ইমনের সঙ্গে প্রথমবার দ্বৈতগান গাইলেন ঝিলিক

21 Aug 2023, 12:59 PM সারেগারে শেয়ার:
ইমনের সঙ্গে প্রথমবার দ্বৈতগান গাইলেন ঝিলিক

চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০০৮ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকেই সংগীতশিল্পী হিসেবে পেশাগতভাবে যাত্রা শুরু করেন জানিতা আহমেদ ঝিলিক। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক গান গেয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি। ঝিলিকের গানের হাতেখড়ি তার বাবার কাছেই। ক্লাসিকাল, নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক, ফোক সব ধরনের গানেই সমান দখল ঝিলিকের। এবার প্রথমবারের মতো ইমনের সঙ্গে দ্বৈতগান গাইলেন ঝিলিক। অসাধারণ গায়কি আর কণ্ঠশৈলীর জাদুতে খুব সহজেই জায়গা করে নিয়েছেন ভক্ত-শ্রোতাদের হৃদয়ে। ঝিলিকের সংগীতজীবনের কাহিনি নিয়ে বিস্তারিত থাকছে এবারের সারেগারে আয়োজনে। লিখেছেন শহিদুল ইসলাম এমেল...

দেশের একজন জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। তার সুর ও সংগীতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান। অন্যদিকে সংগীত রিয়েলিটি শো ‘চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০০৮’-এর প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ঝিলিক। তিনি এরই মধ্যে বেশকিছু জনপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তার ভক্ত-শ্রোতাদের। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ইমাদ জুয়েলের কথায়, শওকত আলী ইমনের সুর ও সংগীতায়োজনে একটি গানে কণ্ঠ দিলেন ঝিলিক। গানের শিরোনাম ‘প্রেমের গান’। দ্বৈতকণ্ঠে গানটি গেয়েছেনও ইমন। গানটি খুব শিগ্গিরই ইমাদ মিউজিক স্টেশনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হবে। গানটি সম্পর্কে ঝিলিক বলেন, ‘আমার খুবই পছন্দের সংগীত পরিচালক ইমন ভাই। আমার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল তার সঙ্গে গান গাওয়ার। সেই স্বপ্ন এবার পূরণ হলো তার সুর ও সংগীতে তারই সঙ্গে গানটি গাইতে পেরে। এজন্য আমি অনেক খুশি। গানটি গেয়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আশা করছি শ্রোতাদেরও গানটি ভালো লাগবে।’

বর্তমানে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে কনসার্ট এবং বিভিন্ন চ্যানেলের গানের প্রোগ্রাম নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিলিক। পাশাপাশি সামনে নতুন কাজের পরিকল্পনা করছেন। কাজগুলো খুব শিগ্গিরই শুরু করবেন তিনি।

ঝিলিকের গানের শুরু ছেলেবেলা থেকেই। তার বাবা আবদুল জলিলও একজন সংগীতশিল্পী। যার কারণে একটা সংগীত পরিবেশে বড়ো হয়েছেন তিনি। ঝিলিকের বয়স যখন পাঁচ-ছয় বছর তখন থেকেই গান শিখতে শুরু করেন।

শুরুতে কার কাছে গানের তালিম নিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘শুরুতে আমার বাবার কাছে গানের তালিম নিই। বাবাই আমার ওস্তাদ, প্রথম হাতেখড়ি ওনার কাছেই। তারপর আমি শিখি ওস্তাদ বাসন্তী গোমেজ এবং মনিন্দ্রনাথ রায়ের কাছে। আর এখনো আমি বাসায় বাবার কাছেই শিখছি। আমি ছেলেবেলা থেকেই অনেক কমপিটিশন করে বড়ো হয়েছি। ধরুন, নতুন কুঁড়ি থেকে শুরু করে ওই সময় যেগুলো হতো আরকি। যেমন, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা জাতীয়পর্যায়ে এরকম বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। গানের মধ্যেই একদম ছেলেবেলা থেকে ডুবে থেকেছি বলতে পারেন।’

ঝিলিকের চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠে অংশগ্রহণের প্রধান কারণ হচ্ছে রুনা লায়লা এবং সাবিনা ইয়াসমীন। এই দুইজন শিল্পীকে একেবারে সামনাসামনি দেখতে পাবো বলে। তার অনেক দিনের স্বপ্ন দু’জনকে একসাথে দেখার। তার সেই আশাটা পূরণ হয়েছে ‘সেরাকণ্ঠে’ অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে। দুজনকে একসঙ্গে দেখা তার জন্য বড়ো একটা পাওয়া। সেটা চিন্তা করেই সেরাকণ্ঠে নাম দেন তিনি। তাছাড়া তার বাবারও আগ্রহ ছিল খুব। আসলে অনেক দূর যাওয়ার জন্য শুধু নাম দেননি, ওনাদের দেখারও প্রবল ইচ্ছা ছিল তার। সেই ইচ্ছা পূরণ হয় তিন-চারটা ধাপ পার হওয়ার পর। ঝিলিক ঢাকা থেকে অংশগ্রহণ করেন। টপ ফিফটিতে সিলেক্ট হওয়ার পর তাদের সামনে গান গাওয়ার সুযোগ পান ঝিলিক। একসময় অনুভব করলেন তার পারফর্মেন্স ভালোই হচ্ছে এবং তারাও তাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করছেন। এভাবে চলার পর একসময় টপ সিক্সে চলে যান। টপ সিক্সে আসার পর তার কাছে মনে হয়েছে যে, একটু সিরিয়াস হলে হয়ত-বা কিছু করা যেতে পারে। এরপর থেকে তিনি আরো সিরিয়াসলি পারফর্মেন্স করতে থাকেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর কণ্ঠের জাদু দিয়ে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০০৮-এর চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলে নেন ঝিলিক।

