব অনেক মজা করব। আমেরিকাতে মামার সঙ্গে ফোনে কুশল বিনিময় করব। তারপর রাতে বাসায় ফিরে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ব। এই হলো আমার ঈদ আনন্দ।

জাইন ইসলাম

একাদশ শ্রেণি, আইডিয়াল কলেজ, ধানমন্ডি

ঈদের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ি। এরপর গোসল করে সেমাই খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে প্রথমেই দাদুকে সালাম করি। দাদু প্রতিঈদে সালামি দেয়। এরপর বড়োদের সালাম করে সালামি নিই। এবার আমার দাদু নেই তাই খুব মন খারাপ। এবার আর দাদুকে সালাম করতে পারবো না। এরপর সালাম-পর্ব শেষে বাবা-চাচা-ভাইদের সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে চলে যাই। নামাজ পড়ে এসে সবার সঙ্গে একটু ঘোরাঘুরি করে এসে দুপুরের খাবার খাই। বিকেলে আবার গ্রামের বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হই। পরের দিন চলে যাই নানুবাড়ি। সেখানে গিয়েও নানু-নানা খালা-মামাদের কাছ থেকে সালামি নিই। খাওয়া-দাওয়া ঘোরাঘুরিতে শেষ হয়ে যায় ঈদের আনন্দ। প্রতিঈদেই ফুপি, নানাভাই, তমাল চাচ্চু, আমার প্রিয় জ্যোতি আন্টি [জ্যোতি খালা] টাকা দেয় আমার পছন্দের পোশাক কেনার জন্য। দিদি [লাকী আপু] শম্পা আপু, আপুনি [সাখি আপু]সহ আরো অনেকের কাছ থেকেই ঈদের সালামি পাই। বিশেষ করে আপুনি [চামেলি আরেফিন] আমাকে প্রতিবছর ঈদের অনেক আগেই নতুন পোশাক কিনে দেন। এভাবেই শেষ হয়ে যায় আমার ঈদআনন্দ।

আজরিনা ইসলাম বর্ণি

একাদশ শ্রেণি, ভিারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

ঈদ মানেই আনন্দ। প্রতিবছর এই দিনের জন্য আমি অনেক আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করি। আগের দিন রাতে আমি আর আপু মেহেদি দিই। ঈদের দিন সকাল শুরু হয় আম্মুর ডাকে। আব্বু নামাজে যাওয়ার পর আমি গোসল করে রেডি হয়ে যাই। এরপর আম্মুর রান্না করা মজার মজার খাবার খাই। আব্বু এলে, আব্বু-আম্মুর থেকে সালামি নিয়ে আমরা বের হয়ে যাই আত্মীয়দের বাসায়। সেখানে দুপুর থেকে চাচা-চাচি, কাজিনরা আসতে শুরু করে। একমাস রোজা থাকার পর ঈদের দিন প্রায় সবার সাথেই দেখা হয়। সবার থেকে সালামি নিই। আবার আমি আমার ছোটোদের সালামি দিই। সারাদিন হইহুল্লোড় আর মজার মজার খাবার খেয়ে সবার সাথে খুব আনন্দেই কেটে যায়। ঈদের পরদিন আব্বু আম্মু, আপু আর আমি সবাই মিলে দূরে কোথাও ঘুরতে যাই। ঈদের দিনের নতুন জামা, জুতো, সালামি, আম্মুর হতের পায়েস, সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ এসবকিছুই আনন্দের, তাই তো প্রতিবছর ঈদের জন্য অপেক্ষা। 

সংকলন : শহিদুল ইসলাম এমেল