বাঙালি ভোজনপ্রিয় জাতি হিসেবে বেশ সুপরিচিত। আমাদের খাদ্যতালিকা বেশ সমৃদ্ধ আর খাবারের তালিকাও বেশ লোভনীয়। কিন্তু এই পৃথীবিতে এমন সব অদ্ভুত খাবার আছে যা আমাদের কল্পনার বাইরে। খাবার বিষয়টি মূলত দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস, পরিবেশ, আবহাওয়া ছাড়াও আরো অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। যে খাবার আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক তা অন্য দেশে নাক সিটকানো হতে পারে। আজ এমন কিছু খাবারের কথাই জানবো যা আমাদের কাছে ভালো না লাগতেই পারে। তবে খাবারগুলো সেসব দেশে কিন্তু দারুণ জনপ্রিয়...
কুকুর ও ইঁদুরের রোস্ট
ভিয়েতনামে গেলে রাস্তাঘাটে যে স্ট্রিট খাবারটি বেশ জনপ্রিয় দেখতে পাবেন তা হলো কুকুর আর ইঁদুরের রোস্ট বা ফ্রাই। ভিয়েতনামে দারুণ জনপ্রিয় এটি।
সাপের স্যুপ
কথায় আছে চাইনিজ জাতির খাবারের বেলায় কোনো বাছবিচার নেই। তারা সর্বভুক। তাই বলে সাপ, চীনে সাপের স্যুপ দারুণ জনপ্রিয়। তাদের মতে এই স্যুপ স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী !
গিরগিটির রক্ত
মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই গিরগিটির রক্ত খাওয়াকে অনেক রোগের নিরাময় হিসেবে দেখা হয়। সৌদি আরবের অনেকেই গিরগিটির রক্ত খেয়ে থাকেন।
ব্যাঙের জুস
অনেক ফলের জুসতো খেয়েছেন, এবার রয়েছে আপনাদের জন্য ব্যাঙের জুস। পেরুতে খুব সহজে আপনি যেকোনো জুসের দোকানে ব্যাঙের জুস পেতে পারেন। বলা হয়, ব্যাঙের জুস কাম-উদ্দীপনাতে সহায়ক।
বিড়ালের মাংস
আফ্রিকার অনেক দেশেই বিড়ালের মাংস বেশ আয়েশ করেই খাওয়া হয়। বিষয়টি বিড়ালপ্রেমীদের জন্য বেদনাদায়ক হলেও আফ্রিকানদের কাছে বিড়ালের মাংস দারুণ উপাদেয়।
সাপের অনিষিক্ত বাচ্চা
তাইওয়ানে আপনি পাবেন সাপের অনিষিক্ত বাচ্চা, মানে যে বাচ্চা এখনো ডিম ফুটে বের হয়নি কিন্তু ডিমের মধ্যে সাপের বাচ্চা আছে। বলা হয় এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী !
গোরু এবং কুকুরের অ-কোষ
এই খাবারটিও চীনে খাওয়া হয়ে থাকে। খাবারটি হলো গোরু ও কুকুরের অ-কোষ। চায়ানার এরকম অনেক রেস্তোরাঁ আছে যেখানে আপনারা ৩০টি ভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর অ-কোষ খেতে পারবেন। মদের সাথে নাকি অ-কোষের স্বাদ অতুলনীয় ।
সেঞ্চুরি এগ
দেখতে একেবারেই সাধারণ সিদ্ধ ডিম। কিন্তু যদি বলা হয় এগুলো রান্না হয়েছে ছোটো বাচ্চাদের প্রস্রাবে তাহলে ! চীনারা বিশ^াস করে এই ডিম খেলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
ফ্রায়েড ট্যারেন্টুলা
কম্বোডিয়ায় মাকড়সা বেশ আয়েশ করেই খাওয়া হয়। রাস্তাঘাটে খুব সহজেই আপনি পেতে পারেন রসুন দিয়ে ভাজা কড়কড়ে মাকড়সা ভাজি।
বাদুরের স্যুপ
পালাওয়ের খাবার হোটেলগুলোতে গেলে আপনি যে খাবারটির জনপ্রিয়তা বেশি দেখতে পাবেন তা হলো ফ্রুট ব্যাপ স্যুপ। হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। বাদুরের স্যুপ।
হাঁসের ভ্রƒণ
খাবারটির কথা মনে হয় কমবেশি সকলেই জানেন। ফিলিপাইনের দারুণ জনপ্রিয় একটি খাবার এটি। হাঁসের অনিসিক্ত ডিম এটি।
স্নেক ওয়াইন
রাইস ওয়ান অথবা গ্রেইন অ্যালকোহলে আস্ত সাপ ডুবিয়ে রাখা হয়। কোরিয়ায় এই খাবার বেশ জনপ্রিয়।
জ্যান্ত অক্টোপাস
কোরিয়ার এটি একটি ফেভারিট ডিশ সন্নকজি। জ্যান্ত অক্টোপাস থেকে তৈরি হয় এই খাবার। খাবারের থালায় কিলবিল করতে থাকা জ্যান্ত অক্টোপাস ধরে ধরে খাওয়ার ব্যাপারটা একটু ভাবেন তো।
ঘাসফড়িং
ঘাসফড়িং খুবই উপাদেয় খাদ্য যদি একে ভালোভাবে মেরিনেট করে ভাজা হয়। তখন এটা খেতে অনেকটা ফ্রায়েড চিকেনের মতো লাগে। থাইল্যান্ড আর মেক্সিকোয় বেশ জনপ্রিয় ঘাসফড়িং ভাজা।
বোলতার বিস্কুট
এটা যে বোলাতার বিস্কুট। শুধু একবার ভেবে দেখুন যে বোলতার কামড় আপনি এত ভয় পান সেই বোলাতাই জাপানিরা এক কামড়ে শেষ করে দেয়। আমরা যে চকোলেট বিস্কুট খাই তাতে চকোলেটের চিপসগুলো যেভাবে ছড়িয়ে থাকে ঠিক সেভাবে বোলতাও ফ্রাই হয়ে বিস্কুটের মাঝে আটকে থাকে। আর বোলতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জাপানিরা আরাম করে কামড়ে কামড়ে খায় বোলতা বিস্কুট।
কুমিরের মাংস
কুমির নাকি মানুষ খায়। কিন্তু দিন পাল্টে গেছে। এখন কুমির গ্রিলড এবং ফ্রাই করে খাচ্ছে মানুষ। কুমিরের মাংসে উচ্চ প্রোটিন এবং কম ফ্যাট থাকায় এই খাদ্য বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকায় দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে কুমিরের মাংস।
পাখির বাসার স্যুপ
পৃথিবীর অন্যতম দামি খাবারের একটি হলো পাখির বাসার স্যুপ। স্যুইফ্লেট পাখিরা অন্য পাখিদের মতো খড় এবং কাঠি দিয়ে বাসা বানায় না। এরা মুখ থেকে নিঃসৃত লালা দিয়ে বাসা তৈরি করে যা আস্তে আস্তে রোদে-বাতাসে শুকিয়ে শক্ত হয়ে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লোকজন এই স্যুপের সাথে খাবারটি বেশ চড়া মূল্য দিয়ে খায়।
লেখা : ফাতেমা ইয়াসমিন