কারুকণ্ঠ আবৃত্তি পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আবৃত্তিশিল্পী আবু নাছের মানিকের জন্ম ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লায়। ছেলেবেলায় মায়ের কাছে আবৃত্তির হাতেখড়ি। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তার আবৃত্তির ৮টি অডিও অ্যালবাম। আবৃত্তি নিয়ে তার স্বপ্ন ও সংগ্রামের কথা বলেছেন আনন্দভুবনকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রশান্ত অধিকারী
আনন্দভুবন : আপনার আবৃত্তির শুরুটা কীভাবে, কখন ?
আবু নাছের মানিক : আমার আবৃত্তির শুরু হয়েছে আমার মায়ের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক আবৃত্তি শুরু ঢাকায় মতিঝিলের টিঅ্যান্ডটি উচ্চবিদ্যালয়ে কচি-কাঁচার মেলায়। পরে সাংগঠনিক আবৃত্তিচর্চার শুরু কুমিল্লার প্রথম আবৃত্তি সংগঠন ‘আবৃত্তি সংসদ, কুমিল্লা’র প্রথম কর্মশালার মাধ্যমে। সেই কর্মশালায় প্রয়াত আবৃত্তিশিল্পী গোলাম মুস্তাফা গিয়েছিলেন। তিনি তখন একটা কথা বলেছিলেনÑ ‘আবৃত্তিকে যদি সন্তানের মতো করে ভালোবাসতে পারো, তা হলে সে তোমার সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে।’ সেই ছোট বয়সে এই বড়ো কথাটি তিনি আমার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সেই কথাটিই প্রতিনিয়ত আমাকে আবৃত্তি করার জন্য তাড়িয়ে বেড়ায়। আবৃত্তিকে আমি আসলেই সন্তানের মতো ভালোবাসি।
আনন্দভুবন : দীর্ঘদিন অন্য একটি আবৃত্তি সংগঠনে কাজ করেছেন। কারুকণ্ঠ প্রতিষ্ঠা করলেন কেন ?
আবু নাছের মানিক : আবৃত্তির পথপরিক্রমায় আমি দুই বছর আগে ‘কারুকণ্ঠ আবৃত্তি পাঠশালা’ শুরু করি। এর আগে আমি প্রায় বিশ বছরের মতো ‘মৃত্তিকা’য় কাজ করেছি। সেখানে কিছু মৌলিক পার্থক্যের কারণে কারুকণ্ঠ প্রতিষ্ঠা করি।
আনন্দভুবন : প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এত বড় একটা সফল উৎসব করলেন, সেটা সম্ভব হলো কী করে ?
আবু নাছের মানিক : কারুকণ্ঠের বয়স হয়ত দুই বছর। কিন্তু আমার আবৃত্তির সঙ্গে সম্পৃক্ততা প্রায় ২৫ বছরের। আমার স্বপ্নটাই আসলে কারুকণ্ঠরূপে প্রকাশিত। আমার অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল কুমিল্লায় বিশাল একটি আবৃত্তি উৎসব হবে। সেখানে সারাদেশের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সেখানে বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরার শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া দেশের ২৭টি জেলার বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছেন। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আবৃত্তির মানুষদের মধ্যে একটি জানাশোনা, ভাব ও ভাবনার আদান-প্রদান হয়েছে ; তেমনি একটি মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। বলতে পারেন এই উৎসবের মধ্য দিয়ে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
আনন্দভুবন : আপনি ঢাকায় থেকেও কী করে দলের নিয়মিত কার্যক্রম চালান ?
আবু নাছের মানিক : আমি প্রতি বৃহস্পতিবার কুমিল্লা যাই। প্রতি শুক্রবার বিকেলে আমরা নজরুল ইন্সটিট্যুট কেন্দ্রে বসি। এছাড়া বছরে একটি আবৃত্তি কর্মশালা করি। একুশের অনুষ্ঠান হয় ‘পলাশের পদাবলি’ শিরোনামে। মার্চের অনুষ্ঠান হয় ‘মুক্তির মিছিল’ শিরোনামে। আমরা প্রতি বছর বছরে দুটি অনুষ্ঠান করি। ‘কবির সাথে কবিতা’ শিরোনামে আমরা তিনজন কবির কবিতা নিয়ে তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠান করি। এছাড়া বিজয়ের আবৃত্তি এবং আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠনের আমন্ত্রণে অংশগ্রহণ করি। ২৫ অক্টোবর আমাদের দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পার হলেও ডিসেম্বরে আমরা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উৎসব করব।
আনন্দভুবন : আবৃত্তি নিয়ে আপনার ভাবনা কী ?
আবু নাছের মানিক : আমার কাছে আবৃত্তি হচ্ছে ঈশ্বরের একটি প্রতিরূপ। ঈশ্বরের মাঝে যেমন অসুন্দরের কোনো জায়গা নেই, আবৃত্তিতেও তাই। এই সুন্দর শুধু মঞ্চেই নয়, মঞ্চ থেকে নেমে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনাচরণে ও জীবনবোধের জায়গায়ও এই সত্যকে, সুন্দরের চর্চাকে প্রতিফলিত করতে চাই। আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে আমি যে সত্য উচ্চারণ করি ব্যক্তিজীবনেও যেন তার ব্যাত্যয় না করি।
আনন্দভুবন : আবৃত্তি সংগঠন চালাতে গিয়ে কী কী সংকটের মুখোমুখি হতে হয় ?
আবু নাছের মানিক : অর্থ ও কর্মীসঙ্কট উভয়ই আছে। আমরা যখন একজন কর্মীকে ২-৩ বছর ধরে তৈরি করি তখন সে তার জীবনের প্রয়োজনে কুমিল্লা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ে খুব বেশি মানুষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়া যায় না। দলের যারা নীতি নির্ধারক তাদেরকেই সেটা বহন করতে হয়। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। তারপরও আবৃত্তি যেহেতু স্বপ্ন। স্বপ্নকে সম্বল করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। হ ছবি : জাকির হোসেন