২০০৮ থেকে ২০২৩ এই পনের বছরের সংগীতজীবনে আপনার সফলতা এবং ব্যর্থতার কথা কিছু বলুন, ‘আমি ব্যর্থতাকে কখনোই কাউন্ট করি না। কারণ, আমি নিজে সবকিছুতে সেটিসফাইড থাকি। তাছাড়া আমার চাহিদা খুবই কম। আমি অল্পতেই খুব খুশি থাকি। আমার মনে হয় অল্পতে খুশি থাকা মানুষেরা সবসময় সুখি থাকে। সেইখানে সফলতাই সবসময় কাউন্ট করি। আমি প্রতিদিন এটা চিন্তা করেই খুশি থাকি যে, দুইজন অনন্যসাধারণ শিল্পী তাদের হাত দিয়ে আমার মাথায় যে মুকুট পরিয়েছেন, এটাই আমার কাছে খুব বড়ো একটা ব্যাপার। এটা আমাকে বেশি ইন্সপায়ার করেছে। আর অ্যাওয়ার্ড, পুরস্কার এগুলো তো আসলে উৎসাহের একটা ব্যাপার। কিন্তু এটাই আমার কাছে বড়ো অর্জন এবং ওটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট।’

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেকেরই কিছু না কিছু বিশেষ স্মৃতি থাকে। ঝিলিকের কাছে সংগীতজীবনের বিশেষ স্মৃতির কথা জানতে চাইলে বলেন, ‘আমার সংগীতজীবন যেহেতু একযুগের বেশি সময় পার হয়ে গেছে তাই অনেক স্মৃতিই আছেÑ তার মধ্য থেকে বেছে কোনো একটা বলা কঠিন। তারপরও বলবো যে, সেরাকণ্ঠের গোল্ডেন বেইজড আমার কাছে অনেক বেশি স্মৃতিবহুল। গোল্ডেন বেইজড রাউন্ডে এসে আমি যে গানগুলো গেয়েছি তার জন্য যে কমেন্টগুলো পেয়েছি ওগুলো খুবই স্মৃতিময় হয়ে আছে।’

ঝিলিকের প্রিয় শিল্পীর তালিকা বেশ লম্বা। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, একেকজন শিল্পীর একেক রকম বৈশিষ্ট্য। কারো সঙ্গে কারো তুলনা হয় না। সেভাবে বলতে গেলে অনেক লম্বা লিস্ট হবে। দেশে রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন তো আছেনই সঙ্গে কনকচাঁপার গান দারুণ ভালো লাগে তার। সুবির নন্দী চলে গেছেন। ওনার কাছে তার গান শেখার সুযোগ হয়েছিল। ওনার গানও তার বেশ ভালো লাগে। ওনার গান শুনে শুনেই বড়ো হয়েছেন। আর নতুন প্রজন্মের সবার গানই ভালো লাগে।

সংগীত নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে বলেন, ‘ওভাবে পরিকল্পনা করে আমি কোনো কাজ করি না। কালকে কী কাজ করবো সেটা আমি আজকে ঠিক করি। আমার কাছে মনে হয় পরিকল্পনা করে কাজ করা খুব কঠিন। কারণ, কখন কী বদলে যায় আমরা তা জানি না। আমি জাস্ট একটা জিনিস মাথায় রাখি- ভালো কাজ করতে চাই, শুদ্ধসংগীতের সঙ্গে থাকতে চাই। আর এমন কিছু করতে চাই জানি না সেটা আদৌ সম্ভব হবে কি না। কারণ, সবার জীবনে সবকিছু হয় না। এটলিস্ট আমার নামটা যেন মানুষ মনে রাখে এমন কিছু করতে চাই।’

অবসরে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন ঝিলিক এবং সেই আড্ডাটা তার পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে। এর বাইরে তিনি আড্ডা দিতে পছন্দ করেন না। বেড়াতে বলতে যেহেতু তিনি সংগীতশিল্পী, তাই গান গাওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই যাওয়ার সুযোগ হয়েছে তার। সমুদ্র তার দারুণ পছন্দ। তাই কক্সবাজার বেড়াতে ভালো লাগে আবার সিলেটও তার পছন্দের আরেকটি জায়গা। মোটামুটি সব জায়গায়ই তার ঘুরতে ভালো লাগে।